নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসো, মুখোশ পড়ে খেলতে বসি, আমি জানি আমি জিতবো - আমি এই খেলাটায় বড্ড পটু!

নাজমুস সাকিব পাখি

৭০০ কোটির মাঝে একজন, সাধারণ!

নাজমুস সাকিব পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোখ মেলে তাকিয়ে আছে সুন্দর

১৮ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:২১





"হঠাৎ কখনো দেখতে পাই সহস্র চোখ মেলে তাকিয়ে আছে সুন্দর।

কেউ যেন ডেকে বলছে– এসো এসো…

কতক্ষণ ধরে বসে আমি তোমার জন্য

মনে পড়ে বন্ধুদের মুখ, যারা শত্রুদের, যারাও হয়তো কখনো আবার বন্ধু হবে।

সন্ধের আকাশ কী অকপট, বাতাসে কোনো মিথ্যে নেই।

তখন খুব আস্তে, ফিসফিস করে, প্রায় নিজেরই কানে-কানে বলি—

একটা মানুষ জন্ম পাওয়া গেল, নেহাৎ অ-জটিল কাটলো না!"



- নিজের কানে কানে : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।



ব্যস্ততার জীবন থেকে সাময়িক ছুটি নিয়ে নাগরিক জীবনে এখন আমার অফুরন্ত অবসর । অবসরের বেশীরভাগটাই কাটে ছোট্ট একচিলতে বারান্দায় চায়ের কাপ হাতে, কখনো বা অমনোযগে পড়তে থাকা গল্পের বইগুলোর সাথে । আবার কখনো বা আধবোজা চোখে সিগারেটের সাথে । এই চেনা নাগরিক আকাশে আলো ঝিলমিল রোদ দেখি, সাদা-কালো মেঘ দেখি । পথে হেঁটে যাওয়া মানুষ দেখি । পিঠার দোকানির বিকেলের জন্য প্রস্তুতি দেখি । হরতালে ছুটি পেয়ে যাওয়া বাচ্চার দল, কোনদিন হয়ত মাকে ফাঁকি দিয়ে নেমে আসে থেমে থাকা রাস্তায় । মাঠে শুয়ে থাকে ক্লান্ত কুকুরের দল আধবোজা চোখে পাইলিং এর লোহা লক্কর এর সাথে । কোন কোনদিন বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন এসে ভেঙ্গে দিয়ে যায় তারের উপর বানানো পাখির বাসাগুলোকে ।



কখনো অযত্নে চোখ বুলাই বারান্দার সামনের সফেদা গাছটির দিকে । এই গাছের পাখি গুলোর সাথে আমার পরিচয় দীর্ঘদিনের । এই গাছের বাসিন্দা ছিল কয়েকজোড়া চড়ুই আর কিছু নাগরিক শালিক । কখনো কখনো বারান্দায় আমার ঝুলন্ত টবে এসে বসে দুই একটা দুরন্ত শালিক নিরাপদ দূরত্ব রেখে । নেড়ে দেয়া কাপড় গুলো তুলবার সময় মা হয়ত দুই একবার এই পাখির দলের দিকে তাকিয়ে খোঁজ নিয়ে নেয় । অযুর পর বাবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে মুখ মোছার সময় পাখি গুলোর কুশল জেনে নেয় । নীচ তলার পিচ্চিটা সপ্তাহান্তে একদিন এসে বারান্দায় আনমনে পাখি দেখে । চড়ুই এর লাফালাফি দেখে । কখনো হাতে থাকা মুড়ি ছিটিয়ে দেয় পাখিরা খাবে বলে । পাখি দলের এই অবস্থানে আমাদের কোন অবদান নেই, কিন্তু এরা যখন থাকে না তখন আমরা বোধ করতে থাকি কে বা কারা যেন নেই ।



চারিদিকে নাগরিক কোলাহল কোন এক গরমের ভর দুপুর থিতিয়ে আসে । অসহ্য গরমের মাঝে লোডশেডিং এ ক্লান্ত মানুষের দল এলাকার বাইরে জীবিকার তাগিদে । আর বাকি যারা আছে ভর পেটে হয়ত ভাতঘুমে গড়িয়ে নিচ্ছে । ঠেলাগাড়ির চালক জিরিয়ে নিচ্ছে তার ঠেলার উপর বসে । ঘর্মক্লান্ত মুখ মুছে নিচ্ছে তার কাঁধের গামছায় । আমার কোলে ক্লান্তভাবে পড়ে আছে সুনীলের কবিতার বই । হঠাৎ দরজায় করাঘাতের শব্দে দরজা খুলে দেখি মায়ের উৎকন্ঠিত মুখ । উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছি, কি হয়েছে জানবার জন্য । বেদনা ক্লিষ্ট মুখে মা জানায় দুষ্ট ছেলের দল গাছে উঠে পাখির বাসা থেকে কয়েকটা বাচ্চা নিয়ে চলে গিয়েছে । মা পাখিটা নাকি তারস্বরে চিৎকার করে কাঁদছে ।



