![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মা, মামুনি, আম্মু, আম্মা , মম ইত্যাদি যেনামেই ডাকি না কেন প্রতিটি শিশুর জন্য সবচেয়ে আস্থার এক চরিত্র এই নামের মানুষটি। এই পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখার আগ থেকে যার সাথে আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠে যে সম্পর্ক নাড়ীর,আত্মার , হৃদয়ের সম্পর্ক কোন কিছু দিয়ে এই সম্পর্কের ব্যাখ্যা করা যায় না।
৯ মাস ( কম বেশি) গর্ভে ধারন করে যে আমাদের এই পৃথিবীর আলো দেখাই , যে না থাকলে এই পৃথিবীর মুখ দেখাই হত না । মানুষটি তার জীবনের ঝুকি নিয়ে শুধু ঐ নাম গুলোই কেউ ডাকবে সেই আসায় এত গুলো মাস কষ্ট করে। তার সন্তানকে নিয়ে তার একটা আলাদা স্বপ্নের জগত তৈরি হয়ে যায়। তার মুখে আনন্দ ফুটে উঠে যখন প্রথম তার সন্তানটি নড়ে উঠে তার গর্ভে যেন তার সাথে সে কথা বলছে। খেতে না পারলেও শুধু সন্তানটির কথা ভেবে চিন্তা করে খায়। এই মানুষটি শুধুই নিঃস্বার্থ ভাবে তার সন্তানের কথা ভাবে প্রথম থেকেই।
আমাদের জীবনের হাতে খড়ি হয় এই মানুষটির দ্বারা। যাঁদের মা জন্মের সময় মারা যায় বা অন্য কারনে দূরে যায় তাদের কথা বাদে।
যারা মোটামুটি স্বাভাবিক ভাবে বাবা-মাকে জীবনের শুরুতে পেয়েছেন তাদের প্রত্যেকেরই হাতে খড়ি হয় এই মা এর দ্বারায়। মা আমাদের হাটতে ,চলতে, কথা বলতে শিখায় এমনকি আমাদের প্রথম কলমধরাও তার কাছ থেকে শেখা হয়।
জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই তার অবদান সকালের খাবার টেবিল থেকে শুরু করে রাত্রে বিছানায় ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত মানুষটি তার সন্তানকে নিয়ে চিন্তায় থাকে। কিভাবে সন্তানকে আরও ভালো কিছু দেওয়া যায় , কিভাবে তাকে আর বেশি আনন্দে সুখে রাখা যায়।
আসলে মায়ের অবদান বলে শেষ করা যাবেনা । মা এক আশীর্বাদ যার সাথে আছে, সে কখনও বুঝে না । চলে গেলেই বুঝে।
আজ ৬ বছর হল আম্মু কে হারিয়েছি । কিন্তু আম্মুর সাথে কাটানো একেকটা স্মৃতির মাঝে আম্মুকে খুজে নেবার চেষ্টা করি । কিছু স্মৃতি চারন করব আজ।
খুব মনে পরে সকালে ঘুম থেকে আমাকে টেনে উঠানোর স্মৃতিগুলো , ছোটবেলায় ঘুম থেকে একেবারেই উঠতে চাইতাম না । খুব ভয় পেতাম মাকড়শাকে আমার আর আমার বোনকে ভয় দেখান হত যে মশারির ভিতর মাকড়শা অমনি লাফ দিয়ে ঘুম ভেঙ্গে যেত। মনে পরে ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে থাকতো আমার তখন আম্মু আমাকে স্কুল এর ইউনিফর্ম পরিয়ে দিত। আমি রেডি হয়ে যেতাম স্কুল।
আমার আম্মু আমাকে কখনও লেখা পড়া নিয়ে বকা দেইনাই তবে কষ্ট পেত যখন তার ছেলে পরীক্ষায় বেশ কম নাম্বার পেত। স্কুল যেতে ভালো লাগত না আমার , এই জন্য প্রায় সব স্কুলেই (যেসব স্কুলে পড়েছি ) দরখাস্ত দেবায় বেশ পারদর্শী ছিলাম আমি, আর আম্মুর কাছে অন্যায় দাবী করে দরখাস্তে সই করাতাম। অমনি হয়ে যেত মাইর থেকে মাফ।
