![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হু - সম্পূর্ন রাজনীতি মুক্ত একটি ব্লগ। এখানে বাংলা সহ বিশ্ব সাহিত্যের মজার কিছু ছোট গল্প প্রকাশ করা হবে। এই গল্প গুলো প্রকাশের ক্ষেত্রে আমার নিজস্ব কোন সৃজনশীলতা নেই যেটি আছে সেটি হলো পরিশ্রম। এছাড়া মাঝে মাঝে নিজের লেখা দু একটি ছোট গল্প পেতে পারেন, তবে সেই গল্পের মান নিয়ে আমি নিজেই সন্দিহান। এই ব্লগটির বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্নতত্ত্ব, সমাজ, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে আগ্রহী।
ভারতে তখন ইংরেজ শাসন চলছিল। উনিশ শতকের মাঝপথের কথা। এ সময় ঢাকার নওয়াবদের অর্থ-বিত্ত আর শান-শতকতের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল চারদিকে। খবর এল ভারতে মূল্যবান অলঙ্কার ও পাথরের নিলাম হচ্ছে। ইংরেজরা ভারতের বিভন্ন রাজ্য আক্রমন করার সময় যে সব হীরা-জহরত লুট করেছিল কলকাতার হ্যামিল্টন এন্ড কোম্পানী ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সেসব মূল্যবান জিনিস নিলামের ব্যবস্থা করছে। ঢাকার বিখ্যাত নওয়াব খাজা আলীমুল্লাহ ছুটে এলন সেই নিলামে। এটা-ওটা পরখ করে দেখলেন, শেষ পর্যন্ত পছন্দ করলেন কোহিনূরের মতোই এক বড়সড় আকারের হীরা। ইতোমধ্যে হীরাটির নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। গলাভরা নামও ছিল এর। হীরাটির নাম দরিয়া-ই-নূর। অর্থাৎ ‘আলোর সাগর’। নওয়াব আলীমুল্লাহ্ সে যুগে পঁচাত্তার হাজার টাকায় কিনেছিলেন দরিয়-ই-নূর। একই নামের আরেকটি বিখ্যাত হীরা আছে পরস্যে। তবে আমাদের দরিয়া-ই-নূর ঢাকার নওয়াবদের। এখানো সোনালী ব্যাংকে নওয়াবদের মূল্যবান অলঙ্কারের সথে জমা আছে।
কোহিনূরের মতো দরিয়া-ই-নূরও প্রথম পাওয়া গিয়েছে দক্ষিণ ভারতে। অলঙ্কার হিসেবে নওয়াবদের কাছে থাকা দরিয়া-ই-নূর একটি মাত্র হীরা নয়, মূল হীরক খন্ডের চারিদিকে আরো দশটি ছোট ছোট হীরা বসানো রয়েছে। প্রথমে বেশ কিছুকাল দরিয়া-ই-নূর মারাঠা রাজার অধিকারে ছিল। পরে হায়দারাবাদের নওয়াব সিরাজুল মুলক এটি কিনে নেন। শেষ পর্যন্ত অনেক হাত ঘুরে হীরাটি আসে পাঞ্জাবে। রত্নপ্রেমিক শিখরীর মহারাজ বণজিৎ সিং পেয়ে যান দরিয়া-ই-নূরকে। রণজিৎ সিংয়ের মৃত্যুর পর একে একে তাঁর উত্তরাধিকারী শের সিং এবং নেহাল সিংহের হাত ঘুরে শেষ পর্যন্ত আসে দীলিপ সিংহের হাতে। কিন্তু দিলীপ সিংহ আগলে রাখতে পারেন নি দরিয়া-ই-নূরকে। এই বালক রাজা উনিশ শতকের মাঝা মাঝি ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে হেরে যান। আত্মসমর্পন করেন। ইংরেজদের চাগহিদামতো মহারনী ভিক্টোরিয়ার জন্য তিনি হীরাটি দিতে বাধ্য হন। ইংল্যান্ডের মহারানীর কাছে হীরাটি পৌছে ১৮৫০ সালে।
একসময় ইংরেজরা সিদ্ধান্ত নেয় ভারত থেকে সংগ্রহ করা সব রত্ন ভারতে এনে নিলামে বিক্রয় করা হবে। তাই কোহিনূর আর কিছু সুন্দর মুক্তার মালা রেখে বাকি সব পাঠানো হয় ভারতে। এই সূত্রেই হ্যামিল্টন এন্ড কোম্পানীর নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। যেখান থেকে নোয়াব আলীমুল্লাহ এই দরিয়া-ই-নূর কিনে নিয়েছিলেন।
