![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি আমি ঝঁরে যাই একদিন কার্তিকের নীল কুয়াশায়: যখন ঝরিছে ধান বাংলার ক্ষেতে ক্ষেতে ম্লান চোখ বুঝে, যখন চড়াই পাখী কাঁঠালীচাঁপার নীড়ে ঠোঁট আছে গুঁছে, যখন হলুদ পাতা মিশিতেছে খয়েরী পাতায়, যখন পুকুরে হাঁস সোঁদা জলে শিশিরের গন্ধ শুধু পায়, শামুকের গুগলিগুলো প'ড়ে আছে শ্যাওলার মলি সবুজে, - তখন আমারে যদি পাও নাকো লালশাক-ছাওয়া মাঠে খুঁজে, ঠেস দিয়ে ব'সে আর থাকি নাকো বুনো চালতার গায়, তাহলে জানিও তুমি আসিয়াছে অন্ধকারে মৃত্যুর আহবান ---।
কতিপয় ব্লগাররের কিছু লেখার ব্যাপারে কতিপয় মিডিয়া কর্তৃক প্ররোচিত হয়ে এবং জামাম-শিবিরের পরোক্ষ সহায়তায় সমমনা ইসলামী দলগুলো ধর্মরক্ষায় বাংলাদেশের কয়েক লাখ মসজিদ থেকে মিছিল বের করেছে। ঢাকা সহ দেশের অপর ৬৩টি জেলাতেও এই মিছিল হয়েছে। মিছিলে কেউ বুঝে এসেছিল, কেউ না বুঝে এসেছিল। তাদের কারো মনে সহিংসতার পরিকল্পনা ছিল, কারো মনে নিখুত ধর্মানুরাগ ছিল।
প্রতি শুক্রবার জুময়ার পরে মুসল্লিরা যখন নামাজ সেরে পবিত্র মনে ঘরে ফিরে যায়, আজ তার ব্যত্যয় হলো। তারা নানান ধরণের স্লোগান সহকারে রাজপথে নেমে পড়ল। বাইতুল মুকাররম থেকে মুসল্লিরা রাজপথে নামতেই শুরু হয় পুলিশের ধাওয়া। বাংলাদেশের পুলিশ ঘুষ খাওয়া আর সরকার বিরোধীদের ধাওয়া করা ছাড়া কীইবা করতে পেরেছে।তারা একবারও এর পরিনাম নিয়ে ভাবলোনা। সাধারণ আর ১০ বিক্ষোভের মত করেই পুলিশ আজকের বিষয়টিকে দেখলো। গুরুত্ব দিলোনা সরকারও।
আজ শুক্রবার বিকেলের সোস্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম গুলো অবজার্ভ করে আমার উপলব্ধি হচ্ছে - পুলিশ যদি সতর্ক পাহারায় মুসল্লি কাম জামাত ও অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলোর মিছিল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দিত, এমন সহিংসতা হতোনা।
তবে মিডিয়ার উপর আক্রমনের বিষয়টি নিয়ে আমার অন্যরকম একটি অভিমত রয়েছে। কোন সভ্য দেশে মিডিয়ার উপর আক্রমন নিসন্দেহে ঘৃনা ও নিন্দনীয় কাজ। তবে গত কয়েকদিন মিডিয়া যেবাবে জামাত-শিবিরকে তুলোধুনো করেছে, এবং নাস্তিক ও ধর্মাবমাননাকারীদের পক্ষে কথা বলেছে, তাতে করে জামাত-শিবির ও তাদের সমমনা ইসলামী দলগুলো বুঝে গেছে, মিডিয়াতে কখনোই তাদের কথা বলবেনা, তাই ওদের কাভারেজও প্রয়োজন নেই। যে ছবি, যে ফুটেজ মিডিয়া নিবে, তা ব্যবহৃত হবে, তাদের বিরুদ্ধেই- যতটুকু অনুমান করি এই চিন্তা ও জামাত-শিবিরের উস্কানীতে তাদের ওপর হামলা হয়েছে। তবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও সহ কয়েকটি স্থানে পুলিশের গুলিতেও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তার মধ্যে ডিআরইউ নেতা আমিনুল হক ভুইয়াও রয়েছেন। পুলিশের গুলি বিদ্ধ করেছে তরুন সাংবাদিকদের সাগর-রুনী হত্যার বিচার দাবীর মঞ্চও।
