নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং জগতে প্রথম ঢুকলাম...

জীবনের পথে চলা নবীন এক পথিক...

রাফীদ চৌধুরী

জীবনকে সাজাতে চাই সুন্দর বাগিচায়... তাই করি যা মনে চায়... live it love it ENJOY it!!

রাফীদ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘের কোলে রোদ্দুর হাসে…

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৩

ঘুমটা হঠাৎ করেই ভেঙ্গে গেল। তাকিয়ে দেখি সূর্যটা তখন অনেক উপরে উঠে গেছে। ধরাস করে উঠল বুকটা। হায় হায় ৮ টা থেকে আজ যে জাভা ক্লাশটা ছিল!



ঘড়িতে এখন বাজে সোয়া নয়টা। মনটাই খারাপ হয়ে গেল, ধ্যাত!



প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গত অহনার ফোন পেয়ে। আজকে থেকে এমনটা মনে হয় আর হবে না। মন খারাপ করে উঠে বসলাম। এমনটা না করলেই পারতাম! আহা রে বেচারী!



এখন দেরি হয়ে গেছে কি আর করা। আসতে ধীরে নামলাম। অহনার সাথে প্রথম দেখা হবার ঘটনা মনে পরলে এখনো হাসি পায়। তখন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি সাত দিনও হয় নি। গেইট দিয়ে ঢুকতে যাব ঠিক সেই মুহুর্তে একটা মেয়ে একেবারে সাইকেলের সামনে এসে পড়ল। তাকে বাচাতে গিয়ে সাইকেল নিয়ে উল্টে পড়লাম। কোকাতে কোকাতে উঠে দেখি ধাক্কা লেগে মেয়েটার বই খাতা সব রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে আছে। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, তেড়ে আসে নাকি! মাত্র ১,১ এ পড়ি। এমন কিছু করল না সে। মায়াময় চোখ দিয়ে একবার তাকিয়ে উবু হয়ে বসে বই খাতা গুছালো, আর আমি সাইকেলে ভর দিয়ে তার বই তোলা দেখতে লাগলাম। চলে যাবার সময় আবার তার চোখে চোখ পড়ল, ঘাড়টা একবার কাত করে চলে গেল সে। যেন দোষটা তারই ছিল!



পরের দিন আবার ঘটল আরেক বিপত্তি। লিফটের মাঝে হঠাৎ আবিষ্কার করি অহনাকে। আমার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। কে যেন ধাক্কা মারল আর আমি উড়ে পরলাম তার উপর। শত সরি বলেও পার পাইনি সেদিন। হায় আমার পোড়া কপাল!



অহনার নাম জানলাম তারও অনেক পরে। আর্কিটেকচারের এক বন্ধুর মাধ্যমে জানলাম তার নাম অহনা শারমিন। ১,২ তে পড়ে। ইশ! এক সেমিস্টার সিনিয়র! সমান হলে কি দোষ হত? যাকগে, আমি আমার মতই চলতে লাগলাম… দিন দিন ব্যস্ততা বাড়তে লাগল। পড়ার চাপে আশে পাশে তাকানোর সুযোগটাও রইল না। একদিন ল্যাব রিপোর্ট করতে গেলাম লাইব্রেরীতে। আশে পাশের সব ডেস্ক ফুল হয়ে আছে। একটা সিট অবশেষে পেয়ে বসলাম। হঠাৎ উলটো দিকে বসা মেয়েটাকে পরিচিত মনে হল। আরে এই তো সেই!



হাই অহনা কেমন আছেন?



ভীষণ অবাক আর ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে সেদিন। এতই ভয় পেয়ে গেল যে বইটা পড়ে গেল হাত থেকে।



ভয় পাবেন না! হাসতে হাসতে বইটা তুলে দিয়ে বললাম,

আপনাকে আর ভয় দেখাব না কোন দিন! প্রমিস!



আমার নাম জানলেন কি করে?



এটাতো অনেক সোজা! একই ভার্সিটিতে পড়ি তো আমরা, নাকি?

