নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

phon

I want to free from failure. I don,t belive failure is the piller of suceess

Masuk

অামি একজন ব্যর্থ মানুষ। জীবনে কখনো সফলতার স্বাদ পায়নি। জীবনে যা চেয়েছি তার বিপরীতটাই পেয়েছি। এর পর থেকেই হতাশা অামাকে গ্রাস করে। হতাশা থেকে মুক্তির জন্য ঘুরেত থাকি। হতাশা থেকে মুক্তি পাই না। কেউ অামাকে হতাশা থেকে মুক্তি দিতে পারে না। অামি নিজেকে ও হতাশা থেকে মুক্ত করতে পারছিলাম না। সমগ্র পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খেঁাজেছি এক মুঠো শান্তির অাশায়। হতাশা থেকে মুক্তির অাশায়। কেউ অামাকে মুক্তি দিতে পারে নি। মুক্তি অামি শেষ পর্যন্ত পাই। মুক্তি পাই বই থেকে। প্রচুর বই পড়তে থাকি হতাশা থেকে মুক্তির জন্য। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক সব। সাহিত্যর সব জায়গায় বিচরণ করতে থাকি। এভাবেই চলে অনেক বছর। এর পর থেকে নিজের মনেই অাসতে থাকে কিছু সৃষ্টি করার। নতুন কিছু সৃষ্টি করার। নতুন কিছু সৃষ্টি থেকেই কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক লেখা শুরু করি। যা অামাকে হতাশা থেকে মুক্তি দেয়। এখানে ও জানি সফলতা পাব না। ব্যর্থতা যাকে ঘিরে ধরে সে সফলতা পায় না। অামি ও পাব না। অনেক লেখি। কোন লেখা বই অাকারে প্রকাশ পায় না। কোন লেখা থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য এক কাপ চায়ের পয়সা ও অাসে না। লেখক হিসেবে ও স্বীকৃতি মিলে না। যাক কিছু না হোক হতাশা মুক্ত হোক

Masuk › বিস্তারিত পোস্টঃ

টেরা মজিদের ফাঁসি উপন্যাস

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪

টেরা মজিদের ফাঁসি

কামরুল হাছান মাসুক

পার্ট ২



গোয়েন্দারা গুহার মুখে প্রবেশ করে অবাক হয়ে গেল। টেরা মজিদ নেই। টেরা মজিদের কোন চেলা টেলাও নেই। ভয়ংকর সন্ত্রাসীরা এরকম নিরাপত্তা প্রহরী বিহীন তাকতে পারে তা ভাবাই যায় না। সমগ্র গুহা তন্ন তন্ন করেও কোন কিছু পাওয়া গেল না। টেরা মজিদকেও পাওয়া গেল না। গুহাতে একজন ব্যাচেলার মানুষের যা থাকে তা ব্যতিত কিছুই নেই। এখানে টেরা মজিদ অনেকদিন লুকিয়ে ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার ব্যবহার্য জিনিষ দেখলেই কেউ অনায়াসে বলে দিতে পারবে এখানে অনেকদিন সে আবাস গড়েছিল। সব কিছু ঠিক আছে। শুধু টেরা মজিদ নেই। টেরা মজিদ তাহলে কোথায় গেল। গোয়েন্দারা অনেক চেষ্টা করল। কোন লাভ হল না। আজিজুল হক বলল, আমার মনে হয় টেরা মজিদ বিড়াল হয়ে বের হয়ে গেছে। বাকি দুই জন মানতে রাজি নয়। মানুষ বিড়াল হতে পারে না। সে বিড়াল হয়ে বের হবে কিভাবে। আজিজুল হকের পীর ফকিরের বিশ্বাস বেশি সে তর্ক ঝুরে দিল। বাকি দুই জন মানতে নারাজ। তর্ক করতে করতেই আজিজুল হক পা পিছলে গুহার ভিতর পরে গেলেন। গুহার ভিতরে আবার গর্ত। এত গভীর গর্ত যে গুহার নিচে কিছু দেখা যায় না। গর্তের ভিতর গর্ত। কি অবস্থা হতে পারে একবার চিন্তা করুন। আজিজুল হককে বাঁচাতে হবে। উনি যতটা না ব্যাথায় তারচেয়ে ভয়ে কাঁপছেন। গুহাটা বেশি গর্ত। লাফ দিয়েও নামা যাবে না। যদি পাঁ মচকে যায়। নামার ও কোন রাস্তা পাওয়া যাচ্ছে না। আজিজুল হককে বারবার চিৎকার করে বলা হচ্ছে ভয় নেই। আমরা আসছি। একটু খেয়াল করতেই দেখা গেল একটা ধরি গুহার ভিতরের গুহায় নেমে গেছে। দেরি না করে তারা দুইজনও নেমে গেল। নেমে আজিজুল হককে উদ্ধার করল। বালু ছিল। লাফ দিয়ে পড়লেও কিছু হত না।



