নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাংবিধানিক, আর্থিক, সামাজিক ও হিন্দুত্ববাদের বিতর্কিত ইস্যুগুলিকে রেখেই একটা সার্বিক ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করা হয়েছে বিজেপির নির্বাচনি ইশতাহারে৷ বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হলেও ঢালাও অনুমতি দেয়া হবে না৷অবশেষে ৭ই এপ্রিল, সোমবার প্রকাশ করা হলো প্রধান বিরোধীদল বিজেপির ৫২ পাতার নির্বাচনি ইশতাহার ২০১৪৷ বিজেপি নেতৃত্বের কাছে সবারই প্রশ্ন ছিল, ইশতাহার প্রকাশে এত দেরির কারণ কী? বিভিন্ন নেতা বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে প্রশ্নটা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন৷ কেউ বলেন, মূল ইস্যুগুলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতারা একমত হলেও সব নেতাদের মতে অভিন্নতা আনতে বারংবার তা স্ক্রিনিং করা হয়, পর্যালোচনা করা হয়, তাতেই এই বিলম্ব৷ বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ বলেন, নির্বাচনি প্রচারের কাজে নেতারা ব্যস্ত থাকার দরুন এই বিলম্ব৷
কিন্তু ভেতরের খবর হলো, বিজেপির শরিক দলগুলির নেতাদের দাবি ছিল, ইশতাহার শুধু বিজেপি-কেন্দ্রিক হবে কেন? এটা কি শুধু বিজেপির ইশতাহার, নাকি বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের ইশতাহার? যদি এনডিএ জোটের ইশতাহার হয়, তাহলে অন্যান্য দলের নীতি ও কর্মসূচিকে ব্রাত্য করা হবে কেন? জোট-সরকার গঠিত হলে শরিক দলের পছন্দ-অপছন্দের কথা তাতে কেন থাকবে না ? শরিক দলগুলির দাবি, বিজেপির গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী ইস্যুগুলিকে উদার করতে হবে৷ এই নিয়ে মতান্তর দেখা দেয়ার ফলে এই বিলম্ব৷
অবশেষে, বিতর্কিত ও গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী ইস্যুগুলির সঙ্গে একটা ভারসাম্য বজায় রেখে বিজেপি প্রকাশ করলো ইশতাহার৷ যেমন, সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে রাম মন্দির নির্মাণ, সংবিধানের যে ধারা অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীর বিশেষ সুযোগ সুবিধা পায়, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সেই ৩৭০ নং ধারার বিলোপ, সন্ত্রাস দমন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা, মাদ্রাসাগুলির আধুনিকীকরণ, গো-হত্যা নিবারণ, ওয়াকফ বোর্ডের স্বশক্তিকরণ, উর্দু ভাষার উন্নতি ইত্যাদি৷
এছাড়া ইশতাহারকে বলা যায়, মোটামুটি চর্বিত চর্বণ৷ অর্থনৈতিক অ্যাজেন্ডায় ভরতুকি বন্ধের কথা সরাসরি বলা হয়নি৷ বলা হয়নি রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের বিলগ্নীকরণ বা বেসরকারিকরণের কথা৷ পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়াতে বাজার অর্থনীতিকেও পাখির চোখ করা হয়নি৷ আর্থিক সংস্কারের কথা বলা হলেও তার মধ্যে আছে ‘যদি' বা ‘কিন্তু'৷ বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হলেও খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নয়৷ গড়ে তোলা হবে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের বুনিয়াদ৷ খাদ্য সুরক্ষা আইন বহাল থাকবে, তবে তার বাস্তবায়নে যাতে দুর্নীতি ঢুকতে না পারে, তার জন্য প্রশাসনিক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে৷ শিল্প ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণ করা হবে স্রেফ অ-চাষযোগ্য জমি৷ খাদ্য উৎপাদনের কথা মাথায় রেখে৷ কৃষিজীবীদের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে তাদের লাভজনক ক্ষতিপূরণ দিয়ে৷
কর ব্যবস্থার সরলীকরণসহ ইশতাহারে আট-দফা উন্নয়নের মডেল তুলে ধরা হয়৷ দেয়া হয় সর্বাত্মক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি৷ কেন্দ্রের বর্তমান মনমোহন সিং সরকারকে কটাক্ষ করে নীতি-পঙ্গুত্ব এবং দুর্নীতি দূর করার পাশাপাশি বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের ওপর জোর দেয়া হয়৷ ইশতাহার প্রকাশের পর বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী মন্তব্য করেন, ইশতাহার প্রকাশ নিছক একটা আনুষ্ঠানিক বিষয় নয়, এটা দলের ও সরকারের লক্ষ্যও দিশা নির্দেশ, সুশাসন ও বিকাশ যার মূলমন্ত্র৷
©somewhere in net ltd.