![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এখন এমন একটি যুগে আমরা অবস্থান করছি, যে যুগের সিংহভাগ মুসলিম ইসলামের বিপরীত কাজে লিপ্ত রয়েছে। তারা দিব্যি ইসলামের বিপরীত কাজ তো করেই যাচ্ছে কিন্তু তাদেরকে ধর্ম বা জাতি হিসেবে পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তারা নিজেদের পরিচয় দেয়- মুসলিম হিসেবে এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বী হিসেবে। অথচ তাদের দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তারা অহরহ ইসলামের বিপরীত কাজ করে যাচ্ছে। তাদের জীবন দর্শন হচ্ছে এরকম- ইসলামে যা হারাম তাদের দৈনন্দিন জীবনে তা হালাল। তারপরেও তারা আল্লাহর ভয় থেকে,আল্লাহর পাকড়াও থেকে, আল্লাহর আযাব থেকে একেবারে টেনশন ফ্রি। যেন তাদের সাথে আল্লাহ্র কোন গোপন চুক্তি হয়েছে। মনে হয় যেন, আল্লাহ্ তাদের চুপি চুপি বলেছেন-তোমারা নিজেদের খেয়াল-খুশি মত জীবন যাপন কর, আমার আদেশ-নিষেধের কোন তোয়াক্কা করোনা, আমি তোমাদের সকল ভুল-ত্রুটি মাফ করে জান্নাতে প্রবেশ করাব।
এই ধরণের ধারনা পোষণ করে ইহুদী-খ্রিষ্টানরা। তারা ভাবে-আমরা হলাম নবী-রাসুলের বংশধর, আমাদের মধ্যে আল্লাহ্ কত নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। আমাদেরকে আল্লাহ্ জান্নাতে পাঠাবেন-ই। আমরা যত অন্যায়-অপরাধই করি না কেন আমাদের সাত খুন মাফ। সেই এই একই ধরণের ধারনা পোষণ করে বর্তমান যুগের মুসলিমরা। তারা ভাবে আমরাও তো সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মাত। আমরা সকল উম্মাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উম্মাত। অতএব আমরাও যত অন্যায়-অপরাধই করি না কেন আমাদেরও সাত খুন মাফ।
কিন্তু সত্যি কথা বলতে তাদের এই ধারনা একেবারেই পথভ্রষ্টতা। এই ভ্রান্ত ধারণার কারনেই ইহুদী-খ্রিষ্টানরা পথভ্রষ্ট এবং তার সাথে সাথে বর্তমান যুগের মুসলিমরা একেবারে পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্র কাছে এই ধরণের ধারণার কোন ভিত্তি নেই। যে কেউ আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনবে এবং ইবাদাত, সৎকর্ম দ্বারা তার ঈমানের প্রমান দিবে সে ব্যক্তি আখিরাতে জান্নাত পাবে আর বাকিরা সব জাহান্নামে পতিত হবে।
মহান আল্লাহ্ বলেছেনঃ “ওরা দাবী করে- ইহুদী অথবা খ্রিষ্টান ব্যাতিত অন্য কেউ জান্নাতে যাবে না। এটা ওদের নিছক মনের বাসনা মাত্র। আপনি(মুহাম্মাদ সাঃ) বলে দিন- তোমরা প্রমান আনায়ন কর, যদি তোমারা তোমাদের দাবীর ব্যাপারে সত্যবাদী হও”। (সুরাবাকারাঃ ১১১)
যেমনটা আল্লাহ্ সুরা বাকারার ১১১ নং আয়াতে বললেন- “এটা তাদের মনের নিছক ধারণা, যদি তোমাদের ধারণায় সত্যবাদী হয় তবে প্রমান দেখাও”। তাহলে এই একই কথা আমি এই যুগের মুসলিমদের বলতে চাই- আপনারা যদি এই ধারণা করেই বসে থাকেন যে- আল্লাহ্র আদেশ-নিষেধের কোন তোয়াক্কা না করলেও আল্লাহ্ আপনাদের সকল ভুল-ত্রুটি মাফ করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, জাহান্নামে আপনারা যাবেন না, এই কথা আপনারা কোথায় পেলেন? এই কথার প্রমান দেখান আমাকে। অন্ততএকটি আয়াত দেখান অথবা একটি হাদিস দেখান, যেখানে বলা হয়েছে-যে কেউ যদি নিজেদের খেয়াল-খুশি মত জীবন যাপন করে, আল্লাহর আদেশ-নিষেধের কোন তোয়াক্কা না করে, সালাত, সিয়াম, হালাল-হারাম, সুদ-ঘুষ, সততা, মিথ্যাচার, ব্যাভিচার আল্লাহ্র সহ যে কোন আদেশের তোয়াক্কা না করে, কোন প্রকার ইবাদাত না করার পরেও আল্লাহ্ তার সব অপরাধ মাফ করে দিয়ে জান্নাত দান করবেন। যদি সত্যি সত্যি নিজেদের খেয়াল-খুশি মত জীবন যাপন করে, আল্লাহর আদেশ-নিষেধের কোন তোয়াক্কা না করে, সালাত, সিয়াম, হালাল-হারাম, সুদ-ঘুষ, সততা, মিথ্যাচার, ব্যাভিচার তোয়াক্কা না করে, কোন প্রকার ইবাদাত না করার পরেও আল্লাহ্ জান্নাত দিয়েই দেন তাহলে আর ইবাদাত করার দরকার কি?
