নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং জগতে প্রথম ঢুকলাম...

জীবনের পথে চলা নবীন এক পথিক...

রাফীদ চৌধুরী

জীবনকে সাজাতে চাই সুন্দর বাগিচায়... তাই করি যা মনে চায়... live it love it ENJOY it!!

রাফীদ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনমনে...(৬)

০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:০৫

খুব সকালে সাধারণত আমি ঘুম থেকে উঠি না, কিন্তু এদিন ব্যাতিক্রম ঘটল! সকাল সকাল রেডি হয়ে নিলাম! সারা দিন অনেক কাজ যাবে। কালকে এতই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে বাসায় এসেই ঘুম! সকালের প্রথম সূর্যের আলো চোখে পড়তে উঠে বসলাম। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে পড়লাম। কাল সারাদিনের কথা মনে পড়ল, মিউজিক ক্লাব, তানিয়ার গান গাওয়া, বাসায় এক সাথে ফেরা… ভালোই গেছে দিনটা!

খুজে খুজে লাল রঙের একটা টি শার্ট বের করলাম… তার উপর সাদা রঙের একটা শার্ট গায়ে চড়ালাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতা গুটাতে থাকলাম শার্টের। লম্বা চুলগুলোকে পেছনে সরিয়ে দিলাম। নাহ দেখতে খারাপ লাগছে না! আনমনে হেসে ফেললাম! ব্যাপারটা ছেলেমানুষির মাঝে পরে যায়! এভাবে আয়নার মাঝে নিজেকে কত দিন দেখি নি! নিজের ভেতর নিজেকে খুজে বেড় করার তাগিদ হয়তো এত দিন পাই নি…

আজ সকালে আমার ক্লাশ আছে। প্রতি সপ্তাহ এই ক্লাশ আমি স্কীপ করি। তার মানে হল বাসায় পরে ঘুমাই, আমার প্রক্সি আমার ফ্রেন্ডরাই দিয়ে দেয়। আজ ঠিক করলাম অনেক দিন পর ভার্সিটি যাব!

হাতঘড়ি আর ক্যাডসের ফিতা বেধে কাধে গিটারের ব্যাগটা চরিয়ে রউনা দিলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে! আজ বেশ ফুরফুরে লাগছে সব কিছু। রাস্তায় বের হতেই ঝিরঝির বাতাস বয়ে গেল, মুচকি হেসে বাস স্টেন্ডে বসে রইলাম…

ঘুম ঘুম চোখে হাই তুলছি, এমন সময় পরিচিত কাউকে এদিক আসতে দেখলাম…

হুম ভুল কিছু দেখছি না। তানিয়াই আসছে। সবুজ আর লাল একটা ড্রেস পরে এসেছে। অনেক দূর থেকে তাই তাকে ফুটে উঠেছে। হাতে বিরাট হারমোনিয়ামের ব্যাগ। কাঠের ভারী বাক্সটা টানতে তার ভারি কষ্ট হচ্ছে, এক দিকে কাত হয়ে আছে। আমার সামনে দিয়ে গেল, খেয়াল করে নি আমাকে।

এই যে!

পেছন থেকে ডাক শুনে ভরকে গেল! পেছনে ফিরে তাকাল। আমাকে দেখে হাসিতে মুখ ভরে গেল।

আরেহ আপনি!

ওদিক কোথায় যাচ্ছো? পাশের খালি যায়গাটা দেখালাম। বসো বাস আসলে তারপর যেও। এই জিনিসটা মনে হচ্ছে অনেক ভারি…

আসলেও ভারি! আমার পাশে ধপ করে বসল সে। ঘন ঘন হাপাচ্ছে। তার দিকে তাকালাম, ক্লান্ত ভংগিটাও অনেক সুন্দর! কি সুন্দর করে লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছে আর সামনে তাকিয়ে আছে! কি কিউট! হাসলাম আমি!

েিি এই মেয়ে! তোমাকে না বলেছি আপনি করে না বলতে!

তাই! আমি তো জানতাম বাসায় আসার পথে তুমি করে বলতে হবে! আর এখন তো বাসা থেকে যাচ্ছি!

তুমি কখনো তুমি করে বলবে না?

