![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে আমরা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের মুখে একটা কথা প্রায়ই শুনি ৷ “মুজিবের উপর তৎকালিন জনগণ এতটাই বিতৃষ্ণ ছিল যে তার মৃত্যূর পর তার জানাযা পড়তেও পর্যন্ত আসে নি" ! আমার ঠিক জানা নেই মানুষ কিভাবে এরকম মিথ্যাচার করতে পারে? এর আসল সত্য জানতে হলে আপনাকে আগে জানতে হবে কীভাবে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ দাফোন করা হয়েছিল ?
মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক সেই দাফন কার্যের বর্ণনা জানতে গেলে হয়ত খুব বেশি শব্দ আপনাকে হজম করতে হবে না! আমি চাই আপনি সত্যটা জানুন.....
শুক্রবার, ২৯ শ্রাবন ১৩৮২, ১৫ আগষ্ঠ, ১৯৭৫ সাল ৷ আস্তে আস্তে রাতের অন্ধকারের শেষ রেশটুকুও ফিকে হয়ে গিয়েছে ৷ সারা শহরে কারফিউ ৷ নিশ্চয়ই প্রতিদিনের মত খবরের কাগজ ছাপা হয়েছিল ৷ কিন্তু বিক্রির জন্য সেই পত্রিকা নিয়ে কোন হকররা আর আজ শহরের পথে ঘুর ঘুর করছেনা ৷ পথঘাট পুরোটাই জনশুন্য ৷ শহরের পথে পথে কতগুলো কুকুর ছাড়া কোন মানুষ চোখে পড়েনা ৷
আর এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত লাশ ৩২ নম্বরে সৈন্যদের কঠোর পাহারায় রয়েছে ৷ অন্য বাড়ির লাশগুলি এনে এখানে রাখা হয়েছে ৷ অনেক রাতে গোসল ও জানাজা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর লাশ রেখে বাকি সব লাশ বনানীতে দাফন করা হল ৷ টুঙ্গিপাড়ার ওসিকে খবর পাঠানো হল, আগামী কাল বঙ্গবন্ধুর লাশ যাবে ৷ সুতরাং কবর যেন আগেই খনন করা হয় ৷ ঘাতকেরা সময়ের অপচয় করতে চায় না !
রাতে বঙ্গবন্ধুর লাশ বরফ দিয়ে ৩২ নম্বরে রাখা হল ৷ লেঃ কঃ আবদুল হামিদকে দায়িত্ব দেওয়া হল হেলিকাপ্টারে করে লাশ টুঙ্গিপাড়া নিয়ে দ্রুত দাফন করে, কবর পাহারায় রেখে চলে আসার জন্য ৷
সকালে লাশ বহনের জন্য একটা বাক্স এনে তাতে আবার বরফ দিয়ে সম্পূর্ণ লাশ মুড়ে সৈন্যরা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গেল ৷ সকালেই টুঙ্গিপাড়ার ওসি বঙ্গবন্ধুর বাড়ির মসজিদের ইমাম মৌলভী আবদুল হালিমের কাছে খবর দিলেন লাশ আসতেছে ৷ সুতরাং কবর খুরতে হবে ৷ ইমাম সাহেব হত্যাকান্ডের খবর শুনে আগে থেকেই শোকাহত ছিলেন ৷ অনিচ্ছা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ঘাতকদের বন্দুকের গুলির ভয়ে অন্যদের সাহায্যে তিনি কবর খনন করেলেন ৷
বেলা দেড়টায় একটা হেলিকাপ্টার এলো ৷ বাড়ির কাছে থানার পাশে মাঠে নামল ৷ লেঃ কঃ হামিদের নেতৃত্বে মোট ১২ জন সৈন্য কফিন বয়ে আনল ৷ চারিদিকে খুব কড়া নিরাপত্তার পুলিশি ব্যবস্থা ৷ পুরো টুঙ্গিপাড়ায় আগে থেকেই কারফিউ জারি ছিল ৷ বঙ্গবন্ধুর দুই মামা শ্বশুর শেখ মনসুরুল ও শেখ মনজুরুল হক কফিন বুঝে নিলেন ৷ শোকাক্রান্ত জনগনকে কাছে আসতে দেওয়া হল না ৷
