নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নাসিফ ফাইয়াজ। খাওয়া, ঘুমানো,ঘুরা-ঘুরি আমার কাজ

নাসিফ ফাই্য়াজ

নাসিফ ফাই্য়াজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

You don’t do it. It happens.

১৮ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:৪২

সফরে খাওয়ার জন্য বাসার থেকে স্যান্ডউইচ বানিয়ে দিয়েছিল I আমি রাস্তার থেকে কয়েক বোতল মজো, হযরতের প্রিয় ড্রিংকস, কিনে নিয়েছিলাম I এয়ারপোর্টে পৌঁছে একফাকে হযরত দামাত বারকাতুহুমকে বললাম যে আমি স্যান্ডউইচ নিয়ে এসেছি, হযরত খাবেন কিনা I হযরত বললেন প্লেনে উঠে খাবেন I হযরত বসেছেন আইল এর পাশের সিটে, আর আমি বসেছি তার বামে উইন্ডো সিটে I আমরা যাচ্ছি চিটাগং, হযরতের মাসিক সফর I

বিমান টেক অফ করার পরপরই খাবার সার্ভ করলো I বার্গার আর তার সাথে পানি I আমি সুযোগ বুঝে জানতে চাইলাম হযরত মজো ড্রিংকস খাবেন কিনা I হযরত বললেন খাবেন I হযরত বার্গার খেতে শুরু করলেন I আমি আমার ব্যাগ থেকে মজো র একটা বোতল বের করে সামনে ট্রেতে রাখলাম I কি মনে করে বোতলের মুখ টা খুললাম I তখনি দুর্ঘটনা টা ঘটলো I আমার হাতের ধাক্কা লেগে খোলা বোতলটি হযরতের ওপরে পরলো এবং বোতলের থেকে প্রায় অর্ধেকটা পানীয় হযরতের পাঞ্জাবি -পাজামা ভিজিয়ে দিল I আমি সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত…বিব্রত! এ কেমন খাদেম আমি! খেদমত করতে গিয়ে সব লন্ডভন্ড করে দিলাম!

আমার কয়েক মুহূর্ত লাগলো বুঝে উঠতে কি করব I হযরত এর দিকে তাকালাম I চেহারায় কোন বিকার নেই I তিনি স্যান্ডউইচ কামড় দিলেন I মুহুর্তের জন্য আমার মনে হল হযরত বোধহয় টের পাননি যে তার পাজামা-পাঞ্জাবি ভিজে গেছে I আবার ভাবলাম সেটাও সম্ভব না I
আমার কোলের উপর ব্যাগ থেকে টয়লেট পেপার বের করে হযরতের পাঞ্জাবির উপরে ধরলাম I কিছুটা পানি শুকিয়ে আসলো I আবারো খেয়াল করলাম হযরতের মুখের দিকে I চেহারার মধ্যেও বিরক্তির চিহ্ন নেই I মুখেও কিছু বলছেন না I বিশাল বিব্রতকর মুহূর্তগুলো যেন পার হচ্ছিল নাI

কিছু একটা বলা দরকার তাই আমি বলে উঠলাম, “হযরত আমার আঙুলগুলো খুব clumsy. Fine movement গুলো ঠিকমতো হয়না, look what I have done”

এবার হযরত আমার দিকে তাকালেন এবং বললেন, “You don’t do it. It happens.”

বাংলা অর্থ: তুমি এটা করোনি, এটা হয়ে গেছে I সুবহানাল্লাহ !

এই ঘটনাটি নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি I হযরতের কোলের উপরে পানি ফেলে দেওয়ার পরে তার চেহারায় এতোটুকু বিরক্ত প্রকাশিত না হওয়া, হয়তো এটাই স্বাভাবিক I আল্লাওয়ালা বুজুর্গরা এমনই করেন I কিন্তু কিছুই বললেন না, তৎক্ষণাৎ মুখে কিছুই বললেন না I আমি হিসাব মিলাতে পারিনি I আমি হযরত এর জায়গায় নিজেকে রাখলাম , আমি চিন্তা করলাম আমার কোন ছাত্র যদি এমন করত তাহলে আমি কি করতাম I বিরক্তি হয়তো মুখে প্রকাশ করতাম না, চেহারায় বিরক্তি দেখা যেত না কিন্তু মুখে তো কিছু বলতাম : “ইটস ওকে” এরকম কিছু একটা I কিন্তু সেটাও হযরত করলেন নাI

এ ব্যাপারটি আমাকে ভাবিয়েছে I চিন্তা করেছি ইটস ওকে- এ কথার মধ্যেও তো আসলে লৌকিকতা আছে, সৌজন্যতার নামে লৌকিকতা আছে I হযরতের কিছু না বলা, তার চেহারার মধ্যে বিন্দুমাত্র বিরক্ত প্রকাশ না পাওয়া আমার চিন্তাকে অন্য লেভেলে নিয়ে গেছে I সুবহানাল্লাহ I তারমানে হযরত এর কাজের মধ্যে আসলে কোন লৌকিকতা নাই, সৌজন্যতার খাতিরেও লৌকিকতা নাই I সুবহানাল্লাহ I

বন্ধু নোমান ভাইকে এই লেখাটা পড়ালাম I উনি কমেন্ট করলেন, “ইটস ওকের মধ্যেও এই কথাটা প্রচ্ছন্ন আছে যে, তোমার ভুল হয়ে গেছে, যদিও ভুল হয়ে গেছে কিন্তু অসুবিধা নেই ৷ ইট হ্যাপেনস এর চেয়ে অনেক বেশি নববী আখলাক ৷”

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাদেম হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু 10 বছর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমত করেছিলেন I আল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো বিরক্তি প্রকাশ করেননি, কখনো তার উপর “উহ” শব্দটি বলেননিI

বিমানের মধ্যে সেদিনের সেই ঘটনার পর আমি তওবা করেছিলাম I নিয়ত করেছিলাম যে আমার তত্ত্বাবধানে যারা থাকেন যেমন বাসার কাজের লোকেরা, সিকিউরিটি গার্ড অথবা ড্রাইভার, আমি তাদের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করব না I হযরতের শেখানো ইহসান প্রয়োগ করব আমার নিজের জীবনে I

দুঃখজনক যে আমি আমার নিয়ত ঠিক রাখতে পারিনি I তবে যখনই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছি, তখনইএই ঘটনা স্মরণ করেছি আর আবারো তওবা করেছি এবং নতুন করে নিয়ত করেছি I

আল্লাহতালা হযরতের এই শিক্ষা গুলির উপরে আমাদেরকে সহীহ আমল করার তৌফিক দান করেন I আমিন I

Collected from : Nawaz Ameen sir

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.