![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
সাবমেরিন পানির নিচে থেকেও কীভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে? কোন দেশ কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে? সাবমেরিন, ছবিটি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।
সাবমেরিনগুলো পানির নিচে থাকা অবস্থায় যোগাযোগ রক্ষার জন্য বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, কারণ সাধারণ রেডিও তরঙ্গ (radio waves) লবণাক্ত পানির মধ্য দিয়ে ভালোভাবে প্রবাহিত হতে পারে না। পানির নিচে যোগাযোগের জন্য প্রধানত নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহৃত হয়:
১. অ্যাকোস্টিক কমিউনিকেশন (Acoustic Communication)
কীভাবে কাজ করে: পানির নিচে শব্দ তরঙ্গ (acoustic waves) ব্যবহার করা হয়। এটি একটি অ্যাকোস্টিক ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে শব্দ সংকেত পাঠায়, যা হাইড্রোফোন দ্বারা গ্রহণ করা হয়। এই পদ্ধতি দীর্ঘ দূরত্বে (কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত) কাজ করে, তবে ডেটা ট্রান্সফার রেট কম এবং শব্দের প্রতিফলন বা তাপমাত্রার স্তরের কারণে সিগন্যাল বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
উদাহরণ: আন্ডারওয়াটার টেলিফোন (যেমন, Gertrude) এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। মার্কিন নৌবাহিনীর AN/BQC-1 এবং আধুনিক সংস্করণ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
২. ভেরি লো ফ্রিকোয়েন্সি (VLF) রেডিও তরঙ্গ
কীভাবে কাজ করে: VLF তরঙ্গ (৩-৩০ kHz) পানির ২০–৪০ মিটার গভীরে প্রবেশ করতে পারে। সাবমেরিন অগভীর গভীরতায় থাকলে এই তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে। গভীর পানিতে থাকলে একটি তারযুক্ত বয়া (buoy) পানির উপরে ভাসিয়ে অ্যান্টেনার মাধ্যমে সিগন্যাল গ্রহণ করা হয়। তবে এই পদ্ধতি সাবমেরিনকে সনাক্তকরণের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
ব্যবহারকারী দেশ: নরওয়ে, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান এবং ভারত VLF সুবিধা ব্যবহার করে।
৩. এক্সট্রিমলি লো ফ্রিকোয়েন্সি (ELF) রেডিও তরঙ্গ
কীভাবে কাজ করে: ELF তরঙ্গ (৩০-৩০০ Hz) পানির নিচে শত শত মিটার গভীরতায় প্রবেশ করতে পারে, যা সাবমেরিনের গোপনীয়তা বজায় রাখতে সহায়ক। তবে এর ডেটা ট্রান্সফার রেট খুবই কম, এবং এটি একমুখী যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয় (যেমন, সাবমেরিনকে পৃষ্ঠে আসার নির্দেশ দেওয়া)। ELF ট্রান্সমিটার তৈরি করা অত্যন্ত জটিল এবং ব্যয়বহুল, কারণ এর জন্য বিশাল অ্যান্টেনা প্রয়োজন।
ব্যবহারকারী দেশ:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: প্রজেক্ট ELF (৭৬ Hz) ব্যবহার করত, যা উইসকনসিন ও মিশিগানে অবস্থিত ছিল। ২০০৪ সালে এটি বন্ধ করা হয়।
রাশিয়া: ZEVS (৮২ Hz) নামে একটি ELF সুবিধা কোলা উপদ্বীপে (মুরমানস্কের কাছে) ব্যবহার করে।
চীন: বিশ্বের বৃহত্তম ELF সুবিধা তৈরি করেছে (নিউ ইয়র্ক সিটির সমান আকারের), যা সাবমেরিনের সাথে গভীর পানিতে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ভারত: INS কট্টাবোমান নৌঘাঁটিতে VLF সুবিধা রয়েছে, যা ২০১২ থেকে ELF যোগাযোগের জন্য আপগ্রেড করা হয়েছে। এটি অরিহান্ত এবং আকুলা শ্রেণির সাবমেরিনের সাথে যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়।
