![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অামি একজন ব্যর্থ মানুষ। জীবনে কখনো সফলতার স্বাদ পায়নি। জীবনে যা চেয়েছি তার বিপরীতটাই পেয়েছি। এর পর থেকেই হতাশা অামাকে গ্রাস করে। হতাশা থেকে মুক্তির জন্য ঘুরেত থাকি। হতাশা থেকে মুক্তি পাই না। কেউ অামাকে হতাশা থেকে মুক্তি দিতে পারে না। অামি নিজেকে ও হতাশা থেকে মুক্ত করতে পারছিলাম না। সমগ্র পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খেঁাজেছি এক মুঠো শান্তির অাশায়। হতাশা থেকে মুক্তির অাশায়। কেউ অামাকে মুক্তি দিতে পারে নি। মুক্তি অামি শেষ পর্যন্ত পাই। মুক্তি পাই বই থেকে। প্রচুর বই পড়তে থাকি হতাশা থেকে মুক্তির জন্য। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক সব। সাহিত্যর সব জায়গায় বিচরণ করতে থাকি। এভাবেই চলে অনেক বছর। এর পর থেকে নিজের মনেই অাসতে থাকে কিছু সৃষ্টি করার। নতুন কিছু সৃষ্টি করার। নতুন কিছু সৃষ্টি থেকেই কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক লেখা শুরু করি। যা অামাকে হতাশা থেকে মুক্তি দেয়। এখানে ও জানি সফলতা পাব না। ব্যর্থতা যাকে ঘিরে ধরে সে সফলতা পায় না। অামি ও পাব না। অনেক লেখি। কোন লেখা বই অাকারে প্রকাশ পায় না। কোন লেখা থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য এক কাপ চায়ের পয়সা ও অাসে না। লেখক হিসেবে ও স্বীকৃতি মিলে না। যাক কিছু না হোক হতাশা মুক্ত হোক
টেরা মজিদের ফাঁসি
কামরুল হাছান মাসুক
পার্ট ৩
সেনাবাহিনীর ট্যাংক মোতায়েন করার কিছু পূর্বেই টেরা মজিদের গাড়ি অতিক্রম করল। গোয়েন্দাদের গাড়িটা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হল। আর একটু হলে কামানের গোলাতে গোয়েন্দাদের গাড়ি দুমড়ে মুছড়ে যেত।
গোয়েন্দারা হাল ছাড়ল না। সেনাবাহিনী থেকে ভারি অস্ত্র নিয়ে টেরা মজিদের গাড়ি ধাওয়া করল। গোয়েন্দারা তাদের কৌশল কিছুটা পাল্টাল। গাড়ি বরবর গুলি না করে চাকা বরাবর গুলি করতে লাগল। এক যুগে গুলি করার ফলে কয়েকটা গুলি গাড়ির চাকায় গুলি লেগে চাকা ব্রাষ্ট হয়ে গেল। গোয়েন্দারা আনন্দে চিৎকার করে উঠল। ব্রাষ্ট হওয়া গাড়ি নিয়েও টেরা মজিদ গাড়ি চালাচ্ছেন। কানে হেড ফোন এখনও আছে। গানের তালে তালে মনে হচ্ছে উনি দুলছেন। গোয়েন্দারা অবাক হল। টেরা মজিদের পিছু ছাড়ল না। ব্রাষ্ট হওয়া গাড়ি নিয়ে টেরা মজিদ বেশি দূর আগাতে পারলেন না। কিছুদূর যাওয়ার পর পরই গাড়ির চাকা দুমড়ে মুছড়ে গেল। রিং এর উপর গাড়িটা চলছিল। রাস্তার মাঝেই গাড়ি বন্ধ হয়ে থেমে গেল। গোয়েন্দারা এবার এগিয়ে গেলেন। গাড়ি থেকে টেরা মজিদ নামছে না। ক্যামেরা বন্ধ হয়ে গেছে। তারমানে টেরা মজিদ ক্যামেরা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাকে দেখা যাচ্ছে না। গাড়িতে যে আছেন এটা নিশ্চিত বুঝা গেল। গোয়েন্দারা এগিয়ে গেলেন। গিয়ে দেখেন টেরা মজিদ খেলান দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছেন। তাকে কেউ ধরতে পারে। তার জীবন এখন বিপন্ন এগুলি তার কল্পনাতেই নেই।
