নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ।হাজারো মানুষের ভিড়ে মিশে থাকা একজন।এইতো আমি!

কুর্দি আয়লান

মৃত্যুর জন্য বেঁচে আছি!

কুর্দি আয়লান › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেম যায় যায় হয়ে যায়

২৪ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৫৯

সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস একদমই নেই। বরং সারারাত জেগে শেষ রাতকে রাতের প্রথম প্রহর বানিয়ে সকালকে ঘুমের জন্যে বরাদ্দ রাখাটা বহুদিনের অভ্যেস হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু আজ আমাকে সকালে উঠতেই হবে। কেননা আজ আমার ফার্স্ট জব ভাইভা। অফিস কর্তৃপক্ষ সকাল ৯টায় অফিসে উপস্থিত থাকতে বললেন। মোবাইলে দিয়ে রাখা পর পর তিনটি এলার্মও আমার ঘুম ভাঙ্গাতে সক্ষম হয়নি। সবশেষে প্রাকৃতিক এলার্ম মানে আম্মার ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙ্গলো।

ব্যস্ত হয়ে পড়লাম নিজেকে নিয়ে। ফরমাল শার্টের সাথে ফরমাল প্যান্ট পরে ইন করে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে মনে হলো- বাহ! আমাকে তো একদমই ভদ্রলোক বলে মনে হচ্ছে!

এয়ারপোর্টে ফ্লাইওভার এর নিচে গিয়ে বাসের জন্য দাড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ হল। আজ মনে হচ্ছে ভিড় যেন একটু বেশিই। সকাল সকাল এত্ত মানুষ ঘুম থেকে কিভাবে উঠে এসব ভেবে অবাক হচ্ছি! হালকা রোদের সকালটা এমনিতে অনেক সুন্দর লাগে। কিন্তু আজ আমার সুন্দর লাগছে না। মনেহচ্ছে সময়মত ভাইভা ধরতে পারলেই এখন রাজ্যের কর্ম সাধন হবে।
একটা সময় ভিড় সামলে তুরাগ বাসে করে গন্তব্যে পৌঁছাতে সমর্থ হলাম। অফিসে ঢুকে দেখি নামের সাথে মোবাইল নাম্বারটা লিখে ঢুকতে হয়। পকেটে হাত দিয়ে খোঁজ হলো মোবাইলটা নেই। বাস থেকে চুরি হয়েছে নাকি বাসায় ফেলে আসলাম এই নিয়ে একটু কনফিউসড হয়ে পড়লাম কেননা একবার মনে হচ্ছে মোবাইলটা পকেটে নিয়েছি পরোক্ষণেই মনে হচ্ছে মোবাইল পকেটে নিতে ভুলে গেছি।

যাইহোক, একটা সময় আমার ডাক পড়লো। ডানদিনে হেলানো মাথার চুলগুলোকে হালকা বামদিকে সরিয়ে স্মার্টলি উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করলাম। ভাইবা বোর্ডে তিনজন বসা। আমার সিভিটা হাতে নিয়ে প্রথমেই একজন প্রশ্ন করলেন-
নাম কি আপনার?

বললাম- সিভির উপরে বোল্ড হরফে লেখা তিনটি শব্দের বাক্যটাই আমার নাম।
উত্তরটা ওনাদের পক্ষে খুব একটা সুবিধার হলো বলে মনে হলোনা। তারপর প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন চলতেই থাকলো। আমিও উত্তর দিতে থাকলাম। বের হয়ে খুব একটা আশাবাদী হওয়ার মতো বলে কিছু দিয়ে এসেছি বলে মনে হলোনা। এই নিয়ে অবশ্য খুব একটা হতাশা কাজ করছেনা। আপাতত বাসায় ফিরে বাকি থাকা ঘুমের ২য় পরিচ্ছেদটা কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করতে পারলেই বাঁচি!
আনুমানিক দেড়টা নাগাত অফিস থেকে বের হলাম। ফাল্গুন বাসের একটা টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়েও লাভ হলোনা। বাসের দেখা নেই। টিকিট ফিরত দিয়ে সালসাবিল-এ করেই বাসায় ফেরার চেষ্টা। বাসে উঠে পিছনের দিকে ফাঁকা সিটটাতে বসে মোবাইলটা কি হারিয়ে ফেলেছি নাকি বাসায় রেখে এসেছি এই নিয়ে একটা হালকা টেনশন খেয়ে যাচ্ছি। এমনিতেই সদ্য প্রস্ফুটিত একজন বেকার তার উপর যদি মোবাইলটা হারায়ে যায়!

