নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অফিসে পৌঁছে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে পত্রিকার খবরের দিকে নজর রাখছিলো দীপাবলী। সততার দীপ জ্বেলে অফিসের একটা অংশ আলোকিত করতে পারলেও চারিদিকের এতো অন্ধকার দূর করার উপায় কি? অশিক্ষা, কুশিক্ষায় পরিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বর্তমান জেনারেশন নীতি-নৈতিকতা ও সুশিক্ষা বিবর্জিত সার্টিফিকেট ছাড়া কিছুই পাচ্ছে না। ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষাগুরুর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে, পরীক্ষা ছাড়া পাশ করানোর আন্দোলন করে, আবার পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্ররা শিক্ষা বোর্ডের গেটে তালা মারে। মেগা প্রজেক্ট এর নামে পুকুর, সাগর, দিঘি চুরি করে, দূর্নীতির বিশ্ব রেকর্ড করে, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কালো টাকার পাহাড় গড়ে, গরীব-দূঃখী সাধারণ জনগণের জন্য টেকসই উন্নয়ন না করে লোক দেখানো, চোখ ধাদানো উন্নয়নের নামে বাঙ্গালী জাতির সাথে প্রতারণা করে বেগম পাড়ায় বাড়ি করে।
পত্রিকার খবর পড়ে মাথা গরম না করে ঠান্ডা মাথায় অফিসের কাজ করা শ্রেয় মনে করে কিছু জটিল ফাইল পড়ে বুঝার চেষ্টা করছে দীপাবলী। করিম সাহেব তার ব্যবসায়িক মূলধন হিসেবে এক আত্মীয়ের অনুদান দেখিয়েছে। বর্তমানে এতো টাকা কেউ কাঊকে অনুদান দিতে পারে তা বিশ্বাস যোগ্য মনে হচ্ছে না তাছাড়া এই অনুদানের টাকা ঐ আত্মীয় ভদ্রলোক তার আয়কর ফাইলে দেখিয়েছে কি না তার একটা তদন্ত করা দরকার।এই যখন কর্ম ভাবনা তখন পিওন এসে বলে গেল, ডিসিটি স্যার দেখা করতে বলেছেন।
দীপাবলী হাতের কাজ গুছিয়ে রুম থেকে বের হয়ে করিডোর দিয়ে কিছুটা হেটে সিড়ি দিয়ে এক তলা উপরে উঠে ডান দিকে এক পা এগোলেই ডিসিটি স্যারের অফিস। মৃদুল কান্তি রায়, ডেপুটি কমিশনার অব ট্যাক্স এর অফিসের দরজায় এসে অনুমতি নিয়ে ভিতরে ঢুকলো।
বসুন! মিসেস মূখার্জি
জী! ধন্যবাদ স্যার
কমিশনার স্যার আপনার সততার খুব প্রশংসা করলো। তাছাড়া আমি তো দেখছি দক্ষতার সাথে কাজ করে আপনার সেকশন এর কাজ অনেক এগিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সিনহা কে নিয়ে।
সিনহা সাব আবার কি করেছে স্যার?
সিনহা তো টাকা পয়সা দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করে আজ অফিসে যোগদান করেছে। তার বিরুদ্ধে কোন পার্টির রকান লিখিত অভিযোগ না থাকায় আমরাও অফিসিয়ালী কোন পদক্ষেপ নিতে পারছি না। তবে কমিশনার স্যার বলেছেন, কোন প্রমাণ যোগার করতে পারলে দুদকে অভিযোগ করতে।
বলেন কি স্যার? সিনহা যদি এভাবে পার পেয়ে যায় তবে অন্য দূর্ণীতিগ্রস্থ্য কর্মকর্তারা ঘুস খেতে উৎসাহিত হবে।
কি করবো বলেন,আমাদের তো হাত পা বাধা। সিনহা এসেছিলো আমার সাথে দেখা করতে। সে আপনার উপর চটে আছে।
আপনি তো জানেন, তার কর্মদোষে সে ধরা খাইছে। এখানে আমার উপর রাগ দেখানোর কি আছে?
তার ধারনা ডিবি পুলিশকে আপনি খবর দিয়েছিলেন। তাছাড়া আপনি থাকাতে তার ঘুস খেতে সমস্যা হচ্ছে।
তাই বলে কি তাকে ঘুস খাওয়ার অবাধ স্বাধীনতা দিতে হবে?
