নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হু

হু

হু - সম্পূর্ন রাজনীতি মুক্ত একটি ব্লগ। এখানে বাংলা সহ বিশ্ব সাহিত্যের মজার কিছু ছোট গল্প প্রকাশ করা হবে। এই গল্প গুলো প্রকাশের ক্ষেত্রে আমার নিজস্ব কোন সৃজনশীলতা নেই যেটি আছে সেটি হলো পরিশ্রম। এছাড়া মাঝে মাঝে নিজের লেখা দু একটি ছোট গল্প পেতে পারেন, তবে সেই গল্পের মান নিয়ে আমি নিজেই সন্দিহান। এই ব্লগটির বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্নতত্ত্ব, সমাজ, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে আগ্রহী।

হু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলার হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির কিছু বিষয়

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৪

বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির অনেক কিছুই আজ হরিয়ে গিয়েছে। বাংলার এই মানুষের জীবন ধারায় যেমন পরিবর্তন সাধিত হয়েছে ঠিক তেমনই অনেক কিছুই আমরা হারিয়ে ফেলেছি, যে গুলো একান্তই আমার নিজস্ব বিষয় বলে বিবেচিত করা যায়। ঠিক তেমনই কয়েকটি হারিয়ে যাওয়া বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করব। আশা করি যারা এই পোস্টটি পড়বেন তারাও তাদের যদি এমন কোন অভিজ্ঞতা বা জানা বিষয় থাকে সেগুলো শেয়ার করবেন।





কাপড় কাঁচার ক্ষেত্রে সাদা ছাই এর ব্যবহার



বাংলায় এমন একটা সময় ছিল যখন সাবন বা ডিটারজেন্ট পাউডারের ব্যবহার এতোটা ছিলনা। ডিটারজেন্ট পাউডারের ব্যবহার ব্যপক আকারে বেড়েছে খুব বেশি দিন হয় নি। আমি ছোট সময়ে ডিটারজেন্ট পাউডার বলতে শুধু মাত্র জেট ডিটারজেন্ট পাউডারকেই বুঝতাম। তবে এর ব্যবহার খুবই সীমিত আকারে ছিল। এক বার ভাবুন যখন ডিটারজেন্ট পাউডারের ব্যবহার কমছিল তখন মানুষ ভারী কাপ যেমন কাঁথা বা কম্বোল টাইপের জিনস পত্র পরিষ্কার করতে কি ব্যবহার করত ? হ্যাঁ সেই সময় মানুষ সাদা ছাই ব্যবহার করতো। আমার আঞ্চলিক ভাষায় এই ছাইকে বলা হতো ক্ষার। কলা পাতা বা সরিষার ডাটা কে আগুনো পুড়লে ছাই অনেকটা সাদা হয়। এই জিনিসটিই ব্যবহার করতো মানুষ কাপড় কাচার ক্ষেতে। যে কাপড় কে পরিষ্কার করা হবে সেটি কে গরম পানিতে ভেজানোর সময় এই ছাই দিয়ে দেওয়া হতো। কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পরে সেটিকে কাঁচার হতো।



কাপড় কাচার ক্ষেত্রে আরেকটি জিনিস ব্যবহার করা হতো যাকে আঞ্চলিক ভাষায় কাচা সাবান বলতাম। দেখতে অনেকটা সাদা তবে কোন ফেনা হতো না।এটা ভেজা ও অর্ধ-গলিত আকারে পাওয়া যেতো। বাড়ি বাড়ি এসে ফেরিওয়ালা বিক্রি করতো। এক কথায় বলতে গেলে এটি কেজি দরে বিক্রি হতো। এই জিনিসটি যে কি ছিলো তা আমি জানি না। যদি কারো জানা থাকে তবে শেয়ার করতে পারেন।



মাথার চুল পরিষ্কারের ক্ষেত্রে মাটির ব্যবহার:



এখনকার সময়ের মতো তখন এতো পরিমানে শ্যম্পুর ব্যবহার ছিল না। তখন মাথার চুল পরিষ্কার করার জন্য নানী -দাদীরা এক ধরনের বিশেষ মাটি ব্যবহার করতো। মাটির ধরন অনেকটা সাদা। এই মাটিটা অনেক পিচ্ছিল ছিল , ধরণ হয়তো এটেল মাটি হবে। তবে আমার স্মৃতিতে যতটুকু আছে সেটা হলো- এই মাটিদিয়ে মাথা পরিষ্কার করার পর চুল গুলো অনেক ফুলে থাকত এবং সিল্কি হতো।



