নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হু

হু

হু - সম্পূর্ন রাজনীতি মুক্ত একটি ব্লগ। এখানে বাংলা সহ বিশ্ব সাহিত্যের মজার কিছু ছোট গল্প প্রকাশ করা হবে। এই গল্প গুলো প্রকাশের ক্ষেত্রে আমার নিজস্ব কোন সৃজনশীলতা নেই যেটি আছে সেটি হলো পরিশ্রম। এছাড়া মাঝে মাঝে নিজের লেখা দু একটি ছোট গল্প পেতে পারেন, তবে সেই গল্পের মান নিয়ে আমি নিজেই সন্দিহান। এই ব্লগটির বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্নতত্ত্ব, সমাজ, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে আগ্রহী।

হু › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ কাণ্ড কারখানা- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৫

[লেখক পরিচিতি: জন্ম ১৯০৮ : মৃত্যু ১৯৫৬। ‘পুতুল নাচের ইতিকথা, পদ্মা নদীর মাঝি, দিন রাত্রির কাব্য’, প্রভৃতি তার বিখ্যাত উপন্যাস। ‘সরীসৃপ, প্রগৌতিহাসিক’ প্রভৃতি তার বিখ্যাত গল্প। ‘কান্ড কারখানা’ গল্পটি একটি অনবদ্য গল্প।]



মস্ত এক কারখানা ছিল।

সেখানে একদিন একটা কান্ড হল। একেবারে যাকে বলা যায় রীতিমত কাণ্ড কারখানা। কারখানার ম্যানেজার জনসন সাহেব যে ঘরে বসে, তার দক্ষিণে একটুকরো ফাঁকা জমি আছে। জমিটি কোন কাজে লাগে না। কাজে লাগানো হয় নি। দরকার হয়না, তা ছাড়া সায়েব একটু আলো বাতাসও পাবে।



দু’ চারটে ফুল গাছ লাগাবার ইচ্ছা ছিল, লাগানোও হয়েছিল। কিন্তু সাহেবের এদিকে শখ নেই, তাই ছোট ছোট কয়েকটি বিলেতি ফুলের চারাই ছিল বাগানটার সম্বল। একবার কারখানায় ভারী গোলমাল হল- সেও আরেক কাণ্ড কারখানা। স্ট্রাইক, লক-আউট এই সব মিলে তিন মাসের উপর কারখানা বন্ধ রইল। তারপর এক দিন হাঙ্গামা মিটে কারখান চালু হল, সকলে তাকিয়ে দেখে কি - ছোট্ট বাগানটুকুর মাঝখানে একটা গোলাপের চার মাথা তুলেছে। ভালো জাতের বড় জাতের গোলাপের চার মাথা তুলেছে। ভালো জাতের বড় জাতের গোলাপ গাছ- দিন দিন বড় হয়ে জাঁকিয়ে উঠল গাছটা ডালে ডালে ফুল ফুটে জমকালো সৌন্দর্য সৃষ্টি হল। কাজ করতে করতে যখন সাহেব চোখ তোলে, গাছটা চোখে পড়ে সাহেব মুগ্ধ হয়ে যায়। সাহেবের রীতিমত মায়া জন্মে গেল। শক্ত বেড়া উঠল, ভাল রকমের যন্ত নেবার ব্যবস্থা হল।



সাপ্তাহিক ছুটির পর কাখানা খোলা হলে দেখা গেল, সর্বনাশ হয়েছে- সাহেবের অত আদরের গাছটা উধাও হয়ে গেছে। গর্ত খুঁড়ে গোড়া আর মাটি সুদ্ধ কেউ তুলে নিয়ে গেছে। ছুটির দিনে আরও দু’তিনজন কারখানায় থাকে, কিন্তু দায়িত্ব দারোয়ান মথুরা প্রাসাদের। বিশ্বাসী লোক বিশ বছরের উপর কোম্পানীর কাজ করেছে- দারোয়ানী করেছে দশ এগারো বছরের উপর ।সহকারী ম্যানেজার ভূপতিবাবুকে সে জানায় যে, কাল বিকালেও গাছটা ঠিকই ছিল, আজ ভোরে উঠে নিজেরে হাতে জল দিতে গিয়ে দেখতে পায় গাছটা নেই। মথুরা প্রসাদ কাতরভাবে বলে, ‘সাব হাম কো ঠিক ভাগা দেগা’।



ভূপতি বাবু বলে, আরে নেহি। একঠো গাছকা ওয়াস্তে ভাগা দেগা?

গাছের শোকে ক্ষেপে গিয়ে সাহেব যে কি কণ্ড জুড়ে দেবে, তা জানা থাকলে মথুরা প্রসাদকে ভূপতি এমন সহজ ভাবে ভরসা দিত কিনা সন্দেহ।

রেগে আগুন হয়ে চেঁচিয়ে দাপাদপি করে বেড়িয়ে সকলকে বকে ঝকে জনসন আর কিছু বাকী রাখে না। কারখানায় তিন জন লোক থাকতে তার ফুল গাছ চুরি যায়। তিন জনকে সে সঙ্গে সঙ্গে বরখান্ত করতো, ভূপতি অতি কষ্টে অনেক বুঝিয়ে কোন রকমে তাকে ঠেকিয়ে রাখে।



কারখানায় চুরি হলে ওদের দোষী করা যেত। গাছটা পড়ে আড়ালে, সাররাত জেগে আসল কারখানা পাহাড়া দিলেও চোরের পক্ষে ওদিকের দেয়াল ডিঙিয়ে এসে অনায়েসে গাছটা তুলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এমন যুক্তি মেনে নিয়ে জনসন খানিকক্ষণ গোমড়া মুখে গুম হয়ে থাকে। তারপর বলে, বইরের চোন নায়। এ করাখানার লোকের কাজ। এর পেছনে আমাকে জব্দ করার ষড়যন্ত্র আছে।



