নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা।

প্যারাডক্সিকাল সাজিদ

আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা।

প্যারাডক্সিকাল সাজিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

খাদ্য অপচয়কে না বলি।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:১৫


❒ এক.
.
‘আমরা নতুন ফ্রিজ কিনছি, বুঝলি! ফ্রিজের ঠান্ডা পানি আনছি, কী ঠান্ডা! খুব টেস্ট!"
.
প্রচণ্ড গরমের দিনে আমার পাশে বসা স্কুল বান্ধবি আমাকে এভাবে কিছু কথা বলে ঠান্ডা পানির লোভ দেখায়, তারপর বোতলের ঠান্ডা পানি ঢোক ঢোক করে গেলে।
.
আমারও তা দেখে এমন ঠান্ডা পানি খাওয়ার ইচ্ছে জাগে। ফ্রিজের পানির কেমন স্বাদ তা তখন আমি জানতাম না। সেই সময় গাইবান্ধা জেলায় হাতে গোণা কয়েক বাড়িতে ফ্রিজ ছিল। স্কুলজীবনের অনেক স্মৃতির সাথে কেন যেন এই না পাওয়ার স্মৃতিটাও মনে রেখেছি।
.
আমাদের প্রতিবেশী ছিলেন একজন পুলিশ। তাদের বাড়িতে প্রায়ই গোশত রান্না হতো। সেই ঘ্রাণ আমাদের বাড়িতেও আসতো। আমারও খুব খেতে ইচ্ছে করতো। আমরা কালেভদ্রে গোশত খেতাম। যেদিন গোশত রান্না হতো সেদিন আমি আনন্দে বলতাম "আজকে আমরা পুলিশ হয়েছি।"
.
.
❒ দুই.
.
ছোট বেলার কথা, একদিন লিচু খেয়ে খোসাটা জানালা দিয়ে ছুঁড়ে মেরেছিলাম। ঐ সময় আমাদের বাড়িতে গ্রাম থেকে একজন অর্ধশিক্ষিত অতিথি এসেছিলেন।
.
তিনি আমার দিকে রাগী চোখে বলেছিলেন, ‘তোর কোনো আক্কেলজ্ঞান নাই? ঐ রাস্তা দিয়া কত ফকির-ফকরা যাবে, তাদের খাওয়ার সামর্থ্য নাই। খোসা দেখে ওদের লিচু খাবার মন চাবে। তখন তাদের মনেত কষ্ট হবে, বুঝলু?’
.
আলহামদুলিল্লাহ আমার আক্কেলজ্ঞান হয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারে বড়ো হয়েছি, ক্ষুধার কষ্ট বুঝেছি। এক/দুই পদ দিয়ে খাবার খেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ এখনো সেভাবেই খাওয়ার চেষ্টা করি।
.
এখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ভালো খাবার খাওয়ার সামর্থ্য দিয়েছেন, তবুও আমি সাধারণত এক/দুই পদ দিয়েই খাবার খাই। আমার বাচ্চাদেরকেও এমন ফুড হ্যাবিট শিখিয়েছি। কখনো খাবার নিয়ে শো অফ করেছি কিনা স্মরণে আসছে না।
.
.
❒ তিন.
.
বেশ কয়েকটা বুফের দাওয়াতে গিয়েছিলাম। ২৫০ আইটেম, ১৫০ আইটেম এরকম শত আইটেমের খাবার থরে থরে সাজানো। বুফের খাবারের দাম মারাত্মক রকম বেশি। এরকম বুফেতে খেতে গেলে আমি কৌতূহলী হয়ে আশেপাশের মানুষকে দেখি। মানুষগুলোর খাওয়া দেখে মনে হয়েছে কত দিন ধরে না খেয়ে আছে।
.
খেতে পারুক আর না পারুক সমানে প্লেট ভরিয়েছে। চ্যাকচ্যাক করে খেয়েছে, প্লেটে খাবারের স্তুপ করে শেষে সব ফেলে দিয়েছে। এসব দেখে আমার রাগ উঠেছে। এগুলো মানুষ না রাক্ষস?
.
.
❒ চার.
.
আরেক শ্রেণির মানুষ দেখেছি সারাদিন খালি ফেবুতে খাবারের ছবি দেয় আর কী বর্ণনা!
.
ইয়াম্মি, খুব ট্যাশ! ডাল গুনা, ডালঘুটা, দ্যাখ কী খ্যালাম, তুই খাবার পাস?
.
"খ্যালাম, খ্যালাম, দ্যাখ, কী খ্যালাম রে! তোরা এরকম খেতে পাস?’
.
শো অফ করা এই মানুষদেরকে " মানসিক ভাবে অসুস্থ " মনে হয়। এদের খাবারের ছবি অন্যকে না দেখালে পেটের খাবার হজম হয় না! খাবার পেটে ঢুকার আগেই ফেবুতে দেখানো লাগে।