বাসে উঠে ঘুমানোর অভ্যাস আমার নেই। কিন্তু আজ কি হল জানি না। এসব ভাবতে ভাবতে বাসেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙ্গলো হেল্পারের ডাকে। সে ভাড়ার জন্য ডাকছে। আমি একটা পঞ্চাশ টাকার নোট দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর মনে হল ভাড়া তো পঁচিশ টাকা। হেল্পার ব্যাটা টাকা ফেরত দিল না কেন? আমি এবার পুরুপুরি জেগে উঠলাম। তাকিয়ে দেখি বাস উত্তর বাড্ডা ক্রস করছে। হেল্পারকে ডাক দিলাম। বললাম - মামা বাকি টাকাটা দেও।
:- কিসের টাকা মামা?
: ক্ষিপ্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম- ওই মিয়া উত্তরা থেকে মালিবাগে ভাড়া কত?
:- একজন পঁচিশ টেঁকা করে।
: আমি তো পঞ্চাশ টাকা দিলাম।
:- এক জনের ভাড়া পঁচিশ আর দুই জনের ভাড়া পঞ্চাশ।
: দুইজন মানে?
:- লগে আপামনিরে লইয়া বইয়া রইছেন। আর জিগান দুইজন মানে কি?
আমি প্রথম বারের মত লক্ষ করলাম আমার পাশে একটি মেয়ে বসে আছে। শুধু সে বসেই নেই দিব্যি আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে। পরনে তাহার সাদা শাড়ি। কয়েকটা অবাধ্য চুল বাতাসে উড়ে এসে মেয়েটার গালের উপর পড়েছে। ঘুমন্ত মানুষকে এমনিতেই নিষ্পাপ দেখায়। এমন নিষ্পাপ ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে আর ডাকতে ইচ্ছে হলোনা। ভাবলাম বাস থেকে নামার আগে ওনার কাছেই টাকাটা চেয়ে নিবো।
কিছুক্ষণ পর বাসের আচমকা ব্রেকে মেয়েটি জেগে উঠল। নিজেকে এভাবে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আমিও খানিকটা। একটু সরে গিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে লাগলো। আমার অবশ্য বলতে ইচ্ছে করছিলো- এভাবেই থাক না!
নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে মেয়েটি বলল, সরি। আসলে এক বান্ধবীর বিয়েতে গেছিলাম। সারারাত ঘুম হয়নি। তাই অনিচ্ছাকৃত ভাবে কখন যে ... !

আমি কি বলবো বুঝে উঠতে না পেরে বললাম- না। ইটস ওকে। কিন্তু আমার ভাড়া?
মানে! কিসের ভাড়া? মেয়েটি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। তারপর ব্যাগ থেকে একশো টাকার একটা নোট বের করতে করতে বললো- আপনার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছি বলে ভাড়া চাইছেন?
আমি পুরাই সাকা চৌধুরী হয়ে গেলাম! কি উত্তর দেওয়া যায় এমন প্রশ্নের?
আমি না রেগে গিয়ে এমন বোকামি দেখে মেয়েটাকে ঘটনা ব্যাখ্যা করলাম। মেয়েটা লজ্জা পেয়ে হাসলো। ব্যাগ থেকে একশ টাকার একটা নোট বের করে দিয়ে বললো- নিন আপনার টাকা। আমি বললাম- আমার কাছে তো ভাংতি নেই। বললো আপনার মোবাইল নাম্বার দেন। ফ্লেক্সি করে শোধ দিয়ে দিবো।
বললাম- মোবাইলও নেই। সম্ভবত চুরি হয়ে গেছে। না হলে বাসায় আছে।
এমন আচরনে মেয়েটি বিরক্ত হয়ে উঠলো বলা যায়। আমাকে জানালো রামপুরা ব্রিজের সামনে সে নামবে।
কিন্তু আমি কোথায় নামবো?
রামপুরা ব্রিজের সামনে এসে বাস থামাতেই মেয়েটি বাস থেকে নামতে প্রস্তুত হলো। আমি বললাম- এখানেই নামবেন?
:- হুম।
: ওহ আচ্ছা। আমিও নামবো।
যদিও আমার গন্তব্যস্থল কোনভাবেই রাম্পুরা ব্রিজ ছিলোনা। তবুও সঞ্জিব চৌধুরীর ‘রিকশা কেন আস্তে চলেনা’ গান আমার আগেই শুনা...তাই রিস্ক নেয়া যাবেনা। মেয়েটির সাথে করে নেমে গেলাম।
পাশে একটা ফুটপাতের দোকানী থেকে টাকা ভাঙ্গানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু দোকানি ভাঙ্গতি দিলোনা। মনে হলো- এমন উপকারে দোকানীকে আরো পঁচিশটা টাকা দিয়ে আসি।
ব্রিজ পার হয়ে হাতির ঝিলের পাশটাতে দাঁড়িয়ে বললাম- আপনার টাকা দেওয়া লাগবেনা। ইটস ওকে।
মেয়েটি বললো- না না। তা কি করে হয়?
বললাম- খুব করে ইচ্ছে করছে দিতে?
মেয়েটি সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালো।
বললাম- তাহলে আপনি এক কাজ করুন। আপনি একশ টাকার নোটটা আমাকে দিয়ে দেন। আমি বাকি ৭৫ টাকা আপনাকে ফ্লেক্সি করে দিবো। আপনার নাম্বারটা কাগজে লিখে দিন ...।।
মেয়েটি বললো- মোবাইল নাম্বার নেওয়ার ধান্ধা?
সরল ভঙ্গিতে বললাম- হুম্ম।

মেয়েটি তাকালো বড় বড় চোখ নিয়ে। চোখের দিকে তাকিয়ে বললো- হ্যালো, আমি সুপ্তী। পদার্থ বিদ্যার ছাত্রী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আমি হাসি দিয়ে বললাম- হাই। আমি অর্ঘ্য। সদ্য প্রস্ফুটিত বেকার।
পরিচয় পর্ব চলছে......আমরা হেঁটে চলছি। সম্ভবত আপাতত গন্তব্য সামনের ‘টুগেদার কফিশপ’ এর দোকানটি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫

রাসেল রানার মেঘলা আকাশ বলেছেন: Bangla love story ভাইয়া অসম্ভব সুন্দর গল্প ।। কিন্তু গল্পটা যেন শেষ হয়ে হইলো না শেষ ।। যদি পারেন তো পরবর্তীতে কি ঘটেছিল সেটা সেটা পোস্ট করে জানাবেন আশা করি ।

২৪ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:৪৪

কুর্দি আয়লান বলেছেন: কৃতজ্ঞ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.