নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চোখের কোণে জমে থাক, এক ফোঁটা জল- বিষন্নতার চিহ্ন, মুখের কোণে ঝুলে থাকা, এক চিলতে হাসি- ভাল থাকার প্রয়াস।

Prem Devota

পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সম্পাদক

Prem Devota › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবির এখন...

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০৯

সন্ধ্যার ছায়া পরে গেল । রাস্তাঘাটে মানুষের ভিড় বেড়ে গেছে । বাড়ি ফেরার এই সময়টায় ভিড় একটু বেড়ে যায় । আবির সেই ভিড়ের মাঝে হেটে চলছে । তার হাতে জলছে গোল্ড লিফ । তার মাঝে এখন এক টাই ভাবনা কবে সে মারা যাবে ।সুহান মারা গেছে বছর দুইয়েক হল । সুহান তার কাছে অনেক কাজ দিয়ে গেছে, সে কি কাজ গুলো শেষ করতে পারবে । আবির একটু অলস টাইপের ছেলে । ঝুট ঝামেলা সে পছন্দ করেনা । এর জন্য সে বিয়ে করেনি। তার কাছে বিয়ে মানে জীবনকে একটি নির্দৃষ্ট খুটিতে আটকে দেয়া ।

Excuse me...আপনি আবির না । আবির পিছন ফিরে তাকাল । তার বয়সি একজন মেয়ে আবিরকে প্রশ্নটা করল । মেয়েটি উতসুক দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে । আবির মেয়েটিকে চিনবার চেষ্টা করছে । মেয়েটি তাকে আবার ও প্রশ্ন করে উঠল । আবির হাঁ সুচক মাথা নাড়াল ।
কেমন আছেন আপনি?
জি, ভাল ।
আপনি কি আমাকে চিন্তে পেরেছেন ?
না ।
মেয়েটি একটু লজ্জা পেল । সে জোর করে মুখে হাসি এনে বলল- আমার নাম শান্তা । আমি সুহানের বন্ধু ছিলাম । হাসপাতালে আপনি সেই রাতে অনেক খাবার নিয়ে এসেছিলেন । সুহানকে এক প্যাকেট গোল্ড লিফ দিয়েছিলেন ।
আবির শান্তাকে চিন্তে পারল।
আপনি ডাক্তার ছিলেন না?
জি, এখনও আছি ।
আমি একদম দুঃখিত , আসলে আপনাকে চিনা আমার উচিত ছিল । কিছু মনে করবেনা।
তো আপনি কেমন আছেন?
এইতো কোন রকম আরকি । কোথায় যাচ্ছিলেন আপনি ?
কোথাও না, হাটছিলাম । অবশ্য হাটা শেষে বাসায় যাব ।
যদি আপনার তেমন কোন কাজ না থাকে, আমার সাথে একটু বসবেন কি?

আবির শান্তার কথায় রাজি হল । তার তেমন কোন কাজ নেই । বরং এমন এক সুন্দর সন্ধায় এক মুখ চেনা রমনির সাথে বসে এক কাপ চা পান করা উপভোগের ব্যাপার । তারা বসে আছে ধানমন্ডির এক খোলামেলা রেস্তরায় । শান্তা ইচ্ছে ছিল স্টার কাবাবে বসার । কিন্তু আবির আপত্তি জানালে, শান্তা আর বসেনি । শান্তা আবিরের মুখোমুখি বসেছে । আবির কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছেনা, তার বসতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু কেন জানি নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে । সে কখনও মেয়েদের সাথে একাকি গল্প করতে বসেনি । মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় আবির সেটা জানেনা, আবির হাতে গোনা কয়েকজন মেয়ে বাদে কারও সাথে কথা বলতে পারেনা । তাদের মধ্যে সুর, ছন্দা, লোপা আপুর নাম প্রথম সারিতে ওঠে আসে । শান্তা প্রথম শুরু করল, কি খাবেন ?

