নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন...

নীল পত্র আমার

নীলপত্র

আমি তেমন কেউ না..

নীলপত্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি বাস্তব নির্ভর স্ক্রিপ্ট

১৮ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৫৬



চরিত্রসমূহ -

মুমু ,বাবলি খালা, কাজের মেয়ে ফরিদা



সিকোয়েন্স – ১

সাল – ১৯৯৭



বাবলি খালা – মুমু, তর মায় বেশি আদর করে না বাহে (বাবা) ?



মুমু – আব্বু । আব্বু । আব্বু আমাদের সবাইকে বেশি আদর করে । আপার চেয়েও আমাকে বেশি আদর করে জানো ?



বাবলি খালা – এহ ! তর যে বাপ ! ...তর বাহের লাইগগা গরে কাজের মাইয়া রাহন যাইত নি ? ...মাইনসের এদ্দুরা (ছোট) ঝি আইন্না দি কামের লাইগগা হে ফোয়াতি (পোয়াতি) কইরা বারিত ফাডায় দেয়... । আফার জীবনডা স্যাস কইরা লাইছে তর বাহে ।

হেরে আমরা গনায় ধিরিনি ? বজ্জাত ব্যাডা কোনহানকার ...



মুমু খেলা ফেলে উঠে যায় । সে বোঝে না পোয়াতি কি ? বাবাকে খালা কেন বকছে ! মুমু বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় ...তার খুব কষ্ট হচ্ছে ... বাবাকে বকবে কেন ? বাবা ভালো । বাবলি খালা মটেও ভালো না ...



সিকোয়েন্স – ২

সাল – ২০১২

মুমু ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে ফেরে । ব্যাগটা বিছানায় ফেলে ফরিদাকে ডাকে ।

মুমু – ফরিদা ... চা দাও তো

কিছুক্ষন কেটে যায় । ফরিদা আসে না ।

মুমু – ফরিদা কই তুমি ? কি ব্যাপার ?

রান্নাঘর থেকে কান্নার ফোঁপানো আওয়াজ আসে । মুমু উঠে যায় ।

মুমু – কি ব্যাপার ফরিদা কাঁদছ কেন ? এই ফরিদা ? কি হয়েছে বলো আমাকে । বাসায় একা থাক দেখে মন খারাপ লাগে ?

বোলো কি হয়েছে ...

ফরিদা –আন্টি , আমি এনো কাম করতাম না । এনো কাম করলে আমার মান থাকতো না । আমি বাইত যামু আন্টি ।

মুমুর চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ।

মুমু – বাবা কিছু করেছে ফরিদা ? কি হয়েছে বলো...

ফরিদা মুখ তোলে অবাক হয়ে । কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে...

ফরিদা – আফনেরা বাসায় থাহেন না । নানায় একলা হারা দিন আমারে জালাইত । আমি ডরে রান্নাঘরে জরজা লাগায় কাম করতাম । শরমে আফনেরে ,নানীরে কইতারি না ।

মুমুর মাথাটা টলে ওঠে । তবু স্থির দাঁড়িয়ে থেকে বলে

মুমু – আগে বল নি কেন ? আজ কি হয়েছে ?

ফরিদা – আন্টি... আজকা... আজকা নানায় ... আমি কইতে পারুম না...

মুমু – ফরিদা বলো ...

ফরিদা –আমি... আমি না ফাইরা আজকা বডি লইছি আন্টি । নাইলে আজকা আমার মান ইজ্জত যাইত আন্টি... ।

আফনেরে আজকা কই... বরো আফার ভাষের (ভাসুরের) মাইয়ারে , আফনের যেই খালত বইন মেটটিক ফরিক্ষা দিয়া আইছে হেরে , আফনের ছোডো খালার ফিচ্চি মাইয়া রাইসা হেরে এরুম জালাইত । আমি সব সময় নানারে বাসায় চোখে চোখে রাখছি । নাইলে হেগো লগে নানায় এডি করার চেসটা করছে । আফনেরা কেউ দিনে থাহেন না বাসাত । নানায় বাসায় মাইয়া ফাইলেই এরুম করে । তাও বরো মাইয়াডির লগে না । আমরার মত ছোডো মাইয়াডির লগে নানায় এরুম করে । আমি সুরুথিকাই দিকছি হের নজর বালা না । আমি ডরে আফনেগো কই না । আমরার গরীবের ঝিয়ের কফালডাই খারাপ । জেনো যাই হেনই এরুম ... ।

মুমু দাঁড়িয়ে থাকে । নির্বাক । তার মন চায় ফরিদার পা ধরে ক্ষমা চাইতে । ইচ্ছে করে ফরিদাকে চিৎকার করে বলতে – “ফরিদা কপাল তোর খারাপ না রে ফরিদা । কপাল খারাপ আমাদের । অমন পিতার সন্তান হয়ে আমরা যারা জন্মেছি তাদের কপাল খারাপ ।



আমার মায়ের কপাল খারাপ । স্বামীকে জীবন ভর ক্ষমা করে এসেছেন শুধু সংসারটা বাঁচানোর জন্য, আমাদের জন্য । আমরাও বেঁচে আছি মায়ের জন্য ,নয়তো এতদিনে আত্মহত্যা করতাম । বাবার নামে নোংরা বিচার গুলো শুনতে শুনতে আমরা বড় হয়েছি । আমরা তোদের সামনে বারবার ধুলোয় মিশে গেছি অপমানে ,লজ্জায় । এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো রে ফরিদা...।বাবাকে ‘বাবা’ ডাকতে আমাদের ঘেন্না করে । সন্তান হয়ে বাবার কুকর্মের বিচার শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত রে ফরিদা... আমাদের ক্ষমা করে দিস। যদি পারিস ... ’’



---------------------------------------------------------

মুমুদের জীবনের সিকোয়েন্স গুলো লিখে শেষ করবার মত নয় । এত কিছুর পরেও মুমুরা বেঁচে থাকে , মুমুর মায়েরা বেঁচে থাকে জীবন্ত লাশের মত । আর মুমুর বাবারাও বেঁচে থাকে শকুনের দৃষ্টি নিয়ে ...শিকারের আশায় ।

জীবনে কাছের মানুষদের ভালবাসার চেয়ে ‘শিকার’ এর মূল্য যে মুমুর বাবাদের কাছে অনেক বেশি !



মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.