নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমসাময়িক

নাজুক

জাফর খান টিপু

প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্য চাই রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন

জাফর খান টিপু › বিস্তারিত পোস্টঃ

====প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্য চাই রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন===

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৪



বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে তেমনি রক্ত দিয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে পরিবারতন্ত্র আজ খুঁটি গেড়ে বসেছে। যা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক দল এবং সংগঠন গুলোর ক্রমাগত দায়িত্বহীনতা ও ক্ষমতা দখলের যাঁতাকলে পৃষ্ট দেশের মানুষ ও সকল সম্ভাবনা। সহিষ্ণু বিবর্জিত দল গুলোর কারণে লাগামহীন হয়ে পড়েছে বাজার ব্যবস্থাসহ, প্রাতিষ্ঠানিক আচরণ ও নৈতিকতা। বিশক্রিয়ার মত ছড়াচ্ছে দূর্নীতি আর সন্ত্রাস। সব সম্ভবের দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। অরাজনৈতিক আচরণটাই যেন হয়ে উঠেছে মূল রাজনৈতিক সংস্কৃতি। সকল ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি আজ নিয়ম ও স্বভাবে পরিণত হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে দূনীতি, লুটপাট আর চেটেপুটে খাওয়ার রাশলীলা চলছে অবিরাম। দুই প্রধান রাজনৈতিক দল ও জোট আজ একই মন্ত্রে আবির্ভূত। যার ফলে সংঘাত আর প্রাণহানির মহড়া চলছে প্রতিনিয়ত। দলগুলোর সকল বিষয়ে অনৈক্যের কারণে জাতি আজ দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষমতা কুকক্ষিগত করার জন্য ভাইয়ের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভাইকে, বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য। ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঞ্জি করে ক্রমেই অশান্ত হচ্ছে দেশ। কিন্তু এঘটনার শেষ নেই, প্রতিনিয়ত একই নৈরাজ্য, একই ধ্বংসযজ্ঞ। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত আমাদের দেশে যে দলগুলো রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধীষ্ঠিত হয়েছে তারা সবক’টি দলই ক্ষমতার পালাবদলকে সহজভাবে নিতে পারেনি। উপরোন্তু দলগুলোর মাঝে বিবাদ, আস্থাহীনতা, ষড়যন্ত্র ও ক্ষমতার লিপ্সা লক্ষ্য করা গেছে।



আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা প্রায়ই রাজনৈতির সংস্কারের কথা বলেন। কিন্তু সেই সংস্কার বলতে তাঁরা কি বুঝাতে চান? আজ পর্যন্ত কোন রাজনীতিবিদ এর ব্যাখ্যা প্রদান করেননি। এর মূল কারণ এদেশের সাধারণ মানুষ, রাজনীতিবিদ কিংবা বুদ্ধিজীবিমহল সকলেই রাজনীতি বলতে বর্তমান গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারার সাথেই পরিচিত। দলগুলো জনগণের দেওয়া দায়িত্বকে ক্ষমতা মনে করে আর ক্ষমতা পেলেই ক্ষমতা কেন্দ্রীক রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে মরিয়া হয়ে ওঠে। দেশে শুরু হয়ে যায় বিরোধী দলের উপর দমন-নিপীড়ন, দেখতে পাই যে কোন মূল্যে ক্ষমতা আকড়ে থাকার প্রবনতা, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, জমিদখল, হলদখল, ভর্তিবাণিজ্য, পদ-পদবীর জন্য লেজুড়বৃত্তিপনা, অন্তঃদ্বন্দ্ব, খুনাখুনি, মন্ত্রী-এমপি’দের দূর্নীতি। পরিলক্ষিত হয় রাজনৈতিক হামলা-মামলা, হত্যা-গুমসহ নানা ষড়যন্ত্র করে বিরোধী দলগুলোকে উৎখাত করার নীলনক্‌শা। চোখে পড়ে সরকারী কর্মকর্তাদের পদন্নোতি ও সাময়িক বরখাস্তের ভিড়ে স্থবির হয়ে পড়া প্রশাসন। প্রতিয়মান হয় বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ-ধর্ষক, খুনি, চোর-ডাকাত, সন্ত্রাসী, অপহরণকারীদের মামলা প্রত্যার। বেহায়ার মত প্রশাসনে দলীয়করণ, নিয়োগ বানিজ্য, ব্যাংক ও শেয়ার বাজার লুটপাট চলতে থাকে। প্রকাশিত হয় উন্নয়নের নামে চেটেপুটে খাওয়ার ইতিহাস, উদযাপিত হয় ধর্ষণের সেঞ্চুরী। পাখির মত গুলি করে মারা হয় মানুষ। যা আসলে বলে শেষ করা কঠিন। অপর পক্ষে বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে পরাজয়ের দিন থেকেই নির্বাচনে ভোট কারচুপি, ভোট ডাকাতি, সুক্ষ্নকারচুপি, স্থুলকারচুপি ইত্যাদি আরো নানা কারচুপির অভিযোগ তুলে সরকারি দলকে সহযোগিতার বদলে দেশে সহিংস অবস্থার সৃষ্টি করে। ক্রমাগত সংসদ বর্জন, যখন তখন প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে হরতাল, অবরোধ, ভাঙ্গচূড়, জ্বালাও-পোড়াও, আরো কত কি! হরতালের আগের দিন বাসে, ট্রেনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে মানুষ যা থেকে নারী, শিশু প্রতিবন্ধী কেউই রেহায় পাচ্ছেনা। কুপিয়ে খুন করা হচ্ছে নিরাপরাধ পথোচারীকে। যত্রতত্র চলে বোমাবাজী। এতে সাধারণ জনগণের লাভ কি? যা আসলে ঘুরে ফিরে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের চেয়ে দূর্ভাগা জনগণকে আরো দূর্দশায় নিপতিত করছে। মাত্র গুটি কয়েক অসুস্থ্য মানুষের হাতে জিম্মি গোটা জাতি। বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রের নামে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিরাজমান তা আসলে রাজতন্ত্রের আদলে গড়ে ওঠা দুই নায়কতন্ত্র বলা যায়। তাই আগামীতেও এর থেকে পরিত্রাণ আশা করা যায় না। তাছাড়া আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল একই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। যেন মূদ্রা এপিঠ আর ওপিঠ। কিছু অমৌলিক বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান থাকলেও মূল চারিত্রিক বৈশিষ্ট এদের একই। এরা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় থাকেল যা করে, ওরা (বিএনপি) ক্ষমতায় গেলে তাই করে আবার এরা বিরোধী দলে থাকেল যা করে, ওরা বিরোধী দলে গেলে তাই করে। তবুও এতো কিছু দেখার পরও কিছুই যেন করার নেই কারও। তাই আমরা এই বৃত্তের বাইরে যেতে পারছিনা বা যাওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছিনা। বরং তাদের এই অনৈতিক আধিপত্যকে মেনে নিয়েই তাদের সাথে জোটগত অবস্থান নিচ্ছে দেশের ছোট দল গুলো। দেশের ছোট ও নতুন দলগুলো কোনদিন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব (ক্ষমতা) পাওয়া সম্ভব না ভেবে এই জিম্মিদশাতেই পরম আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করছে। আসেল আমাদের দূর্ভাগ্য এই যে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে সব শাসকই তাদের ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের উর্দ্ধে ওঠে দেশের জন্য কাজ করেনি। তারা জনগণ বলতে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের বোঝে। এ দেশের কোন রাজনৈতিক দল, দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি অথচ এ জাতির যা কিছু অর্জন তা মূলত্ব এই সাধারণ মানুষের শ্রমে-ঘামে ও মেধায় মননে অর্জিত হয়েছে। তবু সব ক্ষেত্রে জনগণই থাকে উপেক্ষিত। আমরা সকলেই এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হবার স্বপ্ন দেখি। বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকা পরিবার গুলোকে মানুষ যতটা না ভালবেসে ও যোগ্য মনে করে ভোট দেয় তার চেয়ে বৈরাগ্য হয়েই ভোট দেয় বেশি। তাই তাদের ক্ষমতার ধাবাহিকতা থাকে না। যে কারণে ক্ষমতাসীন পরিবার গুলো মনে করে “একবার আমরা, একবার ওরা”। কিন্তু এরা-ওরাতে আপত্তি ছিল না যদি আমাদের রাজনীতিবিদরা দেশ পরিচালনার দায়িত্বকে ক্ষমতা মনে না করতেন। উন্নয়নের বুলি আওরিয়ে ভোগান্তি সৃষ্টি না করতেন। যারা যখন ক্ষমতায় আসে তখন তাদের নেতা-কর্মীরা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের কোন স্থান কোথাও নেই। তাদের কথা কোন রাজনৈতিক দলই ভাবছে। তবুও এদেশের মানুষের সকল ভাবনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে এই প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল! যার কারণে এই সাধারণ মানুষের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গেই তারা আজ সুখের পেয়ালায় চুমুক দিচ্ছেন। এর শেষ কোথায়? জনতার আজ নিরুপণের সময় এসেছে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার তাদের নেই। এদেশের সাধারণ মানুষ নিজে কামাই করে নিজে খায়। দেশ ও জাতির সম্পদ লুন্ঠন করে বিদেশে পাচার করেনা কিংবা টাকার পাহাড় বানানোর অসুস্থ্য মনোবৃত্তিও পোষণ করে না। তাই বর্তমানে এই কু-সংস্কৃতির রাজনীতি পরিবর্তন একান্ত জরুরী, মানুষ এখন বুঝতে শিখেছে। এই কু-সংস্কৃতির রাজনীতি পরিবর্তন না হলে সামাজিক অক্ষয় রোধ ও অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব না। যেহেতু রাজনীতি আমাদের সমাজ জীবনের অবিচ্ছদ্য অংশ তাই রাজনীতিতে সকলের অংশগ্রহণ একান্ত জরুরী।



এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য দরকার একটি সুস্থ্যধারার রাজনৈতিক দল ও একজন বলিষ্ঠ মানুষ,যার নেতৃত্বে গণমানুষ মুক্ত হবে এই অবরুদ্ধ জিম্মিদশা হতে। দেশের মাঝে ফিরে আসবে প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং দলগুলোর মাঝে গড়ে তোলা সম্ভব হবে মেধা নির্ভর ও কল্যাণভিত্তিক রাজনৈতিক চেতনাবোধ । আর এর জন্য দরকার উন্নত রাজনৈতিক চর্চা আর মেধাবী নেতৃত্ব । সেই সাথে প্রয়োজন দলগুলোর সাংগঠনিক কাঠামোতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। যার মাধ্যমে দূর হবে সকল দলীয় অব্যবস্থাপণা, নিশ্চিত হবে সবার অংশগ্রহণ ও হানাহানি মুক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতি। আগামীতে গড়ে উঠবে সৎ ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব। বন্ধ হবে অর্থের বিনিময়ে নেতৃত্ব কেনার দৌরাত্ন। তাই সকল রাজনৈতিক প্রতিকূলতা দূর করতে গতানুগতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন একান্ত জরুরী। আর এ জন্য অবসম্ভাবী হয়ে উঠেছে নতুন নেতৃত্ব এবং দলের মাঝে একটি সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন।



আমরা প্রত্যাশা করি আমাদের দেশের মহান রাজনীতিবিদরা আমাদের মনের কষ্টটা বুঝতে পারবেন। মানুষের সমস্যা তাঁরা বোঝেন না, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। আবার ওনারা সকলেই নিজের স্বার্থ দেখেন, তা আমরা মনে করি না। কিছু খারাপ দৃষ্টান্ত থাকলেও সবাই যে খারাপ তা নয়। আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের পতাকা, এই মানচিত্র হয়তো সম্ভব হতো না তাঁদের ছাড়া। তাঁরা অবশ্যই ভিন গ্রহের কেউ না। আমাদেরই একজন । আমরা তাকিয়ে আছি আগামীর নেতৃত্বের দিকে । হয়তো দেশে নতুনদের নেতৃত্বে বদলে যাবে আমাদের সকল অভাব অভিযোগ ও বিদ্বেষ হানাহানী। আমরা পাবো নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি। যাদের নেতৃত্বে আমরা দেখব একটি সুখি-সমৃদ্ধশালী “দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ”। সে জন্য রাজনীতিকে ঘৃণা করে নয় বরং আমরা যারা মুক্তচান্তা করি, শত হতাশার মাঝেও ভালো কিছু দেখি, সর্বস্ব ভাঙ্গনের মাঝেও যারা আশায় বুকবাঁধি, তাদের নিয়েই শুরু করবো নতুন করে পথচলা।

আসুন আমরা রাজনীতির সমালোচনা নয়, আগামীর নেতৃত্বকে সহযোগিতা করি । তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গড়ে তুলি ‘‘সুস্থ্য রাজনৈতিকধারার বাংলাদেশ’’।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.