টেরা মজিদকে দেখা যাচ্ছে। তিনি দৌড়াচ্ছেন। প্রাণপণে দৌড়াচ্ছেন। সে ভাবে দৌড়াচ্ছেন উনি যদি অলম্পিকে ঐ ভাবে দৌড়াতে পারতেন তাহলে নিশ্চিত সোনা জয় করতেন। পিছনে পিছনে গোয়েন্দারা ও দৌড়াচ্ছেন। আজকে যেভাবেই হোক ধরতে হবে। এত হাতের নাগালে আর কেই পায় নি। আজকে যদি এত কাছ থেকে ছোটে যায় তাহলে চাকুরিই চলে যেতে পারে।



দৌরত্ব অনেক কমিয়ে এনেছেন। আর একটু হলেই টেরা মজিদকে ধরা যাবে। আজকে সে আর বাঁচতে পারবে না। আজ তাকে ধরা দিতেই হবে। গোয়েন্দারা ধরতে যাবেন বিশাল একটা পর্দা নেমে গেল। পর্দার প্যাচে গোয়েন্দারা পড়ে গেলেন। টেরা মজিদকে দেখা যাচ্ছে। পর্দা বেদ করে সামনে এগুনো যাচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করেও পর্দা যখন বেদ করা যাচ্ছে না, গোয়েন্দারা তখন গুলি করলেন। কাজ হল না। পর্দা বেদ করে গুলি যাচ্ছে না। সব পর্দার ভিতরেই আটকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বেশি গুলি করলে পর্দার গুলি বিপরীত দিকেই আসবে। গোয়েন্দারা রণে বিরতি দিয়ে পর্দার সামনেই বসে গেলেন। এই অবস্থা হল কেন বুঝতে পারছেন না। কান্ত লাগছে। মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে যাচ্ছেন। ঘুমালে চলবে না। ঘুমালে অপরাধীকে ধরবে কে? ঘুমকে যেভাকেই হোক জয় করতে হবে।



পরের দিন জাতীয় দৈনিক এবং টেলিভিশনে ফলাও করে প্রচার হল টেরা মজিদকে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশের তিন গোয়েন্দা নিখোঁজ হয়ে গেছে। যেই গোয়েন্দাদের বলা হয় বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা। তারা কোথায় আছে, কি অবস্থায় আছে কেই জানে না। অনেকেই সন্দেহ করছেন টেরা মজিদ তাদের গায়েব করে ফেলেছে। টেরা মজিদকে ধরতে গেলেই নাকি মানুষ গায়েব হয়ে যায়। টেরা মজিদকে যে কোন মূল্যে হোক ধরতে হবে। যদি তাকে ধরা না যায় তাহলে এক এক করে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার লোক, আইনশৃংখলার লোক গায়েব হয়ে যাবে। এগুলি জনগণ সহ্য করতে পারবে না। জনগণ যাতে সহ্য করতে পারে সেই জন্য টেরা মজিদকে ধরতে হবে। ফাঁসির চেয়ে টেরা মজিদকে ধরা বেশি জরুরী। ফাঁসি দেওয়ার মত অনেক লোক আছে। টেরা মজিদকে ধরার মত লোক নেই।