গোয়েন্দারা গাড়ির দরজা খোলে নামাতে গিয়ে দেখেন এটা টেরা মজিদ না। অনেকটা টেরা মজিদের প্রতিকৃতির মত। এটাতে কোন প্রাণ ছিল না। একটা জীবন্ত ডলের মত মনে হল। তারমানে টেরা মজিদ ঐ বাসা থেকে বের হয় নি। সবটাই এই ডলের কাজ। জীবন্ত মানুষের মত ডলটা কাজ করে গেছে। পুতুলের এত ক্ষমতা থাকতে পারে তা কল্পনাতেই আসে না। কয়েক ঘন্টা যাবৎ এই পুতুলটাই তাদের এভাবে হেস্ত নেস্ত করেছে। গোয়েন্দারা কয়েকটা লাথি মারল পুতুলটাকে। লাথি মারলে কি হবে। যারা প্রাণ নেই তাকে লাথি কেন অন্য কিছু করলেও কিছুই হবে না। এই জন্যই তার কোন অনুভূতি প্রকাশ পায় নি। আমাদের আরও আগেই বুঝা উচিত ছিল। আমাদের কিভাবে বোকা বানিয়েছে একবার চিন্তা করা যায়। ভয়াবহ একটা লোক। পুতুলটাকে লাথি দেওয়ার কারণে পুতুলটার ভিতর থেকে একটা যন্ত্র বেড়িয়ে এল। যন্ত্রটা এখন অকেজো। রিমোর্ট কন্টোলের মত অনেকটা। তার মানে রিমোর্ট কন্টোলের মাধ্যমে টেরা মজিদই গাড়িটাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। অনেকটা গেম খেলার মত। কত বড় খিলাড়ি চিন্তা করা যায়। আমাদের সাথে মানে সমগ্র বাহিনীর সাথে খিলাড়ির মত আমাদের সাথে খেলেই গেছে। আমরা কিছুই বুঝতে পারলাম না। একটু বুঝতে পারলাম না। গোয়েন্দারা তাদের চুল ছিড়তে লাগল।
গোয়েন্দাদের ফোন বেঁজে উঠল। টেরা মজিদকে দেখা যাচ্ছে। উনি পান খেয়ে বিএমডব্লিউ গাড়িতে উঠছেন।
উনি যদি বি এম ডব্লিউতে উঠেন তাহলে আপনারা ধরছেন না কেন। উনাকে ধরেন। উনাকে ধরার চেষ্টা করেন।
আমাদের কাছে ভারি কোন অস্ত্র নেই। যা আছে এগুলি দিয়ে টেরা মজিদকে গুলি করলে উনার অপমান হবে। উনি এগুলিকে কিছুই মনে করবেন না। শুধু শুধু সরকারি গুলি খরচ।
আপনারা সরকারি গুলি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আপনারা গুলি করেন। তাকে ধরার চেষ্টা করেন।
আরেকটা সমস্যা আছে। আমরা সংখ্যায় অনেক কম। উনার সাথে এই কম সদস্য নিয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া কি ঠিক হবে।
আপনি যা পারেন তাই করুণ। আপনারা কম। উনি কয়জন। টেরা মজিদ কি একশটা। উনি যদি একা এত কিছু করতে পারেন তাহলে আপনারা এতজন থেকেও কেন বলছেন এত কম সদস্য নিয়ে উনার সাথে যুদ্ধ করতে পারবেন না।
