নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লাল আর সবুজের নিচে জন্ম আমার, থাকি লাল সাদা আর নীলে
আমি ম্যানহাটানের ম্যারিয়ট মারকুইস হোটেলের ৪৭ তলায় দ্যা ভিউ রেস্টুরেন্টে বসে ডিনার করছিলাম, ডিনারের মেনু তে আজ আমি একটা স্টেক অর্ডার করেছিলাম, মিডিয়াম রেয়ার স্টেক আমার খুবই পছন্দ যদিও সবাই মনে করে যে একটু কাঁচা কাঁচা থাকে কিন্তু তারপরও আমার অনেক ভালো লাগে তো যাই হোক, অর্ডার করার ২৩ মিনিটের মধ্যেই চলে আসলো আমার কাঙ্খিত স্টেক সাথে ম্যাশ পটেটো ব্রকলি, আমার আবার একটু বদ অভ্যাস আছে স্টেক এর সাথে একটু লেবুর রস না দিলে মানে একটু লেমন লেমন স্মেল না আসলে আমার ভালো লাগে না কারণ মিডিয়াম রেয়ার তো তাই, যদিও ওয়েটার অলরেডি স্টেক এর সাথে এক স্লাইস লেমেন দিয়েছে কিন্তু তারপরও এক স্লাইস লেমন আমার জন্য যথেষ্ট মনে হয় নি আমার কাছে, আরও একটু লেমন চাইলাম ওয়েটার এর কাছে, ওয়েটার খুবই সুন্দর হেসে আমাকে আরো তিন স্লাইস লেমন দিয়ে গেল, খাবার শুরু করার আগেই আমি লেবু টা চিপে চিপে রস গুলো স্টেক এর উপরে ছড়িয়ে দিচ্ছিলাম, আমি জানি অনেকেই স্টেক এর সাথে লেবুর রস পছন্দ করে না, কিন্তু আমার কেন জানি ভালো লাগে ইভেন আমার বউই পছন্দ করে না, আমি যখন এভাবে লেবুর রস ছড়িয়ে দেই তখন ও আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে, যাই হোক, এবার আসি মেইন কথায়!
লেবুর রস গুলো যখন স্টেক ছড়িয়ে যাচ্ছিল গড়িয়ে গড়িয়ে প্লেটে পড়ছিল ঠিক তখনই লেবুর গন্ধটা আমার কানে নাকে এসে লাগে, আর ঠিক তখনই আমি চলে গেলাম আমার অতীতের ২০০৭ সালের একটা সময়ে, বাবার অনিচ্ছাসত্ত্বেও মা মায়ের গলার অনেক ভারী একটা চেইন বিক্রি করে আমাকে একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি করে দেয় ২০০৬ সালে আমি থাকতাম মোহাম্মদপুরে সলিমুল্লাহ রোডে, সবগুলা পাবলিক ইউনিভার্সিটি তে পরীক্ষা দেওয়ার শেষ কোথাও চান্স পায়নি অনেক মন খারাপ করে বাসায় বসে থাকতাম, টিভি দেখতাম না ঠিকভাবে খাইতাম না বিকালে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে যাইতাম না এইসব দেখে মা সহ্য করতে না পেরে আমাকে একদিন বলল তুই কি চাস? আমি বললাম আমার চাচাতো ভাইয়ের মতো আমিও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি তে পড়তে চাই, তিন ভাই বোনের অভাবের সংসারে, মা আমার এমন আবদার শুনে অনেক অবাক অবাক হল কিন্তু তারপরও মা আমাকে তার সর্বত্র দিয়ে ঢাকায় নিয়ে এসে একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি করিয়ে দিলেন..
শুরু হল আমার নতুন জীবন! মেস জীবন!
ছাত্র হিসেবে আমি কখনোই ভালো ছিলাম না, অনেক ভাই ব্রাদাররা সাজেস্ট করল যে তুই টিউশনি কর কিন্তু সেটা আমাকে দিয়ে কখনোই করা হয়ে ওঠেনি, যাই হোক মেইন কথায় আসি, সলিমুল্লা রোড এর পরেই শের শাহ সুরি রোড, সেখানে মসজিদের পাশে ছোট্ট একটা হোটেল ছিল যেখানে রিকশাওয়ালারা সিএনজি ড্রাইভার প্রতিদিন দুপুরে এসে ভাত খেত, আমিও ইউনিভার্সিটি থেকে ক্লাস শেষ করে আসতাম অনেকদিন বাসায় এসে দেখতাম কোন খাবার নাই কারণ যাদের বাজার করার কথা ছিল তারা হয়তো বা বাজার করতে পারেনি কোন কারণে হয়তোবা তাদের পকেটে টাকা ছিল না তো আমি চলে যেতাম সেই দোকানটাতে সেই দোকানটা আবিষ্কার করে আমারই এক বন্ধু রুমমেট শুভ!
সেই দোকানে ২ টাকায় এক প্লেট ভাত পাওয়া যেত এবং ৫ টাকায় ১ পিস পাঙ্গাস মাছ পাওয়া যেত, সাথে ডাল এবং পেঁয়াজ কাঁচামরিচ আর লেবু ছিল ফ্রি!
তো আমি যেটা বলতে চাচ্ছিলাম যে, আমি যখন আমার স্টেকে লেবুর রস টা দিছিলাম সেই লেবুর গন্ধটা আর সেই শের সাহ সুরি রোডের পাঙ্গাস মাছ এর উপর ছড়ানো সেই লেবুর গন্ধটা একই রকম ছিল!
আমি সেই পাঙ্গাস মাছ দিয়ে ভাত খেতে খেতে কখনোই কল্পনা করিনি যে আমি ম্যানহাটানের বুকে সবথেকে ভালো একটা রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে পারব, যাই হোক সব সময় পজিটিভ চিন্তা করতাম, চিন্তা করি, চিন্তা করব এবং আশেপাশে আমার যারা আছেন তাদের সবাইকে একটা কথাই বলবো আপনি জয়ী হয়েই জন্ম নিয়েছেন, আপনি জয়ী হওয়ার জন্যই জন্ম নিয়েছেন, নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন!
এটা আমার সামুতে দ্বিতীয় লেখা আশা করি সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন!!
২| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১০:০৬
আমি পরাজিত যোদ্ধা বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:৩৫
ইসিয়াক বলেছেন: আমিও ২১/২ শের শাহ শুরী রোডে থাকতাম এক সময়। আজ অবশ্য ঠিকানাটা হারিয়ে গেছে জীবনের ঘটনা প্রবাহে।
শুভকামনা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৭:৩৫
ইসিয়াক বলেছেন: অনেক সুন্দর ।
শুভসকাল ।