আবির হঠাৎ খিদে অনুভব করল । তার দুপুর থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি । খালি পেটে অনেক সিগারেট খাওয়া হয়ে গেছে । কিন্তু শান্তার কাছে বলতে ইচ্ছে করছেনা । তার পকেটে ১০ টাকা আছে, প্লান ছিল আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে হেটে হেটে বাসায় ফিরবে । কিন্তু তার মাঝে শান্তার সাথে তার দেখা হয়ে গেল । শান্তা আবার জিজ্ঞাসা করল- কি খাবেন?
আবির লাজ-লজ্জা ভুলে বলল- ফুস্কা খাব,ঝাল আর টক বেশী হবে।
শান্তা অর্ডার দিল। তার একটা হাত গালে, আর একটি হাত টেবিলের উপর । মেয়েটি কপালে সাদা টিপ দিয়েছে । কেন জানি তাকে সুন্দর লাগছে । আচ্ছা আবিরের কি অতিরিক্ত খিদের জালায় চোখের দৃষ্টি ভ্রম হচ্ছে । প্লেটে করে ফুস্কা এল, ফুস্কা গুলোকে পেয়ে যেন পেটের ভিতরের আটকে রাখা বাঘ গুলো হৈ চৈ সুরু করে দিল । তবুও আবির ভদ্রতার খাতিরে খাবারের দিকে হাত বাড়ালোনা । শান্তা তখনও গালে হাত দিয়ে বসে রইল । আবির কি করবে ঠিক বুঝতে পারছেনা । এক দিকে ভদ্রতা নামক আচার-ব্যবহার, অন্য দিকে খিদে । আবির মনে মনে ভাবছে শান্তা কেন চুপ করে বসে আছে । এই মেয়েকি তাকে আর খাওয়ার কথা বলবেনা, শুদু আর একবার বলে দেখুক না; সে বিন্দু মাত্র অপেক্ষা না করে খাওয়া সুরু করে দিবে। আচ্ছা, খাওয়ার পর বিলটা কে দিবে ? আবির একটু ভয় পেতে শুরু করতে লাগল । তার কাছে মনে মনে বলতে লাগল কেন যে এত মানুষের সাথে পরিচয় হয়,আর রাস্তা ঘাটে ধরে বিপথে ফেলে ।
কি হলো শুরু করছেন না কেন ?
আবির এবার খেতে শুরু করল । ফুস্কাগুলো তার কাছে অমৃত মনে হচ্ছে । অনেক দিন পরে সে ফুস্কা খাচ্ছে । ভার্সিটিতে থাকতে তাজমহল রোডের কাদের মামার ফুস্কা কাওয়া হয়েছিল। সুহান বেঁচে থাকতে কয়েকবার অবশ্য আসা হয়েছিল। সে মারা যাবার পর বন্ধ হয়ে গেছে । সুরের খবরও আজকাল নেয়া হয়না, সুদখিনা বেশ বড় হয়ে গেছে। মাস ৬য়েক আগে টি.এস.সি মোড়ে দেখ হয়েছিল । মেয়েটি সুহানের না হলেও সুহানের সাথে থেকে থেকে তার পাগলামি কিছু কিছু শিখেছে । হঠাৎ করে কোথা থেকে এসে ঝাপিয়ে পরে, কাকা বলে চিৎকার করে ওঠল । তারপর জোর করে আইস্ক্রিম কিনে দিল। দুজনে মিলে প্রায় ঘন্টা খানেক আড্ডা মেরেছিলাম। মেয়েটি চলাচলতি পেয়েছে তার মার মত, আর স্বভাবটা পেয়েছে সুহানের মত । ছোট থেকে তার কাছে বড় হয়েছেতো, একটু আধটু স্বভাব পেয়েছে। মেয়েটিকে দেখলে অনেক মায়া হয়। সুহানের জীবনটা সৃষ্টিকরতা কেন এমন করে বানালো । ফুস্কাটা ঝাল হয়েছে,শান্তা পানি মুখে দিল। আবির আরেকটা ফুস্কা হাতে নিয়ে হঠাৎ বলে ওঠল, সুহান হলে এতক্ষনে সব ফুস্কা খেয়ে ফেলত তবুও পানি খেত না। ও প্রচন্ড ঝাল খেতে পারে।
শান্তা বলল, খেতে পারেনা ;পারত।
আবির নিজের অজান্তে চোখ দিয়ে দুফোটা পানি ফেলল।

###

ঘুম আসছেনা আবিরের। আজ সুহানের কথা তার খুব বেশি মনে পরছে । আবির বিছানা থেকে ওঠে বসল । দরজা খুলে রাস্তায় বের হল। রাত বারোটা বাজে, মানুষজন রাস্তায় খুব কম। পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে সে ধরাল। লম্বা একটা টান দিয়ে সে বলল, কিরে সুহান সিগারেট খাবি? শালা কত দিন হল আমার থেকে নিয়ে সিগারেট খাস না । আরেকটা টান দিয়ে বলল, হে সতেজ বন্ধু এটা তোর কথা মনে করে দিলাম। শুনলাম তুই নাকি ব্যাংকার হয়েছিস। আজাদ সাহেবের পোলা,অবশেষে বাপের মান সম্মান রেখেছিস। একদিন আসবো তোকে দেখতে । বিয়ে শাদী করেছিস নাকি বেন্ধার মত অফিসে যাস আর আহছ।