৪. ট্রান্সলেশনাল অ্যাকোস্টিক-আরএফ (TARF) কমিউনিকেশন
কীভাবে কাজ করে: এটি একটি নতুন প্রযুক্তি, যেখানে অ্যাকোস্টিক সিগন্যাল পানির পৃষ্ঠে পাঠানো হয়, যা পৃষ্ঠে ক্ষুদ্র কম্পন সৃষ্টি করে। এই কম্পন ৩০০ GHz রেডারের মাধ্যমে সনাক্ত করা হয়, যা সাবমেরিন থেকে বিমানের সাথে যোগাযোগ সম্ভব করে। এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং বড় তরঙ্গের কারণে সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন।
ব্যবহারকারী দেশ: এটি MIT-তে উন্নয়নাধীন, তাই এখনও কোনো দেশ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই প্রযুক্তির গবেষণায় এগিয়ে রয়েছে।
৫. অপটিক্যাল কমিউনিকেশন (Li-Fi ও লেজার)
কীভাবে কাজ করে: নীল/সবুজ আলোর স্পেকট্রামে (৪৫০-৫৫০ nm) অপটিক্যাল সিগন্যাল ব্যবহার করে স্বল্প দূরত্বে (১০০ মিটারের কম) উচ্চ গতির ডেটা ট্রান্সফার সম্ভব। লেজার-ভিত্তিক যোগাযোগ আরও নির্ভুলতা দাবি করে।
ব্যবহারকারী দেশ: চীন এই প্রযুক্তির উপর গবেষণা করছে, বিশেষ করে বেইডু সিস্টেমের সাথে সমন্বয় করে।
৬. কোয়ান্টাম কমিউনিকেশন
কীভাবে কাজ করে: কোয়ান্টাম কী ডিস্ট্রিবিউশন (QKD) ব্যবহার করে অত্যন্ত সুরক্ষিত যোগাযোগ সম্ভব, যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নীতির উপর ভিত্তি করে। এটি গভীর পানিতে দ্রুত এবং নিরাপদ যোগাযোগের সম্ভাবনা তৈরি করে।
ব্যবহারকারী দেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ITT Exelis-এর গবেষণা) এবং চীন এই প্রযুক্তির উপর কাজ করছে।
দেশভিত্তিক ব্যবহার:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: অ্যাকোস্টিক টেলিফোন (Gertrude), VLF, এবং পূর্বে ELF (প্রজেক্ট ELF, বন্ধ ২০০৪)। TARF এবং কোয়ান্টাম যোগাযোগের গবেষণায় এগিয়ে।
রাশিয়া: অ্যাকোস্টিক যোগাযোগ (SOSUS-এর মতো সিস্টেম), VLF, এবং ELF (ZEVS, ৮২ Hz)।
চীন: বিশ্বের বৃহত্তম ELF সুবিধা, অপটিক্যাল যোগাযোগ (Li-Fi), এবং বেইডু সিস্টেমের সাথে সমন্বিত অ্যাকোস্টিক যোগাযোগ।
ভারত: INS কট্টাবোমানে VLF এবং ELF যোগাযোগ, অরিহান্ত এবং আকুলা শ্রেণির সাবমেরিনের জন্য।
ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান: VLF সুবিধা ব্যবহার করে। এই দেশগুলো অ্যাকোস্টিক যোগাযোগেও নির্ভর করে।
জার্মানি: Type 212A সাবমেরিন শাব্দিক এবং VLF যোগাযোগ ব্যবহার করে। জার্মানি উন্নত শাব্দিক মডেম এবং এনক্রিপশন প্রযুক্তিতে দক্ষ।
বৃটেন: Vanguard-class এবং Astute-class সাবমেরিন VLF এবং শাব্দিক যোগাযোগ ব্যবহার করে। যুক্তরাজ্যের Skynet স্যাটেলাইট সিস্টেম সারফেস যোগাযোগ সমর্থন করে।
তুরস্ক: তুরস্কের Type 209 এবং Reis-class সাবমেরিন শাব্দিক এবং VLF যোগাযোগ ব্যবহার করে। তুরস্ক স্থানীয়ভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন করছে।
মিশর: মিশরের Type 209 সাবমেরিন (জার্মানি থেকে সরবরাহকৃত) শাব্দিক এবং VLF যোগাযোগ ব্যবহার করে।