অথচ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা সদরে তেমন কোন মিছিল হয়নি। মানিকগঞ্জ ও ময়মনসিংহ তার উদাহরণ। এই দুটি জেলায় পুলিশ ছিল সতর্ক প্রহরায়। কোন ধরণের নাশকতা না হলে কোন ধাওয়া, গুলি, লাঠি-পেটা করবেনা, এমনই পরিকল্পনা ছিল সেখানকার পুলিশ প্রশাসনের। কিন্তু অবশিস্ট ৬১টি জেলায় দেখলাম - আগুন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আগুন, শত শত আহত, গ্রেফতার আর ৪ তাজা প্রাণের মৃত্যু।পুলিশ ময়মনসিংহের মত একটু কৌশলী হলে, ওরা চট্ট্রগ্রাম, বগুড়া, সিলেট এবং ঢাকার মত কোথাও এত সহিংস হতোনা। স্বাভাবিক বুদ্ধি-বিবেচনাতেই বলে দেয় যে, বাধা না দিলে, উস্কানী না পেলে কোথাও কোন সংঘাত লাগেনা। পুলিশ এবং সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কেন এই সামান্য বিষয়টি বোঝেনা, আমার সরল বুদ্ধিতে তার উত্তর খুজে পাইনা।
একটু পেছনে ফিরে দেখা যাক, গত ১৭ দিন শাহবাগে ৭১ এর মানবতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর, খুনী, ধর্ষকদের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের তীব্র ঘৃণা প্রদর্শন কতই না শান্তিপূর্ণ ছিল। মুখে ঘৃণার বিষ থাকলেও ছিলনা কোন ভাংচুর, সহিংসতা। মতসভবন, চারুকলা, শেরাটন আর আজিজ সুপার মার্কেট এই চারপয়েন্টে ছিল পুলিশের বেরিকেট। জামাত-শিবিরের হামলার আশংকায় বেশকিছু ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও বসানো হয়। ভাষার মাসের বইমেলা মূলত দ্রোহ আর প্রতিবোদের মেলায় পরিণত হয়। মানুষ জমায়েত হতো প্রজন্ম চত্বরে, এক ফাকে গিয়ে বইমেলায় ঢুঁ মেরে আসত। কেউ চারুকলা, টিএসসি কিংবা কাছে-দূরের কোথাও। কেউ সারাদিনের তুমুল স্লোগান-প্রতিবাদ শেষে রাতে ফিরে যেত ঘরে, কেউ অফিস কিংবা কাজ সেরে কিছুক্ষণ সময় শাহবাগে এসে মিছিলে শামীল হয়ে নিজেদের একাত্বতা ঘেষাণা করে যেত। ঘরে ফিরতো একবুক গর্ব আর পরিতৃপ্ত নিয়ে। দেশের জন্য কিছু হলেও করতে পেরেছি, এমন এক প্রাপ্তি নিয়ে। কেউ টানা ৩/৪ দিন রাত টানা অবস্থান করতো প্রজন্ম চত্বরে। গত ১৭ দিনে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে আগত লাখো মানুষের এমন ছিল রুটিন।এরই মধ্যে এলো আগুণ ঝরা ফাগুন।বাসন্তী রঙ্গ, কোকিলের আর প্রকৃতির উষ্ণ ছোঁয়া ছড়িয়ে দিল আন্দোলনরত নতৃন প্রজন্মকে। এরপরের দিনই ছিল ভালবাসার। সেই ভালবাসাও ছড়িয়ে গেল শাহবাগ সহ দেশময়।
দিনে দিনে ১৭ দিন পার হলো। ১৮ তম দিনে শাহবাগ আন্দোলনের ক্ষণিক বিরতির মাঝখানে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে জামাত-শিবির সহ সমমনা ইসলামী দলগুলো মসজিদ থেকে নাস্তিকতা, ইসলাম ধর্মের প্রতি কটাক্ষের প্রতিবাদে যখন বিক্ষোভের ডাক দিল - পুলিশ ফুল ছড়ানো সেই রাজপথে ছড়িয়ে দিল কাটা। শুরু হলো যুদ্ধের ভিন্ন একটা প্রেক্ষাপট। পুলিশ জামাত-শিবিরের পাতা ফাঁদে পা দিল। কয়েকদিন আগে বিতর্কিত লেখক তসলিমা নাসরিন যেমনটি বলেছিল- জামাত-শিবিরের চেয়েও ধর্মান্ধ মোল্লাদেরকে তার বেশি ভয়। একই ভয় পেয়েছিল সালমান রুশদি। ১৯৮৮ সালে স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশের পরে।
