নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতিথি আপ্যায়ন ও বাঙ্গালী সংস্কৃতি!

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০২


অতিথি কে?
অতিথি (Otithi) মানে হল আগত ব্যক্তি, অভ্যাগত, বা মেহমান, যাকে আতিথেয়তা (hospitality) দেওয়া হয়। অন্যভাবে বলা যায় তিথি ছাড়া যার আগমন এবং যাকে আপ্যায়ন করা নৈতিক দায়িত্ব তিনিই অতিথি।
"তিথি ছাড়া" বলতে সাধারণত তিথি (চন্দ্র দিন) ছাড়া বোঝানো হয়, যা বৈদিক পঞ্জিকা অনুযায়ী চাঁদ ও সূর্যের আপেক্ষিক অবস্থানের ভিত্তিতে নির্ধারিত একটি সময়কাল (প্রায় ১৯-২৬ ঘণ্টা) এবং এটি দিন গণনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিথি ছাড়া কোনো কাজ, উৎসব বা ব্রত করার অর্থ হলো তিথি বিবেচনা না করে, অর্থাৎ পঞ্জিকা অনুযায়ী শুভ-অশুভ তিথি না দেখে কোনো কাজ সম্পন্ন করা। এটি মূলত 'তিথি মেনে' বা 'তিথি অনুযায়ী' করার বিপরীত, যেখানে তিথি অনুযায়ী শুভ সময়ে কাজ করা হয়, যেমন পূজার বোধন বা উৎসবের আয়োজন, কিন্তু তিথি স্বল্পতার কারণে অনেক সময় পঞ্জিকাকারদের সমস্যা হয়।
সৌজন্য সাক্ষাৎ, সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা, পথের ক্লান্তি দূর, চলতি পথে চোখের দেখা বা বিভিন্ন প্রয়োজনে অতিথিতেই হুট করে অতিথির আগমন ঘটে এবং তাঁদেরকে যথাসাধ্য আপ্যায়ন করা প্রত্যেকেরই সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু বর্তমানে নানা প্রতিবন্ধকতার কারনে অতিথির আগমন কমে গেছে সেই সাথে অতিথি আপ্যায়নের জৌলুস হারিয়েছে।
আমন্ত্রিত অতিথি ও অতিথির মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। আমন্ত্রিত অতিথি বিশেষ দিন ক্ষণ দেখে আনুষ্ঠানিক ভাবে উপঢৌকনসহ উপস্থিত হলে বিশেষভাবে আপ্যায়নের চেষ্টা করা হয়। তিথি ছাড়াই হুট করে অতিথির আগমন ঘটে এবং প্রতিটি পরিবার আন্তরিকতার সাথে সাধ্যানুযায়ী অতিথির খেদমত করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে অতিথি হওয়ার সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে। ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারনে বা উপঢৌকন কেনার অর্থাভাব বা আপ্যায়নে আন্তরিকতার ঘাটতি জনিত কারনে এখন আর কেউ অসময়ে বা অ তিথিতে কোথাও যেতে চায় না। আবার যদিও বা কেউ চায় তিন বার ফোন করা ছাড়া নাগাল পাওয়া যায় না। আগেকার দিনে আত্মীয়-স্বজনের নাম ঠিকানা জানা থাকতো এবং মন চাইলে সরাসরি আত্মীয় বাড়ীতে উপস্থিত হওয়া যেত। এখন প্রথম ফোন করে আত্মীয়ের সিডিউল নেওয়া হয়, দ্বিতীয় বার ফোন করে বাসা/বাড়ীর ঠিকানা/লোকেশন/যাওয়ার পদ্ধতি জানতে চাওয়া হয় এবং তৃতীয় বার ফোন করে বাসা নম্বর/ফ্লাট নম্বর জানতে চাওয়া হয়। এর মধ্যে ফোনে নেটওয়ার্ক না থাকলে বা চার্জ না থাকলে বা কৃতিম ব্যস্ততার কারনে ফোন না ধরলে আর আত্মীয় বাড়ী পৌছানোর সুযোগ থাকে না।
অতিথি আপ্যায়নঃ
অতিথি আপ্যায়ন মানে অতিথিদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো, তাদের আরামদায়ক পরিবেশ দেওয়া এবং সুস্বাদু খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা, যা একটি মহৎ মানবিক ও সামাজিক গুণ, যা সম্পর্ককে দৃঢ় করে এবং ধর্মীয়ভাবেও এটি সওয়াবের কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, আন্তরিকতা ও ভালো খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে অতিথির মন জয় করা যায়।
অতিথি আপ্যায়নের গুরুত্বপূর্ণ দিক:
• আন্তরিক স্বাগত: হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানানো, "আপনার আসায় আমরা আনন্দিত" এমন কথা বলা।
• পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: ঘরবাড়ি ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও গোছানো রাখা।
• খাবার ও পানীয়: ভালো ও সুস্বাদু খাবার, যেমন - পোলাও, মাংস, ভাজাভুজি, হালুয়া, মিষ্টি, চা ইত্যাদি আয়োজন করা।
• আরাম ও সম্মান: অতিথির বসার ব্যবস্থা, জলখাবার, দুপুরের বা রাতের খাবারের আয়োজন করা।
• মানবিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব: এটি ইমানের অঙ্গ, ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ এবং এতে পুণ্য লাভ হয়।
কীভাবে আপ্যায়ন করবেন:
1. সাজসজ্জা: পর্দা, কুশন কভার ইত্যাদি দিয়ে ঘর সাজানো।
2. খাবারের মেন্যু: অতিথি আসার আগেই মেন্যু ঠিক করা এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া (যেমন - সকাল থেকে রান্নার আয়োজন শুরু করা)।
3. বিশেষ পদ: অতিথিদের জন্য বিশেষ ও ভিন্ন স্বাদের খাবার তৈরি করা।
4. ঝটপট ব্যবস্থা: হঠাৎ অতিথি এলে হিমায়িত খাবার ব্যবহার করা যেতে পারে, যা দ্রুত প্রস্তুত করা যায়।
অতিথি আপ্যায়ন শুধু খাবার পরিবেশন নয়, এটি ভালোবাসা ও সম্মানের একটি সুন্দর প্রকাশ, যা মানুষের মধ্যে সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫২

আলামিন১০৪ বলেছেন: গোঘ্ন=অতিথী, বৈদিক যুগে অতিথীদের আপ্যায়নে বাছুরের নরম মাংস ভেজে পরিবেশন করা কারণ, বাছুরের মাংস কম সময়ে রান্না করা যায়।
পরে অবশ্য ধাতৃমায়ের রুলিং দেখে গাভীকেও লোকজন মা ভাবতে শুরু করে আর গো-মাংস নিষিদ্ধ করে..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.