নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসো, মুখোশ পড়ে খেলতে বসি, আমি জানি আমি জিতবো - আমি এই খেলাটায় বড্ড পটু!

নাজমুস সাকিব পাখি

৭০০ কোটির মাঝে একজন, সাধারণ!

নাজমুস সাকিব পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেখা আলো, না দেখা রূপ

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৩





অণু গল্প ১: লোকটা ফুটপাথ থেকে এক পা রাস্তায় ফেলেই আবার উঠে আসতে গেল। পার হতে পারত না। কলেজগেট। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা ছিল। স্পিড তোলার চান্স পেয়ে আমাদের গাড়ি সেটা কাজে লাগাচ্ছিল। সামনে গিয়ে বাঁয়ে মোড় নেবে, তাই ছুটছিল ফুটপাথ ঘেঁষে।



ঠিক বুঝলাম না— হাঁটুর জোর হারিয়ে ফেলল, না কি লুঙ্গিতে পা বেঁধে গেল; দেখলাম, পিছিয়ে আসতে গিয়ে লোকটা রাস্তার উপর পড়ে গেল। তার কাঁধের উপর বসে থাকা বাচ্চাটা ছিটকে পড়ল রাস্তায়।



বাসের ভিতর দাঁড়িয়ে ছিলাম। দুই দিকের রড ধরে। পুরো ঘটনাটা চোখের সামনে ঘটতে দেখলাম।



এর পর যেটা ঘটল, সেটা সঠিক ভাবে বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে চেষ্টা করতে পারি। লোকটা পড়েছে আমাদের বাসের ঠিক সামনে। বীভৎস একটা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে, বুঝতে পেরে আমি চিৎকার দিলাম। আরও অনেকেই দিল।



এ রকম পরিস্থিতির জন্য কেউ প্রস্তুত থাকে না। ড্রাইভারও ছিল না। কিন্তু কী করে যে সে ওই অবস্থায় মাথা ঠাণ্ডা রাখল সেকথা আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না। প্রাণপণে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে ডানে কাটল সে। অল্পের জন্য লোকটা বা তার বাচ্চাটা মরল না। গাড়িটা প্রচণ্ড গতিতে আঘাত করল ডিভাইডারে। ডিভাইডার ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে রং সাইডে চলে এল। ড্রাইভার সর্বশক্তি দিয়ে ব্রেক চেপেছে, তার কাঁধ দুটো উঁচু হয়ে আছে। কিন্তু গতিজড়তার কারণে কথা শুনছে না চাকা। বিশ্রী শব্দ তুলে পিছলে যাচ্ছে।



ওই পারের ফুটপাথের পাশে দাঁড়ানো একটা রিকশাকে পুরোপুরি ভর্তা করার পর স্থির হলো বাস। রিকশাওয়ালা আগেই দৌড় দিয়েছে।



পুরো ব্যাপারটা ঘটল দুই সেকেন্ডের মধ্যে। আমরা যারা বাসের মধ্যে ছিলাম, তাদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। মনে হচ্ছিল, কেউ এক জন কৌটায় ভরে আমাকে ঝাঁকাচ্ছে। ভাবলে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, যদি উলটে যেত গাড়ি! যদি উলটো দিক থেকে আসা অন্য কোনও গাড়ি আমাদের গাড়িটাকে ধাক্কা দিত!



পুলিশ এসে গেছে। ওই গাড়ির আর যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এর মধ্যে দেখি, কয়েক জনের লাভ-লোকসান জ্ঞান টনটনে— অ্যাই, ভাড়া ফেরত দাও... ওই কনডাক্টর, ভাড়া দে...। অথচ উলটোটা হওয়ার কথা। ড্রাইভারকে সবার পুরস্কৃত করার কথা। দুইটা ‘নিশ্চিত’ মৃত্যু ঠেকিয়েছে সে।



আমি আস্তে করে ভিড় থেকে বের হয়ে গেলাম। আমার জীবনের দাম দশ টাকা না!!!





অণু গল্প ২: রাতে বাসায় ফিরে দেখি, পাশের বাড়ির কেয়ার টেকার মহিলা গেটের কাছে বসে কাঁদছেন। বাড়িওয়ালা তাকে বের করে দিয়েছে। তার ঘটি-বাটি, লেপ-তোষক বাইরে পড়ে আছে।



আমি অবাক পাথর। মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কী করে? তার কোনও অপরাধ নেই। তাকে আর লাগবে না, তাই চলে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু সময়টা অসময়। বয়স্ক মানুষ। একা। এত রাতে কোথায় যাবেন? বেতনও না কি পুরোটা দেয় নি।



আমি আসার একটু আগে ঘটেছে এই ঘটনা। মহিলা ভালো মানুষ। প্রায়ই কুশল বিনিময় হয়। ভাবছি, কী করা যায়। বাসায় ডাকা হলো তাকে। সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা চলছে। এই সময় বাজল ফোন। আরেক বিল্ডিংয়ের বাড়িওয়ালা। তারা তাদের বারান্দা থেকে ঘটনা সবই দেখেছেন। এবং আমাদের আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। তারা ওই মহিলাকে কাজে নিতে চান।



পৃথিবীতে খারাপ মানুষ আছে— এটা যেমন সত্য, ভালো মানুষ আছে— এটাও তেমন সত্য। তা না হলে পৃথিবী এক দিকে হেলে পড়ত। ব্যালেন্স থাকত না!!!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০৩

শূন্য পথিক বলেছেন: দারুন

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫১

মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: ঠিক বলছেন পৃথিবীতে খারাপ মানুষ আছে— এটা যেমন সত্য, ভালো মানুষ আছে— এটাও তেমন সত্য। তা না হলে পৃথিবী এক দিকে হেলে পড়ত। ব্যালেন্স থাকত না!!!

লেখাটা ভালো লাগলো!

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৮

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ভালো লাগলো!!!


+++++++++++

পৃথিবীতে খারাপ মানুষ আছে— এটা যেমন সত্য, ভালো মানুষ আছে— এটাও তেমন সত্য। তা না হলে পৃথিবী এক দিকে হেলে পড়ত। ব্যালেন্স থাকত না!!!

৪| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৯

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: দুটো ঘটনা দুই রকম। দুটোই অনুভব করলাম।
পৃথিবীতে যত খারাপ ঘটনাই ঘটুক না কেন , যাদের স্বভাব অন্যের উপকার করার তারা করবেনই উপকার। এখনো অনুভূতিপ্রবণ মানুষেরা বিলুপ্ত হয়ে যায়নি ।

শুভকামনা আপনার জন্য।

৫| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫২

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
দুটো গল্পই চমৎকার।
প্রথমটা বেশি ভাবাল।
ভাল লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.