আমি তাড়াতাড়ি বারান্দায় ছুটে গিয়ে দেখতে পাই নতুন এক পাখি । মাথায় কাছটায় সৈনিকের শিরনাস্ত্রের মত । চোখের নীচটায় খয়েরী পরিধীর বৃত্ত, বৃত্তের ভিতরের দিকের অংশটা সাদা, তার মাঝে টকটকে লাল ফুটকি । পুরো গায়ের রঙ খয়েরী আর সাদার মিলমিশ হলেও লেজের নীচের দিকটা টকটকে লাল । এক দেখাতেই চিনতে পারি বুলবুলি । পাখিটা একবার লাফ দিয়ে এসে আমাদের বারান্দার গ্রীলে বসছে, পরমূহুর্তেই ইলেক্ট্রিক ক্যাবলে গিয়ে বসছে, আবার গাছের ডালে নিজের বাসার কাছটায় গিয়ে বাচ্চা গুলোকে খুঁজছে । পুরোটা সময় তারস্বরে চেঁচিয়েই যাচ্ছে । পাখিটার করুণ আহাজারি দেখে রাস্তায় কিছু মানুষের ভীড় জমে গিয়েছে । বারান্দা দিয়ে লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম কেউ দেখেছে কিনা পাখির বাচ্চাগুলো কে নিয়েছে?



নীচে খেলতে থাকা বাচ্চাদের সাহায্য নিয়ে জাকির ছেলেটাকে খুঁজে বের করি । পাখির বাচ্চাগুলো হাতে ছেলেটা দৌড়ে পালায় । অনান্য বাচ্চাদের সহায়তায় জাকিরকে একসময় ধরে ফেলি । ওকে বুঝিয়ে রাজি করাই বাচ্চা গুলোকে ফেরত দেবার জন্য । একসময় জাকির আমার হাতে বাচ্চাগুলোকে তুলে দেয় । বাসায় নিয়ে এসে বারান্দা থেকেই চেষ্টা করি পাখির বাসায় বাচ্চাগুলোকে পৌছে দিতে । কিন্তু হাতের নাগালে না থাকায় সম্ভব হচ্ছিল না । নীচ থেকে শুনতে পাই “ভাইয়া আমার হাতে দেন, আমি তুইলা দিতাছি” । তাকিয়ে দেখি জাকির নিজেই হাজির । হাসি মুখে জাকিরের হাতে তুলে দেই পাখির ছানাগুলোকে । জাকির ছানাগুলোকে বাসায় রাখা মাত্রই মা পাখিটা চুপচাপ এসে বাসার কাছে বসে । আরো তিনটে বুলবুলিও কোথা থেকে যেন এসে বসে ডালটাতে ।



ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকিয়ে দেখি আমার মায়ের চোখে জল চিকচিক করছে ।



(অনেক বার চেষ্টা করেছি মাকে নিয়ে কিছু লিখবার, অক্ষম আমি পেড়ে উঠি না । আজও চেষ্টা করছিলাম মাকে নিয়ে কিছু একটা লিখব । কিন্তু কলম এগুচ্ছে না । আসলে মাকে নিয়ে কি লিখব? পৃথিবীর কোন তুলনা আমার মায়ের সাথে যায়? আমার দূর্বল লিখার কি শক্তি আছে মায়ের কথা বলবার । সেই পাখির ছানাগুলোর মা, আমার মা অথবা যিনি আমার লিখাটা পড়ছেন সবার মা ই তো মা । মা তোমার প্রতি বা তোমাদের প্রতি ভালবাসা । )



সফেদা গাছের এ্যাপার্টমেন্টে দুইজোড়া বুলবুলি তাদের সংসার পেতেছে । ডিম ফুটিয়ে চারটে বাচ্চা সহ মোট আটজন এখন নতুন বাসিন্দা । এদের পোশাকি নাম সৈনিক বুলবুলি । আমি কিছু ছবি তুলেছি । পরে পোস্টের সাথে যোগ করে দিব । আপাতত উইকিমিডিয়ার সৌজন্যে কিছু ছবি ।





সৈনিক বুলবুলি





গাছের ডালে বসা সৈনিক বুলবুলি





বুলবুলির বাসায় সদ্যফোটা ছানা



ভাল থাকুক সবার মা ।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.