কুলার মাগন



শীতের দিনে আমাদের এলাকায় গ্রামের যুকব সম্প্রদায় রাতের বেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে গান গেয়ে চাল তুলত। এই বিষয়টি কে আমাদের এলাকায় কুলার মাগন বলা হতো। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল- যারা গান গাইত তাদের প্রত্যেকের হাতে একটি লাঠি থাকত, গান গাওয়ার সময় এই লাঠি দিয়ে উঠানের উপর আঘাত করা হলে এক ধরনের শব্দের সৃষ্টি হতো যা এর বাদ্যযন্ত্র হিসেবে কাজ করতো। তবে বাদ্য যন্ত্র হিসেবে একটা ঢোল সবসময়ই থাকত।



যুব সমাজ এই চালি দিয়ে অনেকটা পিকনিক বা চুড়ুই ভাতির আয়োজন করতো। এটাকে কুলার মাগন বলার কারণ হলো- কুলা ভরে চাল দেওয়া হতো যার গান গাইতে আসতো তাদের। যদি কেউ কম চাল দিত তবে তাকে নানা ভাবে ছন্দে ছন্দে , গানে গানে কটাক্ষ করতে করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতো। বিষয়টা মজারই ছিল।



বায়োস্কোপ



আমার জীবদ্দশায় এই জিনিসটি আমি হাতে গোনা কয়েকবার দেখেছি। আমাদের এলাকাতে এক জন বৃদ্ধলোক ছিল, তিনিই মূলত বায়োস্কোপের বাক্স নিয়ে বিভিন্ন জায়গাতে ঘুড়ে বেড়াতেন। ঐ বুড়া লোকটা অনেক রশিক লোক ছিল- বুড়া লোকটা মারা গেছে ৭ বছর হয় তবে এখন তার কথা বার্তা বা চাল চলন আমার চোখে চোখে ভাসে। বায়োস্কোপের সবচেয়ে মজার টপিক ছিল মনে হয় সাদ্দাম হোসেন। ১৯৯০ এর পরে সাদ্দাম মুসলিম বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়ি নেতা হিসেবে আবির্ভূত হলে তাকে নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত ছিল.. এই কাহিনী গুলোই দেখানো হতো এই বায়োস্কোপে। হয়তো আরো অনেক কাহিনী থাকতে পারে তবে এই কাহিনীটি আমার দেখা।



হা-ডু-ডু খেলা

এখনকি কেউ বলতে পারবেন কারো গ্রামে ঈদের পরে বা অন্যকোন সময় হা-ডু-ডু খেলার টুর্নামেন্ট ছাড়া হয়। আমি এই জিনিসটি অনেক দিন ধরে দেখি না গ্রামে। একটা সময় ছিল আমার গ্রামে প্রতিদিন বিকেল বেলায় হা-ডু-ডু খেলা হতো। আমার একটা স্মৃতি মনে আছে…. আমি একবার আমার বাবার সাথে হা-ডু-ডু খেলা দেখতে গিয়ে ছিলাম। এটা ছিল একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা। অনেক দূরে থেকে ভাল ভাল খেলোয়ার হায়ারে খেলতে আনা হয়েছিল । ঐ ম্যাচে আমি একজন খেলোয়ারের একটা পা সম্পূর্ণ উল্টে যেতে দেখেছি। অথাৎ ঐ লোকটির পা ভেঙ্গ গিয়েছিল। আর লোকটি অনেক জোরে জোরে চিৎকার করছিল।





এমন আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো এক সময় বাংলার সংস্কৃতির সাথে অনেক বেশি জড়িত ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। মাঝে মাঝে মনের কোনে উকি দেয়, আর মনে হয় আগের বিনোদন গুলো বলি আর প্রয়োজনীয় বিষয়ের কথাই বলি অনেক বেশি সরল ছিল। এখন জীবনটা অনেক বেশি সহজ কিন্তু সরল নয়।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪১

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন: কুলার মাগন-কে আমাদের দেশে (বৃহত্তর ফরিদ পুর) বলা হত- 'আলই-আলই'

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৪৮

হু বলেছেন: এক এক অঞ্চলে এক এক নামে ডাকা হয়। কিন্তু বিষয়টাকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন .. সেটা আমাদেরই সংস্কৃতির অংশ

২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৭

ডি মুন বলেছেন: বাহ, সুন্দর পোস্ট। +++++

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৪৮

হু বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: হাডুডু খেলা কালেভদ্রে দেখি গ্রামে। কোনোমতে টিকে আছে। বেশিদিন থাকবে না। নতুন প্রজন্মের উৎসাহ কম।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৪৯

হু বলেছেন: আমার গ্রামে অনেক দিন হলো দেখি না। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.