এভাবে কথা এগিয়ে গেল, সেদিন সে বেশিক্ষণ না বসলেও পরে ধীরে ধীরে হাই হ্যালো চলতে লাগল। ক্যন্টিনে মাঝে মাঝেই দেখা হত। হয়তো কোন দিন আমি খাওয়াতাম না হয় কোন দিন সে খাওয়াতো। কিছুদিনের মাঝেই ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম আমরা। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক ঘুরতে যেতাম। প্রচুর কথা বলতে পারে অহনা। কথার পিঠে কথা… কথা বলতে বলতে কখন যে সময় পেড়িয়ে যেত… আমি তন্ময় হয়ে শুনতাম।



তুই একটা হারামী। আমাকে খালি ভয় দেখাস! হালকা অভিমানের সুরে বলত অহনা।



ভয় না দেখালে কি চলে? আমি হেসে বলতাম। তোকে ভয় দেখিয়েই তো মজা!





মামা নামবেন না?



হঠাৎ ঘোর ভেঙ্গে গেল রিকশাওয়ালার কথা শুনে। কখন যে ভার্সিটিতে চলে এসেছি টেরই পেলাম না। ডিপার্টমেন্টে যেয়ে শুনলাম আজকে আর ক্লাশ হচ্ছে না। বুঝতে পারলাম না কি করব। রাফি আর আমি ক্যন্টিনে যেয়ে বসলাম। অহনাকে দেখতে পেলাম তার বান্ধবীদের মাঝে। অন্যদিন হলে হাত নাড়ত, আজকে পাত্তাও দিল না! বরং গটগট করে চলে গেল।



আচ্ছা ফাজিল তো! পাশ থেকে বলল রাফি। দেখলি ফিরেও তাকালো না!

ওর যায়গায় আমি থাকলেও একই কাজ করতাম, ঠোট উলটে বললাম আমি।

কেন কি করছিস?

তেমন কিছু না… থাপ্পড় মারছি।

মানে???



কাল প্রচুর মেজাজ খারাপ ছিল। স্যারের ঝারি খাবার পর ক্লাশ করতেই পারলাম না। তাই তুচ্ছ কারণে রেগে উঠলাম। অহনা ব্যপারটা বুঝতে পারল না। স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাপারটা নিয়ে মজা করতে লাগল। তুচ্ছ কারণেই থাপ্পড় মেরে বসলাম। যা আর কোন দিনও আমার সামনে আসবি না হতচ্ছাড়া মেয়ে! সাথে সাথে ভুলটা বুঝতে পারলাম। এমনটা করা মোটেও উচিৎ হয় নি!



গালে হাত দিয়ে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে ছিল কয়েক মুহুর্ত। চোখের কোণে পানি জমতে সময় নিল না। ঝড়ের বেগে বেড় হয়ে গেল সে। এর পর থেকে তার ফোনে যতই কল দিচ্ছি ধরছে না।



হঠাৎ প্রাচী ডাকল। অহনার বান্ধবী প্রাচী।

কি ব্যাপার?

তুমি কি করেছ? মেয়েটা কাল থেকে কেদে কেটে মরছে তুমি খবরও নিলা না?

কই? একটু আগেও তো দেখলাম গটগট করে চলে গেল, ফিরেও তাকাল না! আমার আর কি দরকার তার…



প্রাচীর চেহারা দেখে মনে হল আজকে সে থাপ্পড় মেরে বান্ধবীর প্রতিশোধ নিবে।

তুমি একটা হাদারাম! মেয়েটাকে দেখে কিছুই কি বুঝ না? সে কতটা তোমাকে… দাঁড়াও, আজই সব ঠিক করতে হবে। বলে চলে গেল সে।



আমি একটা টেবিল নিয়ে বসে রইলাম। আকাশে হঠাৎ করেই মেঘ জমছে। যে কোন মুহুর্তে বর্ষণ শুরু হয়ে যেতে পারে। আনমনে চায়ের কাপটা নাড়াতে থাকলাম। অহনার কথা মনে পড়ছে। খুব সুন্দর করে হাসতে পারে মেয়েটা। হাসতে হাসতে এক দিকে বেকে যায়। আমার তা খুব ভালো লাগে। অনেক হাসিখুশি একটা মেয়ে। কেন যে তাকে কষ্ট দিলাম। নিজের উপর রাগ হচ্ছে প্রচুর। মোবাইলটা হাতে নিলাম… ফোন দিব কিনা আরেক বার ভাবছি।



এমন সময় দেখলাম প্রাচী অহনাকে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে আসছে। সামনের চেয়ারে তাকে জোর করে বসালো। আড়ষ্ট হয়ে আছে অহনা। মাথা নিচু করে বসে আছে।