সংবাদপত্রে এরকম করেই ফলাও করে সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় প্রচার হতে থাকে। আলোচনা সমালোচনা চলতেই থাকে।



কয়েকদিনের মাঝেই গোয়েন্দা সংস্থার লোক বের হয়ে আসে। সারা দেশে তাদের নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে যায়। গোয়েন্দা সংস্থার লোক সবকিছু জনগণের সামনে ব্যাখ্যা করে। আইনশৃংখলা বাহিনী থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কোন লোক তাদের কথা বিশ্বাস করতে চাইছে না। তারা বিশ্বাস ও করছে না। গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের পাগল বলছেন। ওরা কাজ করতে করতে পাগল হয়ে গেছে। ওদের বিশ্রাম দরকার। জরুরি ভিত্তিতে বিশ্রাম দরকার। টেরা মজিদ এত নরমালভাবে থাকতে পারে এই জিনিষটিই কাউকে বিশ্বাস করানো যাচ্ছে না। গোয়েন্দাদের গুহার মুখ থেকে উদ্ধার করার সময় গুহাটিকে ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে গুহাতে বিলাসবহুল জিনিষপত্র ছিল। গুহাটি আধুনিক প্রযুক্তির সব কিছুই ছিল। এলসিডি মনিটর থেকে শুরু করে ল্যাপটপ সবই ছিল।



গোয়েন্দারা আর কথা বাড়ালেন না। এখন কথা বললেই তাদের পাগল বলা হবে। কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে গোয়েন্দারা আবার গুহার ভিতর গেলে। গুহাটিকে সিল গালা করে দেওয়া হয়েছিল। তারপরও কৌশলে তারা গুহার ভিতর ঢুকে গেলেন। গুহার ভিতর গিয়ে সবকিছু এলোমেলো দেখলেন। এলোমেলো থাকার কথাই। টেরা মজিদের সবকিছু বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। টেরা মজিদের জিনিষপত্র নিয়ে রীতিমত গবেষণা শুরু হয়ে গেছে। গোয়েন্দাদের টার্গেট ছিল গুহার ভিতর গুহাকে নিয়ে। এখন গুহার ভিতর গুহা দেখা যাচ্ছে না। গুহাটিকে অনেক ভাল করে খোঁজেও কোনকিছু পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে আজিজুল হকের পরে যাওয়া। টেরা মজিদের পালিয়ে যাওয়া। পর্দায় তারা আটকে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় আসল কোথায় থেকে।



গুহার বাহিরে যারা পাহাড়া দিচ্ছিলেন গুহার ভিতরের শব্দ শুনে অস্ত্র তাক করলেন। মিডিয়া সাথেই ছিল। তারা ঘটনাটি ফুলিয়ে ফালিয়ে লাইফ টিভি স¤প্রচার করতে লাগলেন। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ হ্রদপিন্ড বন্ধ করে টিভির সামনে বসে আছেন। এই বুঝি টেরা মজিদ ধরা পড়ল। এই বুঝি টেরা মজিদ ধরা পড়ল। গোয়েন্দারা গুহার ভিতর থেকে বাহির হচ্ছেন না। তারা জানেন বাহির হওয়ার সাথে সাথেই গুলি করা হবে। কোন কিছু যাচাই বাচাই করা হবে না। তাই গুহার ভিতরে থাকাই ভাল। বারবার কল দেওয়া সত্ত্বেও কেউ ধরছে না। সবাই এখন টেরা মজিদকে নিয়ে ব্যস্ত। গোয়েন্দারা ভিতর থেকে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছেন। গুহার ভিতর টেরা মজিদ নেই। গুহার ভিতর গোয়েন্দা সংস্থার লোক। কেউ ম্যাসেজ মনে হয় দেখছে না। চারদিকে ট্যাংক, হেলিকপ্টার নিয়ে যৌথ বাহিনী এসে গেছে। রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এখানে যাকেই পাওয়া যাবে তাকেই এখন হত্যা করা হবে। টেরা মজিদ যেন পালিয়ে যেতে না পারে। গোয়েন্দারা পড়েছে মহা বিপদে। এরা সবসময়ই মহাবিপদে পড়ে। আজকের বিপদটা কিরকম বুঝতে পারছে না। অনেক সময় কম বিপদের সময় সবচেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। আজকে কি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে।



