![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনের দ্বারে দ্বারে ঘুড়েছি আমি পুড়েছি শতবার, অঙ্গারে ভাসিয়েছি গা, পাইনি ঠিকানা, অজ্ঞাত নামা, আমার নেইতো জানা
রাতের আকাশে তখন দলা দলা মেঘের ছুটাছুটি। আর আমি ছুটছি ক্যাম্পাসে ফিরবো বলে। ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে এখন রাত ১১টা। রাস্তায় তখন দূরপাল্লার বাস-্ট্রাকের আনাগোনা। টিউশনি করিয়ে পল্টন মোড়ে ক্ষুধার্ত এই যুবকের অসহনীয় অপেক্ষা। বেশ সময় বাদ এই ক্লান্তি ও অপেক্ষার অবসান ঘটালেন ‘এটিসিএল’ বাস মহাশয়। তড়িঘড়ি করে উঠেই ‘প্রত্থম’ সিটটা দখল করলাম।
উঠেই লক্ষ্য করলাম সামনের উল্লেখিত ও নির্দেশিত- মহিলা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের ৯টি সিটের একটিতে বসে থাকা এক কম বয়শী (চোখের আন্দাজে) এক যুবক বারবার অন্য যাত্রীদের সময় জিগ্বেস করছে। আমাকেও একবার জিগ্বাসিলো সে। এবং বারবার তার গন্তব্যের স্থান পরিবর্তন করছে। কখনও শাহবাগ কখনও সাভার আর কখনও কাটাবন যাবেন বলে বিড়বিড় করছে। এবং তার শরীরের ভাষাও স্বাভাবিক মানুষের মত না। মুরব্বি টাইপ এক লোককে তো মোটের উপর কুড়িখানেকরও উপর খাড়া সালাম দিলো সে। বুঝতে পারলাম এগুলো স্বাভাবিক মানুষের আলামত না। কিন্তু কাহিনীযে এখনও অপেক্ষার ডালা সাজিয়ে বসে আছে। খানিকটা বাদে একই বাসে আরও এক যাত্রীর প্রত্যাবর্তন।
ঠিক দরজা বরাবর দাড়িয়ে ঐ যাত্রী তার অসহায়ত্বের কথা সবাইকে শোনাচ্ছেন। এক দুর্বিষহ দুর্ঘটনায় তার বাম হাত ও ডান পা অচল প্রায়। এখন চিকিৎসা করতে তার প্রচুর টাকার প্রয়োজন। তাই ঘুরে ঘুরে লোকাল বাসগুলোতে টাকা সংগ্রহ করছেন। কিন্তু আজব বিষয়টি হলো, বাসের এতজন যাত্রীর মধ্যে কেউই প্রথমে এগিয়ে ঐ লোকটিকে টাকা দিচ্ছিলনা। ঐ প্রতিবন্ধী ছেলেটিই প্রথম হাত বাড়িয়ে দিলো। এবং তার হাতে গুজে রাখা ৩ টাকা (একটি ২ টাকার নোট আর একটি এক টাকার পয়সা) সেই অসহায় যাত্রীর হাতে দিয়ে দিলো। এবং টাকা দিয়েই একটি কথা বললো, চিকিৎসা করাবেন কিন্তু। আরও আজব বিষয় হলো, ঐ ছেলের টাকা দেয়ার দৃশ্য দেখে বাসের অধিকাংশ যাত্রীই কম বেশি সাহায্য করেছে। তারপর বাসের কনডাক্টার সেই প্রতিবন্ধী ছেলের কাছে ভাড়া চাইলে ছেলেটির নিদারুণ সরল ভাষায় উত্তর, ভাই টাকাতো নাই। কনডাক্তার বিষ্মিত হয়ে কি বলবে কূল-কিনারা না পেয়ে অন্য যাত্রীর দিকে চলে গেল।
উত্তর আধুনিক যুগের সভ্য খোলসে অমানবিক আর অসভ্য লোকের ছড়াছড়িতে বিশ্ব এখন গর্ভবতী। মানুষ মানুষের জন্য কথাটি এখন বইয়ের পাতায়ও কেমন যেন ফ্যাকাশে আর রূপকথার শব্দ ঠেকে। এই সভ্য মানবজাতির কাছে মূল্যবোধ কিংবা মানবিকতা এক বিপন্ন প্রায় বস্তুর সমতুল্য। এ জগতে যে শুধুই কাদা ছড়াছড়ি, বুনোদের আগ্রাসন আর ভণ্ডদের বিস্ফোরণ............
০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৩২
নিরেট জাহিদ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। তবে এই মানসিকতা পৃথিবীর কারো না কারো মধ্যে বিরাজমান আছে নাহলে তো পৃথিবী সাঙ্গ দেখে ফেলতাম
২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:২৭
সুমন কর বলেছেন: ব্লগার মানবী'র সাথে সহমত।
তবে বর্তমানে কে আসল কে নকল, সেটা বোঝা খুব কষ্টকর !!
০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৩৩
নিরেট জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ। হুম নকলের ছড়াছড়িতে আসলের গায়েও কাদা ছড়ানো হচ্ছে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৬
মানবী বলেছেন: ছেলেটি মোটেও মানসিক প্রতিবন্ধী নন, হয়তো শারীরিক কোন সমস্যা আছে। তাঁর মানসিকতা আমাদের সকলের চেয়ে অনেক বেশী সুস্থ! এই যে আমরা শুদ্ধ ভাষায় এতো সব বড় বড় কথা বলছি, লিখছি. খুব স্পষ্ট আর দৃঢ় ভাবেই এসব জানাচ্ছি অন্যদের... এই আমাদের মাঝে কারো এতোটা মানসিক শক্তি নেই যে নিজের কাছে যা আছে তার ১০০% কোন অ্ভাবীকে দিয়ে সাহায্য করতে পারি।
এই লেখায় দুজন সুন্দর মানুষের কথা উঠে এসেছে.. একজন সেই ছেলেটি যে নিজের সর্বস্ব দিয়ে একজন অভাবগ্রস্থ কে সাহায্য করলেন। আরেকজন সেই বাস কন্ডাক্টার, যিনি এই মহৎ ছেলেটির সাথে টিকেটের পয়সা নিয়ে কোন ঝামেলা না করে সামনে এগিয়ে গেলেন।
চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।