তা বলছি না। একটু সতর্ক থাকবেন। অনেক লোকের সাথে উঠাবসা আবার কালা টাকার দৌরাত্ব্য। কখন কি করে বসে।
দূর্ণীতিবাজ যতই শক্তিশালী হোক তাদের ভয় না পেয়ে জয় করতে হবে। ঘুসের পরিণতির কথা জানিয়ে তাদের মটিভেট করে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
যাদের নৈতিক শিক্ষা,ধর্মীয় শিক্ষা, পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক মূল্যবোধ নেই এবং ঘুসের পরিণতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই, অন্ধের হাতি দেখার মতো আংশিক শিক্ষা নিয়ে বোকার স্বর্গে বসবাস করে তারাই ঘুস খায়। ঘুষ খেলে শরীর ভালো হয় না বরং মন খারপ হয়। মানষিক দূশ্চিন্তায় রাতের ঘুম হয় না। একজন অন্ধ যখন হাতির কান ধরে পর্যবেক্ষণ করে তখন হাতি তার নিকট কুলার মতো মনে হয়। যতই তাকে বোঝানো হয় হাতি কুলার মতো নয় সে মানে না কারন সে তার অভিজ্ঞতা লব্ধ আংশিক জ্ঞান (হাতির কান ধরে দেখা ) দিয়ে পূর্ণাঙ্গ হাতি দেখার জ্ঞানের সাথে তুলনা করে নিজের ভুল কে প্রাধান্য দিয়ে হাতিকে কুলা মনে করে। অনুরূপভাবে একজন ঘুসখোর নিজেকে জ্ঞানী (যদিও জ্ঞান পাপী/উচ্চশিক্ষিত মূর্খ ) মনে করে পাশের বাড়ির ঘুসখোর বাড়িয়ালার নিকট থেকে আংশিক শিক্ষা (ঘুসের টাকায় বাড়ি করা যায় ) গ্রহণ করে ভুল করে ভুল পথে ঐ ঘুসখোরকে অনুকরন করে নিজের ঘুস খাওয়া কে সঠিক মনে করে। যতই তাকে বোঝানো হয় ঘুষ খারাপ সে অন্ধের মতো আংশিক জ্ঞানকে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান মনে করে খারাপ কাজে (ঘুষ খাওয়ায়) অটল থাকে।একজন ঘুস খোর যদি বুঝতে পারতো তার ঘুষ খাওয়ার জন্য ছেলে বকাটে হয়েছে বা স্ত্রী দূরারোগ্য ব্যধি (ব্যয় বহুল রোগ) তে আক্রান্ত বা মেয়ের জামাই মাতাল বা মা বিছানায় কাতরায় তবে সে কখনও ঘুস খেতো না। যদি কোন ঘুসখোর বুঝতে পারতো ঘুষের টাকার কারণে রাতে ঘুম হয় না, সমাজের লোকজন প্রকাশ্য না করলেও গোপনে ঘৃণা করে, পুলিশে ধরতে পারে, জেল জরিমানা বা ক্রস ফায়ার হতে পারে, দূদকে মামলা করে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারে তবে সে কখনও ঘুষ খেতো না। ঘুষ খাওয়ার এইসব পরিণতির খবর তার মগজে ঢোকে না যেমনি ঘুষ খোর বুঝতে পারেনা যে কেন স্ত্রী পরকীয়া করে, মেয়ে নাইট ক্লাবে যায়, ছেলে গাড়ি/মটর সাইকেল দূর্ঘটনায় প্রচুর অর্থ বা নিজের জীবন বিলিয়ে দেয় বা নিজের সন্তান কেন হাবাগোবা বা বিকলাঙ্গ হয়। এ সবাই পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাব। যেমন খবর রাখেনা বনের রাজা উসমান গনি বা হলমার্ক কেলেঙ্কারির হোতা বা বাকীর পরিবারের শেষ পরিণতি বিষয়ে। তাইতো ঘুষখোর ভুল করে ভুল কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনয়ত।
ডিসিটি স্যারে রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে এসে কাজে মনোযোগ দিতে পারছে না। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের অভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টর আজ অস্থিতিশীল। সমাজের কারো প্রতি কারো পারস্পারিক সম্প্রীতি, সহযোগিতা, সহমর্মিতা লক্ষ্য করা যায় না। পরিবারের সদস্যরা একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছে না। অথচ কবি বলে গেছেন, “সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরে তরে”। এ সব ভাবতে ভাবতে ঠাকুর মা এর কথা মনে পড়লো। বৃদ্ধা একা একা বাসায় থাকে। কোন বিপদ আপদ হলো না তো? আজ একটু আগেই বের হলো অফিস থেকে।