যৌথবাহিনী গুহার দিকে আগাতে থাকে। মিডিয়া লাইফ প্রচার করছে। সমগ্র দেশ কমান্ডো আক্রমণ লাইফ দেখছে। যাদের হৃদপিন্ড দুর্বল তারা চোখ বন্ধ করে টিভির সামনে বসে আছে। দেশে কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিরবতা নেমে এসেছে।



আজিজুল হক শেষ চেষ্টা হিসেবে কাগজে কিছু লিখে শক্ত মাটির চাকা দিয়ে গুহার বাহিরে ডিল মারলেন। যৌথবাহিনী সব পিছু হটতে লাগল। যারা টিভির সামনে বসে আছেন তাদের অবস্থা কি হবে একবার চিন্তা করুন।



যৌথবাহিনী মাটির চাকাটিকে গিয়ে ফেললেন। মাটি থেকে কাগজটা তুললেন। সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। কাগজে কি লেখা। যিনি কাগজটা তুললেন তিনি ও অনেক আগ্রহ এবং রহস্য নিয়েই কাগজটা তুললেন। যখন কাগজের লেখা পড়লেন, উনার মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝড়তে লাগল। এখন উনি কি করবেন। জনগণ যদি শুনে গুহার ভিতর আমাদের লোকই। তাহলে অবস্থা কি হবে। জনগণ বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখে ভাবলেন ভয়াবহ কিছু একটা লিখেছে। যৌথবাহির প্রধানের শরীল দিয়ে চিকন ঘাম বেয়ে যেতে লাগল। এখন তিনি কি করবেন। মিডিয়া, জনগণদের কি বুঝাবেন।



যৌথবাহিনীর প্রধান মিডিয়াদের বললেন, আপনারা লাইফ স¤প্রচার বন্ধ করুন। যদি বন্ধ না করেন তাহলে এই এলাকা সব উড়িয়ে দেওয়া হবে। আমাদের সুবিধার জন্য হলেও আপনারা লাইফ স¤প্রচার বন্ধ করেন। আমাদের অভিযান পরিচালনা করতে দেন।



প্রধানের কথায় কাজ হল। মিডিয়ার লোক সরে যেতে লাগল। জীবনের চেয়ে সংবাদ বড় না। চারদিক থেকে মিডিয়ার সরে যেতে লাগল। হঠাৎ করে স¤প্রচার বন্ধ হয়ে যেতে দেখে দেশের মানুষদের অবস্থা কি হবে একবার ভাবুন। কেউ ভাবল কারেন্ট চলে গেছে। কেউ ভাবল টেলিভিশনে কোন গন্ডোগল হয়েছে। সবাই উন্মুখ হয়ে বসে আছে। একটু পরেই টেলিভিশন পর্দায় ভেসে উঠল নিরাপত্তার স্বার্থে এবং টেরা মজিদকে ধরতে লাইফ স¤প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিপদজনক এলাকা হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। অভিযান সম্ভবত এই মুহুর্তেই পরিচালনা করা হবে। যৌথবাহিনী সময় ক্ষেপণ করতে চাচ্ছেন না। তারা এখনই অভিযান পরিচালনা করতে চাচ্ছেন।



