বাপের আমার টাকার পাহাড়

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১২

আমার বাপের অনেক টাকা জমা আছে । তার আবার টাকা জমানোর খুব আগ্রহ । তাই তিনি খুব একটা টাকা খরচ করতে চায় না । বাপটি আমার কিপটাও বটে । আমাদের ভাই / বনদের ও আত্তিয়ও স্বজনদের জন্য তেমন একটা খরচ করেন না বা করতে চাননা । তবে আমাদের ছোট মামা ও ছোট খালার দাবী পুরন করতে তার খুব একটা কৃপণতা পরিলক্ষিত হয় না । আমরা স্কুলের টিফিনের পয়সা চাইলে বাবা বলে ওইসব ফার্স্ট ফুড না খাওয়াই ভালো । ভালো জামা / কাপড় কিনতে বায়না ধরলে বলেন পুরানো জামা / কাপড়গুলি আগে ছিড়ে যাক তারপর কিনে দিবো । আবার বলতেন বেশী বেশী অপচয় করা যাবে না । ছোট বোন সেদিন পাখী নামে একটি পোশাক কিনতে বায়না ধরলও বাপের কাছে । আজকাল নাকি মেয়েদের এই পোশাকটি নুতন চলছে খুব । তখন বাপটি আমার বলে ওইসব পক্ষী / টক্ষি পোশাক পোঁরে পাখীর মতো উড়ে বেড়ালে জাঁত যাবে । তাই আর কেনা হলনা । বাপ সবসময়ই বলে যে টাকা তো জমাচ্ছি তোদেরই জন্য । বাপ আবার বাড়ীতে খুব একটা ভালো / মন্দও বাজারও করে না । তাই আমরা সপ্তাহের প্রায় দিনই ডাল / শাঁক দিয়েই ভাত খাই । তবে বাড়ীর পোষা গরুর দুধ আর মুরগীর ডিম আর শবরী কলা প্রতিদিনই খাই । সেই সাথে মাঝে মাঝে বাড়ীর পুকুরের মাছ খাই । তবে আব্বা আমার পুকুরে মাছ চাষ করেন কিন্তু ২/৩ বসরের আগে মারতে চান না কারন মাছ বেশী বড় করতে চান । বাপ একদিন গরুর হাঁটে গেছেন গাভী কিনতে । যাওয়ার পথে এক দালাল চক্র বাপের পায়ের নিচে একটি ১ কেজি ওজনের তামার দলা তুলে বলে চাচা শোনার দলা পড়ে পেয়েছি তাই আপনি কাউকে বলবেন না এই কথা । তাহলে অহ্নেরা কেঁড়ে নিবে তবে আপনাকে আমরা পড়ে পাওয়া শোনার ভাগ দিবো তাতে আপনি অনেক লক্ষ টাকা পাবেন । বাপ এই কথা শুনে লোভে পড়ে তাদের সাথে হয়ে গেলো । ওইদিকে বাপের গরু কিনার কথা মনে নেই । এখন তার মন পড়ে পাওয়া শোণার টাকার ভাগ নেওয়া । পরে ঐ প্রতারক চক্র বাপকে বলে চাচা আপনি একাই পড়ে পাওয়া শোণার দলাটি কিনে নিন । তখন বাপটি আমার বলে আমার তো অতো টাকা কাছে নেই তাই কিনবো কিভাবে । তখন প্রতারক চক্রটি বলে কতো টাকা আছে চাচা । আব্বা তখন বলে আমার কাছে আছে মাত্র ৭০ হাজার টাকা মাত্র । তখন ঐ চক্রটি বলে যে এতো অল্প টাকায় কি দেওয়া যাবে তবে আপনি যেহেতু এলাকার টাকাওয়ালা ব্যক্তি এবং নামী / দামী ব্যক্তি তাই আপনি যদি ওয়াদা করেন বাদ / বাকী টাকা পরে দিবো তাহলে আমরা বাঁকিতে লক্ষ লক্ষ টাকার শোণার দলা আপনাকে দিয়ে দিবো । তখন বাবা আমার লোভে পড়ে গরু কেনার টাকাগুলি দিয়ে ঐ শোণার দলাটি কিনে নিয়ে বাড়ী ফিরে মাকে জোরে জোরে ডাক দিতে থাকে । তখন মা তার হাতে গরু না দেখে বলে গরু কৈ ? বাবা উত্তরে বলে রাখো তোমার গরু । আমি গরু কিনতে গিয়ে যা কিনে এনেছি তা শুনলে তুমি মহাখুসি হবে তবে দরজা / জানালা আটকাও কেউ যেনও না দেখতে পারে । তারপর বাবা ঐ শোণার দলাটি বের করে মাকে বলে এই দেখো লক্ষ লক্ষ টাকার শোণা মাত্র ৭০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে এনেছি । আমি এখন আরও বড়লোক । মা দলাটি দেখে বলে ওমা এতো পীতলের দলা । এর দাম হবে মাত্র ২ / ৩ হাজার টাকা । এই কথা শুনে বাবা আমার হার্ট ফেলের অবস্থা । তখন মা বলে সারাজীবন আমাদের কষ্টও দিয়ে শুধু আশার বানী শুনীয়ে কষ্টের জমানো টাকা তুমি জলে ফেলে দিলে । বাপ তখন বলে অতি লোভে আমার তাঁতি নষ্ট হয়ে গেলো । ভাই / বনরা বাপকে বলে আব্বা তোমার টাকা এখন কে খায় ? আমাদের না দিয়ে তমি শুধু ভবিষ্যৎ বানী শুনিয়েছও । বাবা তোমার অনেক টাকা আছে আর আমরা কষ্ট করে দিন যাপন করি । আর তোমার জমানো টাকা খোয়া যায় পথে / ঘাঁটে । তাহলে তোমার জমানো টাকা থাকা না থাকা , আমাদের নিকট অনর্থক । তাই তোমার যেসব টাকা জমানো আছে তা তুমি আমাদের সখ / আহ্লাদ এবং নুনতম চাহিদা পুরনে বায় করতে থাকো । বাপ আমার রাজী হয়ে গেলো দীর্ঘদিন পরে । ঠিক আমাদের দেশের রাষ্ট্রেরও রিজার্ভ ফান্ড নিয়ে একই দশা হয়েছে ।

০ টি +০/-০