.
ফিজিওলজির ডাইজেস্টিভ চ্যাপ্টারে পড়েছিলাম, ফুডের এপিয়ারেন্স, স্মেল স্যালাইভারি গ্লান্ডকে স্টিমুলেট করে। খাওয়ার ইচ্ছে জাগিয়ে দেয়।
.
যখন আপনি খাবারের ছবি দেন, অন্যজন দেখে তখন কিন্তু তার salivary gland stimulate হয়, saliva secret হয়, খাওয়ার ইচ্ছে জাগিয়ে তোলে।
.
যখন আপনি গোশত রান্না করেন তখন এর স্মেল ডিফিউশন/ব্যাপন প্রক্রিয়ায় পাশের বাড়িতেও চলে যায়। সেই স্মেল আপনার প্রতিবেশীর খাওয়ার ইচ্ছে জাগিয়ে দেয়।
.
প্রতিবেশী গোশত না খাওয়ার কষ্ট পায়, হয়তো তার সামর্থ্য নাই।
.
প্রতিবেশীর যেন কষ্ট না হয় এজন্য এক হাদিসে এমন এসেছে যে, যখন গোশত রান্না করা হবে তখন যেন ঝোল বাড়িয়ে দেওয়া হয়, কিছু হলেও যেন প্রতিবেশীকে পাঠানো হয়।
.
আমাদের ইসলাম ধর্ম কত মানবিক, সুবহানাল্লাহ!
.
আর আমরা সেই ধর্মের অনুসারী হয়ে কীভাবে ফেবুতে খাবারের শো অফ করি?
.
.
❒ পাঁচ.
.
আমার টাকায় আমি খাইঃ
.
আমার টাকা আছে, আমি খাই তাতে তোর কী!
.
আমরা ভাবি, আল্লাহ্‌ আমাদের অনেক দিয়েছেন, খাবো না কেন? যত পারি তত খাবো, সমস্যা কোথায়? খাবার তো নষ্ট করছি না, দশ আইটেম খাবারই তো গলাধঃকরণ করছি।
.
যদি আপনি মুসলিম হন, ইসলামের খাওয়ার ব্যাপারে কী বলা হয়েছে জানুন প্লিজ।
.
খাবার খাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ্‌ বলেন, “এবং আহার করবে ও পান করবে। কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]
.
আসুন কিছু শ্রেষ্ঠ মানুষদের খাবারের নমুনা দেখি...
.
উমার (রাঃ) এর পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) পিতাকে একবার দাওয়াত দিলেন। উমার (রাঃ) খেতে বসে দেখলেন আইটেম আছে মাংস, রুটি আর ঘি। উমার (রাঃ) উঠে পড়লেন এবং বললেন, আমি খাব না।
.
তিনি বললেন, মাংস থাকার পরও তুমি ঘি আনলে কেন? আব্দুল্লাহ ইবনে উমার বললেন, আমি আপনার জন্য যে টাকা নিয়ে মাংস কিনতে গিয়েছিলাম সেইটা খরচ করেছি। মাংস সস্তায় পেয়ে যাওয়ায় বাকি টাকা দিয়ে ঘি কিনে এনেছি। তখন উমার (রাঃ) বললেন, “ওয়াল্লাহি। আমি রাসূল (সঃ) কে কোনদিন এক তরকারীর বেশী দিয়ে খেতে দেখিনি।”
.
আসহাবে সুফফার সাহাবা রা (রা) এত ক্ষুধার্ত থাকতেন যে সালাতে দাঁড়িয়ে তারা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে ঢলে পড়তেন।
.
শ্রেষ্ঠ মানুষেরা যেখানে এক/ দুই পদের খাবার খেয়েছেন, সেখানে আমাদের বাঙালী মুসলমানদের দশ-বারো পদ ছাড়া পেট ভরে না। কারণ এনারা খাওয়ার জন্য বাঁচে! আমাদের দাদি-মা-চাচিদের উপর কত জুলুম করেছে পূর্ব পুরুষেরা, এখনো করছে, সারাদিন রান্না করো আর খাও। এটা ছাড়া জীবনের আর কোনো উদ্দেশ্য নাই।
.
আসুন, আমরা সত্যিকারের মুসলিম হই, সুন্নাহ মেনে চলি। যখন খাবার খেতে বসি, তিন ভাগের এক ভাগ খাবার দ্বারা, আরেকভাগ পানি এবং শেষ ভাগ ফাঁকা রাখি। এটা খাওয়ার সুন্নাহ এবং তা বিজ্ঞানসম্মত।
.
ভালো খাবার রান্না করলে কিছু অংশ প্রতিবেশীদের দেওয়ার চেষ্টা করি। ফেবুতে "খাইলাম খাইলাম, দেখ কী খাইলাম "শো অফ বন্ধ করি।

- ড. উম্মে বুশরা সুমনা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.