এই ব্লগেই স্যাটানিক ভার্সেস এবং তসলিমার চেয়েও অনেক জঘন্য ভাষায় ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম এবং এসব ধর্মের প্রচারকদের নিয়ে নানাভাবে বিকৃত লেখা, মন্তব্য ও পোষ্ট দেয়া হয়েছিল। যাদের কেউ কেউ আবার সেলিব্রিটি ব্লগার। কাকতালীয়ভাবে এসব ব্লগারদের কেউ কেউ আবার শাহবাগের নতুন প্রজন্মের স্বাধীনতা সংগ্রামেও অংশ নিয়েছে। দেশ প্রেমে উদ্ধুদ্ভ হয়ে আস্তিক-নাস্তিক সকলেই শাহবাগে সমবেত হবে। সমস্বরে আওয়াজ তুলবে - ফাসি চাই, ফাসি চাই, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার।
সেটাই চলছিল এতদিন। ব্লগার থাবা বাবার মৃত্যুর পরে নানাজন নানাভাবে জলঘোলা করার চেস্টা করেছিল। মাননীয় সরকার প্রধান তদন্তের আগেই জামাত-শিবির নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়ে দিলেন প্রয়াত থাবা বাবার বাসায় গিয়ে। ধরে নিচ্ছি সেটা নেহায়েত রাজনৈতিক বানী। কিন্তু তরুন প্রজন্ম- তারা কিভাবে জামাত-শিবিরের পাতা ফাঁদে পা দিল। আন্দোলনের শীর্ষ ৫ জন, যারা প্রথম দিন, সবার আগে তরুন প্রজন্মকে আহবান করেছিল - চলো চলো শাহবাগ চলো, তাদের কারো বিরুদ্ধেই তো নাস্তিকতার বড় অভিযোগ নেই। এর পরে যুক্তি কয়েকজন ছিল নাস্তিক, কারো কারো গায়ে ছিল দলীয় লেবেল আটানো। তাতে কী। তারা কেউই রাজীবের হত্যার প্রকৃত খুনীদের বিচার চাইছেনা। এমনকি রাজীবের পরিবারের মুখেও ছিল সরকার প্রধানের মত একই আওয়াজ।
সরকার যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতদানকারী ব্লগারদের ব্যাপারে কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহন করতো, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের কিছু একটা আশ্বাস দিত, তাহলে জামাত শিবির এই সুযোগটা নিতে পারতোনা। জাতীয় মসজিদের খতীবকে পালিয়ে যেতে হতোনা। আগামী রোববারে হরতাল হতোনা। এবং অনাগত দিনগুলোতে আরও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকাও তৈরী হতোনা।
৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে নামাজ পড়ুক আর না পড়ুক, ইসলাম, নবী (সা এবং ইসলামী সংস্কৃতি নিয়ে কথা বললে, তার প্রতিবাদে সময়ে সময়ে, যুগে যুগে ফুঁসে উঠেছে। সেই আগুনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এমনকি সুখের পাখি বিএনপিও পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে।
আর আভ্যন্তরীণ এই হানাহানির সুযোগ নিয়ে যদি আরেকটি ওয়ান ইলেভেন আসে। নোবেল বিজয়ী সেই বীর, মঈনুদ্দীন, ফখরুদ্দীন গংরা, যারা এখন সম্পুর্ণ নিরব দর্শক, তারা যদি অদৃশ্য শক্তির ইশারায় সদর্পে আবারও দেশ জয় করার জন্য আসে। শেয়ালের রুটি ভাগ করার মত করে ফের ক্ষমতার ভাগ নিয়ে নেয়, কেউ কেউ অবাক হলেও, অন্তত আমি অবাক হবোনা।
পাদটীকা : কারো পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে সতর্ক হয়ে চললে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙ্গবে। না হলে আজকের প্রথম আলোয় উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া সেই প্রতিবদনের শেষ লাইনটি আমাদের জন্য প্রজোয্য হতে পারে - "কচ্ছপ দীর্ঘায়ু জীব। জনশ্রুতি আছে, কচ্ছপের কামড় বড়ই নাছোড়।"
সূত্র ১: Click This Link
সূত্র ২: Click This Link ব্লগাররের কিছু লেখার ব্যাপারে কতিপয় মিডিয়া কর্তৃক প্ররোচিত হয়ে এবং জামাম-শিবিরের পরোক্ষ সহায়তায় সমমনা ইসলামী দলগুলো ধর্মরক্ষায় বাংলাদেশের কয়েক লাখ মসজিদ থেকে মিছিল বের করেছে। ঢাকা সহ দেশের অপর ৬৩টি জেলাতেও এই মিছিল হয়েছে। মিছিলে কেউ বুঝে এসেছিল, কেউ না বুঝে এসেছিল। তাদের কারো মনে সহিংসতার পরিকল্পনা ছিল, কারো মনে নিখুত ধর্মানুরাগ ছিল।