বাসার সামনে আসতেই দারোয়ান দৌড়ে এলো, ম্যাডাম ঠাকুর মা সিড়িতে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়েছে।
শ্রীমঙ্গলে নাতিদের খোঁজখবর জানতে চেয়ে এবং শহরের যাপিত জীবনের বর্ণনা জানিয়ে চিঠি লিখে পোস্ট করার জন্য দারোয়ানের নিকট দিতে নিচে গিয়েছিল ঠাকুরমা। উপরে উঠতে গিয়ে সিড়িতে পা পিছলে পড়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে মাথায় আঘাত পেয়ে অচেতন হয়ে পড়ে। দোতলার বৌদি দেখতে পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়।
দীপাবলী হাসপাতালে পৌঁছে দেখে সাধারণ রোগীদের ভিড়ে বারান্দায় ঠাই পেয়েছেন ঠাকুর মা। একজন নার্স দয়াপরবস হয়ে মাথায় ব্যান্ডেজ ও হাতে একটা স্যালাইন লাগিয়ে দিয়েছে। রোগী এখনো অচেতন। দোতলার বৌদি ও তার স্বামী ওয়ার্ডে একটা সিট এর জন্য দেন দরবার করছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতালের পরিচালকের সাথে দেখা করে সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে একটা বিশেষ কেবিন এর ব্যবস্থা করলেন। কিছু সময়ের মধ্যে ডাক্তার এসে অবজার্ভ করে জানালেন গুরুতর আহত হওয়ায় আইসিইউ তে নিতে হবে। অবস্থার উন্নত হলে মাথায় একটা সিটিস্কান করে রিপোর্ট দেখে অপারেশন করতে হবে।
দীপাবলী বৌদিকে ধন্যবাদ জানালো ঠাকুর মাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য এবং তাদেরকে বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে নিজে অপেক্ষা করতে চাইলো। কিন্তু রোগীর অবস্থা গুরুতর হওয়ার কারনে বাসায় না গিয়ে দীপাবলীর সাথে অপেক্ষা করলো। ঘন্টা খানেক পরে রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে নার্স ছুটে গিয়ে ডাক্তার ডেকে আনে। কিছু সময় ধরে অবজার্ভ করে ডাক্তার আইসিইউ থেকে বের হয়ে এসে দীপাবলী কে জানায়, দূঃখিত! আমাদের আর কিছুই করার নাই। মাথায় আঘাতটা ছিলো গুরুতর। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ ও মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাধায় আমার আপনার ঠাকুর মা কে বাঁচাতে পারলাম না।
দীপাবলী কিছু সময় নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইল। কোন কথা বললো না। এ যেন অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর এর বাস্তব উদাহরণ। অতিরিক্তি বয়স হওয়া, গুরুতর আঘাতের পর সময় মতো চিকিৎসা শুরু করতে না পারাই মৃত্যুর কারণ। যা হোক বিধির লিখন, না যায় খন্ডন।বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে। তাছাড়া বিধাতা যা করেন, মঙ্গলের জন্যই করেন।
হাসপাতালের টেলিফোন থেকে শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের টেলিফোনে কল করে দীপাবলী বললেন যে তার ভাই কমলেশকে যেন ঠাকুর মার পরোলোক গমনের খবর টা পৌছে দেয়।
হাসপাতালের সকল ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাসার দারোয়ান ও দোতলার দাদা-বৌদির সহযোগিতায় রাজারবাগ কালীবাড়ী শ্বস্মান ঘাটে ঠাকুর মা শেষ কৃত্য করে রাত দশটার দিকে বাসায় ফেরেন।
দীপাবলী Click This Link
দীপাবলী-০১ Click This Link
দীপাবলী-০২ Click This Link
দীপাবলী-০৩ Click This Link
দীপাবলী-০৪ Click This Link
©somewhere in net ltd.