![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হু - সম্পূর্ন রাজনীতি মুক্ত একটি ব্লগ। এখানে বাংলা সহ বিশ্ব সাহিত্যের মজার কিছু ছোট গল্প প্রকাশ করা হবে। এই গল্প গুলো প্রকাশের ক্ষেত্রে আমার নিজস্ব কোন সৃজনশীলতা নেই যেটি আছে সেটি হলো পরিশ্রম। এছাড়া মাঝে মাঝে নিজের লেখা দু একটি ছোট গল্প পেতে পারেন, তবে সেই গল্পের মান নিয়ে আমি নিজেই সন্দিহান। এই ব্লগটির বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্নতত্ত্ব, সমাজ, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে আগ্রহী।
সেবার অনেক দিন পরে বাড়ি গেলাম। আমার বাড়িতে মানুষ বেশি নেই। বাড়িতে শুধু আমার মা আর আমার ছোটবোন থাকে। বাবা চাকুরির কারণে বাইরে থাকে আর আমি লেখাপড়ার কারণে। একটা সময় ছিল যখন একটু সময়-সুযোগ পেলেই বাড়ি চলে যেতাম কিন্তু এখন আর যেতে ইচ্ছে করে না
বাড়িতে যেহেতু কোন ছেলে মানুষ থাকে না তাই বাড়িতে বাজার-সদাই করাটা একটু কষ্টেই হয় আমার মা জন্য। সবসময়ই বাইরের মানুষ দিয়ে বাজার করাতে হয়। আবার সবসময় যে বাজারের জন্য মানুষ পাওয়া যায় তাও নয়। অনেক সময় জরুরী প্রয়োজনের সময় মানুষ পাওয়া যায় না বাজারের জন্য তাই মা অথবা ছোট বোনকেই বাজারে যেতে হয়।
আমি বাড়ি গেলে মা এক মাসের বাজার এক বারে করে রাখতো। তাই আমি যে দিন বাড়ি গেলাম ঠিক তার পরের দিন সকালে মা বলল বাজারে যেতে হবে। আমিও সকালের নাস্তা খেয়ে বাজারের যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম। আমার বাড়ি থেকে বাজার একটু দুরেই। তাই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাজারের যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ফখরুদ্দীন। আমাদের দুই নেত্রকে জেলে ঢুকিয়ে দেশটাকে চালাচ্ছেন। এক কথায় বলতে গেলে আইন শৃঙ্খার দিক থেকে অন্য যে কোন সময়ের চয়ে ভালই চালাচ্ছিলেন। তবে মূল সমস্যা হলো ফখরুদ্দিনের সময় জিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়েই চলছে। এটাকে কোন ভাবেই তিনি নিয়ন্ত্রন করতে পারছিলেন না। আবার অপর দিকে দেশের সাধারণ মানুষও তাকে এই একটি কারণে দেখতে পারছিলেন না। তাই ফখরুদ্দীনকে মানুষ বিভিন্ন নামে ডাকা শুরু করে, যেমন- ফকির উদ্দীন, ফখরা, ফকু ইত্যাদি।
ফখরুদ্দীন সাধারন গরীব মানুষকে সাহায্য কারার জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু করলেন দেশব্যাপী। প্রতিদিন একজন মানুষ সকাল ৮ থেকে ১২.৩০ পর্যন্ত কাজ করবে, তার বিনিময়ে সে পাবে ১০০ টাকা। আমার মতে আইডিয়াটা খারাপ না। এতে দেশের কাজও হবে আবার গরীব মানুষও খেয়ে বেচে থাকতে পারবে। তো এই কর্মসূচি আমার গ্রামেও শুরু হয়েছিল। আমার গ্রামের রাস্তা গুলোর অবস্থা খুব খারপ ছিল, তাই রাস্তা মেরামতের কাজে এই শ্রমিকদের ব্যবহার করা হতো। তারা রাস্তার উপর মাটি ফেলা শুরু করল।
তো যা বলছিলাম- আমি যখন বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেই তখন দেখি ঘড়িতে সাড়ে নয়টা বাজে। সাইকেলে চড়ে যাচ্ছিলাম। কিছুক্ষন পরেই আমারকে সাইকেল থেকে নামতে হলো। কারণ রাস্তার উপর যে মাটি ফেলা হয়েছে এখনও সেই মাটিকে সমান করা হয় নি। এই রাস্তার উপরদিয়ে সাইকেল চালানো প্রায় অসম্ভই। আমি সাইকেল থেকে নেমে দেখলাম, মাটি কাটা শ্রমিকরা তখন সকালের নাস্তা খাচ্ছে। এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর আমি আবার সাইকেলে উঠে বসলাম। বাজারে পৌছাতে আমার সময় লেগেছে প্রায় পনের থেকে বিশ মিনিটের মতো।
আমি বাজার করে যখন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম তখন বেলা প্রায় এগারোটার মতো হবে। আবার সেই একই জায়গায় এসে আমাকে আবার সাইকেল থেকে নামতে হলো। তখনো দেখলাম মাটি কাটার শ্রমিকরা বসে বসে বিড়ি টানছে আর খোশ গল্প করছে।