নিরাপত্তা প্রধান ভাবছেন কি করা যায়। সমগ্র দেশের মানুষ জানে গুহার ভিতর টেরা মজিদ আছে। একমাত্র উনিই জানেন এখানে টেরা মজিদ নেই। এখানে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনই আছেন। এরা যে এখানে কেন গেল। এরাই জানে। গেল যখন জানিয়ে গেলেই হত। এদের এখানে ঢুকার অনুমতি নিশ্চই দেওয়া হত। এখন যদি সবাইকে বলেন, আমাদের সংস্থার লোকই এখানে। তাহলে বিষয়টা কেমন দেখাবে।



নিরাপত্তা প্রধান কয়েকজনকে নির্দেশ দিলেন উনার সাথে যেন গুহার ভিতর প্রবেশ করে। গুহার ভিতর প্রবেশ করেই গোয়েন্দাদের বললেন আপনারা যে করেই হোক পালিয়ে যান। আপনাদের যেন কেউ দেখতে না পায়। আমরা আপনাদের পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি। জনগণ যদি জানে আপনারা আমাদের লোকই তাহলে বুঝতে পারছেন কি হবে। জনগণকে কোন ভাবেই টের পাওয়ানো যাবে না। এখানে টেরা মজিদ ছিল এটাই জনগণকে বুঝাতে হবে। নিরাপত্তা প্রধানের সহায়তায় গোয়েন্দারা বের হতে সক্ষম হয়।



টেরা মজিদকে ধরা যায় নি। কাল ক্ষেপণ করতে করতে কখন যে টেরা মজিদ পালিয়ে গেছে তা কেউ জানে না। কখন পালিয়ে গেছে তাও কেউ বলতে পারে না। সমালোচকরা বলছেন, টিভির স¤প্রচার বন্ধ হওয়ার পর পরই টেরা মজিদ পালিয়ে গেছে। যাই হোক টেরা মজিদকে ধরা যেহেতু যাইনি সেহেতু অনেকজন অনেক কথাই বলবে। নিরাপত্তা প্রধানের উপর আঙ্গুল তুলবে। কিছু করার নেই।



তিনজন গোয়েন্দা বের হয়ে টেরা মজিদকে ধরবেন একরকম সংকল্প করেই ফেললেন। উনারা জীবনেও কোন সময় হারেন নি। এমনকি প্রতিটি পরীক্ষায়ও কখনো কারো কাছে হারেন নি। হারার কথা উনাদের মাথায় চিন্তাই আসে না। এখন হারবেন কেন। টেরা মজিদকে অবশ্যই ধরবেন।



টেরা মজিদের আত্মীয় স্বজন আছে। আত্মীয় স্বজন কেউ দেশে থাকে না। সবাই আমেরিকা ইউরোপ থাকে। বড় বড় নেতাদের ক্ষেত্রে এরকমই হয়। নেতা থাকেন দেশে। রাজনীতি করেন, জনগণের পক্ষে কথা বলেন। কিন্তু নেতাদের বউ, ছেলে-মেয়ে থাকেন বাহিরে। তাদের যেন রাজনীতি ধরতে না পারে। তাদের যেন এই দেশের হাওয়া ক্ষেতে না হয় তাই তাদের বাহিরে পাঠিয়ে দেন। নেতার কর্মক্ষেত্র এই দেশে তাই উনাকে সত কষ্ট হলেও থাকতে হয়। টেরা মজিদের ক্ষেত্রেও অনেকটা সেই রকম।



অনেকেই প্রশ্ন করেন তাহলে টেরা মজিদ ঐ দেশে চলে যেতে পারে না। এই দেশে ফাঁসির রায় মাথায় পেতে থাকছেন কেন। উনি ঐ দেশে চলে গেলেই হল।

জনগণের চিন্তা ভাবনা একটু স্বাভাবিক হয়। তাই তারা এত সহজ ভাবে ভাবতে চেষ্টা করেন। বিষয়টা এত সহজ না। ইন্টারপোল থেকে টেরা মজিদের নামে যেহেতু রেড এ্যালার্ট আছে তাই পৃথিবীর যে কোন জায়গা থেকে যে কোন দেশের নিরাপত্তাবাহিনী ধরতে পারবে। ইউরোপ আমেরিকাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক কড়া। ঐ দেশ থেকে এই দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিছুটা শিথিল। রাস্তাখাট চিনা পরিচিত। এখানে লুকিয়ে থাকা অনেক সহজ। পার্শ্ববর্তী ভারত ও মায়ানমার আছে। যে কোন সময় গাপটি মেরে কিছুদিন আত্মগোপন করা যায়।



