![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পাশে যে ভদ্রলোক শুয়ে আছে তার নাম রহমান। সবাই রহমান সাহেব বলে ডাকে। তিনি বিশেষ কেউ নয় তবু ও তাকে রহমান সাহেব ডাকে। ভদ্রলোক খুব হৃষ্টপুষ্ট।
দূর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্যবশত তার সাথে আমার খাট শেয়ার করে শুতে হয়। শুধু খাট ই না কম্বল ও।
প্রচুর শীত। দুইজনের একটি মাত্র কম্বল। কম্বলটা রহমান সাহেবের একাই লাগে। আমার গায়ের উপর থেকে কম্বলটা সরে যাচ্ছে তার টানাটানিতে। শীতে ঘুমানো যাচ্ছে না।
রহমান সাহেব কে ডেকে তুলবো কি না ভাবছি। ডেকে তুলে কম্বলটা ভাল মতো নিয়ে ঘুমাবো। এই শীতে কম্বল ছাড়া ঘুমানো কল্পনা করা ও পাপ!
মোটা মানুষের ঘুম বেশী। আর রহমান সাহেবের নাক ডাকার স্পষ্ট আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। তাই তাকে ডেকে অযথা গলা ব্যাথা করে লাভ নেই। তার থেকে বরং শীতের রাত টা একটু দেখা যাক।
আমি বিছানা থেকে উঠে মেসের জানালা টা খুললাম। একদম নিচতলায় আমাদের মেস টি। তাই ভাল লাগছে না। জানালাটা খুলে ও না। কিন্তু অদ্ভুত একটা জিনিস খেয়াল করলাম। একটা মানুষের ছায়া! ভূত নয় তো! না ভূতের নাকি ছায়া থাকে না। মানুষ হয় তো।
আমি দরজা খুলে বাহিরে গেলাম। লাইটের আলোতে একটা চিকন চাকন লোক কাধে একটা বস্তা নিয়ে যা পাচ্ছে তা নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তিনি আমাকে দেখেন নাই। টোকাই নাকি চোর?
তবে উনি একটা বালতি রেখে বাকি নেবার মতো তা নিচ্ছিলেন। আমি বললামঃ
- ওই প্লাস্টিকের বালতি টা কার জন্য ফেলে যাচ্ছেন? ওইটা ও নিয়ে যান
লোকটার হাত থেকে বস্তাটা পরে গেল। এপাশ ঘুরে দাড়ালেন। ভয়ে কাঁপতে লাগলেন। বুঝতে পারছি না আমার চেহারা টা কি খুব ভয়ংকর নাকি!
- শীত লাগছে খুব? তাহলে বাসায় চলেন? একটা কম্বলে আপনি আর রহমান সাহেব ঘুমাবেন আর আমি জেগে থাকবো
- ভাইজান আমারে মাফ করে দেন
- কেন?
- আমি এই কাজ জীবনে ও করুম না
- কোন কাজ?
- চুরি
- চুরি মানে!?
- হ ভাইজান, আমি চোর। আপনের আল্লাহ্'র দোহাই আমারে পুলিশে দিয়েন না।
ছোটবেলা চোরের নাম শুনলে ভয়ে আঁতকে উঠতাম। ভাত খেতে না চাইলে আম্মু ভয় দেখিয়ে বলতো "ভাত খাও নয়তো চোর আসবে"। আর আজ একটা চোর আমার সামনে দাড়িয়ে! কিন্তু ভয় পাচ্ছি না! ছোটবেলা আম্মুকে বলতাম, "আচ্ছা আম্মু চোর দেখতে কি রকম? মানুষের মতো?"
সেই প্রশ্নের উত্তর টা পেয়ে গেছি।
লোকটা প্রচন্ড কাঁপছে। শীতে কাঁপছে না। ভয়ে কাঁপছে। আমি তার ভয় দূর করার জন্য বললামঃ
- ভয় নেই। আমি আপনাকে পুলিশে দিবো না
- সত্য কইতাছে?
- হুম,, চুরি করেন কেন?
- অভাবের তাড়নায়। বউ-বাচ্চাদের খাওয়াতে পারি না তাই চুরি করি
- কোন কাজ করতে পারেন না?
- করতাম হোটেলে। চুরির দায়ে বাইর কইরা দিসে। কিন্তু আমি চুরি করি নাই। তহন থেইকা সিদ্ধান্ত নিসি এহন থেইকা চুরি ই করুম
- আর চুরি করবেন না আপনি। চুরি বাদে অন্য কোন কাজ করবেন। অন্য কি কাজ পারেন?
- রিক্সা চালাইতে পারি
- তাহলে তাই করবেন
- আইচ্ছা
- এখন চলে যান। নয়তো কেউ দেখে ফেলবে
- আপনে মানুষ না ভাই ফেরেস্তা
- এসব বললে গুনা হয়। এসব আর বলবেন না
লোকটা বস্তাট রেখে চলে যাচ্ছে। আমি বললামঃ
- বস্তাটা নিয়ে যান
- না ভাই
- আরে নেন। আমি বলসি। সমস্যা নেই। চুরির শেষ স্মৃতি হিসেবে রেখে দিবেন
- না আমি নিতে পারুম না
- তাহলে পুলিশে দিবো
- নিতাছি ভাই নিতাছি
- এবার যান
- স্লামালেকুম ভাই
- ওয়ালাইকুম আসসালাম
লোকটা বস্তাটা আগের মতো কাধে নিয়ে চলে যাচ্ছে। লোকটা পুলিশ কে প্রচন্ড ভয় পায়। পুলিশের মার খেয়েছে হয়তো।
শীত ভালই লাগছে। গরম কাপড় পড়িনি বলে শীতটা ভাল ভাবে উপভোগ করতে পারছি।
একটা অদ্ভুত বিষয় খেয়াল করলাম। সিগারেট ছাড়াই আজ মুখের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের করতে পারছি! অদ্ভুত!
আচ্ছা এখন আমার সাথে তমা থাকলে কি বলতো?
বলতোঃ
-হেমন্ত ভাইয়া আপনি আবার সিগারেট খাচ্ছেন?
আমি বলতাম, "না"। তারপর দেখিয়ে দিতাম যে কিভাবে যেন এটা হচ্ছে। যার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমার জানা নেই।
তারপর তমা বলতো, "একি এতো শীতেও আপনি গরম কাপড় পড়েন নি কেনো? শীত লাগেনা আপনার? আপনার চামড়া কি গন্ডারের চামড়া দিয়ে বানানো? আর কতোবার বলছি এই কালো শার্ট টা আর পড়বেন না?"
তখন আমি বলতাম, "আমার একটাই শার্ট তমা। "
তমা তখন রেগে বলতো,, "উফ্! আপনি আসলেই একটা পেঁচা!"
#অপ্রিয়_প্রিয়
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই জুন, ২০১৫ সকাল ৮:৫৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভালোই| হিমুর ক্লোন