নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
রোগী দর্শন; অতিব পূন্যময় এই কাজটির সুন্নাহসম্মত কিছু দোআ ও পদ্ধতি
ছবিঃ অন্তর্জাল হতে সংগৃহিত।
কৈফিয়তঃ রোগীদর্শনের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের এই পোস্টটি হাদিসের আলোকেই লিখিত। বলার অপেক্ষা রাখে না, সঙ্গত কারণেই এটি বিশ্বাসী ব্যক্তিদের জন্য। ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই অনুরোধ রাখছি, এই পোস্ট কিংবা পোস্টের কোন অংশ মনঃপুত না হলে তারা পোস্টটি অবশ্যই এড়িয়ে যেতে পারেন।
রোগীদর্শন ইসলামী শরিয়াতে গুরুত্বপূর্ণ সাওয়াবের কাজঃ
রুগ্ন বা রোগী অর্থাৎ, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া ইসলামী শরিয়াতে অনেক বড় সাওয়াবের একটি কাজ। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহও এটি। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাওয়া, তার খোঁজ-খবর নেওয়া, প্রয়োজনাদি পূরণ করে সাধ্যমত পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি বিষয়গুলোকে ইসলামের পরিভাষায় 'ইয়াদাতুল মারীয' বলা হয়। এটি এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের একটি হক বা অধিকারও বটে। হাদিসে এর অনেক ফজিলত বিবৃত হয়েছে।
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে লাভ কী?
ইয়াদাতুল মারীয তথা আন্তরিকতা নিয়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ হয়। অন্তর বিগলিত হয়। মৃত্যু এবং পরকালের অনুভূতি জাগ্রত হয়। একইসাথে নেক আমলের প্রতি আগ্রহ উদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, খোদ এ আমলটিই অনেক বড় একটি সওয়াবলাভের কারণ। এতে অফুরন্ত সাওয়াব লাভ হয়। পাশাপাশি এই আমলের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত হয়। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। অসুস্থ ব্যক্তি সাহস এবং প্রবোধ লাভ করে। এসবের ফলে তার সুস্থতা ত্বরান্বিত হয়। হাদিসের ভাষ্যে এ কথাও জানা যায় যে, গুরুত্বপূর্ণ এই আমলে অভ্যস্তদের জন্য ফেরেশতাগণ রহমত ও মাগফিরাতের দুআ করতে থাকেন। আসমানে তাদের জন্য জান্নাতের ঘোষণা হতে থাকে। কোন ব্যক্তি/ ব্যক্তিবর্গ যতক্ষণ রোগীর সেবায় ব্যস্ত থাকেন ততক্ষণ তিনি/ তারা আল্লাহর রহমতের বেষ্টনীতে থাকেন। আল্লাহর দৃষ্টিতে তারা জান্নাতের বাগানে বিচরণ করতে থাকেন। সর্বোপরি হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী রোগীর সেবা প্রকারান্তরে যেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলারই সেবা। তাই আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত, মহিমান্বিত এই আমলটির প্রতি যত্নবান হয়ে এর অফুরন্ত ফায়দা অর্জন করে লাভবান হতে সচেষ্ট থাকা।
সুন্নাহসম্মত কিছু দোআ ও আমলঃ
রোগী দেখতে গেলে তার জন্য আল্লাহর দরবারে কিভাবে দোয়া করতে হবে সে বিষয়ে হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সম্মানিত পাঠকবৃন্দের সুবিধার্থে বিষয়টি নিয়ে সামান্য আলোকপাত করার প্রয়াস পাব ইনশা-আল্লাহ।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোনো রুগ্ন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, যার এখনো মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়নি (কঠিন রোগে আক্রান্ত) এবং তার নিকট সাতবার এই দোয়াটি বলে- أَسْأَلُ اللهَ العَظيمَ، رَبَّ العَرْشِ العَظِيمِ، أَنْ يَشْفِيَكَ উচ্চারণ, ''আসআলুল্লাহাল আজিমা, রাব্বাল আরশিল আজিমি, আঁইয়্যাশফিয়াক'’, অর্থাৎ, '`আমি সুমহান আল্লাহ, মহান আরশের প্রভূর নিকট তোমার আরোগ্য (সুস্থতা) প্রার্থনা করছি` - আল্লাহ তাআ'লা তাকে সে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন।'’ -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১০৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ২০৮৩; আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৫৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৩৮, ৩২৯৮
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন বেদুঈনকে দেখতে গেলেন। আর তাঁর নিয়ম ছিল এমনই যে, যখন তিনি কোনো রোগী দেখতে যেতেন তখন বলতেন-لَا بَأْسَ طُهُوْرٌ اِنْشَاءَ اللهُ উচ্চারণ, ''লা- বা’সা তুহু-রুন ইনশাআল্লাহ।'' অর্থাৎ, ‘'ভয় নেই, আল্লাহর মেহেরবানীতে আরোগ্য লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।'' -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৬১৬, ৫৬৫৬, মুসলিম, মিশকাত