আবিরের যখন ঘুম ভাঙল, তখন সূয পুব আকাশ ছেড়ে মধ্য আকাশে রওনা দিয়েছে। জানালা দিয়ে আলো এসে ঘরের চারপাশ আলোকিত করে দিয়েছে। আবির যে বাসাটাতে থাকে সুহান সেখানে থাকত। এই বাসাটাতে সুর সুহানের সাথে এসে দেখা করত । এখনো সে জানালাটার কাচ ভাঙা আছে। সুহান এই বাসাটা কিনে ফেলেছিল। যে খানে সুর তার পদচ্চাপ রেখেছে,সে পদচ্চাপ সুহান কিনে রেখেছে। শুদু পারেনি সুরকে তার জিবনে কিনে রাখতে। তা কখনও সম্ভব নয়। কারন সুরকে কেও কিনতে পারেনা, সৃষ্টি কর্তা যার জন্য সুর সৃষ্টি করেছে তার জিবনেই সুর বেজে ওঠবে আপন সুরে। এই ঘরটাতে আসবাব পত্র বলতে রয়েছে একটা খাট, একটা টেবিল, দুইটা চেয়ার টেবিল ল্যাম্প, জগ আর গ্লাস। আবির বিছানার ওপর ওঠে বসল। বালিশের পাশ থেকে সিগারেটের প্যাকেট থেকে আবির একটা সিগারেট ধরাল । সকালে সিগারেট না খেলে বাথরুম হয়না তার। তাই ঘুম থেকে ওঠে প্রতিদিন আবির সিগারেট আগে খায়।

আবির বসে আছে পার্কের দক্ষিন দিকের বেঞ্চে, সে সিগারেট হাতে চলে গিয়াছে ২০ বছরের সেই দিন গুলিতে। সেই আড্ডা আর হাসি ঠাট্টার মজার আসর। আবির অনেক দিন আগে একটা হিন্দি সিনেমা দেখে ছিল সিনেমাটির নাম ছিল “ দিল চাতাহে “ । সিনেমা গুলিতে আর বাস্তব জিবনের একটা বিরাট পার্থক্য হল সিনেমাতে একটা সুন্দর সমাধান আছে কিন্তু বাস্তব জিবনে কখনও থাকে আবার কখনো থাকেনা। আবিরের চারিপাশের জীবন যদি একটা গল্প হত কিংবা সিনেমার কাহিনি হত তবে হয়ত এর ও একটা সুন্দর সমাধান হত। সুর হয়ে যেত সুহানের, আর আবির হত একজন সফল ইঞ্জিনিয়ার। বাবা-মার স্বপ্ন পুরন করে সে ও হতে পারত সফল একজন মানুষ। সিগারেটের ধোয়া রিং হয়ে বাতাসে ভেসে যাচ্ছে এই দৃশ্যটা দেখতে আবিরের খুব ভাল লাগছে। মাঝে মাঝে ছোট খাট দৃশ্য আবিরের অবচেতন মনকে আনন্দ দেয়। পকেটে রাখা ফোনটা বেজে ওঠল। অনেক দিন পর ফোন বেজেছে। আবির তাই প্রথমে বুঝে ওঠতে পারেনি।
ভাই , আপনার মোবাইল বাজতেছে। লোকটা আবারো বলল।
আবির পকেট থেকে ফোনটা বের করল। অপরিচিত নাম্বার।
হ্যালো
হ্যালো, আবির।
হু, আপনি কে?
আবির আমি সুর।
ও ! কি খবর তোমার? ভালো আছো?
এইতো, তুমি তো আমাদের কোন খোজ খবর নাওনা। বেচে আছি না মরে গেছি সেই খবর ও তো মানুষ রাখে, তাইনা?
হু তাই, সবাই রাখে। শুধু আমরাই রাখিনা। তবে সবার স্মৃতি মনে ধারন করে একটু একটু করে কষ্ট পাই। এই আরকি। বুঝলে, মায়া জিনিসটা আসলেই খুব খারাপ একটা ব্যাপার। এই জিনিসটা বিধাতা কেন যে মানুষের মন থেকে তুলে নেয়না। হাসি কান্নার মুলে এই মায়া জিনিসটা দ্বায়ী।
হু তুমি ঠিকই বলেছ।
আমরা কবে মিথ্যে বলেছি, বলোত?
বাদ দাও ও সব। এখন বলো তোমার ব্যস্ততা কম আছে কখন?
দোস্ত, আমার ব্যস্ততা কখনও কম নেই? যখন আমার ইচ্ছা হবে আমি নিজে এসে তোমার সাথে দেখা করে যাবো আচ্ছা। এখন বলো আমার মামনি কেমন আছে।?নাহ! বলব না। তুমি নিজে এসে দেখে যাবে।
আচ্ছা আসব। তো ঠিক আছে, এখন রাখি।
আচ্ছা বাই।
আবির স্পষ্টঃ স্বরে উচ্চারন করল সুদখিনা...