প্রতি শুক্রবার জুময়ার পরে মুসল্লিরা যখন নামাজ সেরে পবিত্র মনে ঘরে ফিরে যায়, আজ তার ব্যত্যয় হলো। তারা নানান ধরণের স্লোগান সহকারে রাজপথে নেমে পড়ল। বাইতুল মুকাররম থেকে মুসল্লিরা রাজপথে নামতেই শুরু হয় পুলিশের ধাওয়া। বাংলাদেশের পুলিশ ঘুষ খাওয়া আর সরকার বিরোধীদের ধাওয়া করা ছাড়া কীইবা করতে পেরেছে।তারা একবারও এর পরিনাম নিয়ে ভাবলোনা। সাধারণ আর ১০ বিক্ষোভের মত করেই পুলিশ আজকের বিষয়টিকে দেখলো। গুরুত্ব দিলোনা সরকারও।
আজ শুক্রবার বিকেলের সোস্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম গুলো অবজার্ভ করে আমার উপলব্ধি হচ্ছে - পুলিশ যদি সতর্ক পাহারায় মুসল্লি কাম জামাত ও অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলোর মিছিল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দিত, এমন সহিংসতা হতোনা।
তবে মিডিয়ার উপর আক্রমনের বিষয়টি নিয়ে আমার অন্যরকম একটি অভিমত রয়েছে। কোন সভ্য দেশে মিডিয়ার উপর আক্রমন নিসন্দেহে ঘৃনা ও নিন্দনীয় কাজ। তবে গত কয়েকদিন মিডিয়া যেবাবে জামাত-শিবিরকে তুলোধুনো করেছে, এবং নাস্তিক ও ধর্মাবমাননাকারীদের পক্ষে কথা বলেছে, তাতে করে জামাত-শিবির ও তাদের সমমনা ইসলামী দলগুলো বুঝে গেছে, মিডিয়াতে কখনোই তাদের কথা বলবেনা, তাই ওদের কাভারেজও প্রয়োজন নেই। যে ছবি, যে ফুটেজ মিডিয়া নিবে, তা ব্যবহৃত হবে, তাদের বিরুদ্ধেই- যতটুকু অনুমান করি এই চিন্তা ও জামাত-শিবিরের উস্কানীতে তাদের ওপর হামলা হয়েছে। তবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও সহ কয়েকটি স্থানে পুলিশের গুলিতেও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তার মধ্যে ডিআরইউ নেতা আমিনুল হক ভুইয়াও রয়েছেন। পুলিশের গুলি বিদ্ধ করেছে তরুন সাংবাদিকদের সাগর-রুনী হত্যার বিচার দাবীর মঞ্চও।
অথচ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা সদরে তেমন কোন মিছিল হয়নি। মানিকগঞ্জ ও ময়মনসিংহ তার উদাহরণ। এই দুটি জেলায় পুলিশ ছিল সতর্ক প্রহরায়। কোন ধরণের নাশকতা না হলে কোন ধাওয়া, গুলি, লাঠি-পেটা করবেনা, এমনই পরিকল্পনা ছিল সেখানকার পুলিশ প্রশাসনের। কিন্তু অবশিস্ট ৬১টি জেলায় দেখলাম - আগুন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আগুন, শত শত আহত, গ্রেফতার আর ৪ তাজা প্রাণের মৃত্যু।পুলিশ ময়মনসিংহের মত একটু কৌশলী হলে, ওরা চট্ট্রগ্রাম, বগুড়া, সিলেট এবং ঢাকার মত কোথাও এত সহিংস হতোনা। স্বাভাবিক বুদ্ধি-বিবেচনাতেই বলে দেয় যে, বাধা না দিলে, উস্কানী না পেলে কোথাও কোন সংঘাত লাগেনা। পুলিশ এবং সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কেন এই সামান্য বিষয়টি বোঝেনা, আমার সরল বুদ্ধিতে তার উত্তর খুজে পাইনা।
