নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইস আমি তো ভুলতে পারিনি

পিকেকে টিটু

পিকেকে টিটু › বিস্তারিত পোস্টঃ

দীপাবলি...

০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৭





দীপাবলি হিন্দুদের উৎসব বিশেষ। এটি দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা এবং যক্ষরাত্রি নামেও অভিহিত হয়। মহালয়ায় শ্রাদ্ধগ্রহণের জন্য যমলোক ছেড়ে যে পিতৃপুরুষগণ মর্ত্যে আগমন করেন বলে কল্পিত হয়, তাঁদের পথ প্রদর্শনার্থে উল্কা জ্বালানো হয়। এ কারণে ঐ দিন আলোকসজ্জা ও বাজি পোড়ানো হয়। কেউ কেউ রাত্রিতে নিজগৃহে দরজা-জানালায় মোতবাতি জ্বালায়; কেউ বা লম্বা বাঁশের মাথায় কাগজের তৈরি ছোট ঘরে প্রদীপ জ্বালায়; একে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় আকাশপ্রদীপ।

কার্তিকী অমাবস্যায় এই উৎসব উপলক্ষে কালীপূজা , কোন কোন স্থানে লক্ষ্মীপূজাও হয় এবং নানাবিধ বাদ্যের দ্বারা অলক্ষ্মীকে বিদায় করা হয়। এর পশ্চাতে একটি অতীত ঐতিহ্য আছে এবং তা হলো, রাবণবধের পর রামচন্দ্র অযোধ্যায় ফিরে এলে যে আনন্দোৎসব হয়েছিল তার স্মরণেই এ উৎসব পালিত হয়। বুদ্ধদেবের গৃহত্যাগ স্মরণে বৌদ্ধরা এ সময়ে উৎসব করে। মহাবীরের নির্বাণদিবস উপলক্ষে অমাবস্যার আগের দিন চতুর্থী তিথিতে জৈনরা আলোকসজ্জা করে। কোন কোন স্থানে এদিন দীপাবলি সাজানোরও রীতি আছে। কৃষ্ণ কর্তৃক নরকাসুর বধের স্মারক হিসেবে একে নরকচতুর্দশী বলা হয়।



দীপাবলি- শুধু সনাতনধর্মীদের নয়, শিখ এবং জৈন ধর্মাবলম্বীদেরও অনুষ্ঠান। আর এখন- এই অনুষ্ঠান সার্বজনীন; গ্লোভালাইজড সমাজে এখন একে আর সীমাবদ্ধ রাখা যায় না; এই অনুষ্ঠান আমার- আপনার- সবার; এদেশের- সেদেশের- ওই দেশের; এ জাতির- সে জাতির- ঐ জাতির। বাংলাদেশে আজকেই এই দিনে কালী পূজা হয়- তাই দীপাবলি আর কালী পূজা একসাথে গাঁথা। এই দিন সরকারী ছুটি না সংরক্ষিত ছুটি; আমার জানা নেই। তবে হাইস্কুলে থাকতে এই দিন অর্ধদিবসের জন্য ছুটি চেয়েছিলাম সব ক্লাসমেটদের অনুরোধে- তাই মনে হচ্ছে সরকারী ছুটি নেই এই দিনে।হয়তো সংরক্ষিত ছুটি থেকে স্কুল-কলেজে ছুটি দেওয়া হয়। মালোয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত, নেপাল, গুয়ানা, ত্রিনিদাদ-টোব্যাগো, মারিশাস, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ফিজি এবং সুরিনামে এই দিন সরকারী ছুটির দিন।

বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে দীপাবলিতে কালী পূজা হয়। অন্যান্য অঞ্চলে এই দিনে গণেশ পূজা এবং লক্ষ্মী পূজাও করা হয়।সনাতনদের মাঝে কেউ কেউ আজকের দিনকে বিষ্ণুদেব এবং লক্ষ্মীদেবীর বিবাহ বার্ষিকি হিসেবে পালন করেন। জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীর ৫২৭ অব্দে আজকেই এই দিনে মোক্ষ (নির্বাণ) লাভ করেন। এই দিনে শিখ ধর্মগুরু গুরু হরগোবিন্দ জী অমৃতসরে ফিরে আসেন; সম্রাট জাহাঙ্গীরকে পরাজিত করে গোয়ালিওর দুর্গ থেকে বায়ান্ন হিন্দু রাজাকে মুক্ত করে- তাঁর এই প্রত্যাবর্তনকে শিখগণ পালন করেন; তারা এই দিনকে ‘বন্দী ছোড় দিবস’ও বলেন।