গোয়েন্দা সংস্থা লোকদের ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হল। তাদের সাহায্যে যে কোন সময় নিরাপত্তা বাহিনী সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে। তারা যে জায়গায় থাকুক না কেন তাহলে আগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমর্থন করতে হবে। যে কোন সময় যে কোন প্রয়োজনে টেরা মজিদ সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে এই তিন সদস্যর বাহিনী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।



রাত সাড়ে বারটার সময় গোয়েন্দারা খবর পেলেন টেরা মজিদ আবার কুমিল্লাতে এসেছেন। কোথায় এসেছে গোয়েন্দারা জানে না। গোয়েন্দারা সাথে সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে ম্যাসেজ পাঠাল। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কুমিল্লা চষে বেড়াতে লাগলেন। ঘুমন্ত নগরী জেগে উঠল। চারদিকে বাসির পুঁ পুঁ শব্দে নগর বাসির ঘুম ভেঙ্গে যেতে লাগল। গোয়েন্দারা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বিশেষজ্ঞদের খবর দিলেন। কুমিল্লাতে যত ক্যামেরা আছে সবগুলিকে পরীক্ষা করতে বললেন। টেরা মজিদের ছবি পাওয়া যায় কিনা দেখতে বললেন। শহরের প্রতিটা বাড়িতে খবর পৌঁছাতে স্যাটেলাইট টিভি ব্যবহার করলেন। বারবার সতর্ক সংকেত দিতে লাগলেন অপরিচিত মানুষ দেখলেই যেন ফোন দেওয়া হয়। কারো বাড়িতে যেন কোন অপরিচিত লোকদের জায়গা দেওয়া না হয়। টেরা মজিদের ছবি টেলিভিশনের পর্দায় ভাসতে লাগল। হাসিখুশি মানুষের মত চেহারা কেমন করে এত বড় সন্ত্রাসী হয়।



গোয়েন্দারা খবর পেলেন টেরা মজিদকে এক বাসায় পাওয়া গেছে। বাসাটা কুমিল্লার টমছম ব্রিজ এলাকা। টেরা মজিদ নাকি বাসায় উঠে সাহায্যর আবেদন করেছিলেন। একটি রাতের জন্য থাকার অনুমতি চেয়েছিলেন। বাড়ির মালিক উনাকে ধরে বেঁধে রেখেছেন। তারাতারি যেন নিরাপত্তা বাহিনী যায়। যদি আবার চেলা পেলা এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।



গোয়েন্দারা ভদ্রলোকের বাসায় গেলেন। টেরা মজিদ বাঁধা অবস্থাই ছিল। কিভাবে যেন ছুটে গেছেন। জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে পালিয়ে গেছেন। বাড়িটি একতলা ছিল। লাফ দিয়ে নিতে পড়তে তেমন অসুবিধা হয় নি। নিরাপত্তা বাহিনী এক দিক দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকেছেন অন্যদিক দিয়ে টেরা মজিদ পালিয়ে গেছে।