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবেই অসুস্থ ব্যক্তিকে শান্তনা দিতেন। বিভিন্নভাবে প্রবোধ যোগাতেন। অতএব আমাদেরও কর্তব্য হওয়া উচিত, অসুস্থ ব্যক্তিকে উৎসাহ ও সাহস যোগানো। রোগীকে অসুস্থতার বিভিন্ন ফযীলত শোনানো। যেমন- রোগীকে এ কথা বলা যে, ''রোগ আল্লাহ তাআলাই দিয়েছেন আবার তিনিই তা দূর করে দিবেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার মর্তবা ও মর্যাদা বুলন্দ করেন। গুনাহ মিটিয়ে দেন। রোগ ব্যধি আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। তাই এমন মুহূর্তে আরো বেশি আল্লাহমুখি হওয়া দরকার।'' এভাবে রোগীকে আশ্বস্ত করলে তার মাঝে আশার সঞ্চার হয়। হতাশা দূর হয় সর্বোপরি যা তার সুস্থতা ত্বরান্বিত করে।
অসুস্থ রোগীদের প্রতি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কতটা গভীর আন্তরিকতা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন তা উপলব্ধি করা যায় নিচে উল্লিখিত হাদিস থেকে, যেখানে বলা হয়েছে-
إِذَا دَخَلْتُمْ عَلَى الْمَرِيضِ، فَنَفِّسُوا لَهُ فِي الْأَجَلِ، فَإِنّ ذَلِكَ لَا يَرُدّ شَيْئًا، وَهُوَ يُطَيِّبُ بِنَفْسِ الْمَرِيضِ.
যখন তোমরা কোনো অসুস্থ ব্যক্তির নিকট যাবে তখন তাকে জীবন সম্পর্কে আশান্বিত করবে। এতে যদিও তার তাকদীর থেকে কোনো কিছু টলাবে না। তবে রোগীকে তা প্রবোধ যোগাবে। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৪৩৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ২০৮৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/২৩৬; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৮৭৭৮
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ যখন অসুস্থ হতো তখন রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের ডান হাত রোগীর শরীরে বুলাতেন এবং বলতেন- اَذْهَبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ - وَاشْفِ اَنْتَ الشَّافِي - لَا شِفَاءَ اِلَّا شِفَائُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقْمًا উচ্চারণ, ''আজহাবিল বা’সা রব্বান্না-সি, ওয়াশফি আনতাশ শা-ফি-, লা শিফাআ’ ইল্লা- শিফা-উকা শিফা-আ’ লা- ইউগা-দিরু সাক্বমা।'' অর্থাৎ, ''হে মানুষের প্রতিপালক! এ রোগ দূর করুন এবং আরোগ্য দান করুন, আপনিই আরোগ্যদানকারী। আপনার আরোগ্য ব্যতিত কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য, যা বাকী রাখে না কোনো রোগ।'' -সহিহ বুখারি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২৬
অন্য বর্ণনায় এসেছে, কেউ অসুস্থ হলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দুআ পড়ে তাকে ফুঁক দিতেন-
امْسَحِ الْبَأْسَ رَبّ النّاسِ، بِيَدِكَ الشِّفَاءُ، لَا كَاشِفَ لَهُ إِلّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: ইমছাহিল বা'ছা রব্বান্না-সি, বিইয়াদিকাশশিফা-, লা- কা-শিফা লাহূ ইল্লা- আনতা।
হে মানবকুলের রব, আপনি দুঃখ দুর্দশা দূর করে দিন। আপনার হাতেই শেফা। আপনি ছাড়া এটা দূর করার কেউ নেই। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪৯৯৫, ২৫৭৪০
আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا عَادَ مَرِيضًا يَضَعُ يَدَهُ عَلَى الْمَكَانِ الّذِي يَأْلَمُ ثُمّ يَقُولُ بِسْمِ اللهِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অসুস্থ কাউকে দেখতে যেতেন তখন রোগী যে স্থানে পীড়া বোধ করত সেখানে তিনি বিসমিল্লাহ বলে হাত রাখতেন। -ফাতহুল বারী ১০/১২১
হাঁ, নবীজীর মহিমান্বিত অভ্যাস এমনই ছিল। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রাহ. উল্লেখ করেন-
وَكَانَ يَدْنُو مِنْ الْمَرِيضِ وَيَجْلِسُ عِنْدَ رَأْسِهِ وَيَسْأَلُهُ عَنْ حَالِهِ فَيَقُولُ كَيْفَ تَجِدُك ؟ وَذَكَرَ أَنّهُ كَانَ يَسْأَلُ الْمَرِيضَ عَمّا يَشْتَهِيهِ فَيَقُولُ هَلْ تَشْتَهِي شَيْئًا ؟ فَإِنْ اشْتَهَى شَيْئًا وَعَلِمَ أَنّهُ لَا يَضُرّهُ أَمَرَ لَهُ بِهِ . وَكَانَ يَمْسَحُ بِيَدِهِ الْيُمْنَى عَلَى الْمَرِيضِ .
