নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

দীপাবলী-০৩

০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:০৮

ছয়টার সময় বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে অফিসের গাড়ীতে গিয়ে বসে দীপাবলী ভাবতে লাগল অফিসের গাড়ী না থাকলে পাবলিক বাসে অফিসে আসা যাওয়া কতই না ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হতো। অফিস টাইমে গাড়ীতে উঠা মানে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ জয় করার সমান। আর মেয়েদের পাবলিক উঠার কোন সুযোগই থাকে না। বেহাল রাস্তাঘাট, অতিরিক্ত গাড়ি ও অনিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক সিস্টেমের কারনে রাস্তায় জ্যাম লেগেই থাকে। রাস্তায় বের হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা দেখে সরকারের সমালোচনা করতে করতে নাগরিক সমাজ নাজেহাল হয়ে বাসায় ফেরে আর হিসেব করে, কত ধানে কত চাল।

বাসার কাছে পৌছাতে দীপাবলীর প্রায় দুই ঘন্টা সময় লেগে গেল। বাসায় ঢোকার পূবেই কাঁচাবাজার করে নিতে হবে। মহল্লার কাঁচাবাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস ওঠে।নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের যে উর্ধ্বগতি তাতে স্বল্প আয়ের মানুষের বেঁচে থাকাই দায়। রাজা আসে রাজা যায় সাধারণ জনগণের ভাগ্য নাহি বদলায়। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙ্গার সৎ সাহস নাই কোন সরকারের। অবস্থা দেখে মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহআলমের কথা মনে পড়ে যায়। তিনি মাত্র ২৬ লক্ষ টাকা বার্ষিক নজরানার বিনিময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে বাংলা, বিহার ও উড়িশ্যার কর আদায়ের দায়িত্ব দেন। বিনিময়ে ব্রিটিশ কোম্পানী সম্পদ লুন্ঠন করে ১৭৭৭ সালে( ১১৭৬ বঙ্গাব্দ) দূর্ভিক্ষের পরিবেশ তৈরি করে বাংলাদেশকে স্বশ্মানে পরিণত করে ছাড়ে। ঠিক তেমনিভাবে বর্তমান সরকার দেশকে ব্যবসায়ী ও আমালাদের নিকট ইজারা দিয়েছে কত টাকার বিনিময়ে তা আল্লাহ মালুম। তবে ইজারাদার যে সাধারণ জনগণের সকল অর্থকড়ি ব্যবসায়ীক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লুটেপুটে খাচ্ছে তা নিশ্চিত। এরই মাঝে উদরপূর্তির লক্ষ্যে সবজি আর ছোট মাছ নিয়ে বাসায় পৌছালো দীপাবলী।