এখনও অনুভব করি যখন অসুস্থ থাকতাম তখন আম্মু নিজে হাতে মাথায় হাত বুলানোটা । মিস করি খাবার সময় আব্বুকে বলা "এত লবন খেতে পার তুমি" " ঝোল কম করে খাও" , আর আমাকে বলত যে" আমার ছেলে গরুর মাংশ পেলে ভাত খেতে ডাকা লাগে না"
মিস করি আম্মুর হাতের মাখানো ভাত , সবজির প্রতি ছিল চরম অনিহা ছিল যা এখনও বিদ্যমান । আম্মু আমাকে সবজি খাওয়ানোর জন্য নিজে হাতে খাবার মাখাই দিত । তখন যেন সবজিও অমৃতের স্বাদ পেত।
শুন্যতা অনুভব করি প্রতি ওয়াক্ত নামাজে । একটা মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা নামাজ, দুয়া , কুরআন পরে যাচ্ছে সেই আওয়াজ আর আসেনা কানে।
কারেন্ট গেলে খুব ভয় হত ছোট বেলায় আম্মুর কাছ থেকে তখন দূরে যেতাম না । এখন আর কানে আসে না রান্নাঘর থেকে গুন গুন গানের আওয়াজ। বিকাল হলে আমি,আম্মু,আপু, মিলে সেই নাস্তার আসোর বসানোর স্মৃতিগুলো এখনও জীবন্ত । জীবন্ত ছুটির দিনে আব্বু আম্মুর সেই খুনসুটি মুহূর্ত গুলো। শুন্যতা অনুভব করি আব্বুর ঘরে।
এখন আর ঝগড়া হয় না আমার আর আমার বোনের মাঝে আম্মুর আদর নিয়ে। এখন সন্ধার পরে ঘরে ফিরলেও কেউ বকার নেই। নেই রাত করে ঘুমানোর জন্যও বাধা। নেই তুমি !
অপরাধ জাগে সেই রাত্রে কেন ছিলাম না হসপিটালে , শেষদিনগুলোতে কেন তোমার সাথে এত কম দেখা হত আমার।
মনে পরে আম্বুলেঞ্চে তোমার সাথে আমার শেষ কথাটি। পারিনি আমরা তোমাকে বাঁচাতে । সময়ের ব্যর্থতা । সময় আমাদের বিপরীতে ছিল।
তোমার স্বপ্ন হয়নি পুরন , রাখতে পারিনি কথা এর জন্য অনুতপ্ত আমি। ভালো লাগে আমার বোন স্বপ্ন পুরন করেছে তোমার। তুমি যেমনটি চেয়েছিলে সবচেয়ে শিক্ষিত হোক তোমার মেয়ে হয়েছেও। কতজনের কত হিংশা তোমার আশীর্বাদের কাছে হার মেনেছে, আজ আমার বোন চাকরীও করে তুমি থাকলে কতই না খুশি হতে।
তোমার সন্তান তোমাকে ভোলেনি আম্মু ।অনেক ভালবাসি তোমায় ।কখনও বলার সুযোগ হয়নি। ভালো লাগে যখন কেউ আমাকে বলে ছেলেটা মায়ের মত হয়েছে। গর্ব করি তোমার দেবা শিক্ষা গুলো নিয়ে। এমন মা পাওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার।জানি না আর কোনদিন দেখা হবে কিনা আমাদের। আক্ষেপ নিয়ে চলছে দিন গুলো কেন মানুষ না ফেরার দেশে চলে যায়।
"মা" ডাকটা এমন একটা ডাক যেই ডাকের মধ্যেই যেন কত প্রশান্তি। খারাপ লাগে যখন দেখি অনেকেই তার মায়ের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে। মায়ের খোজ খবর নিতে একেবারেই চাই না। তখন মনে মনে শুধু একটা কথায় মনে পরে এখন মা আছে বুঝছ না, যখন চলে যাবে তখন ঠিকই বুঝবা।