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাধারণ নিয়ম ছিল, তিনি অসুস্থ ব্যক্তির একেবারে মাথার কাছে গিয়ে বসতেন। তার অবস্থাদি জেনে নিতেন। পরম মমতায় জিজ্ঞাসা করতেন- كَيْفَ تَجِدُك ؟ -তোমার কেমন লাগছে? তিনি রোগীকে জিজ্ঞাসা করতেন, তার মনে কী চায়? কিছু লাগবে কি না? সে কিছু চাইলে তিনি তা পূরণ করার নির্দেশ দিতেন, যদি তাতে রোগীর কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা না থাকতো। তিনি অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে তাঁর বরকতময় হাত বুলিয়ে দিতেন। -যাদুল মাআদ, ১/৪৭৫
রোগী যখন স্বয়ং প্রিয় নবীজীঃ
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হলে হযরত জিবরীল আ. এসে ফুঁ দিয়ে যেতেন। একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে জিজ্ঞাসা করলেন-
يَا مُحَمّدُ اشْتَكَيْتَ؟
মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন?
নবীজী বললেন-
نَعَمْ -হাঁ।
তখন হযরত জিবরীল আ. বললেন-
بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি উরক্কি-কা মিন কুল্লি শাইয়্যিন ইউ'জি-ক।
আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি, প্রত্যেক ওই বস্তু থেকে যা আপনাকে কষ্ট দেয়, প্রত্যেক হিংসুক ব্যক্তি অথবা তার নজর থেকে, আল্লাহ আপনার শেফা করবেন। আমি আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিয়ে দিচ্ছি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৮৫, ২১৮৬
জিবরাঈল আ. যে দুআ পড়ে নবীজীকে ঝাড়-ফুঁক করেছেন, আমরাও আমাদের রোগীদের সেই দুআ পড়ে ঝাড়-ফুঁক করতে পারি, বিশেষ করে নজর বা আসরের রোগীকে।
অসুস্থ ব্যক্তি নিজেও নিজের জন্য দুআ করতে পারেঃ
অসুস্থ ব্যক্তি নিজেও নিজের জন্য দুআ করতে পারে। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সে দুআও শিখিয়ে দিয়েছেন।
এক সাহাবী নবীজীর নিকট এসে বললেন, ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে আমি শরীরে ব্যথা অনুভব করছি। নবীজী এ শুনে বললেন, তোমার শরীরের যে স্থানে ব্যথা অনুভব করছ সেখানে তুমি হাত রেখে তিনবার বিসমিল্লাহ বলে সাতবার এই দুআ পড়-
أَعُوذُ بِاللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ.