একটু পেছনে ফিরে দেখা যাক, গত ১৭ দিন শাহবাগে ৭১ এর মানবতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর, খুনী, ধর্ষকদের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের তীব্র ঘৃণা প্রদর্শন কতই না শান্তিপূর্ণ ছিল। মুখে ঘৃণার বিষ থাকলেও ছিলনা কোন ভাংচুর, সহিংসতা। মতসভবন, চারুকলা, শেরাটন আর আজিজ সুপার মার্কেট এই চারপয়েন্টে ছিল পুলিশের বেরিকেট। জামাত-শিবিরের হামলার আশংকায় বেশকিছু ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও বসানো হয়। ভাষার মাসের বইমেলা মূলত দ্রোহ আর প্রতিবোদের মেলায় পরিণত হয়। মানুষ জমায়েত হতো প্রজন্ম চত্বরে, এক ফাকে গিয়ে বইমেলায় ঢুঁ মেরে আসত। কেউ চারুকলা, টিএসসি কিংবা কাছে-দূরের কোথাও। কেউ সারাদিনের তুমুল স্লোগান-প্রতিবাদ শেষে রাতে ফিরে যেত ঘরে, কেউ অফিস কিংবা কাজ সেরে কিছুক্ষণ সময় শাহবাগে এসে মিছিলে শামীল হয়ে নিজেদের একাত্বতা ঘেষাণা করে যেত। ঘরে ফিরতো একবুক গর্ব আর পরিতৃপ্ত নিয়ে। দেশের জন্য কিছু হলেও করতে পেরেছি, এমন এক প্রাপ্তি নিয়ে। কেউ টানা ৩/৪ দিন রাত টানা অবস্থান করতো প্রজন্ম চত্বরে। গত ১৭ দিনে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে আগত লাখো মানুষের এমন ছিল রুটিন।এরই মধ্যে এলো আগুণ ঝরা ফাগুন।বাসন্তী রঙ্গ, কোকিলের আর প্রকৃতির উষ্ণ ছোঁয়া ছড়িয়ে দিল আন্দোলনরত নতৃন প্রজন্মকে। এরপরের দিনই ছিল ভালবাসার। সেই ভালবাসাও ছড়িয়ে গেল শাহবাগ সহ দেশময়।
দিনে দিনে ১৭ দিন পার হলো। ১৮ তম দিনে শাহবাগ আন্দোলনের ক্ষণিক বিরতির মাঝখানে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে জামাত-শিবির সহ সমমনা ইসলামী দলগুলো মসজিদ থেকে নাস্তিকতা, ইসলাম ধর্মের প্রতি কটাক্ষের প্রতিবাদে যখন বিক্ষোভের ডাক দিল - পুলিশ ফুল ছড়ানো সেই রাজপথে ছড়িয়ে দিল কাটা। শুরু হলো যুদ্ধের ভিন্ন একটা প্রেক্ষাপট। পুলিশ জামাত-শিবিরের পাতা ফাঁদে পা দিল। কয়েকদিন আগে বিতর্কিত লেখক তসলিমা নাসরিন যেমনটি বলেছিল- জামাত-শিবিরের চেয়েও ধর্মান্ধ মোল্লাদেরকে তার বেশি ভয়। একই ভয় পেয়েছিল সালমান রুশদি। ১৯৮৮ সালে স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশের পরে।
এই ব্লগেই স্যাটানিক ভার্সেস এবং তসলিমার চেয়েও অনেক জঘন্য ভাষায় ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম এবং এসব ধর্মের প্রচারকদের নিয়ে নানাভাবে বিকৃত লেখা, মন্তব্য ও পোষ্ট দেয়া হয়েছিল। যাদের কেউ কেউ আবার সেলিব্রিটি ব্লগার। কাকতালীয়ভাবে এসব ব্লগারদের কেউ কেউ আবার শাহবাগের নতুন প্রজন্মের স্বাধীনতা সংগ্রামেও অংশ নিয়েছে। দেশ প্রেমে উদ্ধুদ্ভ হয়ে আস্তিক-নাস্তিক সকলেই শাহবাগে সমবেত হবে। সমস্বরে আওয়াজ তুলবে - ফাসি চাই, ফাসি চাই, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার।
সেটাই চলছিল এতদিন। ব্লগার থাবা বাবার মৃত্যুর পরে নানাজন নানাভাবে জলঘোলা করার চেস্টা করেছিল। মাননীয় সরকার প্রধান তদন্তের আগেই জামাত-শিবির নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়ে দিলেন প্রয়াত থাবা বাবার বাসায় গিয়ে। ধরে নিচ্ছি সেটা নেহায়েত রাজনৈতিক বানী। কিন্তু তরুন প্রজন্ম- তারা কিভাবে জামাত-শিবিরের পাতা ফাঁদে পা দিল। আন্দোলনের শীর্ষ ৫ জন, যারা প্রথম দিন, সবার আগে তরুন প্রজন্মকে আহবান করেছিল - চলো চলো শাহবাগ চলো, তাদের কারো বিরুদ্ধেই তো নাস্তিকতার বড় অভিযোগ নেই। এর পরে যুক্তি কয়েকজন ছিল নাস্তিক, কারো কারো গায়ে ছিল দলীয় লেবেল আটানো। তাতে কী। তারা কেউই রাজীবের হত্যার প্রকৃত খুনীদের বিচার চাইছেনা। এমনকি রাজীবের পরিবারের মুখেও ছিল সরকার প্রধানের মত একই আওয়াজ।