তাহলে যারা ইবাদাত বন্দিগী করে, আল্লাহরআদেশ-নিষেধ মেনে চলে জীবন কাটায় তাদের এত ইবাদাত বন্দিগী করার, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার দরকার কি?
এমনটাই যদি হত তাহলে কেন সাহাবারা এত সংযত জীবন পরিচালনা করেছেন? কেন আগের যুগের লোকেরা এত ভয়-ভীতির সাথে জীবন কাটিয়েছেন? কেন তারা সবসম জাহান্নামের ভয়ে, আল্লাহ্র ভয়ে চিন্তিত থাকতেন?
কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে-
আল্লাহ্ বলেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করছে, সৎকর্ম করেছে তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে পুরষ্কার। তার কোন ভয় নেই, সে চিন্তিতও হবে না। (সুরাবাকারাঃ ১১২)
কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহ্র কাছে সমর্পণ করে না। পাপ কাজ করতেই থাকে সে মৃত্যুর পর ক্ষমা পাওয়ার আশা করতে পারেনা।
এই ধরণের ব্যক্তির জন্য আল্লাহ্ বলেছেনঃ "আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা পাপ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে, আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।" (সুরাআন নিসাঃ ১৮)
সুরা বাকারার ১১২ নং আয়াতটি একটু ভাল করে লক্ষ্য করুন- এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন- যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করছে, সৎকর্ম করেছে তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে পুরষ্কার। তার কোন ভয় নেই, সে চিন্তিতও হবে না।
এই আয়াতে বলা হয়েছে- প্রথমে নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহ্র নিকট সমর্পণ করতে হবে এবং অবশ্যই সৎকর্ম করতে হবে তবেই কেবল মুক্তি পাওয়া যাবে, সৎকর্ম না করলে কোন উপায় নেই। সৎকর্ম অবশ্যই করতে হবে। যদি সৎকর্ম করে তবেই কেবল হাশরের মাঠে তার কোন ভয় থাকবে না, সে আল্লাহ্র কাছে পুরস্কৃত হবে। সৎ আমল করতেই হবে। অনেকেই মনে করে শুধু ঈমান থাকলেই জান্নাতে যাওয়া যাবে। এ কারনে আজ তারা ইসলাম বিমুখী। কিন্তু তাদের এই ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত। যারা ধারণা করেন যে- শুধু ঈমান থাকলেই জান্নাতে যাওয়া যাবে”, তারা আমাকে একটি আয়াত দেখান যেখানে আল্লাহ্ বলেছেন- “ শুধু ঈমান থাকলেই আমি তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাব”। বস্তুত আল্লাহ্ বলেছেন- ঈমান আনতে হবে এবং সৎকর্ম করতে হবে।
সুরা বাকারার-১২২ নং আয়াতে, সুরা আত-তীন এর- ৬ নং আয়াতে, সুরা আসরের- ৩ নং আয়াতে এছাড়াও আরো বহু আয়াতে আল্লাহ্ এ কথাবলেছে যে- “ঈমান আনতে হবে এবং সৎকর্ম করতে হবে”।
এছাড়া সুরা আনকাবুত আয়াতঃ ২-এ আল্লাহ্ বলেছেন- " মানুষ কি ভেবে রেখেছে যে, তারা শুধু এ কথা বলেই পার পেয়ে যাবে যে, আমরা ঈমান এনেছি"।
এরপরেও যারা এই ধারণা করে বসে থাকে যে আমি তো ঈমান এনেছি তাই আমাকে জাহান্নামে পাঠানো হবে না। বিচারের মাঠে আমাকে আমার রাসুল (সাঃ) সুপারিশ করে বাচিয়ে দিবেন।
তাদের এই ধারনাও একেবারে ভুল। বিচারেরমাঠে একমাত্র যা কাজে আসবে তা হল নিজের সৎ আমল। সৎ আমল থাকলে তবেই রাসুল (সাঃ) তার সুপারিশ করতে পারবেন।