আসলে… আবারো অস্বস্থিতে পরে গেল সে। আর আমিও মজা পেলাম। নিচের দিকে তাকিয়ে রইল সে।

কোথায় যাচ্ছো?

ছায়ানটে, ক্লাস আছে।

ভার্সিটিতে ক্লাস নেই?

না আজ সকালে নেই। মাথা নাড়ল।

ও আচ্ছা! এক পায়ের উপর আরেক পা তুলে আরাম করে বসলাম। খোলা শার্ট যেন বাতাসের দাপটে উড়ে যায় প্রায়। টেনে ঠিক করতে হচ্ছে বারবার।

ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। আমার নতুন স্টাইলটা দেখছে…

খুব খারাপ লাগছে? মনমরা হয়ে বললাম।

নাহ! আবারো হাসছে সে।

তাহলে…

হাস্যকর লাগছে! মুখ চাপা দিয়ে হাসছে ও। যেন খুব মজার ব্যাপার!

আচ্ছা তাই না? চোখ রাঙ্গালাম আমি! তুমি হচ্ছ আদিকালের মেয়ে! স্টাইলের কি বুঝো তুমি, হাহ!

হাহাহাহা হেসেই যাচ্ছে সে। না অবশ্য বেশ মানিয়েছে! বলে আবারো হাসতে থাকল।

হাসি অনেক সংক্রামক! কেউ হাসতে থাকলে আপনা আপনি হাসি চলে আসে। তাই নিজের অজান্তে তানিয়ার সাথে হাসিতে যোগ দিলাম। আশে পাশের মানুষ অবাক হয়ে ভাবছে, কী এমন হচ্ছে যে হাসিতে ফেটে পড়ছে ছেলেটা আর মেয়েটা! তখনি ডিসাইড করলাম… আজ তানিয়ার সাথেই ঘুরব!

আচ্ছা তানিয়া, আজকে তুমি ফ্রী আছো?

কী? চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করল সে।

মানে ফ্রী থাকলে… আমিও ওদিকেই যাচ্ছিলাম আর কি! অস্বস্থির সাথে বললাম। প্র্যাকটিস প্যাড ছিল, গীটারের দিকে ইশারা করলাম। ধানমন্ডি ৬ এ। সো… চল এক সাথে যাই…

মাথা কাত করল সে। পুরনো অস্বস্থি ফিরে পেয়েছে তাকে। আমার ইশারা বুঝতে পেরেছে। কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। মাথাটা হেলান দিয়ে দূরের কোথাও হারিয়ে গেল সে…





আজ অন্য রূটের বাস ধরলাম। জিগাতলা বাস স্ট্যান্ডে নামিয়ে দিল বাস। আমি আর তানিয়া নামলাম। এখনো তেমন কথা বলছে না আমার সাথে। মাথা নিচু করে ফলো করতে থাকল আমাকে।

এত চুপ কেন তুমি? হালকা গলায় বললাম।

না তো… এমনি আর কি। বলে হারমোনিয়ামটা তুলল। আমার সাথে সাথে হাটছে। তাকে দেখলাম, বেচারার কষ্ট হচ্ছে হারমোনিয়াম টানতে।

দাও! হাত বাড়ালাম।

কি! চোখ বড় হয়ে গেল আবার।

তোমার হারমোণিয়াম ব্যাগটা দাও আমাকে। তোমার কষ্ট হচ্ছে এটা টানতে। বলে অনুমতির অপেক্ষা না করেই তার ব্যাগটা হাতে নিলাম। খুব অল্প সময়ের জন্য তার হাতের সাথে আমার হাত ছুয়ে গেল…

আর আমার গিটারের ব্যাগটা তুমি নাও!

হাসল সে। পিঠ থেকে গিটারের ব্যাগটা নামিয়ে চার দিক তাকিয়ে দেখল।

এখন আমি গিটারিস্ট!!

হাহা তা বলতে পারো!

মজা লাগছে! হেসে বলল সে। তুমি গিটার বাজাও আর হারমোনিয়াম নিয়ে যাচ্ছ, আর আমি গিটার নিয়ে যাচ্ছি! হাহা!