তিন তলার ফ্লাটের দরজায় টোকা দিতে ভিতর থেকে ঠাকুর মা চেঁচিয়ে ওঠে কে রে?
আমি দীপা!
ও তুই এসেছিছ?
তোমার কোন সমস্যা হয়নি তো?
আর সমস্যা? সারাদিন একলা থাকা যে কত কষ্টকর তা যদি বুঝতি? কথা বলার মতো কেউ নেই।
দীপা কথা না বাড়িয়ে রান্না ঘরে বাজারের ব্যাগ রেখে ফ্রেস হতে বাথ রুমে গেল। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে দেখে ঠাকুর মা দুই কাপ চা নিয়ে বসে আছে। ক্লান্ত শরীর চাঙ্গা করতে মনে মনে এক কাপ চায়ের তৃষ্ণা অনুভব করছিল দীপাবলী। চায়ে চুমুক দিয়ে বলে উঠেলো-
চমৎকার চা বানিয়েছো তো!
তোর সাথে থেকে শহুরে জীবনে অভ্যস্থ হয়ে গেছি, আর চার বানাতে পারবো না তা কি হয়?
ও তাই বুঝি? আচ্ছা দিনের বেলা যদি তোমার একা একা লাগে তবে দোতলার ভাবির সাথে গল্প করতে পারো!
ও মা! আমি আর দোতলায় যাব কি? দোতলার বৌমা তো সকাল এগারো টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত আমার সাথে গল্প করে গেল।
এতো সময় কি গল্প?
গল্পের কি আর শেষ আছে? চা বাগানে আমাদের জীবন কেমন ছিলো, ওখানে আমাদের কে কে আছে, এখানে কেমন লাগছে? তুই জামাইয়ের সাথে থাকিস না কেন?
তুমি কি বললে?
আমার আর বলার কি আছে? আচ্ছা, তুই কি অনন্তকে ফোন করেছিলি?
দীপাবলী উঠে দাড়ালো। রাতের খাবার তৈরি করতে রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল, ফোন করেছিলাম, পাওয়া যায় নি, চট্টগাম চলে গেছে।
এক সময় তার হতের রান্না খাওয়ার উপযুক্ত ছিলো না বলে অনন্ত অভিযোগ করেছিলো। আজ একটু একটু করে শিখতে শিখতে দীপাবলী পাকা রাধুনী হয়ে গেছে। প্রয়োজন মানুষকে অনেক কিছু শেখায়। তবে বুদ্ধিমানরা দেখে শেখে আর মূর্খরা ঠেকে শেখে। রান্না ঘরে বসে ভাতের চাল চুলোয় বসিয়ে তরকারি রান্নার প্রস্ততি নিতে নিতে দীপাবলী ভাবতে থাকে, উচ্চ শিক্ষা নারীকে স্বাধীনতা দিলেও সমাজবন্ধ হওয়ার কারনে স্বেচ্চাচরী হওয়ার সুযোগ নেই। একা থাকাটা সমাজের চোখে দৃষ্টিকটু। যে একা থাকে সে তার সমস্যাগলো মানিয়ে নিয়ে স্বাচ্ছন্দবোধ করলেও প্রতিবেশিরা সুযোগ পেলেই নানান কথা শোনায়। দাবা খেলার সময় খেলোয়াড় অনেক সময় কিছু গুটির গতিবিধি লক্ষ্য না করলেও দর্শক কিন্তু খেয়াল করে যা খেলোয়াড় জানলে খেলায় জয় নিশ্চিত। তেমনি সমাজের লোকেরা অনেকের ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু মতামত দিয়ে থাকে যা মানতে পারলে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন সাফল্যমডিন্ডত হবে।

রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর পূর্বে সুনীলের বিখ্যাত কবিতা “কেউ কথা রাখেনি” পড়ে ভাবছে বরুনা কেন কথা রাখতে পারলো না?
ভাবতে ভাবতে বিছানায় গিয়ে বালিশে মাথা রাখতেই ঠাকুর মা বলে ফেললো, অবশেষে তোমায় কাছে পেলাম!
তুমি এখনো ঘুমাও নি?
তোকে ছাড়া আমি ঘুমাতে পারি? সেই ছোট্ট বেলা থেকে তোকে সাথে নিয়ে ঘুমাই, মরণেও তোকে পাশে চাই।
আমার ঘুম আসছিলো না, তাই একটু বই পড়তেছিলাম।
তোর ঘুম আসবে কিভাবে? মনের মানুষ দূরে থাকলে ঘুম আসবে কি করে?
ধুর! তুমি যে কি বলো?
শোন, দুনিয়াতে যদি স্বর্গীয় সুখ পেতে চাষ তবে বরের কোলে মাথা রেখে ঘুমাবি।
ঠিক আছে ঠিক আছে অনেক জ্ঞান দিয়েছো। এবার ঘুমিয়ে পড়ো।
জীবন চলার পথে বিভিন্ন বাকে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্যে অনন্তের পরিবারের সাথে কাটানো সময় ছিলো সবচেয়ে সুখময়। সে কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে তা মনে নেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.