দিবামনিটা এই মুহুর্তে মধ্য আকাশে চুপ্টি করে বসে আছে । আবিরের গা বেয়ে ঘাম জরছে । আবিরের খুব আখের রস খেতে ইচ্ছা করছে। প্রচন্ড গরমে আখের রস শরিরের জন্য উপকারি । শুদু আখের রস না, ডাবের পানিও উপকারি । গরমে শরির থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায় তাই দেহে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। এই সময় গনগন পানি খেলে স্বাস্থ্য ভাল থাকে । আবিরকে এখন আখের রস খেতে হবে ।

টাউন হলে সব সময় দুজন আখ বিক্রেতা থাকে, সেখানে গেলে আখের রস পাওয়া যাবে । আবির মনে মনে উচ্চারন করল অভিযান আখের রস ।

কাগজী লেবুর গন্ধে মন এম্নিতেই ভরে যায়, তার উপর তপ্ত দুপুরে বরফ কুচি দিয়ে আখের রস সাথে কাগজি লেবু মিক্স । রস যেদিক দিয়ে যাচ্ছে যেন মনে হচ্ছে জগতের সমস্ত তৃপ্তি যেন ক্ষনিকের জন্য দেহের উপর ভর করেছে । আবির চোখ বুঝে আরেকটু তৃপ্তি নিবার চেষ্টা করছে । অবশেষে গ্লাস খালি হল । আবির তবুও গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আছে ।

আরেক গ্লাস খাবেন ?
আবির ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল । শান্তাকে আজ সুন্দর লাগছে , শুদু সুন্দর বললে ভুল হবে বেশ লাগছে । শ্যাওলা কালারের শাড়ীতে তাকে খুব মানিয়েছে । কপালে যদি একটা টিপ দিত তবে মনে হয় আর সুন্দর লাগত । শ্যামলা রঙের মেয়েদের এই একটা সুবিধা সাধারন রঙের কিংবা সাধারন সাজে তাদের খুব সুন্দর লাগে । শান্তার ঠোটে এখনও হাসির আভা লেগে আছে । তাকে আজ কেন এত অপূর্ব লাগছে ।
কি বললেন না যে, আরেক গ্লাস কি খাবেন?
আবির এবারো কিছু বল্লনা । সে বুঝতে পারছেনা কি বলা উচিত । আখের রসটা খারাপ ছিল না । আরেক গ্লাস খেলে মন্দ হবেনা ।
আবির শান্তাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি খেয়ে দেখবেন কি একটু?
শান্তা হেসে উঠল , এই হাসির মানে কি হতে পারে আবির বুঝে ওঠতে পারল না। মেয়েরা কত রহস্য প্রিয় হয় আবির বুঝতে পারছে ধীরে ধীরে । মেয়েরা কারনে অকারনে রহস্য করতে বোধ হয় পছন্দ করে ।