লেঃ কঃ ইমাম সাহেবকে দ্রুত লাশ দাফন করতে বলল ৷ লাশ দেখার পর ইমাম সাহেব জানালেন পুরো কার্য সম্পাদন করতে দুই ঘন্টা সময় লাগবে ৷ লেঃ কঃ হামিদ ইমামের কাছে এত সময় কেন লাগবে তা জানতে চাইল ৷
ইমাম সাহেব বললেন, "শরীয়াত অনুযায়ী গোসল করাতে ও জানাযা পড়াতে সময় লাগবে ৷"
লেঃ কঃ হামিদ এসব ছাড়াই করা যায় কি না বলতেই ইমাম সাহেব উত্তর দিলেন, "একজন মুসলমানের লাশ গোসল ছাড়াই দাফন করা যায়, যদি সে শহীদ হয় ৷ "
হামিদ একটু রেগে গিয়ে বললেন, আপনি দাফন করবেন কি—না?
“না, পারব না ৷ যদি লিখে দিন যে শহীদ করে এনেছেন তাহলে দিতে পারি"
"না, সেটা লিখতে পারব না ৷ ঠিক আছে গোসল করান ৷ তবে দেরি করতে পারবেন না"
৫৭০ সাবান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে যথারীতি গোসল করান হল ৷ রেডক্রস থেকে চার ইঞ্চি পাড়ের সাদা শাড়ি এনে পাড় ছিড়ে ফেলে কাফনের কাপড় বানানো হল ৷ একটা গুলি মাথার পেছনে করা হয়েছিল ৷ নয়টা গুলি চক্রাকারে বুকের নিচে করা হয়েছিল ৷ পায়ের রগ কাটা ছিল, একটা আঙ্গুলেও গুলি করা হয়েছিল ৷
খুব দ্রুত লাশ দাফন করা হয়ে গেল ৷ জানাযায় বাইরের কোন মানুষকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হল না ৷ ওরাই মারল আবার ওরাই তার জানাযা পড়ল ৷ পিতার কবরের উপরে মাটি চাপা দিয়ে, উঠোনের বরই গাছের কাঁটাভরা ডাল চাপিয়ে দিল ৷ হেলিকপ্টার চলে যাবার আগে ওরা বাইগার নদীর পানিতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর পবিত্র রক্ত ধুয়ে টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে ফেলে গেল ৷
আজ সেখানেই শিরিষ-কদম-নিম-নারকেল-তাল-তমাল-বকুল গাছের নিভৃত ছায়ায়, সবুজ প্রকৃতির স্নিগ্ধতায় বঙ্গবন্ধুর মাজার ৷
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:১২
ইলুসন বলেছেন: অনেকেই অনেক থিওরী দেয় এখন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আগে কোন শালা পুরা বাঙ্গালী জাতিকে এক করতে পারে নাই। এমনকি এখনও কারো সেই ক্ষমতা হয় নাই। একটা যুদ্ধবিদ্ধস্থ দেশ যেখানে রাস্তাঘাট নাই, ব্যাংকে টাকা নাই, আত্মীয়-স্বজন মৃত- এমন একটা দেশকে দাঁড়া করতে তো সময় লাগে। তার উপর হারামজাদারা ১৪ ডিসেম্বর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে গিয়েছিল যাতে এই জাতি কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। সবাই শুধু বঙ্গবন্ধুর দোষ দেখে, কিন্তু এই লোক না থাকলে এখনও পাকিদের বুটের লাথি খেয়ে বাঁচতে হত।