![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনকে সাজাতে চাই সুন্দর বাগিচায়... তাই করি যা মনে চায়... live it love it ENJOY it!!
বেশ কিছু দিন ধরে বৃষ্টি পড়ছে। একেবারে ঝুমঝুম করে বৃষ্টি। আকাশের গোমড়া মুখ দেখলে এমনি মন ভারী হয়ে যায়। দুপুরের কড়া রোদের বদলে রিমঝিম বৃষ্টি একেবারে খারাপ না।
জানালার ধারে দাঁড়িয়ে রেলিঙ্গে ভর করে একমনে বৃষ্টি দেখছি। মাঝে মাঝে বৃষ্টির হালকা ছাট এসে লাগছে। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া এসে অনেকখানি ভিজিয়ে দিচ্ছে। আকাশের দিকে একবার তাকালাম। নাহ আজও বৃষ্টি থামবে না। নিচে অনেক ছেলেমেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। ক্যম্পাসের সাত তলা থেকে নিচের মানুষগুলোর আনন্দ দেখে ভালো লাগছে। মনে পড়ল আগের বছরের বৃষ্টির দিনগুলো। এক বছরের মাঝে এতখানি বদলে যাবে সবকিছু ভাবি নি।
নাহ কিছুই তো বদলে যায় নি। সব কিছু নিয়ম মাফিক চলছে। নতুন সেমিস্টার আসছে, পুরোনোরা তাদের জায়গা দিতে চলে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ছেড়ে। আশে পাশের মানুষেরাও আগের মতই তাদের নিয়েই ব্যস্ত আছে। কিছুই বদলায় নি। বদলে গেছি শুধু আমি।
হঠাৎ এক ঝলক বাতাস এসে ভিজিয়ে দিল আমাকে। মুখ থেকে পানির ঝাপটা সরিয়ে উপরে তাকালাম। বৃষ্টির বেগ বেড়ে গেছে। মনে পড়ে গেল আগের কথা… বেশি আগের কথা নয়। মাত্র একটা বছর। কিন্তু এখন যেন মনে হয় বহু দিন আগের কথা।
বৃষ্টিবিলাসের কথা কখনোই ভুলতে পারি না আমি। তার বৃষ্টি মাখা চেহারায় উচ্ছ্বল সেই হাসি, বৃষ্টিতে ভেজা চুল, একসাথে ক্যন্টিনে বসে চা খেয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এক ছাতির নিচে করে যাওয়া…ফেলে আসা দিনগুলো কি এত সহজেই ফেলে আসা যায়? হয়তো যায়, আমার স্মৃতি শক্তি হয়তো অনেক ভালো! তাই এখনো পরিষ্কার সব মনে আছে। হাহা।
ভিজতে ভিজতে কাদা পানি মারিয়ে হাটতে থাকলাম। হাতে তখন জ্বলছে প্রিয় বন্ধু সিগারেট। বৃষ্টির মাঝে টানতে ভালো লাগে, সেই ফিলিংস।
ব্যগে ছাতা আছে সেটা বেড় করতেও ইচ্ছে করল না। আগে হয়তো তুমি বলতে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছিস কেন? জ্বর আসবে তো! অথবা বলতে ছাতিটা দে, আমি ধরে রাখি। অবশ্য এখন আর এসব কেউ খেয়াল করে না। বড়ই বদলে গেছ তুমি। আমি যদি পারতাম নিজেকে বদলে নিতে।
ভাবনা ছিন্ন হল হঠাৎ। কে যেন শার্টের হাতা ধরে টানছে। দেখি এক পিচ্চি মেয়ে। হাতে এক গোছা কদম ফুল।মায়াবী ভরাট দুটি চোখ তার। বিষন্য চোখে তাকিয়ে আছে। একটা ফুল নিবেন?
শুন্য চোখে তাকিয়ে রইলাম কয়েক পলক। বৃষ্টির পানির ফোঁটায় কদমগুলোকে মুক্তোর মত উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে এক গোছা নিলাম। কেন নিলাম জানি না। সব কিছুরই যে অর্থ থাকতে হবে তা না। অর্থহীন কত কাজই না আমরা করি। এক সময় কাগজের ফুল বানাতাম। তোমার কি মনে আছে সেই ফুলগুলোর কথা? ছোট্র নীল আর কমলা দুটি ফুল? নাকি সেগুলোও ঝরে গেছে আমার মত করে…।
দিগন্তের পথে হেটে চলি একা। আমার এ পথ যেন আর ফুরোয় না। হয়তো এই চোখ ক্লান্ত হয়ে এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে। স্তব্ধ হয়ে যাবে এ হৃদয়। তবে কথা দিচ্ছি একটি ছবি কখনো হারাবে না শেষ সময় পর্যন্ত। এ যেন ‘দু;খের বিলাসিতা। ও আমার ভালোবাসিনি…অতলে ভালোবাসা তলিয়ে দেখনি…। হে প্রেয়সী, আমার এ পথ চলা থেমে যাবে না… জানি তাতে কিছু আসে যায় না। তবুও… আমি আমার জন্যেই না হয় এমন করি, কেমন?
রবি ঠাকুরের একটি কবিতা আমার অনেক পছন্দের। বর্ষার দিনে ভিজতে ভিজতে গুনগুন করে গাইতে থাকলাম আনমনে…
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায় -
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়।।
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার -
জগতে কেহ যেন নাহি আর।।
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি-অনুভব -
আঁধারে মিশে গেছে আর সব।।
বলিতে ব্যথিবে না নিজ কান,
চমকি উঠিবে না নিজ প্রাণ।
সে কথা আঁখিনীরে মিশিয়া যাবে ধীরে,
বাদলবায়ে তার অবসান -
সে কথা ছেয়ে দিবে দুটি প্রাণ।।
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার!
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার।।
আছে তো তার পরে বারো মাস -
উঠিবে কত কথা, কত হাস।
আসিবে কত লোক, কত-না দুখশোক,
সে কথা কোনখানে পাবে নাশ -
জগৎ চলে যাবে বারো মাস।।
ব্যাকুল বেগে আজি বহে বায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
©somewhere in net ltd.