উচ্চারণ: আউযু বিল্লাহি ওয়া কুদরতিহী মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২০২
অর্থাৎ, আল্লাহ এবং তাঁর কুদরতের শরণাপন্ন হচ্ছি-যা আমি অনুভব করি এবং যা আশঙ্কা করি, তার অকল্যাণ থেকে।
রোগীর কাছেও চাইতে হবে দোয়া, কারণ তাদের দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতঃ
রোগী দেখতে গিয়ে স্বয়ং রোগীর কাছে দোয়া কামনা করার কথা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। অনেকের হয়তো এটি জানাও নেই। অথচ রোগীর কাছে দোয়া কামনা করাও গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। হ্যাঁ, যে কোনো রোগীর কাছে নিজের জন্য দোয়া চেয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে হাদিসে। কারণ, হাদিসে রোগীর দোআকে ফেরেশতাদের দোআর সাথে তুলনা করা হয়েছে। উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বলেন, ''যখন তুমি কোনো রোগীর কাছে যাবে, তাকে বলবে তোমার জন্য দোয়া করতে। কেননা, তার দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতো।'' -সুনানে ইবনে মাজাহ-১৪৪১
রোগীর কষ্টের কারণ হওয়া উচিত নয়ঃ
এতদবিষয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের প্রতিও লক্ষ্য রাখা একান্ত জরুরি। রোগী দেখতে গিয়ে আমাদের উচিত রোগীর কষ্ট হয় এমন সকল আচরণ থেকে বিরত থাকা। রোগীর সার্বক্ষনিক সেবায় নিযুক্ত ব্যক্তিগণ ব্যতিত অন্য দর্শনার্থী এবং শুভাকাঙ্খীদের উচিত সংক্ষেপে রোগীর কাছ থেকে বিদায় নেয়া। অপ্রয়োজনে রোগীর কাছে দীর্ঘ সময় অবস্থান করার কারণে তার সেবা বিঘ্নিত হয় কি না কিংবা রোগী বিরক্ত হন কি না এসব দিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত। মোট কথা, রোগীর জন্য কষ্টের কারণ হতে এমন সকল কাজ থেকেই বিরত থাকা একান্ত আবশ্যক। অপ্রয়োজনীয় এবং বিরক্তিকর প্রশ্ন কোনক্রমেই তাকে করা উচিত নয়।
নিবন্ধে উল্লিখিত সবগুলো দোয়া একনজরেঃ
নিবন্ধে আলোচিত দোয়াগুলো বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ছড়ানো ছিটানো। এক নজরে যদি সবক'টি দোয়া দেখতে চাই তাহলে এভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে-
এক. রোগীর নিকট উপস্থিত হয়ে সাতবার এই أَسْأَلُ اللهَ العَظيمَ، رَبَّ العَرْشِ العَظِيمِ، أَنْ يَشْفِيَكَ উচ্চারণ, ''আসআলুল্লাহাল আজিমা, রাব্বাল আরশিল আজিমি, আঁইয়্যাশফিয়াক'’ পাঠ করা। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১০৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ২০৮৩; আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৫৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৩৮, ৩২৯৮
দুই. রোগী দর্শনকালে -لَا بَأْسَ طُهُوْرٌ اِنْشَاءَ اللهُ উচ্চারণ, ''লা- বা’সা তুহু-রুন ইনশাআল্লাহ'' পাঠ করা। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৬১৬, ৫৬৫৬, মুসলিম, মিশকাত
তিন. ডান হাত রোগীর শরীরে বুলিয়ে দিয়ে اَذْهَبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ - وَاشْفِ اَنْتَ الشَّافِي - لَا شِفَاءَ اِلَّا شِفَائُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقْمًا উচ্চারণ, ''আজহাবিল বা’সা রব্বান্না-সি, ওয়াশফি আনতাশ শা-ফি-, লা শিফাআ’ ইল্লা- শিফা-উকা শিফা-আ’ লা- ইউগা-দিরু সাক্বমা'' পাঠ করা। -সহিহ বুখারি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২৬
চার. امْسَحِ الْبَأْسَ رَبّ النّاسِ، بِيَدِكَ الشِّفَاءُ، لَا كَاشِفَ لَهُ إِلّا أَنْتَ. ''ইমছাহিল বা'ছা রব্বান্না-সি, বিইয়াদিকাশশিফা-, লা- কা-শিফা লাহূ ইল্লা- আনতা'' পাঠ করে রোগীর শরীরে ফুঁক দেয়া। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪৯৯৫, ২৫৭৪০
পাঁচ. بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ. ''বিসমিল্লাহি উরক্কি-কা মিন কুল্লি শাইয়্যিন ইউ'জি-ক'' পাঠ করে রুগ্ন ব্যক্তির শরীরে ফুঁকে দেয়া। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৮৫, ২১৮৬
ছয়. শরীরের যে স্থানে ব্যথা অনুভূত হয় সেখানে হাত রেখে তিনবার বিসমিল্লাহ বলে সাতবার أَعُوذُ بِاللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ. ''আউযু বিল্লাহি ওয়া কুদরতিহী মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু'' দুআটি পাঠ করা। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২০২