অনেক বড় ভাইকে দেখি বিয়ের পর তার বউ এর বাধ্যগত গোলাম হয়ে যেতে, মায়ের আচল তলে বেড়ে উঠা ছেলেটি এখন আর তার মাকে চিনেই না। ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হয় ঐ মেয়েকে যে একটা ছেলেকে তার মায়ের কাছ থেকে দূরে নিয়ে যায় ।
আবার অনেক ছেলেকে দেখি তার বউ কে তার মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখতে দেই না এইটাও ধিক্কার পাবার দাবী রাখে। দুই দিনের দুনিয়া বাবা মা ভাই বোন সবাই একসাথে থাকলে যেমন পরিবারের শক্তি বারে, বন্ধন অটুট হয়, তেমন মানসিক রোগ গুলো যেমন একাকীত্বতা , মানশিকভাবে দুর্বলতা, পারিবারিক কলহ আত্মহত্যা এইসব বেশ কমে যায়।
শহরে জীবনে আমাদের কথা বলার মানুষের বড়ই অভাব সেখানে বাবা মাকে পাশে নিয়ে চললে ঘরের ভিতরে যেন বিষণ্ণতার বীজ থাকে না আর।
ইসলাম ধর্মের অনুসারী অধিকাংশ মানুষ এই দেশে তবে যতটুকু জানি সব ধর্মেই মায়ের সাথে বেয়াদবির কোন ক্ষমা নাই । যতক্ষণ পর্যন্ত না মা ক্ষমা করে দেই ।
মায়ের পায়ের নিচেই সন্তানের জান্নাত।
" এছাড়াও আমাদের মহানবী বলেছেন সহজে যদি জান্নাত পেতে চাও তাহলে বাবা মায়ের সেবা কর" কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আজ অনেকেই গায়ে সুইসাইড বোম লাগিয়ে জান্নাতের আশা করে একটু ভাবে না তার মৃত্যুর পর তার মায়ের কি হবে। আর আত্মহত্যা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ।
মা সন্তানের জন্য জন্য যেই দুয়া করে সেই দুয়া কবুল হয়ে যায় অনেক জলদি। বাইজিদ বস্তামির সেই মায়ের জন্য পানি আনার কথা কার মনে আছে ?
বাইজিদ বোস্তামি তখন বড় কোন সুফি হননি । একদিন মদ খেয়েই বাড়ি ফিরছিলেন বাসায় ফিরে দেখেন তার মা শুয়ে আছে পানির জন্য বেশ তৃষ্ণাত। তার মা তাকে বললেন একটু পানি নিয়ে আসবার জন্য। তিনি সাথে সাথে একটা পাত্র নিয়ে চললেন পানি নিয়ে আসতে কিন্তু আসে পাশে পানি না পেয়ে অনেক দূর থেকে একটা ঝর্না থেকে পানি নিয়ে আসতে আসতে বেশ দেরি হয়ে গেছিল , বাড়ি ফিরে দেখেন মা ঘুমিয়ে গেছে তিনি ঐ অবস্থায় মা কে না ডেকে মায়ের ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষা করছিলেন। সকালে যখন তার মায়ের ঘুম ভাঙল দেখলেন তার ছেলে বাইজিদ পানি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ছেলের এই মায়ের প্রতি ভালোবাসা দেখে সেইদিন তার মা দুয়া করেছিলেন তার ছেলে যেন সুফি দরবেশের সর্দার হয়ে যায় এবং আল্লাহ সেই দুয়া কবুল করেও নিয়েছিল । আমার এই ঘটনা বলার অর্থ এই যে মায়ের সেবা করে আশীর্বাদের দুয়া গ্রহন করি অভিশাপের না ।
কষ্ট লাগে যখন দেখি কোন কর্মজীবী মাকে তার মাতৃত্বকালীন ছুটি না দিয়ে জালিমের মত কাজ করান হয় । ঘৃণা হয় যখন খবরের কাগজে অথবা টিভিতে দেখি কোন সন্তান তার মায়ের গায়ে হাত উঠিয়েছে । এই ২০১৩ সালে এসো মায়েরা তাদের আসল সম্মানটুকু পাইনি ।
