নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উদ্বাস্তু নিশাচর

উদ্বাস্তু নিশাচর › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ হাত ছুয়েছে আপুর হাত .....। অভ্রমেঘ

০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৩৭

-৭৬ নম্বর বেডের রোগীর রিপোর্ট গুলো একটু আনবেন তো ।



-এই নিন আপা ।



-[রিপোর্ট দেখার পর] খুব বেশি সময় নেই এই ছেলেটার কাছে ! লাঙ্কস ক্যান্সারে আক্রান্ত একটা মানুষ এখনও লড়ছে !



-জানেন আপা; ছেলেটাকে যখনই দেখি, মনমরা হয়ে বসে থাকে । চোখ দুটো ভেজা দেখি । চোখ দুটো যেন কাউকে খুজে চলেছে ।



-ছেলেটার সাথে দেখা করার খুব ইচ্ছা হচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু আজ সময় হবেনা ।

.

ডক্টর আফসানা । এইতো কিছুদিন আগেই বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসেছেন । আসার পরেই কাজে যোগ দিয়েছেন । আর প্রথমেই এসেই তার তত্বাবধানে যে ছেলেটি এসেছে সে 'মেঘ ।



* * *



-আপু তুই তো ডক্টর হবি; তাইনা ?



-হুমম; সেজন্যই তো লেখাপড়া করতেছি ।



-শোন না আপু; তুই ডক্টর হওয়ার পর আমার চিকিৎসা করবি; ওকে ।



-ধুর শয়তান । তোর কিচ্ছু হতে দিলে তো হবে ।



-কেন ! তোর ভাইয়ের কী মৃত্যু হবেনা ?



-এবার সত্যিই পিটুনি খাবি । আর আমার ভাইয়ের কিছু হবেনা ।



-কিন্তু কিছু হলে তো জানতেও পারবি না !

.

মেসেজটা দেখল আফসানা । কিন্তু কোনো রিপ্লাই দিলনা । অভ্রবিন্দু' নামের ফেসবুক আইডিটা যখনই এমন করে কথা বলে; আফসানা চুপ হয়ে যায় । আর কথা বলেনা ছেলেটার সাথে । ওর নিজের কোনো ভাই নেই; এই ছেলেটাকে আপন ভায়ের মতই ভালোবাসে ! ফেসবুকে পরিচয় যদিও; কিন্তু ভালোবাসা ভাই-বোনের মতই !

.

কিন্তু ছেলেটা ডিপ্রেশনে ভুগছে । বিভা নামের একট মেয়েকে ভালোবেসেছিল ঐ অভ্রবিন্দু নামের ছেলেটা । কিন্তু কোনো এক কারনে বিভা ছেড়ে যায় ছেলেটিকে; আর তখন থেকেই এমন করছে অভ্রবিন্দু ।

.

প্রতিদিন দু'এক প্যাক সিগ্রেট না হলে দিন ফুরোয় না । অন্যান্য নেশাও হয় মাঝে মধ্যেই । আফসানা অনেক চেষ্টা করেছে । কিন্তু কথা শুনতো না ছেলেটা । তাই আফসানার সাথেও ঝগড়া হত মাঝে মাঝে । তখন আফসানা ম্যাসেজ দেওয়া বন্ধ করে দিত ।



* * *



অভ্রবিন্দু ছেলেটা আফসানার কাছে কেমন যেন রহস্যময় ! আইডিতে নিজের কোনো ছবি নেই; এমনকি রিয়েল নামটা পর্যন্ত বলত না । তবুও ছোট ভাইয়ের মতই ভালোবাসতো ।

.

আফসানার সাথে প্রথম পরিচয়ের সময় খুব মজা করত ও । একদিন ছেলেটা বলেছিল-

.

-আপু; তুই যখন আমার হাত ধরে বসে থাকবি; কেমন মজা হবে বল !



-হুমম; খুব মজা তো হওয়ারই কথা ।



-আমি তখন কি বলব জানিস ?



-কি বলবি !



-সুনীল যেমন বলেছিল, 'এ হাত ছুয়েছে নীরার হাত' ; আমিও তেমন করে বলব, 'এ হাত ছুয়েছে আপুর হাত' ।



-ইশশ; গার্লফ্রেন্ড নাকি তোর



-উহু; আমার একমাত্র বোন ।



* * *



.

কিন্তু সুখের সময়গুলো খুব দ্রুত শেষ হয়ে গেল । বিভা ছেড়ে চলে গেল আর আফসানার'ও বিদেশে যাওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ হল ।

.