নওয়াব সলিমুল্লার আমলে ঢাকার নওয়াবদের জমিদারিতে সঙ্কট দেখা দেয়। আর্থিক অনটনের কারণে নওয়াব অনেক অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করে দেন। ইংরেজ সরকারের কাছ থেকে অনেক ঋণও গ্রহণ কর কেরন। এই ঋণ শোধ করার জন্য তিনি একসময় দরিয়া-ই-নূরকে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া হয় হ্যামিল্টন এন্ড কোম্পানীকে। কিন্তু তেমন দাম না ওঠায় হীরাটি বিক্রির চিন্তা বাদ দিতে হয়।
নওয়াব সলিমুল্লাহর মৃত্যুর পর নওয়াব এস্টেটের চিফ ম্যানেজারের দায়িত্বে চলে আসে দরিয়া-ই-নূর। তবে তার হেফাজত করার দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় হ্যামিল্টন এন্ড কোম্পানিকে। অবশ্য এ জন্য কোম্পানিকে প্রতি বছর নওয়াব এস্টেট ফি দিত ২৫০ টাকা।
১৯৪৭ সালে পাকিস্থান সৃষ্টি হওয়ার আগে কলকাতার হ্যামিল্টন এন্ড কোম্পানীর কাছ থেকে নওয়াব পরিবারের সদস্যরা দরিয়া-ই-নূরকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। অনেক যত্নে এই মূল্যবান হীরাটিকে রাখা হয় ‘ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’র ঢাকা শাখায়। এর মধ্যে নওয়াব পরিবারের কেউ কেউ হীরাটি বিক্রির জন্য একবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। কিন্তু খাজা নাজিমউদ্দিন বিরোধিতা কারায় তা আর সম্ভব হয় নি।
এক সময় ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বন্ধ হয়ে গেলে দরিয়া-ই-নূর আসে স্টেট ব্যাঙ্ক অব পাকিস্থানের হেফাজতে। পরে এই হীরাটিকে রাখা হয় ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব পকিস্থানের সদরঘাট শাখায়। বাংলাদেশ আমলে এই ব্যাঙ্কটি হয়ে যায় সোনানী ব্যাঙ্ক। অদ্যবধি এই ব্যাঙ্কের হেফজতেই আছে দরিয়া-ই-নূর।
সত্তরের দশকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর একবার উদ্দ্যেগ নেয় হীরাটি সংগ্রহ করার। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ত্বদের নিয়ে গঠিত কমিটি দরিয়া-ই-নূরের মূল্য নির্ধারন করেন পাঁচ লক্ষ টাকা। কিন্তু নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত জাদুঘর হীরাটি সংগ্রহ করতে পারে নি।
ব্যাংকের গোপন বাক্স থেকেও দরিয়া-ই-নূর এখানো তার গৌরবের কথা প্রচার করেছে। বৃদ্ধি করেছে ঢাকার নওয়াবদের মর্যাদা। এই উপমহাদেশের কোহিনূর দেশান্তরী হলেও দরিয়া-ই-নূর শুধু উপমহাদেশে নয় খোদ ঢাকাতে থেকে আমাদেরও অহঙ্কার বাড়িয়েছে বহুগুন।
২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯
এম আর ইকবাল বলেছেন:
দরিয়া-ই-নূরের মূল্য এখন কত হতে পারে ?
এটাকি গত কয়েক দশকে একবারও দেখা গেছে ?
৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:০৪
নক্শী কাঁথার মাঠ বলেছেন: সোনালী ব্যাংকে রাখছে? তাইলে হইছে কাজ... এতোদিনে মনে হয় চুরি হয়ে গেছে, কেউ টেরই পায়নি।
৪| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:১৫
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: বিষয়টা জানা ছিলনা আগে।
ভাল লিখেছেন!!
৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩০
আমি তুমি আমরা বলেছেন: চমৎকার লেখা। দরিয়া-ই-নূর সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না। আপনার লেখা থেকে জানলাম। এর বর্তমান মূল্য কত হতে পারে?
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:২০
বেলা শেষে বলেছেন: Yes , proudiness for an article too. Thenk you very much for good writing.