নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তা হচ্ছে কাজের সূক্ষ্ম শরীর

"আকাশে নক্ষত্র দেখে নক্ষত্রের মতন না হয়ে পারিনি আমি / নদী তীরে বসে তার ঢেউয়ের কাঁপন, / বেজেছে আমার বুকে বেদনার মত / ঘাসের হরিৎ রসে ছেয়েছে হৃদয়"। _আহমদ ছফা

আবু নাঈম

'আগুনের ছবি দেখতে আগুনের মতো দেখালেও পোড়াবার ক্ষমতা থাকে না' _ আহমদ ছফা

আবু নাঈম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আপনি আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি? -- ড. আসিফ নজরুল

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:৩২

আপনি আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি? -- আসিফ নজরুল



একটি জাতীয় দৈনিকে ড. আসিফ নজরুলের এ লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল।



বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় নতুন যুক্ত হয়েছে ব্লগ। বহু ব্লগ ওয়েবসাইটে এখন কলাম লেখকদের লেখা রাখা হয়। তার নিচে পাঠকদের মন্তব্য করার সুযাগ থাকে। এসব মন্তব্যের বিষয়ে জানা ছিল না আমার। একদিন একজন নিয়মিত পাঠক কিছু ব্লগের ঠিকানা দিয়ে পাঠান। সেখানে গিয়ে দেখি ভয়াবহ সব ব্যাপার। প্রধান দৈনিকগুলোর কিছু ব্লগের লেখা শালীন, যুক্তিপূর্ণ এবং সুচিন্তিত। কিন্তু অন্য অনেক ব্লগ আক্ষরিক অথেই বিকৃত মানুষের আখড়া। সেখানে এত জঘন্য ও ঘৃণ্য মন্তব্য লেখা হয় যে, তা পড়লে বুকের রক্ত হিম হয়ে যাবে যে কোনো সুস্থ মানুষের।



কোনোরকম সম্পাদনা ছাড়া এসব মন্তব্য ছাপানো হয় কেন তা ব্লগের মালিকগণই জানেন। হয়তো তারা কলমের স্বাধীনতায় অতিমাত্রায় বিশ্বাসী, হয়তো তারা নিজেরা এসব পড়ে দেখেননি কোনোদিন, হয়তো এভাবেই পাঠকদের আগ্রহী করতে চান তারা।

আমার এই লেখা আসলে এসব ব্লগ নয়, বরং রুচিশীল ব্লগগুলো নিয়ে। এমন একটি ব্লগে আমার প্রতিটি লেখাই রাখা হয়। দু’সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে একটি লেখা প্রথম আলোতে লিখেছিলাম। যে ব্লগের কথা বলছি, সেখানে গিয়ে দেখি বেশ কয়েকজন পাঠক আমাকে ভারতপন্থি বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্য একজন লিখেছেন, বিএনপির কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার পর আমি কীভাবে এসব লিখি!

সেই পাঠকের দোষ দিই কীভাবে? স্বয়ং গাফফার চৌধুরীই একবার সমকালে আমাকে বিএনপিপন্থি লেখক হিসেবে আখ্যায়িত করে বিরাট লেখা লিখেছিলেন। তার উত্তরে সবিস্তারে আমি ঠিক বিএনপি আমলেই কতবার তাদের সমালোচনা করে লিখেছি এবং খালেদা জিয়ার প্রথম আমলে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার আসামি হয়েছি, তার বিবরণ দিতে বাধ্য হই। চ্যালেঞ্জ করি বিএনপির কাছ থেকে কোনোরকম সুবিধা নেওয়ার বিষয়েও। কিন্তু কে শোনে কার যুক্তিতর্ক? কিছু পাঠকের বদ্ধমূল ধারণা, আমি আওয়ামী লীগপন্থি নই, কাজেই অবশ্যই বিএনপিপন্থি। এটি যেন অবধারিত। হয় আওয়ামী লীগ, না হলে বিএনপি। মাঝামাঝি বা নিরপেক্ষ থাকার জো নেই কারও। জর্জ বুশের মানসিকতা এত সুদৃঢ়ভাবে আমাদের অনেকের চিন্তা-চেতনাকে গ্রাস করেছে যে, অবাক হতে হয় মাঝে মাঝে।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার অনুজপ্রতিম নীল দলের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, আপনাকে সাদা দলে মানায় নাকি স্যার, আমাদের দলে চলে আসুন। অন্যদিকে সাদা দলের কিছু শিক্ষকের ধারণা, আমি জাহানারা ইমামের নির্মূল কমিটির আন্দোলনে ছিলাম। কাজেই আমি আসলে নীল দলের লোক। আমি সামান্য মানুষ। যারা অসামান্য, তাদের নিয়ে রয়েছে আরও অনেক বিতর্ক।