আল্লাহ্ বলেছেনঃ "তোমরা ভয় কর সেদিনকে, যে দিন এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি বিন্দুমাত্র উপকৃত হবে না, কারও কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না, কার ও সুপারিশ ফলপ্রদ হবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্তও হবে না"। (সুরা বাকারাঃ ১২৩)
মহান আল্লাহ্ আরো বলেনঃ “এমন কে আছে যে তাঁর (আল্লাহ্র) কাছেসুপারিশ করে তাঁর (আল্লাহ্র) অনুমতি ছাড়া”। (সুরা বাকারাঃ ২৫৫)
এই আয়াত একেবারে সুস্পষ্টভাবে প্রমান করে যে- নাবী (সাঃ) আল্লাহ্র অনুমতি ব্যতিত আল্লাহ্র কাছে সুপারিশ করতে পারবে না।
সৎ আমল না থাকলে রাসুল (সাঃ) তার কোন কাজে আসবেন না।
আল্লাহ্ বলেছেনঃ "নিশ্চয় আমি আপনাকে (মুহাম্মাদ সাঃ) সত্যধর্ম সহ সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে পাঠিয়েছি। আপনি দোযখবাসীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন না"। (সুরা বাকারাঃ ১১৯)
এই আয়াত দ্বারা আরো স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে যারা দোযখে যাবে তাদের সাথে রাসুল (সাঃ) এর কোন লেন-দেন নেই।
মহান আল্লাহ্ মুহাম্মাদ (সাঃ)কে সত্যধর্ম সহ এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সেই সত্য বানী গুলো পবিত্র কুরআনে ১৪০০ বছর ধরে লিপিবদ্ধ রয়েছে, কিন্তু কেউ তা খুলেও দেখে না, বোঝার চেষ্টাও করেনা। শুধু নিছক ধারণা আর অনুমানের ভিত্তিতে জীবন কাটিয়ে অতঃপর কবরে উপনীত হয়।
আল্লাহ্ বলেছেনঃ "আর যদি তুমি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নাও, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করে দেবে। তারা শুধু নিছক ধারণার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে। (সুরা আন'আমঃ ১১৬)
অতএব এই অনুমান ভিত্তিক জীবন যাপন বাদ দিয়ে অবশ্যই অবশ্যই আগে থেকেই সৎ আমল করে পাঠাতেহবে। তবেই বিচারের মাঠে কোন ভয় থাকবে না।
যেমন টা আল্লাহ্ বলেছেনঃ “তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্যে পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছে মজুদ পাবে। তোমরা যা কিছু কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন। (সুরা বাকারাঃ ১১০)
"সেদিন সে বলবেঃ হায়, এ জীবনের জন্যে আমি যদি কিছু অগ্রে প্রেরণ করতাম!" (সুরা ফাজরঃ ২৪)
"যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সমর্পন করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও বটে তার জন্য তার পালনকর্তার কাছে পুরস্কার রয়েছে। তাদের ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।" (সুরা বাকারাঃ ১১২)
বর্তমান মুসলিমদের এই ভ্রান্ত ধারণার মুলকারন হচ্ছে তারা আজ কুরআন-সুন্নাহ থেকে অনেক দূরে। তারা এই কুরআন পড়ে দেখেই না যেআসলে কাল-কিয়ামতে কি পরিণতি হবে। কেউ কেউ যদিও কুরআন পড়ে শুধু রমযান মাসে তাও আবারনা বুঝে। কিন্তু আমাদেরকে বুঝতে হবে যে আল্লাহ্ আমাদের প্রতি কি বার্তাপাঠিয়েছেন। এই কুরআন চুমু দিয়ে তাকের উপর উঠিয়ে রাখার বস্তু নয়। এই কুরআন হচ্ছে একটি জীবন বিধান। জীবনের সর্বক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন থাকতে হবে। যদি আমরা এই কুরআন-সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে জীবন পরিচালনা করিতবেই আমরা সঠিক পথে থাকব, জান্নাতের পথে থাকব। আর যদি এই কুরআন-সুন্নাহকে আঁকড়ে না ধরেই নিছক ধারণা ও অনুমানের ভিত্তিতে জীবন পরিচালনা করি তবে হব পথভ্রষ্ট। তবে জাহান্নামের পথে পরিচালিত হতে থাকব।
