নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সাদামাটা মানুষ। ভালবাসার কাঙ্গাল। অল্পতেই তুষ্ট। সবাই আমাকে ঠকায়, তবুও শুরুতে সবাইকে সৎ ভাবি। ভেবেই নেই, এই মানুষটা হয়ত ঠকাবেনা। তারপরেও দিনশেষে আমি আমার মত...

অপলক

তত্ত্ব, তথ্য ও অনুভূতি ভাগাভাগি করা আমার অভিপ্রায়। কারও যদি ইচ্ছে হয় তবে যে কেউ আমার এই ব্লগের যে কোন কিছু নিজের সংগ্রহে রাখতে পারে।

অপলক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকা শহর: আদিখ্যেতা

১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:২৮



আমার কাছে দেশের সবচেয়ে বড় বস্তি শহর, সবচেয়ে অপরিকল্পিত শহর, নোংরা শহর, দূষিত শহর, বসবাসের অযোগ্য শহর, ট্রাফিক জ্যামের শহর, প্রাকৃতিক ধ্বংস যজ্ঞের তালিকায় শীর্ষে থাকা শহর, লোক ঠকানোর শহর, চাঁদাবাজি আর অপরাধের শহর হল রাজধানী ঢাকা শহর।

ঢাকায় আসা যাওয়া শুরু ৯০ এর দশক থেকে। তখন ১২-১৬ ঘন্টা লাগত। এখনকার মিনি বাসের সমান গাড়িতে আসতে হত। সিটে বসলে পা ঠিকমত রাখা যেত না। তবুও উপায়ন্তর না দেখে ঢাকায় যেতেই হত। ঢাকাতে তখন গাড়ির ধৌয়ায় চোখ জ্বলত, বমি আসত, বুক জ্বলত। সে তুলনায় এখন অনেকটা কম।

ঢাকা শহরে যে পুরুষের পকেটে টাকা থাকে না আর যে নারী একবার পোষাক খোলে, এই দুয়ের কোন দাম থাকে না। যে অন্যকে ঠকাতে পারে না, সে টেকে না। এই শহরে কত রকম যে ছলনা চলে তার কোন সীমা রেখা নেই। এ.আই এর তৈরী করা ছবি বা ভিডিও দেখে তাও বোঝা যায় কোনটা আর্টিফিসিআল। কিন্তু এই ঢাকা শহরে কারও মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই, কে অভিনয় করছে আর কে সত্য বলছে। কে দেহ বিক্রি করছে আর কে মানবতা? দেখে মনে হয় যেন, সবার ধান্দা একটাই... টাকা কামানো, বেঁচে থাকা, লোক দেখানো ভাল থাকা। উদ্দেশ্য ছাড়া ঢাকায় পাগলও হাসে না।

ছোট বেলায় নদীতে যখন মাছ ধরতে যেতাম বড়শি হাতে, কখনও কখনও দেখতাম, নরবর (মানব মল ) পানিতে ভেসে যাচ্ছে। আর সেই মল (গু) ছোট ছোট মাছ ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে। ঢাকা শহরে ভাল মন্দ কাজের ক্ষেত্র অনেক। ঐ ভেসে থাকা গুয়ের চারপাশে ঝাকে ঝাকে মাছের মত ঢাকার কর্মস্থলে শ্রমজীবি মানুষ শ্রম দেয়, দিতে বাধ্য হয়। স্বস্তা শ্রম, অমানবিক পরিশ্রম। তারপর যেমন বড় মাছ ঐ ছোট ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে... ধনীরা, মালিকরা, মহাজনরা, চাঁদাবাজ, পুলিশ, নেতা, ছিনতাইকারী সব লুটে পুটে নিয়ে যায় প্রত্যাক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে... এই হলো সোনার দেশ, সে দেশের রঙ্গীলা রাজরানী: ঢাকা।

সাধারন মানুষের জন্যে ঢাকা শহর না। সারা দেশের যত গুন্ডা, বদমাইশ, পলাতক আসামী, নির্যাতিত নিপতিত, অসহায়, ঠকবাজ, ভন্ড, সর্বহারা, বিতাড়িত মানুষ, তারাই শেষ ভরসা হিসেবে ঢাকায় পাড়ি জমায়, যাদের কেউই সুস্থ্য মন মস্তিকের নয়। বাঁচার জন্যে দৌড়...ভাল থাকার জন্যে সরব প্রতিযোগিতা। একজন আর একজনকে ঠকাতে ব্যস্ত। ভোগে ব্যস্ত...

এখন ডাক্তাররাও বেশি রুগির আশায় ঢাকায় বসে থাকে। একটা ভাল ক্লিনিকে চেম্বার খোলার জন্যে লবিং চলে। পারসেন্টেজ নিয়ে ডায়াগনিস্টক সেন্টারে সাথে রফাদফা চলে। সরকারী হসপিটালের রুগি ভাগাতে এজেন্ট নিয়োগ থাকে। আমি কম করে হলেও ১০০টা ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের খোজ দিতে পারব, যেখানে ডাক্তাররা নিয়োগ নিয়েও সেবা দেন না। ঘুষ দিয়ে শহরে বদলি হয়ে আসেন বেশি ইনকামের আশায়। ৮ ঘন্টা সেবা দেয়া দূরের কথা, ২ ঘন্টাও তারা সরকারী হসপিটালে রুগি দেখেন না। একেকটা এম.বি.বি.এস ডাক্তার একাধিক চেম্বারে রুগি দেখেন, একাধিক ক্লিনিকে অপারেশন করেন, মাথা ব্যাথা হলে পেটের আলট্রাসোনোগ্রাম দেন। এসিডিটি আর ব্যথার ওষূধ খাওয়াতে খাওয়াতে কিডনি ড্যামেজ করে দেন... এন্টিবায়োটিক খাওয়াতে খাওয়াতে রেজিসটেন্ট করে ফেলেন। সিজার করতে গিয়ে বাচ্চার মাথা কেটে ফেলেন। তবুও মানুষ ঢাকায় যায়, সেরা চিকিৎসা নিতে। ঢাকার এমন কোন ফার্মেসি নেই, যেখানে নকল ওষুধ বিক্রি হয় না।

জ্যামের কারনে এ্যাম্বুলেন্সে বাবা মারা যায়, স্ত্রী বাচ্চা প্রসব করে ফেলে, শাক সবজি ফলমূল সব ক্যেমিকেলে ভরা খাবার বাচ্চাদের খাওয়াতে হয়... বিষাক্ত বাতাস বুক ভরে নিতে না পারলেও, ফুসফুসে ঢুকে যায়...এক্সিডেন্টের রুগিকে জরুরি বিভাগে নিতে ট্রলি ঠেলতেও টাকা দেয়া লাগে...ব্যাগের চেহারা ঠিক রাখতে এয়ারপোর্টে ঢুকেই আগে র ্যাপিং করা লাগে... চাকরিটা হবে না জেনেও ইন্টারভিউ দিতে দেশের কোনা কানি থেকে ঢাকায় যাওয়া লাগে...

তবুও মানুষ ঢাকায় যায়... আপনি আমি যেতে বাধ্য হই। আফসোস...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.