স্যার, মনে কিছু নিবেন না। যেখানে আপনারা ফেল মারছেন সেখানে আমরা নেহায়েত ছাড়পোকার মতই। উনি আমাদের দেখে কি সুন্দর হাসছেন। আমরা যদি উনার কাছে যাই তখনই উনি গাড়ি স্টার্ট দেন। এত দ্রুত স্টার্ট দেন কিছুই বুঝি না। গুলি ছুরলে উনার গাড়িতে টং করে একটা শব্দ হয় আর কিছুই হয় না। গাড়ির চাকা ও বুলেট প্র“ফ। কিছুই হয় না। উনার জন্য অপেক্ষা না করে বাড়িতে গিয়ে ঘুমানোই ভাল। উনাকে ধরা যাবে না। সরকারের শুধু শুধু কুটি কুটি টাকা খরচ। উনাকে ধরার জন্য সরকার এত ব্যস্ত কেন। উনি কাউকে খুন করছেন না। ডাকাতি করছেন না। উনাকে নিয়ে কেন যে এত মাথাব্যাথা। কিছু যদি করেই থাকেন তাহলে সমস্যা মিটেই গেছে। যাকে সরাতে চেয়েছিলেন সে আবার ক্ষমতায় এসে গেছে। তাকে নিয়ে এত চিন্তা কেন। সে একটা ষড়যন্ত্র করেছিল। ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। এখন তাকে নিয়ে টানা খেঁচড়া না করলে হয় না।
আপনি কি বলছেন বুঝতে পারছেন। আপনি যা বলছেন এই অভিযোগে আপনার কি হতে পারে একবার ভেবেছেন। উনার মত আপনার যদি ফাঁসির রায় হয় তাহলে ভাল লাগবে।
স্যার কি যে বলেন। মাফ চাই। স্যার সরল মনে অনেক কথা বলে ফেলেছি। আমাকে স্যার ক্ষমা করে দেন। টেরা মজিদের মত হতে পারলে টেরা মজিদ হয়ে যেতাম। উনাকে কেউ ধরতে পারবে না। আমরা ও পারব না। হি হি হি।
আপনার হাসি বন্ধ করুন। সরকারের বিল উঠিয়ে লাভ নেই। আপনি আপনার কাজে যান। যতসব।
পরের দিন টেরা মজিদকে ঢাকাতে দেখা গেল। পুরান ঢাকার লালবাগে তাকে দেখা গেল। গোয়েন্দারা ঢাকাতে এসেছিলেন রিপোর্ট করতে। লালবাগের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। টেরা মজিদকে দেখে গাড়ি থামালেন।
টেরা মজিদ সামনে এসে জিজ্ঞেস করলেন, গোয়েন্দারা ভাল আছেন। আপনাদের জ্বালায় কিছু করতে পারছি না। অনেকদিন যাবৎ দূরের উপরে আছি। আমাকে না ধরলে কি আপনাদের হয় না। আমার মত নিরিহ মানুষদের পিছনে লেগে থেকে লাভ আছে। আপনাদের কত বড় বড় কাজ করতে হবে। আপনারা এই ছোট ছোট কাজ করলে হয়।
গোয়েন্দারা সামনে এগিয়ে আসল। বেটাকে আজকে শায়েস্তা করতে হবে। সামনে আগাতেই টেরা মজিদ ভয়ংকর হুংকার দিয়ে বলল, আর আগানোর চেষ্টা করবেন না। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখুন।
নিচের দিকে তাকিয়ে দেখা গেল ভারি একটা অস্ত্র। উনি ভারি অস্ত্রটা ট্রিকারে ধরে আছেন। ট্রিকারে চাপ দিলেই এক ঝাঁক গুলি বের হয়ে যাবে।
গোয়েন্দাদের হাতে কোন অস্ত্র ছিল না। তারা এসেছেন অন্য একটা কাজে রির্পোট করতে। টেরা মজিদকে পেয়ে যাবেন ভাবতেই পারেন নি। গোয়েন্দারা পিছনে সরে গেল।
টেরা মজিদ হাসতে লাগলেন। আপনারা অনেক ভাল মানুষ। আমিও অনেক ভাল মানুষ। আমার পিছনে পিছনে আসবেন না। এসে ও লাভ নেই। আমি অবশ্য আপনাদের দেখে মজা পাই। আপনাদের সাথে খেলেও মজা পাই। বুদ্ধিমানের সাথে মজাই আলাদা। আমার আপনাদের সাথে চোর-পুলিশ খেলাটা অনেক ভাল লাগে। ভয় পাই। কোন অঘটন যদি হয়ে যায়। আপনাদের দিক থেকে ও আসতে পারে। আমার দিক থেকেও আসতে পারে। একটা কথা আছে না হেলে হেলে ভ্যালে ভ্যালে হয়ে যায়।