শান্তা গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলল, যতটা ঘেন্না নিয়ে খেলাম । আসলে ততটা ঘেন্না নিয়ে না খেলেও পারতাম । জিনিসটা খেতে মজা হয়েছে । আমি আরেক গ্লাস খাব । তুমি কি খাবে ?
আবির লক্ষ্য করল , শান্তা তাকে আপনি থেকে তুমি করে বলছে । তার একবার ইচ্ছে করল শান্তা কে মনে করিয়ে দিতে, ম্যাডাম তুমি নয় আপনি। এটা বললে হয়ত শান্তা লজ্জা পেতে পারে । অবশ্য শান্তা খুব চালাক মেয়ে, হয়ত খুব সহজে ব্যাপারটা ঘুরিয়ে নিবে । সুন্দর মেয়েরা সব কিছুই পারে । সৃষ্টিকর্তা এদের মাঝে সব গুণ দিয়ে দিয়েছে । আচ্ছা সুন্দর মেয়েরা লজ্জা পেলে এদের কেমন লাগে, হয়ত তাদের আরও বেশি সুন্দর লাগে । সুহান একবার বলেছিল , সুর যখন লজ্জা পায়, তখন তাকে খুব সুন্দর লাগে । সুরের নাকের ডগা নাকি লাল হয়ে যায় । আচ্ছা শান্তাকে কি একটু ব্রিব্রত পরিস্তিতিতে ফেলা যায় ।
শান্তা তোমাকে সুন্দর লাগছে । কপালে একটা টিপ থাকলে হয়ত আজ আমি চোখ ফেরাতে পারতুম না । ইউ আর লুকিং সো কিউট । ইংরেজীটা বলে আবির ভাবল, সে কি ঠিক মত বলতে পেরেছে ।
শান্তা লজ্জা পেল কিনা বোঝা যায়নি । তবে আরেক গ্লাস রস খাওয়া হল । রস খাওয়া শেষ করে শান্তা বলল, চলুন ঘুরে আসি ।
কোথায়?
জানিনা ।
শান্তার জানিনা বলার ভঙ্গিটা অদ্ভুত ছিল । কেমন যেন হারিয়ে যাবার ভান ছিল । তার যেন আর কোন পিছু টান নেই । আবির শান্তা কে বলল, এই কড়া দুপুরে হাটতে পারবেন । শান্তা পালটা প্রশ্ন করল, আপনি পারবেন তো ? এর মানে কি আবির জানেনা । তবে সে হাটতে পারবে, এ কথাটা সে শান্তা কে জানিয়ে দিল ।

তারা হাটছে ঢাকার তপ্ত রাজপথ দিয়ে । জিয়া উদ্যানের সামনের রাস্তাতে মরিচিকা দেখা যাচ্ছে । কৃষ্ণচূড়া গাছের উপর অলস কাক অতি কষ্টে ডেকে উঠছে । আবির পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাল । শান্তা পাশ থেকে বলল, তুমি কি জান সিগারেটের ক্ষতিকর দিক ? আবির একবার ঘাড় ঘুরিয়ে শান্তার দিকে তাকাল । আবির জগতের প্রায় সব উপদেশ শোনে । কিন্তু সিগারেট নিয়ে উপদেশ মোটেও পছন্দ করেনা । শান্তা কিছুটা বুঝতে পারল । সে বলল, আমি বুঝতে পারছি কথাটা ভালো লাগেনি । হসপিটালে সুহানের সামনে যখন বলেছিলাম তখনও আপনি আমাকে পাত্তা দেননি ।

আবির এবার খেয়াল করল, শান্তা তাকে আপনি করে বলল । কেন যেন নিজের অজান্তে তার খারাপ লাগল । সে সিগারেটটা টোকা দিয়ে ছুরে ফেলে দিল । তারপর মুখ ভর্তি ধোয়া গুলো আকাশের দিকে তাক করে ছাড়ল । শান্তার কেন যেন ভাল লাগতে লাগল । আবিরের হঠাৎ কর্মকান্ড তার কাছে খুব ভাল লাগে। ছেলেটাকে সে যত অবাক করে দিতে চায়, ততই সে নিজে অবাক হচ্ছে । যেমন আজ সে চেয়েছিল তাকে অবাক করে দিতে, কিন্তু আবির এমন ভাব করল যেন সে শান্তার জন্যই আখের রসের সামনে অপেক্ষা করছিল । আবার যখন সিগারেটের কথা বলা হল তখন সে এমন ভাব করল আমি তোমার কথা শুন্তেই পাইনি , কিন্তু শেষ মেষ সিগারেটটা ফেলে দিল ।

তারা হেটেই চলছে, ধীর গতিতে তারা হেটেই চলছে। এমন মুহুর্ত যেন আর কবু আসবেনা । সেই ভয়কে সামনে রেখে তারা হেটে চলছে । তারা কি কেও জানে একদিন এই মুহুর্ত ভুলে যাবে আপন স্বার্থে ।

...............................(To be continued again) ;)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.