রামায়ন অনুসারে আজকের দিনে ত্রেতা যুগে শ্রী রাম রাবণ বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন। শ্রী রামের চৌদ্দ বছর পরের প্রত্যাবর্তনে সারা রাজ্য জুড়ে প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রজারা খুশীতে শব্দবাজি করে। অনেকে মনে করেন দীপাবলীর আলোকসজ্জা এবং শব্দবাজি ত্রেতাযুগে রাম-রাজ্যে ঘটে যাওয়া সেই অধ্যায়কে সামনে রেখেই অন্যসব অঞ্চলে প্রচলিত হয়েছে, পরিচিত হয়েছে, বিস্তৃত হয়েছে।

দীপাবলী মূলত পাঁচদিন ব্যাপী উৎসব। দীপাবলীর আগের দিনের চতুর্দশীকে (এই দিনকে দীপাবলি উৎসবের প্রথম দিন বলা হয়) বলা হয় ‘নরকা চতুর্দশী’; এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর স্ত্রী সত্যভামা নরকাসুরকে বধ করেছিলেন। চতুর্দশী পরের অমাবস্যা তিথি দীপাবলি উৎসবের দ্বিতীয় দিন, কিন্তু এই দিনই মূল হিসেবে উদযাপিত হয়। এই দিন রাতে শাক্ত ধর্মের অনুসারীগণ শক্তি দেবী কালীর পূজা করেন। তাছাড়া এই দিনে লক্ষীপূজাও করা হয়, কথিত আছে এই দিনে ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী বরধাত্রী রূপে ভক্তের মনোকামনা পূর্ণ করেন। বিষ্ণুপুরান মতে, বিষ্ণুর বামন অবতার অসুর বলিকে পাতালে পাঠান; আজকের এই দিনে পৃথিবীতে এসে অন্ধকার ও অজ্ঞতা বিদূরিত করতে, ভালবাসা ও জ্ঞানের শিখা প্রজ্বলিত করতে অসুর বলিকে পৃথিবীতে এসে অযুদ অযুদ প্রদীপ জ্বালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। দীপাবলীর তৃতীয় দিন- কার্তিকা শুদ্ধ; এই দিন অসুর বলি নরক থেকে বেরিয়ে পরিশুদ্ধ হয়ে বিষ্ণুর বরে পৃথিবী শাসন করে।চতুর্থ দিন হচ্ছে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া; একে যম দ্বিতীয়াও বলা হয়; এই দিন বোনেরা ভাইকে নিমন্তণ করে, কপালে ফোটা দেয়, হাতে রাখী বেঁধে দেয়।

প্রত্যেক সার্বজনীন আনন্দের উৎসব মন্দের বিরুদ্ধে ভাল'র জয়কে উদযাপন করে। আলোকসজ্জার এই দিবস অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো জ্বালার দিন। নিজের ভেতরের বাহিরের সকল অজ্ঞতা ও তমঃকে দীপ শিখায় বিদূরিত করার দিন। প্রেম-প্রীতি-ভালবাসার চিরন্তন শিখা প্রজ্বলিত করার দিন। দেশ থেকে দেশে, অঞ্চল থেকে অঞ্চলে- এই দিনের মাহাত্ম্য ভিন্ন ভিন্ন; তবু মূল কথা এক। আর আধ্যাত্মিকতার গভীর দর্শনে এই দিন- আত্মাকে প্রজ্বলিত করে পরিশুদ্ধ করে সেই পরমব্রহ্মে লীন হওয়ার দিন।

সবার জীবনে সুখ আসুক। সকল অন্ধকার ঘুচে যাক। সকল যন্ত্রনা মুছে যাক। শান্তির প্রদীপ জ্বলুক। ভালবাসার প্রদীপ জ্বলুক।

সবাইকে দীপাবলির শুভেচ্ছা।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৮

সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেন: ভাল লেগেছে, দারুণ পোষ্ট !!!

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১২

বোকা ছেল বলেছেন: :) :) :)

৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৪

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
চমৎকার পোস্ট।
দিপাবলী নিয়ে জানার আগ্রহ ছিল, আপনার পোস্ট অনেকটাই পূর্ণ করলো। ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাই।

৪| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫১

অনাহূত বলেছেন: চমৎকার। অনেক কিছু জানলাম দিপাবলী নিয়ে।

৫| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৮

সাদা রং- বলেছেন: অনেক বড় লেখা, নতুন কিছু জানলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.