নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সোহাইল বিন জয়নুল

সোহাইল বিন জয়নুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাগর উপাখ্যান

২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:৩২

তারা দুজনে কাছাকাছি এই একটু এসেছে, একটুখানি হয়তো ঠোঁটে ঠোঁটে ব্যারিকেড। মেয়েটা অবশ্য একটুখানি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এরপরও মাতব্বর বাপের ছাওয়াল বলে কথা। একবার বিয়েটা হয়ে গেলে কপালের সুখ দেখে কে। কপালের সুখ কেহ দেখুক কিংবা নাই দেখুক, যা দেখার দেখে নিল এলাকার মসজিদের ইমাম আষাঢ়ে গল্পকার জমিরুদ্দীন মোল্লা। তাহাদের এই সামান্য ডলাডলির ঘটনাকে রসিয়ে তার দেখা কামক্রীড়া বলে রটিয়ে দিল সারা গ্রামে। মাতব্বরের ছেলে রাইসুদ্দিন আর করিমুদ্দির ডাঙ্গর মাইয়া সাকেরা বানুকে রতিক্রিয়ারত অবস্থায় দেখেছে, ওই পাপকাজের একটা বিহীত সে দাবি করেই বসল। মাতব্বর শুনে তেলেবেগুনে। অবশ্য জ্বলল কিনা তা দেখার প্রয়োজনবোধ কেউ মনে করল না। তাহার হুংকারে সবাই চুপ। নিজের ছেলে বলে কোন ছাড় নাই এর একটা ন্যায়সংগত বিহীত তিনি করবেনই। রাতের বেলায় সালিশ বসল। জমির উদ্দীন মোল্লা মুখে বারংবার তাওবা জপিতে জপিতে সে যাহা দেখিল তাহার বিবরণ দিতে লাগিল। রাইসুদ্দিনের মাথায় কিছুতে ঢুকছে না একটুখানি ডলাডলির ব্যাপারটাকে এই মোল্লা কি করে বিছানা পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছে। এরপর মাতব্বর সাব কহিলেন, যেহেতু তাহার পুত্রের বিচার তাই তিনি কিছু বলবেন না, বাকিরা যে সিদ্ধান্ত নেন, তা তিনি দ্রুত কার্যকর করার ব্যবস্থা নিবেন। কথা বলা শুরু করল মাতব্বরের বিশেষ বন্ধু আকবর আলী।
→ রাইসুদ্দিন ছেলে মানুষ, এই বয়সে একটু-আধটু এইদিক-সেইদিক করতেই পারে (কেশে গলা পরিস্কার করে আবার শুরু করে আকবর আলী) ইহার মধ্যে আমি দোষের কিছু দেখি না। কিন্তু এই মেয়ে একজন ছেলের সাথে কথা বলল কিজন্য? এই চরিত্রহীন মেয়ে গ্রামে থাকলে গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে, তাই তার পরিবারকে গ্রাম ছাড়তে হবে। সবাই এই কথার সাথে একমত পোষণ করিল। এবার মাতব্বর মেয়ের বাবা করমুদ্দি কে কড়া গলায় নির্দেশ দিলেন যেন সকালে সূর্য উঠার আগেই সে তার মেয়েকে নিয়ে গ্রাম ছাড়ে। করিমুদ্দি ক্ষমা চাইতে গেলেও বড় গলায় মাতব্বর কহিয়া দিলেন বাকীরা ন্যায়সম্মত বিচার করিয়াছেন। ইহাতে তিনি কোনরূপ নাক গলাতে পারিবেন না। যাহোক বিচারে সবাই খুশি। কিন্তু পুরা ঘটনাটা গ্রামে থাকা লম্পট রাইসুদ্দিনের অন্যান্য প্রেমিকাদের মনে নতুন পেরেশানের সৃষ্টি করেছিল। তারা সবাই যে যার মত ভাবিতে লাগিল, "তাহার এ রসের নাগর না জানি আরো কাহার?"
উপরের গল্পটা প্রতীকী হলেও একেবারে মিথ্যে নয়। একটা সময়ের জন্য এই গল্পটা বেশ সত্যি ছিল। আর লম্পট নাগরদের বড়লোক বাবারা কিংবা মামারা তাহাদের দোষ গোপন করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকিত আর সমাজে তাদের অপরাধ বলতে কিছুই থাকত না।
যাহোক, এই নাগর শব্দ বেশ কিছুদিন ধরে কেন জানি মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছিল। এই নাগর শব্দটি মূলত একটি প্রত্যয়জাত শব্দ। নগর শব্দের সাথে সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় 'ষ্ণ' যুক্ত হয়ে শব্দটি গঠিত হয়েছে। এটি বিশেষ্য পদ, যার সাধারন অর্থ গিয়ে দাড়ায় ''নগরজাত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি' বা 'সম্ভ্রান্ত রসিক ব্যক্তি'। শব্দটির ব্যবহারিক অর্থ বেশ ভিন্ন। এর ব্যবহারিক অর্থটি সোজা বাংলায় গিয়ে দাঁড়ায় 'লম্পট প্রেমিক'; যারা একের অধিকের সাথে প্রেম করে আর মধু লুটে বেড়ায়, কিন্তু বিয়ে করে না। এদের কোন কুকীর্তি কখনো ফাস হলেও তাহাদের সম্ভ্রান্ত বাবা, কাকা কিংবা মামারা ঠিকই উদ্ধার করে নেয় আর মেয়েটাকে বানায় বলির পাঁঠা।
যাহোক আধুনিক কালের নাগররা কিন্তু বেশ মারাত্মক হয়। তারা আগের মত কোন সালিশের মুখোমুখি হয় না তাই তা থেকে উতরানোর প্রশ্নই আসে না। তারা আজকাল ডলাডলির জন্য সালিশের মুখোমুখি হয় না। বরং বেডরুমের আদিমতাটুকু ধারন করে তা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মত করে ব্যবহার করে।
যাহোক নাগররা আজকাল এইভাবে তাহাদের প্রভাবশালী বাবা-কাকাদের ক্ষমতা ব্যবহার না করলেও তাদের চেয়ে বড় অপরাধীরা ঠিকই এই দেশে তাহাদের বাবা, মামাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে ঠিকই মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। তাহাদের বাবা-মামারা মাতব্বর না হলেও সম্ভ্রান্ত রাজনৈতিক নেতা অবশ্য হয়ে থাকেন। তাহারা তাদের পুত্রের সাজা কমানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে সফল হয়ে থাকেন। তাদের খুনী পুত্রের মৃত্যুদন্ডও তারা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মওকুপ করার কাজেও বেশ সফল। তাহাদের জেলে থাকা পুত্ররা বিয়ের মত ফরজ কাজটিও যথাসময়ে সেরে ফেলতে পারেন। খুব অল্পসময়ে তাহাদের পুত্ররা সব সাজা থেকে মুক্তি পেয়ে এই দেশের মানুষ হ্রাসকরন মিশনের মত মানবকল্যানকর দায়িত্বটা বেশ ভালভাবেই পালন করে থাকেন। লম্পট প্রেমিক আর এদের মধ্যে তেমন পার্থক্য থাকেনা কেউ শাব্দিক অর্থে নাগর আর কেউ ব্যবহারিক অর্থে নাগর। আবার তারা উভয় দিক থেকে নাগর হতে পারেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.