অন্যান্য দেশ: অস্ট্রেলিয়া (Collins-class), জাপান (Soryu-class), এবং দক্ষিণ কোরিয়া (Type 209) শাব্দিক এবং VLF যোগাযোগ ব্যবহার করে। এই দেশগুলো প্রায়শই মার্কিন বা ইউরোপীয় প্রযুক্তির সাথে সমন্বয় করে। বাংলাদেশের নৌবাহিনীতে দুটি সাবমেরিন রয়েছে—নবযাত্রা এবং জয়যাত্রা (Type 035G, চীন থেকে সরবরাহকৃত)। এগুলো শাব্দিক যোগাযোগ এবং VLF ব্যবহার করে। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা চীনের প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল।
পানির নিচে নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি:
আন্ডারওয়াটার ইন্টারনেট অফ থিংস (UIoT): স্বয়ংক্রিয় আন্ডারওয়াটার ভেহিকল (AUV) এবং সেন্সর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ডেটা সংগ্রহ ও প্রেরণ করা হয়। অ্যাকোস্টিক যোগাযোগ এখানে প্রধান মাধ্যম।
ফাইবার অপটিক কেবল: সাবমেরিন কেবলগুলো বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ডেটা প্রবাহের ৯৫% বহন করে। এগুলো সাবমেরিন যোগাযোগে সরাসরি ব্যবহৃত না হলেও, স্থলভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সাথে সংযোগে গুরুত্বপূর্ণ।
JANUS প্রোটোকল: NATO-র ২০১৭ সালে প্রবর্তিত এই প্রোটোকল অ্যাকোস্টিক যোগাযোগের জন্য ৯০০ Hz থেকে ৬০ kHz ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে, যা ২৮ কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ করে।
সারসংক্ষেপ:
পানির নিচে সাবমেরিন যোগাযোগে অ্যাকোস্টিক, VLF, ELF, অপটিক্যাল এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উন্নত প্রযুক্তি (TARF, Li-Fi, QKD) নিয়ে গবেষণায় এগিয়ে, রাশিয়া ও ভারত ELF এবং VLF-এর উপর নির্ভরশীল, এবং ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য প্রধানত VLF ও অ্যাকোস্টিক পদ্ধতি ব্যবহার করে। প্রতিটি দেশের প্রযুক্তি নির্বাচন তাদের সাবমেরিনের কৌশলগত চাহিদা এবং গোপনীয়তার প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে।
২৯ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৫:২৮
নতুন নকিব বলেছেন:
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আপনার উৎসাহের জন্য।
সাবমেরিন দুর্ঘটনা নিয়ে লেখার অনুরোধটি গ্রহণ করলাম, ইনশাআল্লাহ শিগগিরই লিখব।
আপনার পাশে থাকাটাই আমাদের এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা। এমন হৃদ্যতার জন্য আবারও ধন্যবাদ।
২| ৩০ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: পড়ড়লাম। জানলাম। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
৩১ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:৫৬
নতুন নকিব বলেছেন:
পড়েছেন জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে। আপনিও ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
৩| ৩০ শে মে, ২০২৫ সকাল ১০:০০
অগ্নিবাবা বলেছেন: সবই আল্লাহ করিয়ে নেন।
৩১ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০২
নতুন নকিব বলেছেন:
বুঝলাম। ধন্যবাদ। কিন্তু কথা হচ্ছে, লেখাপড়া জানা একজন চৌকষ মানুষ, আল্লাহর প্রতি এত অভিমান নিয়ে কি করে থাকতে পারেন, সেটাই বিস্ময়!
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৫:১৪
অপলক বলেছেন: দারুন...
সাবমেরিন দুর্ঘটনা নিয়ে লিখুন কিছু... অনুরোধ রইল...