সরকার যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতদানকারী ব্লগারদের ব্যাপারে কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহন করতো, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের কিছু একটা আশ্বাস দিত, তাহলে জামাত শিবির এই সুযোগটা নিতে পারতোনা। জাতীয় মসজিদের খতীবকে পালিয়ে যেতে হতোনা। আগামী রোববারে হরতাল হতোনা। এবং অনাগত দিনগুলোতে আরও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকাও তৈরী হতোনা।
৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে নামাজ পড়ুক আর না পড়ুক, ইসলাম, নবী (সা এবং ইসলামী সংস্কৃতি নিয়ে কথা বললে, তার প্রতিবাদে সময়ে সময়ে, যুগে যুগে ফুঁসে উঠেছে। সেই আগুনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এমনকি সুখের পাখি বিএনপিও পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে।
আর আভ্যন্তরীণ এই হানাহানির সুযোগ নিয়ে যদি আরেকটি ওয়ান ইলেভেন আসে। নোবেল বিজয়ী সেই বীর, মঈনুদ্দীন, ফখরুদ্দীন গংরা, যারা এখন সম্পুর্ণ নিরব দর্শক, তারা যদি অদৃশ্য শক্তির ইশারায় সদর্পে আবারও দেশ জয় করার জন্য আসে। শেয়ালের রুটি ভাগ করার মত করে ফের ক্ষমতার ভাগ নিয়ে নেয়, কেউ কেউ অবাক হলেও, অন্তত আমি অবাক হবোনা।
পাদটীকা : কারো পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে সতর্ক হয়ে চললে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙ্গবে। না হলে আজকের প্রথম আলোয় উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া সেই প্রতিবদনের শেষ লাইনটি আমাদের জন্য প্রজোয্য হতে পারে - "কচ্ছপ দীর্ঘায়ু জীব। জনশ্রুতি আছে, কচ্ছপের কামড় বড়ই নাছোড়।"
সূত্র ১: Click This Link
সূত্র ২: Click This Link
২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১০
জীবনকেসি বলেছেন: ব্যাপার কি ভাই !!!! আপনাকে এখনো ছাগু উপাধি দেয়া হয় নাই। আপনি ভাগ্যবান।
অসাধারণ লেখার জন্য ধন্যবাদ।
৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১৫
মাজহারুল হুসাইন বলেছেন: আজকের কর্মসূচি ছিল কাওমী মাদ্রাসার । এদের সাথে লাগতে নাই । তসলিমা নাসরিনকে দেশ ছাড়া করতে ৪০ লক্ষ মানুষ সমবেত করেছিল । তারাই আদালতের ফতওয়া বিরোধী রায় প্রতিরোধে রক্ত দিয়েছিল । সরকার তাদেরকে জামাতের সাথে একই ব্র্যাকেটে ফেলে বুদ্ধিমানের কাজ করেনি ।
৪| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০০
বিডি আমিনুর বলেছেন: জীবনকেসি বলেছেন: ব্যাপার কি ভাই !!!! আপনাকে এখনো ছাগু উপাধি দেয়া হয় নাই। আপনি ভাগ্যবান।
অসাধারণ লেখার জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০৭
লিঙ্কনহুসাইন বলেছেন: বাধা না দিলে কি হতো তায় আল্লাহ্ জানে , এতো বাধার পরেও এতো তাণ্ডব