তোরা থাক আমি আসছি, রহস্যময় হাসি দিয়ে চলে গেল প্রাচী। অহনা অসহায় চোখে তাকে চলে যেতে দেখল। তাকে ধরে রাখতে পারলে স্বস্থি বোধ করত হয় তো।



নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে অহনা। চোখ তুলে তাকাচ্ছে না। তার চুলগুলো দু পাশে ছড়িয়ে আছে। হালকা বাতাসে তা মৃদু উড়ছে। ওকে দেখে আমিও কেমন আড়ষ্ট হয়ে গেলাম। এ তো আমার সেই অহনা না, এত চুপচাপ, এতটা অভিমানি… বুকের ভেতর কেমন করতে লাগল।



হাই!



ও কিছু বলল না। শুধু একবার কেপে উঠল।

সরি তো! প্লিজ মাফ করে দাও! কখনো এমন করব না!! প্রমিস!



তখনো নিচু হয়ে আছে সে। একটু একটু করে কাপছে।



অস্বস্থিকর নিরব কয়েকটা মুহুর্ত গেল।



আস্তে করে চোখ তুলে তাকাল সে। চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছে। বোঝা গেল অনেক কেদেছে। এখনো তার মায়াময় চোখদুটো দিয়ে পানি পড়ে যাচ্ছে। দু চোখে যেন অভিমান ঝরে পড়ছে।

আর সহ্য হল না আমার। ওর একটা হাত ধরলাম। ও ছাড়িয়ে নিল না। মৃদু চাপ দিয়ে বললাম সত্যি বলছি আর কোন দিন তোমাকে কষ্ট দিব না। বিশ্বাস করো। আস্তে করে চোখের পানি মুছে দিলাম। আরে বোকা মেয়ে, এত কাদলে হয়? মানুষ কি ভাববে? বলতে বলতে তার গালটা টিপে দিলাম।



ফোপাতে লাগল সে। তুই… তুই অনেক খারাপ। টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলল। আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি…

আমি বুঝতে পারছি রে। মাফ করে দে! আমার মনে হচ্ছিল তোকে হারিয়ে ফেলেছি সব সময়ের জন্য। এটা অনেক কষ্টের। তোকে ছাড়া… আর বলতে পারলাম না।। গলার মাঝে কিছু আটলে ধরল যেন।



অপলক চোখে তাকাল সে আমার দিকে। উঠে দাড়াল হঠাৎ করে… আসো আমার সাথে!

এই বৃষ্টির মাঝে কোথায়!!



কোন উত্তর দিল না সে। সামনে এগিয়ে খোলা আকাশের নিচে ভিজতে লাগল একা একা। একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। অহনাকে সাধারণ কোন মেয়ে মনে হচ্ছে না। কোন পরী যেন আকাশ থেকে নেমে এসেছে। অপলক চোখে আমার এক কালের বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি। সে যেন আরো অনেক বেশি কিছু…



পিছনে তাকাল সে। অসাধারণ সে দৃশ্য। তার চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে, মুখে হাসি। গালগুলো লজ্জায় লাল হয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। আমিও পাশে গিয়ে দাড়ালাম। নিজের অজান্তে তার দিকে হাত বাড়ালাম, আলতো করে ধরল সে। আমার কাধের উপর ভর দিয়ে হাটতে থাকল অহনা… সাথে আমিও হাটতে থাকলাম অজানার পথে…।।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:০৭

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: বন্ধুত্ব অতঃপর ভালবাসা। বোঝাপড়াটা চমৎকার হয়। তাছাড়া অহনার মতো মেয়েরা একবার যাকে ভালবাসবে তার জন্য জীবন বিলিয়ে দেবে। সে আপনাকে ভাগ্যবানই বলা যায়।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৩

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: হাহাহা অহনা শুধুমাত্র একটা কল্পিত চরিত্র। বাস্তব জীবনে এমন ঘটা খুবই রেয়ার কেইস :)

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:০৯

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: *সে হিসেবে আপনাকে ভাগ্যবানই বলা যায়।

৩| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৬

স্বপ্ন নীল বলেছেন: কয় জনের কপালে ঝুটে ওমন ভালোবাসা

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২০

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: সেটাই!! /:) /:)

৪| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩২

অস্পিসাস প্রেইস বলেছেন:
আপনার জীবন সঙ্গিনী অহনার মত হোক...............

শুভ কামনা :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.