একটু সামনে আসতেই এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল। ওর সাথে সেখানে দাড়িয়েই কিছুক্ষণ গল্প করলাম। গল্পের এক ফাকে রাস্তা মেরামতের কাজকে উদ্দেশ্য করে বললাম, ফখরুদ্দীন কাজটা ভালই করেছে, এতে দেশেরও উন্নতি হয় আর দেশের গরিব মানুষগুলে খেয়ে বাঁচতে পারে। তখন আমার বন্ধু আমাকে উত্তর দিল- কিসের ভাল কাজ? সেই সকাল নয়টা থেকে দেখছি বসে আছে, আর একটু মাটি ফেলবে রাস্তার উপর, তারপর ১২টার সময় বাড়ি চলে যাবে। আমি বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম- এটা দেখাশুনার কেউ নাই ? সে আমাকে উত্তর দিল- আছে, তবে দেখি সেও এসে এদের সাথে গপ্পো জুরে দেয়। এরপর বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম।
রাতে আবার আমার একটু চা খাওয়ার অভ্যস তৈরি হয়েছে। তাই রাতে চা খাওয়ার জন্য বেরুলাম। আমাদের গ্রামের ঠিক মাঝখানে একটা চায়ের দোকান আছে। হাটতে হাটতে চায়ের দোকানে এসে পৌছালাম। চায়ের অর্ডার দিলাম। দোকানদার আমাকে চা দিলে আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে বেঞ্চিতে বসে পড়লাম।
সাধারণত একটা চয়ের দোকানে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা হয়। বিশেষ করে দেশ ও দেশের রাজনীতি নিয়ে। এখানে এসেও দেখলাম দেশের রাজনীতি নিয়ে আড্ডা ভাই জমেছে। এর মধ্যে অনেকেই ফখরুদ্দীনকে গালি দিচ্ছে আবার অনেকেই ফখরুদ্দীনের প্রশংসা করছে। আবার অনেকেই বলছে এইবার দেশের সকল বড় বড় চোর ধরাপড়ে। এদের কারণে দেশের এই অবস্থা।
এর মাঝে একজন হঠাৎ করেই বলে উঠল- বড় বড় চোরেরা চুরি করে আর তার ভোগান্তি পড়ে আমাদের উপর, চোরেরা ঠিক মতো কাজ করে না খালি বইসা বইসা সাইন করে। আমি তার কণ্ঠ শুনে তার দিকে তাকালাম। তাকে চিনতেও পারলাম। সকালে এই লোককে দেখেছিলাম মাটিকাটার শ্রমিকদের সাথে, সেও মাটি কাটে। আমি হঠাৎ মুখ ফসকে বলে ফেললাম- চাচা আপনি আপনার কাজ ঠিক মতো করেন তো? লোকটি একটু চমকে উঠল এই প্রশ্ন শুনে, তারপর সে বলল- হ্যা করিতো। আমি তাকে বললাম- চাচা আমি যখন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বাজার যাই তখন দেখলাম মাটি কাটার ওখানে বসে আছে, আর আশে পাশের সবাই খাচ্ছে। আবার আমি এগারোটার দিকে এসেও দেখি তখও আপনি বসে আছেন। আপনার কাজ মাটি কাটা বাদ দিয়ে। পরে জানলাম যে প্রায় দিনই এই কাজ করেন। বলেন চাচা এই কাজটা কি ঠিক ? সরকার আপনাকে টাকা দেয় কাজের জন্য, বসে থাকার জন্য নয়। আমি তাকে আরো বললা- দেখেন চাচা আপনি শুধু শুধু অন্যকে দোষ দিয়ে না। আপনিও যদি কখনো সুযোগ পান তবে আপনিও তাদের মতো হয়ে যাবেন। বসে বসে টাকা খাবেন। এখন আপনার হাতে ক্ষমতা বা সুযোগ কোনটাই নাই তাই আপনি এই কথা বলছেন। আপনারে একবার সুযোগ দেয়া হয়েছিল আপনি বসে বসে বিড়ি টানছিলেন আর খোশগল্প করছিলেন।
এতো গুলো মানুষের সামনে এই কথা বলার পর, লোকটি আর কিছু বলল না। আমিও চায়ের বিলটা দিয়ে দোকন থেকে চলে আসলাম।
(ক্ষমতা থাকলে আমরা সবাই অপব্যবহার করি। এটা আমাদের রক্তের সাথে মিশে আছে। এই ঘটনাটি বস্তব, যার স্বাক্ষ্য আমি নিজে।)
২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪২
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: আপনার সাথে একমত
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:২৯
মশিকুর বলেছেন:
(ক্ষমতা থাকলে আমরা সবাই অপব্যবহার করি। এটা আমাদের রক্তের সাথে মিশে আছে। এই ঘটনাটি বস্তব, যার স্বাক্ষ্য আমি নিজে।)
++++
ইদানিং ফখরুদ্দিন সরকারকে খুব মিছ করি।