সাত. হাদিসের নির্দেশনা إِذَا دَخَلْتُمْ عَلَى الْمَرِيضِ، فَنَفِّسُوا لَهُ فِي الْأَجَلِ، فَإِنّ ذَلِكَ لَا يَرُدّ شَيْئًا، وَهُوَ يُطَيِّبُ بِنَفْسِ الْمَرِيضِ. অনুযায়ী অসুস্থ ব্যক্তিকে জীবন সম্পর্কে আশান্বিত করা। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৪৩৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ২০৮৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/২৩৬; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৮৭৭৮
পরিশেষেঃ
পরিশেষে, অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থতা সকলেরই কাম্য। সে কারণে প্রত্যেকেরই উচিত হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী ইয়াদাতুল মারীদ এর সুন্নাহ পরিপালনে যত্নবান হওয়া। রোগীর জন্য দোয়া করার ক্ষেত্রেও অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শিখিয়ে দেয়া পদ্ধতি। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে সুস্থতার নেআমতে বিভূষিত করুন। আমাদের রোগীদের সুস্থতা দান করুন। সর্বোপরি, রোগী দেখার ক্ষেত্রে হাদিসে বর্ণিত দোআ এবং নির্দেশনার ওপর আমল করে আমাদেরকে কাঙ্খিত ফায়দালাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:১৭
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার কাছে মঙ্গল গ্রহের গল্প মনে হতে পারে - এমনটা অনুমান করেই পোস্টের শুরুতে কৈফিয়ত পেশ করে রেখেছি। তারপরেও আপনার সদয় জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখছি, অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসা প্রদানের বিষয়টি ইসলামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যাপারে ইসলামী শরিয়তে কোন বাধা থাকার প্রশ্ন তো নেই-ই, বরং বরাবরই অসুস্থ ব্যক্তির সেবা শুশ্রুষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে ইসলাম ধর্মে।
ইসলামী আকিদা অনুসারে দাওয়া বা ওষুধ পথ্যের পাশাপাশি রোগীর রোগমুক্তির ক্ষেত্রে দোআরও বিশেষ গুরুত্ব ও ভূমিকাকে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে। এই পোস্টে মূলতঃ সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আর এখানে এটাই হয়তো আপনার আপত্তির কারণ। যা হোক, আপনি জ্ঞানী ব্যক্তি। আপনাকে বুঝাতে না পারা - ধরে নিচ্ছি, আমারই ব্যর্থতা।
শুভকামনা জানবেন। ধন্যবাদ।
২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৫৩
কামাল১৮ বলেছেন: হিন্দু রোগিকে কি মুসলমান ডাক্তার চিকিতসা করেতে পারে?হিন্দু ডাক্তারের কাছে কি মুসলমান রোগী চিকিৎসার জন্য যেতে পারে।ইসলাম কি বলে?
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:২০
নতুন নকিব বলেছেন:
আমার জানামতে, প্রয়োজন হলে অবশ্যই পারবে। উভয় ক্ষেত্রেই পারবে।
ধন্যবাদ।
৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: ধর্মের দিন শেষ।
এখন রুপকথা কেউ বিশ্বাস করে না।
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫৯
নতুন নকিব বলেছেন:
জ্বি, গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যে ধন্যবাদ।
৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:১৬
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: মুমিনদের জন্য দরকারী পোষ্ট। যারা মুমিন নয় তাদের জন্য এ পোষ্ট দরকারী কিছু নয়। পোষ্টটির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কবি। আর আমি আপনার মোবাইল নম্বরটি হারিয়ে ফেলেছি।
৫| ০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ ভোর ৫:২৪
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
রোগীর জন্য দোয়া করলে একদিকে আল্লার অশেষ মেহেরবানীতে রোগের নিরাময় হয়
অপরদুকে রোগীর মনোবল বাড়ার পাশাপাশি দোয়াকারীর মনের প্রসন্ততা বাড়ে।
রোগীর দোয়াও দোয়াকারীর তরে উপকারে লাগে বিবিধ প্রকারে ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৭
সোনাগাজী বলেছেন:
মানুষ অসুস্হ হলে, পরিবারের লোকেরা ও আত্মীয়রা দেখেন, সাহায্য করেন; অবস্হা বুঝে প্রতিবেশীরাও দেখেন; অবস্হা বুঝে প্রাইম মিনিষ্টারও দেখেন। ১ জন অসুস্হ ব্লগারকে ২ জন ব্লগার দেখে আসলেন। আপনি যা লিখছেন, ইহা মনে হচ্ছে মংগল গ্রহের গল্পের মতো, সমাজের সাথে তেমন মিলে না।