আজিজুল হক ঝুঁকি নিয়ে টেরা মজিদকে ধরার জন্য অবস্থান নিলেন। সাথে সাথে টেরা মজিদকে একটি গাড়ি এসে ছুঁ মেরে নিয়ে গেলেন। টেরা মজিদের অস্ত্রটা পরে আছে। গোয়েন্দারা অস্ত্রটা পরীক্ষা করে দেখেন এটা একটা হেলনার অস্ত্র। এত ভয়ংকর ভাবে হেলনার অস্ত্রটা বানানো হয়েছে যেটি দেখলে আসল মনে হয়। এই খেলনার পিস্তল বাংলাদেশের যে না এটা সহজেই বুঝা যায়। টেরা মজিদের মত ভয়ংকর লোক খেলনা পিস্তল নিয়ে থাকবেন কেন। উনি আসল পিস্তল নিয়েই থাকতে পারেন। গোয়েন্দাদের মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মাথায় কিছুই আসছে না। তবুও টেরা মজিদের গাড়িটাকে অনুসরণ করার জন্য পিছনে পিছনে গেলেন। টেরা মজিদের সাথে একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। মেয়েটা কি পুতুল। হতেই পারে। টেরা মজিদের কাজকারবার বুঝা আসলেই কঠিন। মেয়েটাকে দেখে সত্য মনে হচ্ছে। টেরা মজিদের কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে এই মেয়েটাও যন্ত্র নয়ত পুতুল।
টেরা মজিদ কি যেন খাচ্ছেন। গোয়েন্দারা জরুরী ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করল। গোয়েন্দারা চোখে চোখে রাখছেন গাড়িটা কোথায় যায়। এমনভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন যেন টেরা মজিদ দেখতে না পায়। দেখতে পেলে সন্দেহ করতে পারেন। কোথায় থেকে আবার কোথায় চলে যান। এবার গোপনে কাজটা শেষ করতে হবে। যে করেই হোক গোপনে কাজটা কৌশলে শেষ করতে হয়। সব সময় সম্মুখ যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায় না। মাঝে মাঝে গেরিলা পদ্ধতির যুদ্ধ অনেক কাজে দেয়। এবার গেরিলা পদ্ধতিতেই আগাতে হবে। আমাদের প্রথম কাজ হবে আমাদের গাড়িটাকে আড়াল করা। টেরা মজিদ যেন টের না পায় আমরা তাকে ফলো করছি। কাচের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে লোকটা হাসছেন। লোকটার হাসি অনেক সুন্দর। যে কোন মেয়ে এই হাসির প্রেমে পড়ে যেত। উনি মনে হয় চুইংগাম চাবাচ্ছেন। এই বয়সে কেউ চুইংগাম চাবায়।
গোয়েন্দারা গাড়ি অনুসরণ করছেন। নিরাপত্তা বাহিনীকে সব খবর জানাচ্ছেন। নিরাপত্তাবাহিনী পূর্ণ শক্তি নিয়ে আসছে। রাস্তা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিচ্ছেন। এবার টেরা মজিদের যাওয়ার রাস্তা নেই। টেরা মজিদ জানেন ও না তাকে ধরার জন্য এত ফাঁদ পাতা হচ্ছে। মেয়েটা খুব সুন্দর করে গাড়ি চালাচ্ছে। মেয়েটাকে না দেখলে ও মেয়েটা গাড়ি চালাচ্ছে এটা বুঝা যাচ্ছে। পুতুল রিমোর্ট কন্টোলের মাধ্যমে চলে। এটা গাড়ি ভাল চালাতে পারে কি চালাতে পারে না এটা নিয়ে মাথা না ঘামালেই ভাল। তবুও মাথা ঘামাতে গোয়েন্দাদের ইচ্ছে করছে। কিছু একটা চিন্তা করলে স্নায়ূ ঠিক থাকে। টেরা মজিদকে নিয়ে স্নায়ূ সবসময় উত্তেজিত থাকে।
লালবাগ, ঢাকা।
©somewhere in net ltd.