| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-ঐ শয়তানী; আমার সাথে ঝগড়া করবি নাহ্ । বড় আপুর বাবুটার নাম আমিই রাখব ।
-এহ; বললেই হল ! বড় আপুর বাবুটার আমি খালামনি হবো । তাই নাম আমিই রাখব ।
-ইশশ, কত্ত শখ ! তুমি খালামনি হবে; আর আমি ? আমিও মামা হবো । হুহ
-দেখ কুত্তা; বেশি বকলে কিন্তু তোর পিঠের চামড়া তুলে ফেলব । আমাকে ক্ষ্যাপাবি না মেঘ ।
-আচ্ছা ওকে । যদি ছেলে হয়, তাহলে আমি নাম রাখব । আর যদি মেয়ে হয়, তাহলে তুই নাম রাখিস । ওকে লক্ষী আপু ।
-এইতো আমার শয়তান ভাই আমার মনের কথা বলেছে । ঠিক আছে । তাহলে মনে থাকে যেন ।
-আচ্ছা থাকবে তো !
.
রোদ, আমার ছোট আপু । ওর জন্মের পরেই তো আমার জন্ম হয়েছে । তাই আমরা 'পিঠা-পিঠি' ভাই বোন । সবসময় ঝগড়া চলে দুজনের । কারনে অকারনে ঝগড়া চলে । রোদের সাথে এক বেলা ঝগড়া না হলেও থাকতে পারিনা । যখন কোনো টপিক পাইনা ঝগড়ার, তখন ওর মাথাই জোরছে একটা ঢিসুম দেই । ব্যাস; ঝগড়া চালু !
.
তবে বেশ কিছুদিন হল ঝগড়ার টপিকের আর অভাব হচ্ছে না । ঝগড়ার কেন্দ্রবিন্দুতেআছে বড় আপু আর তার সন্তান । টপিক গুলো এমনই- ওর নাম কে রাখবে, ও দেখতে কার মত হবে, ও কাকে বেশি ভালোবাসবে এসবই মুল টপিক । আর আমরাও টপিক পেয়ে খুবই আনন্দিত ।
.
ইশ; একটা টপিক তো সল্ভ হয়ে গেল ! আমি আসলেই বোকা ।
* * *
-বড় আপুনি,
-হুমম, বল
-রোদ কে বলেছি, ছেলে হলে আমি নাম রাখব । আর মেয়ে হলে ও নাম রাখবে ।
-তুই কি চাস রে ভাই ? মামা নাকি খালামনি ?
-আল্লাহ যেটা দিবেন তাতেই খুশি হবো ।
-এইত আমার লক্ষী ভাইয়ের মত কথা বললি ।
-রোদ আমায় শয়তান বলেছে তো !
-ও তো বোকা মেয়ে, তাই বলেছে ! তুই আমার ভালো ভাই ।
-হি হি, রোদ বোকা, আমি ভালো ।
.
বড় আপুর সাথে কথা বলছিলাম । বড় আপুকে আমি দুই চোখ্খে দেখতে পারতাম না । রাজশাহী কলেজে ভূগোলে পড়ত আপু । আর যখনই বাড়িতে আসবে; আমাকে এত্ত এত্ত কথা শোনানো যেন ওর দায়িত্ব ।
.
-মেঘ তুই পড়িস না
-পড়ি তো !
-তাহলে অংকে তিন' পাইছিস কেন ?
-[আমি চুপ] !
.
আবার বলবে-
.
-মেঘ তুই সারাদিন এত্ত খেলবি না, লেখাপড়াও কর ।
-কই সারাদিন খেলি ! আমি তো তেমন একটা খেলিনা ! সকালে একটু; দুপুরে সামান্যই; আর বিকেলে তো সবাই খেল । তাই আমিও...
-এই তোর সামান্য খেলা !
-[আমি চুপ] !
.
আবার বলবে
.
-ঐ এত আগেই ঘুমাতে যাচ্ছিস কেনো ! যা পড়তে বস"
-আপু; ক্লান্ত ! একটু ঘুমায় । প্লিজ
-এহ কি আমার মহৎ কাজ করে ক্লান্ত !
-[আমি চুপ] !
.
এত এত বকা যেন ওর মুখে লেগেই থাকত সবসময় । তাই যখন রাজশাহী চলে আসত, তখন খুব খুশি হতাম ।
.
হ্যা ওকে পছন্দ করতাম না । রাগ লাগত ওর ওপর । কিন্তু যেদিন ওর বিয়ে হয়ে গেল, সেদিন কি যেন একটা হারিয়ে ফেলছিলাম । মনে আছে কোনো আনন্দ করিনি সেদিন । দুপুরে খেয়েছিলাম না । শুধু যখন ও কান্না করতে করতে চলে গিয়েছিল; ওর ফেলে যাওয়া ডায়েরীতে লিখেছিলাম, "আই লাভ ইউ আপু"
* * *
-ঐ রোদ, তুই একটা বোকা রে !
-কি বললি শয়তান ! আজ তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে নাহ্ । থাম তুই !
.