যেমনটি রাসুল (সাঃ) বলেছেন- “তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস ছেড় যাচ্ছি; তা যদি তোমরা শক্তভাবে ধারণ কর, তবে কোন দিন পথভ্রষ্ট হবে না; আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ’’। (মুয়াত্তা মালিক , মেশকাত ১ম/হাঃ ১১৭)
রাসুল (সাঃ) বললেন কুরআন-সুন্নাহকে আঁকড়ে না ধরলে পথভ্রষ্ট হয়ে যাব। আর পথভ্রষ্ট হলে তো জাহান্নামে যেতেই হবে তারপরেও বর্তমান যুগের মুসলিমরা কুরআন-সুন্নাহর ধার ধারে না।
এই কারনেই তারা মুখে তো দাবি করে যে আমরা মুসলিম কিন্তু কাজ-কর্মে সবই ইসলামের বিপরীত। এই মুসলিমরা এমন ভাবে তাদের জীবনযাপন করে- ইসলামে যা হারাম তাদের দৈনন্দিন জীবনে তা হালাল।
এ কারনেই তারা নামজ-রোজার ধারে-কাছেও ঘেঁষে না কিন্তু শুক্রবার আসলে নিজেকে পাক্কা মুমিন-মুসলিম প্রমান করার চেষ্টাচালায়। আর দাবী করে যে আমি ঈমানদার। আমার ঈমান আছে।
তাহলে আসুন এবার নিজের ঈমানটাকে একটু মেপে দেখি,
আবু সাইদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কোন গর্হিত/অন্যায় কাজ
হতে দেখলে সে যেন নিজের হাতে (শক্তি প্রয়োগে) তা সংশোধন করে দেয়, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে তবে যেন মুখ দ্বারা তা সংশোধন করে দেয়, আর যদি তাও না পারে তবে যেন সে ঐ কাজটিকে অন্তর থেকে ঘৃণা করবে। আর এটা হল ঈমানের নিম্নতম স্তর। [সহিহ মুসলিম, ১ম খন্ড,ঈমান অধ্যায়, হাদিস নং ৮১]
এই হাদিসটিকে ভালভাবে খেয়াল করুন- এখানে রাসুল (সাঃ)বললেন যদি কোন কিছুই করতে না পারে তবে যেন মন থেকে ঘৃণা করে। যদি মন থেকে ঘৃণা করেতবে এটা হবে তার ঈমানের নিম্নতম স্তর। এখানে “নিম্ন” শব্দটি ব্যাবহার করা হয়নি বরং “নিম্নতম” শব্দটি ব্যাবহার করা হয়েছে। যারা Grammar এর Degree বুঝেন তারা বুঝতেই পারছেন কোন শব্দের সাথে “তম” শব্দটি যুক্ত হয় একেবারে চরম অবস্থা বুঝাতে।
তাহলে এই হাদিস অনুযায়ী- কোন ঈমানদার যদি কোন অন্যায় কাজের প্রতিবাদে কিছুই করতে না পেরে শুধু মন থেকে ঘৃণা করে তবে তার ঈমানের অবস্থাএকেবারে শেষ স্তরে।
এখন কিছু বাস্তব উদাহরণ দেখুনঃ
আমাদের দেশে যখন হিন্দুদের পূজার উৎসব চলতে থাকে তখন অনেক মুসলিম-ই তাদের ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে। ঐ অনুষ্ঠানে উপভোগ করে। অনেকে উৎসুক ভাবেই যায়। তাদের দেব-দেবীর নামে উৎসর্গকৃত প্রসাদও খায়।
ঐ সমস্ত মুসলিমদের যদি বলি- ভাই হিন্দুদের পূজায় অংশগ্রহন করো না, উৎসুক ভাবেও যেও না, তাদের দেব-দেবীর নামে উৎসর্গকৃত প্রসাদও খেওনা।
তখন তারা উত্তরে খুব বুক ফুলিয়েই বলে- গেসি তো কি হয়েছে? গেলেই কি আমি হিন্দু হয়ে যাব? আমার ঈমান ঠিক আছে।
এখন একটু ভেবে দেখুন,
মূর্তিপূজা হচ্ছে আল্লাহ্র সাথে শির্ক করা। আর শির্কহচ্ছে সবচেয়ে বড় অন্যায়, সবচেয়ে বড় অপরাধ।