ভুপতি বলে, হাঙ্গামা মিটেছে, ওদের কটা দাবী মেনে নেয়া হয়েছে- এখন তো ওদের রাগের কোন কারণ নেই। সাহেবের কিন্তু বিশ্বাস জন্মে যায় যে, কাজটা কারখানার লোকের। রাগের জ্বালায় সাহেব ছট্ফট্ করতে থাকে। তারপর ভেবে চিন্তে একটা হুকুম জারী করে, যে চোর ধরিয়ে দিতে পারবে, সে পাবে নগদ পঞ্চাশ টাকা আর তার হপ্তা বেগে যাবে পাঁচ টাকা। সকলকে একথাও বুঝিয়ে বলা হয় যে, গাছটা যে নিয়েছে সে নিশ্চয় কোথাও সেটা পুঁতেছে কিংবা ফেলে দিয়েছে-শুধু গাছটার সন্ধান যে দেবে তাকেও পুরষ্কার দেওয়া হবে। সেই কারখানায় কাজ করত গোলক। পরদিন কারখান চালু হবার আগে সকলকে থ’ বানিয়ে দিয়ে সাহেবের সাধের গোলাপ গাছটা হাতে করে গোলক হাজির হয়।

কি ব্যপার?



গোলক হেসে বলে ‘ম্যাজিকের ব্যাপার’। গোলকোর কাজে আসবার পথের ধারে একটা পতিত জমি পড়ে কিছু ঝোপ ঝাড় গাছ পাল আছে। কাল কাজে আসবার সময় তার মধ্যে নাকি একটা গোলাপ গাছ নজরে পড়েছিল। গোলকের -অতটা খেয়াল করেনি। কার গোলাপ গাছ নিঃসন্দেহ না হয়ে কাল কথাটা ফাঁস করেনি। কাল ফেরার সময় কাছে গিয়ে গাছটা দেখে চিনতে পেরেছিল।



চোর? নাঃ, কে নিয়েছিল ধরা যাবে না। কারুর বাড়ির আনাচে কানাচে পোঁতা থাকলে মনে করা যেত, সে বাড়ীর কেউ কাণ্ডটা করেছে। পতিত জমিটার আশে পাশে বাড়্ নেই। বুড়ো লোচন মুখে একটা আওয়াজ করে বলে, তুই ব্যাটা গোমুখ্যু গোলক। সাহেব একথা বিশ্বাস করবে ভেবেছিস !তোকেই চোর বলে পাকড়াবে না!



গোলক কিন্তু নির্ভয়ে বুক ফুলিয়ে বলে, ওঃ চোর বলে পাকড়ালেই হল ! প্রমাণ করতে হবে না আমি নিয়েছিলাম, গাছ চুরির রাতে দশ মাইল দুরে দিদির বাড়িতে ছিলাম, দশ বিশটা সাক্ষী আছে। তার নির্বুদ্ধিতায় সকলে সত্যই আশ্চর্য হয়ে যায়। পুরষ্কারের লোভে। বুদ্ধি লোপ পেয়েছে গোলকের। চোরাই মাল যার কাছে মেলে তাকেই যে প্রমাণ করতে হয়-চোরের সাথে তার যোগসাজস আগেও ছিল না, পরেও হয় নি- এ সোজা কথাটা খেয়াল নেই গোলকের। কারখানায় কাজ শুরু হয়ে যাওয়ার এ বিষয়ে আর কথা হয় না।



জনসন আসে। ভূপতির কাছে সব বিবরণ শোণে। তারপর গোলককে ডেকে আনার হুমুম দিয়ে, পুশলে ফোন করে দেয়। ভূপতি চুপ করে থাকে। গোলক নিশ্চয় কোন বজ্জাতি করেছে। পতিত জমিতে গাছটা পোঁতা ছিল, এ বানানো গল্প কেউ বিশ্বাস করে ! গোলক এল সে বলে, সত্যি কথা খুলে বলো গোলক, পুলিশ ফোন কার হয়েছে।

: গাছ যে রাতে চুরি হয়, আমি সে রাতে অনেক দূরে বোনের বাড়িতে ছিলাম- সাক্ষী আছে।



:গাছটা তোমায় দিল কে তার নাম বলো!

:আজ্ঞে, ফাঁকা জমিতে পেয়েছি, গর্ত খোঁড়া আছে, দেখাতে পারি।

ভূপতি এক ধমক দিয়ে বলে, গর্ত অমনি খোঁড়া যায়, বাজে ইয়ার্কি করো না।



গোলক খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে বলে, আজ্ঞে ওটা সাহেব গাছ নায়।

:সাহেবের গাছ নয়?



:আজ্ঞে না জমিতে পাওয়ার কথাটা বানিয়ে বলেছি। ওটা আমার গাছ।

গোলকের ভগ্নীপতি বড় লোকের বাগানে মালির কাজ করে। তার কাছ থেকে গোলাপের দুটো কলমের চারা গোলক এনেছিল- একই গাছকে কলম বাড়িতে জায়গা নেই, দুটো গাছকে ঠাঁই দিতে পারি না। একটা বড়িতে পুতেঁ আরেকটা কারখানায় এনে দিয়েছিল। কাছে গিয়ে দেখলে সাহেব টের পাবেন।



সাহেবের গোলাপ গাছটা কে নিয়েছিল আজও কেউ জানে না। গোলকের গাছটাও সেখানে নেই। আবার চুরি যাবার ভয়ে জনসন গছটা টবে বসিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে গেছে। বলা বাহুল্য গোলকের ভাগ্যে পুরষ্কার জোটে নি।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.