অতঃপর রোদ আমার পিছনে দৌড়াতে শুরু করল । আমি প্রথমেই দৌড়ে বাড়ি থেকে পালালাম । ভাবলাম পিছু নিবেনা । কিন্তু দেখি ও আমার দিকেই আসছে ! তাই উসাইন বোল্টের গতিতে অন্য দরজা দিয়ে বড় আপুর কাছে লুকালাম । সাথে সাথে রোদ এসে বলল-
.
রোদঃ আপু মেঘ আমায় বোকা বলেছে । ওকে আমি পিটাবো এখন ।
আপুঃ কেন কেন কেন !
আমিঃ কারন রোদ বোকা । হি হি হি
রোদঃ আপুউউউউউ, তুই ওকে মারবি না আমিই মারবো বল প্লিজ ।
আমিঃ দেখ আপু,কত্ত সাহস ! তোমার সামনে তোমার ভালো ভাইয়াকে পিটাতে চাই !
রোদঃ ভালো না হাতি ! তুই সারাদিন আমার সাথে লাগিস ক্যা ? যা তোর সাথে কথা নাই ।
.
রোদ কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল । আর আপু ওকে ডাকতে লাগল । কিন্তু কথা শুনল না রোদ । আমি বড় আপুকে বললাম-
.
-সরি আপু । ঐ শয়তানকে আমি ঠিক করে নিবোনি ।
-সবসময় শয়তানি করিস কেন
-তুমিও আমায় শয়তান বললে ! যাও কথা নাই হু
-হি হি পাগল ভাই আমার ।
.
একটু পরেই রোদের মান ভাঙ্গানোর জন্য উঠে পড়ে লাগলাম । জানি ও আমার উপর রাগ করে থাকতে পারেনা ।
.
-রোদ আপুনি
-যা ভাগ কথা বলতে আসবি না ।
-শোন না । বড় আপুর বাবুর জন্য নাম পেয়েছি ।
-কি নাম !
-নাঈম । সুন্দর না ?
-হ্যা সুন্দর । আমিও পেয়েছি ।
-কি নাম ?
-তারিন, সুন্দর না ?
-একদম সুন্দর না ।
-কি !
.
এরপর আবার শুরু হল আমার আর রোদের দৌড়াদৌড়ি ।
* * *
-আব্বু
-জ্বী
-আজ স্কুলে না গেলে হয়না ?
-কেনো !
-আজ তো বড় আপু হসপিটালে ।
-তো !
-না মানে...
-ফাকি দেওয়ার চিন্তা ? যাও স্কুলে যাও ।
-প্লিজ
-যেতে বলেছি ।
.
ধুর, সব বাপেরাই কী আপনার মত জল্লাদ হয় ? একটা দিনই তো ! না গেলে কী এমন ক্ষতি হতো ? (মনে মনে বললাম) । এরপর মন খারাপ করেই স্কুলের জন্য পা বাড়ালাম ।
.
উফ্স ! সারাদিন খুব মজা করেই কাটল । অনেকটা পাগলামী বলা যেতে পারে । বন্ধুদের সাথে বকবক, স্যারদের সাথে মজা, একটা পেয়াজী কিনে তিন বন্ধু মিলে খেলাম । আর ছয়টা সিঙ্গারা নিয়ে প্রথমে কে শেষ করে অন্যেরটাতে ভাগ বসাবে- এই প্রতিযোগীতাও করলাম ।
.
সারাদিনের এই হাড়ভাঙ্গা খাটুনী (!)'র পর ক্লান্ত মনে বাড়ি ফিরছিলাম । ফেরার সময় এক স্যারের সাথে দেখা হল । স্যার বললেন-
.
-এই মেঘ শোন
-জ্বী স্যার
-নাসরিন (আমার আপু) কেমন আছে ?
-জ্বী স্যার ভালো । বড় আপু তো হসপিটালে !
-হু শুনলাম । তুই তো মামা হয়ে যাবি রে !
-হি হি । জ্বী স্যার; আর আপনি বুড়ো নানা হয়ে যাবেন ।
-হা হা; যা ভাগ ।
.
অতঃপর আমি স্যারের কাছে থেকে চলে আসলাম ।
* * *
-রোদ, তুই কইরে ! আইজ আমি হেব্বি হ্যাপ্পি । পুরা আড়াইটা সিঙ্গাড়া খাইছি । ও রোদ; তুই কইগেলি রে শয়তান !
-মেঘ,
-কি হইছে আপুনি, তোর মন খারাপ কেনো ? কি হয়েছে বলনা ?
-ভাইয়ূ,
-কাঁদতেছিস ক্যান
-নাঈম ! নাঈম এসেছিল রে ভাই ।
-এসেছিল মানে !
-নাঈম আর নেই রে !
-আপু মিথ্যা বলিস ক্যানো !
-[প্রচন্ড শব্দে কেঁদে উঠল রোদ]
.
আমি নিস্তব্ধ, নিশ্চুপ, নিরব হয়ে গেছি । আমি সেদিনও কাঁদিনি । অধিক শোকে নাকি মানুষ পাথর হয়ে যায়; আমি কি সেদিন পাথর হয়ে গিয়েছিলাম ? নাঈমের শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম । নাঈম; তুই কোথায় হারালি সোনা ?
©somewhere in net ltd.