সাদা-নীলের পক্ষ নিয়ে মেতে ওঠে কিছু পত্রিকাও। বিশ্ববিদ্যালয়ে নীল দল মানে আওয়ামী লীগ, সাদা দল মানে বিএনপি। যারা সাদা দলের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন করেন, তাদের বাংলাদেশের কিছু শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আর যারা নীল দলের হয়ে নির্বাচন করেন, তাদের উল্লেখ করা হয় বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ বা লেখক হিসেবে। এই বিশিষ্টরা আওয়ামী লীগের এই আমলেও বিভিন্ন ব্যাংক, করপোরেশন বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পেয়ে পুরস্কৃত হয়েছেন। তবু উনারা নিরপেক্ষ, আর সাদারা বিএনপিপন্থি। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থক কিছু পত্রিকায় ঠিক উল্টো চিত্র। সেখানে নীল দলের কাউকে ঘাদানি, নাস্তিক, মুরতাদ ইত্যাদি নামে অভিহিত করা মামুলী বিষয় মাত্র। তাদের সাংবাদিকতায় ঘাদানি মানে আওয়ামী লীগ, নাস্তিক মানে আওয়ামী লীগ, মুরতাদ মানেও আওয়ামী লীগ।

এ দেশে তাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে নিরপেক্ষ আর মুক্তমনা মানুষের। তারা সরকারি চাকরিতে থাকলে অপাঙতেয় থাকেন দুই দলের আমলে, সাংবাদিকতায় থাকলে প্রেসক্লাবে ভেটো পান দুই পক্ষ থেকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকলে ম্রিয়মাণ হয়ে থাকেন সব প্রশাসনের কাছে, আইনজীবি হলে হাইকোর্টের বিচারক হতে পারেন না কোনোসময়ে।



রাজনীতিতে থাকলে স্বতন্ত্রমনাদের আরো বিপদ। যেমন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বা বাসদ। আদর্শভিত্তিক এই দলটি না আওয়ামী লীগপন্থি, না বিএনপিপন্থি। খালেকুজ্জামানসহ এই দলের মূল নেতাদের অনেকে বিয়েই করেননি, ব্যক্তিগত সম্পত্তি দান করেছেন দলের জন্য। এই অবিশ্বাস্য ঘটনা বাংলাদেশে সম্ভব? হ্যা সম্ভব, বাসদ তাই করেছে। কিন্তু, কে শোনে এদের কথা! তাদের সংবাদই দেখি ছাপতে চায় না কোনো পত্রিকা। তাদের সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট-এর ছেলেরা জীবন উৎসর্গ করে দেয় পাঠচক্র, জ্ঞানচর্চা আর সমাজভাবনায়। আমাদের আলোচনায় ভুলেও বলি না তাদের কথা। মহাজোট বা চারদলীয় জোটে নেই যে তারা -- এটাই যেন অপরাধ।

এ দেশে কেমন যেন এক সুপার মার্শাল ল’ জারি হয়ে গেছে। হয় আওয়ামী লীগ, নয়তো বিএনপিপন্থি হতে হবে সবাইকে। সেই পন্থি হতে হবে আবার সর্বতোভাবে। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকার উল্লেখযোগ্য কোনো দুর্নীতি করেনি। এটুকু বললেও বিএনপি হওয়া হলো না। বলতে হবে : বিএনপি কোনোদিনই কোনো দুর্নীতি করেনি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার আমলে কৃষকরা বেশ ভালো অবস্থায় ছিল। এটুকু লিখলে হবে না। আওয়ামী লীগার হতে হলে লিখতে হবে তখন সকলেই মহাসুখে ছিল।

আশার কথা হচ্ছে, দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ এমন সাইকোফ্যান না; বরং অনেক মানুষ এখনও নিরপেক্ষ। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ তারা একবার ভোট দেন বিএনপিকে, আরেকবার আওয়ামী লীগকে। আরেকটি প্রমাণ মিথ্যেমিথ্যি করে হলেও পত্রিকাকে লিখতে হয় আমরা ‘নিরপেক্ষ’। কাজেকর্মে যা-ই হোক, মুখে কিন্তু অনেকেই বলার চেষ্টা করেন যে, আমি ভাই কোনো পন্থি না।



ছোট মুখে একটি কথা বলি। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা বড় কোনো রাজনৈতিক দলই এমন পরিশুদ্ধ নয় যে তাদের গুণপনায় আমাদের মুগ্ধ হয়ে থাকতে হবে। তাদের কেউ ভালো কিছু করলে আমরা সমর্থন করব, খারাপ কিছু করলে সমালোচনা। দলের চেয়ে দেশ বড়, দেশের চেয়ে বড় আর কিছুই নয়। এটি আমরা সকলে যেদিন উপলব্ধি করতে পারব সেদিনই আমাদের প্রকৃত অগ্রগতির সূচনা হবে।



অধ্যাপক ড· আসিফ নজরুলঃ রাজনৈতিক বিশ্লেষক

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১১/-১

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:৪০

নরাধম বলেছেন: ভাল লেখা।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ ভোর ৪:৪৩

আবু নাঈম বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ ...

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:৪৪

হ্যামেলিন এর বাঁশিওয়ালা বলেছেন: ড· আসিফ নজরুল স্যারকে খুব ভাল লাগে। উনি খুব সুন্দর করে যুক্তি দেন।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ ভোর ৪:৪৫

আবু নাঈম বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ ...

৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ ভোর ৫:৫০

মতিউর রহমান চরিয়া বলেছেন: "দলের চেয়ে দেশ বড়, দেশের চেয়ে বড় আর কিছুই নয়। এটি আমরা সকলে যেদিন উপলব্ধি করতে পারব সেদিনই আমাদের প্রকৃত অগ্রগতির সূচনা হবে।"

- বিনীত শ্রদ্ধা জানাই ড· আসিফ নজরুল-এর মত নিরপেক্ষ মতের অধিকরী ব্যক্তিবর্গকে।

৪| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ ভোর ৬:১৫

নস্টালজিক বলেছেন: আসিফ নজরুল এর বিশ্লেষন চমৎকার..

৫| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:১৮

জুল ভার্ন বলেছেন: আমিও ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি-বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা বড় কোনো রাজনৈতিক দলই এমন পরিশুদ্ধ নয় যে তাদের গুণপনায় আমাদের মুগ্ধ হয়ে থাকতে হবে। তাদের কেউ ভালো কিছু করলে আমরা সমর্থন করব, খারাপ কিছু করলে সমালোচনা। দলের চেয়ে দেশ বড়, দেশের চেয়ে বড় আর কিছুই নয়। এটি আমরা সকলে যেদিন উপলব্ধি করতে পারব সেদিনই আমাদের প্রকৃত অগ্রগতির সূচনা হবে।

৬| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:৫২

আজমান আন্দালিব বলেছেন: আমরা যত যাই বলি না কেন কোন লাভ নেই। আমাদের হয় আওয়ামী না হয় বিএনপি পন্থী হতে হবে। নতুবা আমরা যে পেশায়ই থাকিনা কেন ন্যূনতম সুবিধাটুকু পাব না।
এখন আওয়ামী যুগ। আমি হয়ে যাব আওয়ামী গোলাম। আবার বিএনপি সময়ে হব বিএনপি গোলাম। যে এরকম ভাবে চলতে পারবে-
তার হাতেই থাকবে ক্ষমতা।
আর আমি চিরজীবনই থাকব আমজনতা

৭| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:০১

রাজীব বলেছেন: রাজনৈতিক দলের ভাষা এখন একটু পরিবর্তন হয়েছে। এখন হচ্ছে

প্রগতিশীল ধারার রাজনীতি ও স্বাধীনতা বিরোধী রাজনীতি।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:১৯

আবু নাঈম বলেছেন: প্রগতিশীল ধারা আর স্বাধীনতা বিরোধী?
এত পরিস্কার ভাগাভাগি ?

৮| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:০৯

সুবিদ্ বলেছেন: সমর্থনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের অন্ধত্ব পরিহার করতে হবে

৯| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:১৮

মেঘ বলেছে যাবো যাবো বলেছেন: খুব সত্যি কথা। যদিও ড. আসিফ নজরুল কিছুটা হলেও মিডিয়ার পোষা বুদ্ধিজীবীদের দলে চলে গেছেন, তবু ওনার এই কথাগুলো ভালো লাগলো।

১০| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:২৬

জয় সরকার বলেছেন: মেঘ বলেছে যাবো যাবো বলেছেন: খুব সত্যি কথা। যদিও ড. আসিফ নজরুল কিছুটা হলেও মিডিয়ার পোষা বুদ্ধিজীবীদের দলে চলে গেছেন, তবু ওনার এই কথাগুলো ভালো লাগলো।

সহমত!

১১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১:৪৫

পড়ুয়া_পড়ুয়া বলেছেন: রাজনীতিতে থাকলে স্বতন্ত্রমনাদের আরো বিপদ। যেমন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বা বাসদ। আদর্শভিত্তিক এই দলটি না আওয়ামী লীগপন্থি, না বিএনপিপন্থি। খালেকুজ্জামানসহ এই দলের মূল নেতাদের অনেকে বিয়েই করেননি, ব্যক্তিগত সম্পত্তি দান করেছেন দলের জন্য। এই অবিশ্বাস্য ঘটনা বাংলাদেশে সম্ভব? হ্যা সম্ভব, বাসদ তাই করেছে। কিন্তু, কে শোনে এদের কথা! তাদের সংবাদই দেখি ছাপতে চায় না কোনো পত্রিকা। তাদের সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট-এর ছেলেরা জীবন উৎসর্গ করে দেয় পাঠচক্র, জ্ঞানচর্চা আর সমাজভাবনায়। আমাদের আলোচনায় ভুলেও বলি না তাদের কথা। মহাজোট বা চারদলীয় জোটে নেই যে তারা -- এটাই যেন অপরাধ ।

ব্যাপারটা দূঃখজনক , কিন্তু বাসদের ডেডিকেশনটা মিনিমাম এখন বুদ্ধিজীবিরা স্বীকার করেন এবং বাসদকে হাইলাইট করেন না বলে যে ভুল করেন - এই স্বীকৃতি দেখে ভাল লাগলো ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.