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ্র সাথে শির্ক হচ্ছেসবচেয়ে বড় অন্যায়। (সুরা লুকমানঃ ১৩)
আর শির্কের অপরাধ আল্লাহ্ কখনো ক্ষমা করবেন না।
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ "নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী স্থাপন করলে তাকে ক্ষমা করবেন না, কিন্তু এর চেয়ে ছোট পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, এবং যে কেউ আল্লাহর অংশী স্থির করে, সে মহাপাপে আবদ্ধ হয়েছে। (সূরা নিসাঃ ৪৮)।
এখন দেখুন, সবচেয়ে বড় অন্যায় আপনার সামনে হচ্ছে। রাসুল(সাঃ) বললেন- তোমাদের কেউ কোন গর্হিত/অন্যায় কাজ হতে দেখলে সে যেন নিজের হাতে(শক্তি প্রয়োগে) তা সংশোধন করে দেয়, যদিতার সে ক্ষমতা না থাকে তবে যেন মুখ দ্বারা তা সংশোধন করে দেয়, আর যদি তাও না পারে তবে যেন সে ঐ কাজটিকে অন্তর থেকে ঘৃণা করবে। আর এটা হল ঈমানের নিম্নতম স্তর।
অথচ আপনি ঐ অন্যায়কে বাঁধা তো দেনই না, মন থেকেও ঘৃণা করেন না বরং ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে
মনে মনে উপভোগ করেন। অন্তত মন থেকে ঘৃণা করলেও দুর্বলতম ঈমানদার হিসেবে আপনার ঈমান থাকত কিন্তু ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে তাদের অনুষ্ঠান মনে মনে উপভোগ করার পরেও কি আপনি দাবী করবেন যে- আপনার ঈমান ঠিক আছে?
অনেকেই আছে নাচ-গান, নাটক-ফিল্ম ইত্যাদি খুবই উপভোগ করেন।
তাদেরকে আমি জিজ্ঞাস করতে চাই, যখন আপনারা কোন নাটক-ফিল্ম দেখেন তখন সেই ফিল্মে যখন কোন পর পুরুষ কোন পর নারীর সাথে মেলা-মেশা করছে, পরকীয়া করছে, তখন কি তারা আল্লাহ্র আদেশ লঙ্ঘন করছে না? তারা কি অন্যায় করছে না?
তাহলে রাসুল (সাঃ) ঐ হাদিস অনুযায়ী আপনি এই অন্যায় কাজকে বাঁধা তো দিলেন-ই না, মন থেকেও ঘৃণা করলেন না বরং মনে মনে ঐ নারী-পুরুষের মেলা-মেশাকে, একে অপরের অবৈধ স্পর্শকে রোম্যান্টিক বলে উপভোগ করছেন।
তারপরেও কি বলবেন আপনার ঈমান ঠিক আছে?
নামাজের সময় বসে থাকি অথবা ব্যাস্ততা দেখাই, কোন ওয়াক্ত নামায পড়িনা, হারাম সিগারেট খাই। কিন্তু তারপরেও দাবী করি আমার ঈমান ঠিক আছে।
আমি সারাদিন হিন্দি সিরিয়াল দেখি, মুভি দেখি, নাচ-গান তো আছেই, ফিনফিনে/টাইট ফিট কাপড় পড়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াই, সকলে আমার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকায়, দুইটা-তিনটা গার্লফ্রেন্ড-বয়গার্লফ্রেন্ড রাখি, গার্লফ্রেন্ড-বয়গার্লফ্রেন্ড না থাকলেও অন্তত নরমালি মেয়েরা ছেলেদের সাথে অথবা ছেলেরা মেয়েদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ রাখি, বিয়ে-গায়ে হলুদে নাচানাচি করি কিন্তু কিন্তু তারপরেও দাবী করি আমার ঈমান ঠিক আছে।
আপনার ঈমান কি আদৌ ঠিক আছে?
এখনো কি সেটা ভেবে দেখার সময় হয় নি?
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৩৫
বুদ্ধু বলেছেন: ঈমান পরীক্ষার আর একটা নিয়ম হলো: নিজের কোন স্বার্থে আঘাত লাগলে যতটা ক্ষিপ্ত হই ইসলামের স্বার্থে আঘাত লাগলে যদি তার চেয়েও বেশি ক্ষিপ্ত না হই তবে বুঝতে হবে আমার ঈমানই নাই।