অনেকেই মা দিবসে অনেক বুলি ঝারেন কিন্তু নিজের মায়ের খোজ নেন না একটুও আবার অনেকে নিজের মাকে বৃদ্ধা আস্রমে ফেলে আসছেন।
আর লিখছিনা এই মা দিবসে আমার সকল ভাই বোন বন্ধু আত্মীয়স্বজন ও যারা এই লেখা পড়ছেন সবার প্রতি আমার অনুরোধ আজ একবার হলেও আপনার মাকে বলুন আপনি তাকে কত ভালবাসেন , তার জন্য পারলে একটা সুন্দর গিফট নিয়ে যান । লজ্জা পাবার কিছু নেই , কে জানে এই গিফটের জন্য আপনার মা সেই বাইজিদ বস্তামির মায়ের মত একটা আশীর্বাদের দুয়া করে ফেলেন আপনার জন্য। সরাসরি না পারলে ফোন করুন টেক্সট করুন বলুন আপনার মাকে আপনার ভালবাসা স্রদ্ধার কথা। পারলে মায়ের সাথে সময় কাটান কিছু। মায়ের প্রিয় খাবার গুলা আনার ব্যবস্থা করুন । অনেকই বলবেন একদিন মাকে ভালবেসে কি হবে আরে মাকে তো আমরা প্রতিদিনই ভালবাসি , কিন্তু একটা দিন হোক না একটু মায়ের জন্য পুরোটাই মায়ের জন্য ।
আপনার বয় ফ্রেন্ড গার্ল ফ্রেন্ড এর জন্য আপনি জাতিয় দিবস গুলাকেও ভালবাসা দিবস বানান আর মায়ের জন্য একটা দিন রাখতে কত কষ্ট আপনার।
আমার মত যারা তার তাদের মায়ের জন্য দুয়া করুন নিজ নিজ ধর্ম অনুসারে । এখন এইটাই আমাদের করার আছে।
এই মা দিবসে সকল মায়ের প্রতি রইল সালাম, ভালোবাসা বিনম্র শ্রদ্ধা। আর আমার মাকে বলব
" আম্মু আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি
তুমি ছাড়া জীবন আশীর্বাদহীন লাগে "
২| ১১ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৫২
খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনার মা কে মহান রাব্বুল আলামীন জান্নাত বাসী করুন।
১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:৪৯
ফয়সাল ইসলাম িনশান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার দুয়ার জন্য
৩| ১১ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৫৭
মুহামমদ মিনহাজ বলেছেন: আজকাল আর পরিবেশ সেই সুযোগ করে দেয় না যেখানে মা-কে সম্মান দেখিয়ে চলা যায়। ফ্রি হতে হতে অনেকে সম্মানবোধটাই হারিয়ে ফেলে।
আমায় ক্ষমা করে দিও মা কখনো তোমার অসম্মান করলে
আপনার মা-কে আল্লাহ বেহেশত নসিব করুন, আমিন।
১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:৪৮
ফয়সাল ইসলাম িনশান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া । আপনার মায়ের প্রতি ও রইল শ্রদ্ধা ও ভালবাসা
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৪৮
মুহামমদ মিনহাজ বলেছেন: তোমায় খুব ভালবাসি মা <3

আজকাল আর পরিবেশ সেই সুযোগ করে দেয় না যেখানে মা-কে সম্মান দেখিয়ে চলা যায়। ফ্রি হতে হতে অনেকে সম্মানবোধটাই হারিয়ে ফেলে।
আমায় ক্ষমা করে দিও মা কখনো তোমার অসম্মান করলে
আপনার মা-কে আল্লাহ বেহেশত নসিব করুন, আমিন।