![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম বর্ষ, সপ্তম/অষ্টম ক্লাস বা সপ্তাহ শেষ হয়েছে ক্লাস শিক্ষক নম্বর পত্র প্রদান করছেন। নম্বর পত্র নিয়ে আমার আগ্রহটা অন্যদের তুলনায় বরাবরই কম। কাজ জমা দেবার সময়ই আমি মোটামুটি নিজেই ঠিক করে নেই কত পেতে পারি। অধিকাংশ সময়ই কাছাকাছিই থাকে। খুব বেশী দুরত্ব হলে বুঝতে চেস্টা করি কেন এই দুরত্ব? সেই জানার অংশ হিসেবেই যিনি ক্লাস শিক্ষক তার কাজ দেখবার বুঝবার চেস্টা করি। জাদুঘর ও বইপত্র এ ক্ষেত্রে কিছু সহযোগীতা করে।
তো সেই সপ্তম বা অষ্টম ক্লাসে আমার কাজটি বা ছবিটি ক্লাস শিক্ষক আমায় ফেরত দিলেন, সঙ্গে কিছু উপদেশ। যার কিছু আমার মনে ছুয়ে গেল, কিছু এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বেরিয়ে গেল। নিজ আসন বা ডংকির কাধে সওয়ার হয়ে কাজটা দেখছি, এক সহপাঠী এসে বললো তোর কাজটা দে তো! দিলাম, সে ক্লাস শিক্ষকের টেবিলের পথে, আমি পিছু পিছু। টেবিলের উপর তার কাজ, তার পাশে আমার কাজটি রেখে সে বললো - স্যার এই কাজ যদি ২৯ নম্বর পায় তাহলে আমার কাজ কেন ২৪ পাবে? শিক্ষক হতভম্ব, আমিও। তিনি কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলেন, আমার দিকে তাকালেন, আমিও ততক্ষনে ধাতস্থ হয়েছি, হেসে ফেললাম। তিনি ২৪ কেটে প্রথমে ২৯ লিখলেন সেটাও কেটে লিখলেন ৩২, তারপর বললেন যাও এবার খুশী হয়েছো...
আমার এ সহপাঠীটি পরবর্তী ১১ বছর আমার অনেক উপকার করেছে, ক্লাসে কাজ রেখে মোল্লায় চা খেতে গ্যাছি, ফিরে এসে দেখী আমার প্লেটের বারোটা... সকলের চক্ষু এড়িয়ে কিভাবে কাজ দ্রুত ও সময় মত শেষ করা যায় তা শিখলাম। আরো অজস্র উপকার তার দ্বারা হয়েছে...
সবচেয়ে বড় উপকারটি সে করলো সেদিন... বিএফএ পরীক্ষা চলছে, বৃস্পতিবার ১.৩০ কাজ জমা দেবার শেষ সময়। বুধবার দুপুরে আমায় সে বললো --তুই একটু স্যারের কাছ থেকে রুমের চাবিটা নিয়ে দে না, স্যার আমাকে দিচ্ছে না, আমার অনেক কাজ বাকী।
বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা চালাচালী করে চাবি এনে দিলাম। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বললাম কাজ শেষ করে জানলা বন্ধ করে দিস, নাহলে বৃষ্টির পানি মেঝেতে জমে যাবে।
রাতে প্রত্যাশীত প্রবল বৃস্টি হলো। রুমের চাবি সে আমায় রাতেই বুঝিয়ে দিয়েছে। সকালে তাই আমি আগে ভাগেই চারুকলায়। তালা খুলেই হতভম্ব। সবগুলি জানালা হাট করে খোলা। যে সুতোয় আমার কাজ (সিঙ্গেল প্লেট উডকাট প্রিন্ট) শুকোতে দেয়া ছিল, সেখানে তার কাজ, মেঝেতে পানি থই থই, সেখানে ভাসমান...
‘জীবন প্রতিযোগীতা নয়, জীবন হচ্ছে যাপনের কাল। কিন্তু, ব্যাক্তির প্রতিদিন আপেক্ষিকতায় ভরা। তাই প্রতিযোগীতাই তার নিয়তী। শিল্প হচ্ছে জীবন যাপনের সাক্ষ্য, সেখানে প্রতিযোগীতা চলেনা’।
সেটা ছিল ১৯৯৪।
তারপর দুবছর অন্ত-দ্ধন্ধের পর ১৯৯৬-এ শেষ হলো আমার কোন প্রতিযোগীতা মূলক প্রর্দশনীতে অংশ গ্রহন করা (বার্জারটি ছিল বিশেষ অনুরোধের কারনে)। যার শুরু ছিল আর এক ঘটনা, ১৯৯০, (অন্য) এক সহপাঠি আমায় সহপাঠিনিদের সঙ্গে কথা বলতে দেখলেই সেখানে এসে বলা শুরু করলো--তারেক কি আঁকে? ন্যাশনালে চান্স পেলে বুঝা যাবে ও কত বড় শিল্পী...
১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ শিল্পকলা আয়োজিত সকল প্রর্দশনীতেই আমার কাজ ছিল...
১৯৯৮ থেকে বার্জার পর্ব শেষে আর কোথাও অংশ নেয়া বন্ধ। প্রতিযোগীতা মূলকে না হয় নেই, অামন্ত্রন মূলক প্রদর্শনীতে আমার উপস্থীতি নেই কেন? ৯৪-এর সেই সহপাঠি পরদিন সকালে কিংবা আজ পর্যন্ত আমার সামনে ‘দুখিঃত’ শব্দটিও উচ্চারন করেনি। ১৯৮৭-৯০ কতৃপক্ষের সাথে কথা চালাচালী করে প্রর্দশনীর চাবীটি আমি/আমরা যে ‘সকলে’র হাতে তুলে দিয়েছিলাম, এই ‘সকল’ইতো আজকের আমন্ত্রন দাতা...
‘শিল্প হচ্ছে জীবন যাপনের সাক্ষ্য, সেখানে প্রতিযোগীতা চলেনা। জীবন প্রতিযোগীতা নয়, জীবন হচ্ছে যাপনের কাল। কিন্তু, ব্যাক্তির প্রতিদিন আপেক্ষিকতায় ভরা। তাই প্রতিযোগীতাই তার নিয়তী এবং সমকালে প্রতিযোগীতাই পথ...’
©somewhere in net ltd.