গোয়েন্দার টেরা মজিদের পিছু নিলেন। রাস্তায় রাস্তায় বেড়িকেড বসালেন। কোন গাড়ি যাতে না যেতে পাড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখলেন। কুমিল্লা শহরে এমনিই সন্ধ্যার পর গাড়ি চলে না। রাত বারটার সময় গাড়ি চলার প্রশ্নই আসে। মাঝে মাঝে কিছু মালবাহি ট্রাক যায়। এছাড়া আর কিছুই যায় না। রাস্তা ফাঁকা থাকে সবসময়। টেরা মজিদকে মাইক্রো নিতে দেখেছেন গোয়েন্দা সদস্যরা। মাইক্রোতে উনি একা নাকি উনার সাথে কেউ আছে সেই বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া যায় নি। এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে উনি ড্রাইব করছেন। উনাকেও দেখা যাচ্ছে। উনার মুখে হাসি। গালে খোচাখোচা দাঁড়ি। গোয়েন্দারা গুলি ছুড়ছেন। উনার গায়ে একটাও গুলি লাগছে না। নিশানা ঠিক হচ্ছে। উনি এমনভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন যে, যে দিকে নিশানা করা হচ্ছে তিনি অন্যদিকে গাড়ি চালাচ্ছেন। উনার গাড়িতে ক্যামেরা ফিট করা হয়েছিল। বাড়ির বাহিরে যখন গাড়িটা ছিল তখনই ক্যামেরা ফিট করা হয়েছিল। ক্যামেরাটা ভাল ভাবে ফিট করা যায় নি। তাই শুধু একটা দিক দেখা যাচ্ছে। গাড়ির এক পাশ দেখা যাচ্ছে। অন্য পাশ দেখা যাচ্ছে না। এক পাশ দিয়ে টেরা মজিদকে অনেক শান্ত দেখাচ্ছে। উনার পিছে যে শয়ে শয়ে বাহিনী আসছে উনাকে ধরার জন্য এ নিয়ে উনি ব্যস্ত না। গাড়িও চালাচ্ছেন এলোমেলোভাবে। উনি একটু ও দুলছেন না। উনাকে দেখে মনে হচ্ছেন উনি মজা পাচ্ছেন। উঠতি বয়সের ছেলেরা যেভাবে হোন্ডা চালায় উনিও সেভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন। গাড়িটা বুলেট প্র“ফ। একটা গুলিও গাড়িকে বেধ করতে পারছে না।



গোয়েন্দারা সেনাবাহিনী তলব করলেন। কুমিল্লা সেনাবাহিনী থেকে কয়েকটা ইউনিট আসল টেরা মজিদকে ধরার জন্য। টেরা মজিদের গাড়িটা ঢাকার দিকে যাচ্ছে। পিছন থেকে গোয়েন্দারা গাড়িটাকে তাড়া করছে। সামনে দিয়ে সেনাবাহিনীর বিশেষ টিম টহলরত অবস্থায় আছে। টেরা মজিদ পড়ছেন মাঝখানে। আজকে নিস্তার নেই।



টেরা মজিদ গাড়ি আগের মতই চালাচ্ছেন। গাড়ির গতি কিছুটা বেড়েছে। এক দুইটা ট্রাক এমনভাবে অতিক্রম করছে যা বলার মত না। স্বাভাবিক কোন ডাইভার এরকম অতিক্রম করতে পারবে না। এই মনে হচ্ছে ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ লেগে যাবে। এই মনে হচ্ছে এখনই রাস্তায় বাড়ি খেয়ে উলটিয়ে যাবে। গাড়িও এক চাকার উপর কখনো কখনো উঠে যাচ্ছে। আবার আপনা আপনিই ঠিক হয়ে যাচ্ছে।



গোয়েন্দারা গাড়ি নিয়ে তাড়া করছেন। গুলির উপর গুলি ছুড়ছেন। গোয়েন্দারা নিরাপত্তা বাহিনীদের নির্দেশ দিচ্ছেন তারা যেন রাস্তায় বেড়িকেট দিয়ে দেয়। নিরাপত্তা বাহিনী অনেক আগেই বেড়িকেট দিয়ে রেখেছে। বেড়িকেল দিলে কি হবে টেরা মজিদ বেড়িকেল মানছেন না। বেড়িকেট ভেঙ্গে চুরে সামনের দিকে ছুটছেন। সামনে থেকে গুলি করা হলেও কোন লাভ হচ্ছে না। বুলেট ফ্রুপ হওয়ারা কারণে সামনে থেকে পিছন থেকে যেদিক থেকেই গুলি করুক না কেন কোন কাজে আসছে না। গুলি গাড়িতে লেগে পড়ে যাচ্ছে।