যাওয়ার কয়েকদিন আগে কথা হওয়ার এক পর্যায়ে অভ্রবিন্দু বলল-

.

-আপু; তোর সাথে দেখা করব ।



-ভাই; এখন সম্ভব না । জানিস ই তো আমাকে যেতে হবে । তুই চিন্তা করিস না । আমি ফিরে এসে দেখা করব তোর সাথে ।



-হুম । আজ তাহলে আমার নামটা বলেই দিই; হয়ত আর কখনও সুযোগ পাবোনা !



-সত্যি বলবি ! বল ভাই !



-আমি মেঘ'



-ইশশ; আমার ভাইয়ের নামটা কত্ত কিউট

.

কোনো রিপ্লাই আসেনা অভ্রবিন্দু আইডির মালিক মেঘের কাছ থেকে । এরপর আফসানা অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু যোগাযোগ করতে পারেনি । না ফেসবুক, না ফোন; সবকিছুই বন্ধ !



* * *

---কয়েকদিন পর---

.

প্রায় মাঝরাত । আকাশে তাঁরাগুলো তখনও জ্বলজ্বল করছে । আফসানা তখন বাড়ির ছাদে; তাঁরা দেখছে । আর মেঘের কথা ভাবছে ।

.

হ্যা মেঘ; সেদিন মেঘ নামের ছেলটির সাথে দেখা করেছিল ও । তখন নিজের মেঘ নামের ভাইটির কথা মনে পড়ছিল । যখন মেঘ নামের ছেলেটির সাথে দেখা করতে গেল; মেঘ একবারই শুধু ওর দিকে তাকিয়েছিল । চোখগুলো ফেরাতে পারছিল না । মেঘের চোখগুলো ভেজা ছিল তখন ।

.

সামান্য কয়েকটা কথা হল ওর সাথে । এরপর চলে এসেছিল আফসানা । আসার পর শুধু একটা প্রশ্নই ওর মাথাই ঘুরছিল- ও কে ! ও কাঁদল কেনো ?

.

ভাবনায় ছেদ পড়ল ফোনের আওয়াজে । হাসপাতাল থেকে ফোন এসেছে । এত্ত রাতে ! ফোন ধরল আফসানা-

.

-হ্যালো



-আপা; জলদি হাসপাতালে আসুন । ৭৬ নং বেডের ছেলেটি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে ।



-ওকে আমি আসতেছি !

.

.

যখন আফসানা হাসপাতালে পৌছল; মেঘের অবস্থা খুব খারাপ তখন । কিন্তু ও যখন মেঘের কাছে পৌছল, তখন মেঘ বেশ খানিকটা শান্ত হল । ও আফসানাকে কাছে ডাকল; এবং আস্তে করে বলল-

.

-আমি জানি আপনি আমার জন্য কিছুই করতে পারবেন না ।



-চুপ থাকো তুমি । তোমার কিছুই হবেনা মেঘ ।



-এই মেঘ ও চাইনা ওর কিছু হোক; কিন্তু নিয়তির কাছে সবাই অসহায় ।



-তুমি প্লিজ চুপ থাকো মেঘ ।



-আপনি কি আমার হাতটা একটু ধরবেন প্লিজ ?

.

আফসানা নিরবে মেঘের হাতটি ঘরল । আর মেঘ হাসতে হাসতে বলল-

.

-"এ হাত ছুয়েছে আপুর হাত । এ হাতে কি আমি কোনো অপরাধ করতে পারি !" কিন্তু আমি যে বেচে থাকলে অন্যায় করবই ! তাই...

.

আফসানা বুঝতে পারল এই তার ভাই মেঘ । ঝরঝর করে জল ঝরতে লাগল চোখ থেকে । ও বলল-

.

-মেঘ ! তুই আমার ভাই ! তুই আমার মেঘ ! ভাই ! আমার লক্ষী সোনা ভাই ।তোর কিছু হবেনা । তোর বোন আজ ডক্টর তো ! তোকে সুস্থ করে তুলব ।

.

.

এমনই কথা বলতে বলতে মেঘকে ডাকতে লাগল আফসানা । আর মেঘ ? ও তখন ঘুমিয়ে পড়েছে । মেঘ ওর আপুর হাতে হাত রেখেই চলে গেছে চিরনিদ্রায় । আফসানাকে একা রেখে; দূরে... আরো দূরে... একদম মেঘের দেশে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.