সেনাবাহিনীর ভারি যন্ত্রপাতি আনতে পারলে ভাল হত। সময় খুব কম। এই কম সময়ের মধ্যে কিছু করা যায় না। রণে প্রস্তুতি নিতে অনেক সময় লাগে। অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করা যায়। অস্ত্র দিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না। গুলি করে গাড়িকে কিছুই করা যাচ্ছে না। কামানের দরকার। কামান হলে গাড়িকে উড়িয়ে দেওয়া যেত। টেরা মজিদের যবনিকা হয়ে যেত।



টেরা মজিদ গাড়িতে গান ছাড়ছেন। রবিন্দ্রসংগীত হবে। লোকটা কি পাগল এই মুহুর্তে কেই রবিন্দ্রসংগীত শুনে। মৃত্যু যেখানে কড়া নাড়ছে উনি সেখানে রবিন্দ্রসংগীত শুনছেন। আমাদের সাথে রসিকতা করছেন। একবার যদি ধরতে পারি তাহলে রবিন্দ্রসংগীত, ফবিন্দসংগীত সব বের করে ফেলব। কত বড় সাহস আমাদের সাথে ফাজলামি করে।



সব বেড়িকেট, রাস্তা অবরোধ সব বিফলে গেল। টেরা মজিদ বিন্দুমাত্র গাড়ির স্পিড কমান নি। কয়েকটা সেনাবাহিনীর পিক আপ ভ্যান রাস্তার সামনে রাখা হয়েছিল। টেরা মজিদ এমনভাবে পার হয়ে গেলেন পিকআপ ভ্যান দিয়েও কিছু হয় নি। এত ভাল গাড়ি ফ্লিম জগতেই দেখা যায়। বাস্তব জীবনে দেখতে পারবেন গোয়েন্দারা কখনো কল্পনাই করতে পারেন নি।



গোয়েন্দারা সেনাবাহিনীদের নির্দেশ দিলেন রাস্তায় যেন কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে দেওয়া হয়। আগুনের তাপে গাড়ির চাকা পুড়ে যেতে পারে। সেনাবাহিনীও তাই করল। গাড়ি চাকা পুড়ে যাওয়ার কথা। গাড়ির চাকা পুড়ছে না আগের মতই গাড়ি চলছে। টেরা মজিদ এবার কানে হেডফোন লাগালেন। নড়েচড়ে একটু ভাল করে বসলেন। উনার ভিতর কোন ভাবাভেগ দেখা গেল না।



গোয়েন্দারা টেরা মজিদের পিছনে পিছনেই যাচ্ছেন। গোয়েন্দাদের গাড়ি টেরা মজিদের গাড়ি থেকে নরমাল। তাই টেরা মজিদের গাড়ি সাথে তাল মিলাতে পারছেন না। সামনে থেকেও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কিছু করতে পারছেন না। সেনাবাহিনীদের ট্যাংক আনার জন্য বলা হয়েছে। বিমানবাহিনীদের বিশেষ হেলিকপ্টারও আনার জন্য বলা হয়েছে। প্রথমে টেরা মজিদ গাড়িতে যখন উঠে ভাবা হয়েছিল অল্পতেই ধরা যাবে। সময় যত যাচ্ছে ধরাটা তত কঠিন হচ্ছে। বারবার এই বাহিনী, সেই বাহিনী, প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। প্রথমেই যদি প্রযুক্তিটিকে কাজে লাগানো হত তাহলে এতক্ষণে টেরা মজিদ ধরা পড়ে যেত। একটা একটা বেড়িকেড যখন ভাঙছে তখন মনে হচ্ছে ট্যাংক আনলেই হত। গাড়ি উড়িয়ে দেওয়া যেত নয়ত কামানের আঘাতে গাড়িকে দু টুকরা করে ফেলা যেত।



লালবাগ, ঢাকা।

মোবাইল ০১৯২৩২৪৪৫২৮

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.