আসলেই মজার! বলে আলতো করে ধাক্কা দিলাম তাকে। চলো যাই এই জিনিস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে কোমড় বেকে যাবে! পরে সবাই বলবে কুজো বুড়ো কোথাকার এসেছে…কেউ বিয়ে করবে না…

হয়েছে! গাল ফুলালো তানিয়া। চলেন!

ছায়ানটের ভেতর ঢুকলাম। চারদিক নানা রকম ব্যাস্ততা চলছে। গান নাচের আসর যেন! তানিয়াকে ফলো করে এগুতে থাকলাম। একটা বিল্ডিঙ্গের তিন তলায় গেল সে।

আরে তানিয়া! চিকন মেয়ালি গলা শোনা গেল পেছন থেকে। তুই এসেছিস!

ফিরে তাকালাম। চিকন লম্বা এক মেয়ে দৌড়ে এল। সাথে আরো কয়েকজন।

আরে! তুই গীটার নিয়ে কি করছিস? খুবই আশ্চর্য হয়ে গেল সে।

আসলে… খুবই লজ্জিত মনে হল তানিয়াকে। এটা উনার। আমাকে দেখালো।

উহ আচ্ছা! তাই নাকি! তানিয়ার দিকে লুক দিল সে। আগে বলবি না মেহমান নিয়ে আসবি!

সোজা আমার দিকে এগিয়ে এল সে। ভাইয়া, আমি হচ্ছি আনিকা, তানিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড! নিশ্চয় আমার কথা বলেছে সে?

হুম…তাই তো… আমতা আমতা করলাম… যদিও জীবনে তার নামটাও শুনিনি!

আমার হাত থেকে হারমোনিয়াম নিল সে।

তোর সাথে কথা নাই তানিয়া! কোন দিন বললিও না! একেবারে এমন সারপ্রাইজ ই দিলি!

মানে… উনি…

সাগর এরা হচ্ছে আমার রবীন্দ্রসংগীতের টিম। নিশা, তবলায়, আনিকা বিণা, আর নিহিন খঞ্জনিতে, চিনিয়ে দিল আমাকে।

হাই! সবাই এক সাথে আমার দিকে হাত নাড়িয়ে বলল। হেসে ফেললাম, এক ঝলকেই বুঝতে পারলাম এই মেয়েরা অনেক ফ্রেন্ডলি। পালটা হাত নাড়লাম হাই!

তো ভাইয়া আনিকা বলে চলল, তানিয়া যেহেতু গীটার নিয়ে এলো, একটা তো গান শুনাতেই হবে!

তাই? আর আমি যে কাঠের বাক্সটাটেনে নিয়ে আসলাম? পিঠ কুজো…

উফ! তানিয়ার চোখ কটমট দেখে থেমে গেলাম।

গান! কি গান?

যে কোন গান!

অগ্যতা ওদের সাথে বসে পরলাম। আমি গিটার বাজালাম, ওরা গাইলো। আমিও গাইলাম। পরিবেশটা মুহুর্তের মাঝেই ফ্রেন্ডলি হয়ে গেল, যেন কত বছর ধরে তাদের চিনি! শেষে হারমোনিয়াম দিয়ে তানিয়া শুরু করল, তার হারমোনিয়ামের তালে আমি আলতো প্লাকিং বোলালাম। সবার মাঝে থেকেও আমি আর তানিয়া যেন হারিয়ে গেলাম সংগীতের দুনিয়ায়। সে যে স্কেলে উঠছে, আমিও উঠছি। কারো ভুল হলে হেসে ফেটে পরছি আমরা! এক জন আরেক জনের দোষ দিচ্ছি, তোমার জন্যে আমার তাল ছুটে গেছে! হাসতে হাসতে বাকা হয়ে গেলাম আমি! সামনে থেকে টিস্যু ছুড়ে মারলাম তার দিকে। অন্য মেয়েরা মুখ লুকিয়ে হাসল। যেন আনমনে প্রকৃতি খুজে বের করে গেছে আমাদের দু’জনকে…

থ্যাংস তোমাদের সবাইকে! আমি বললাম। অনেক ভালো সময় গেল আজ তোমাদের জন্য। তোমাদের সাথে যেহেতু পরিচয় হল, তোমাদের সবাইকে দাওয়াত দিলাম, আমাদের প্র্যক্টিস প্যাডে। তোমাদের শোনাবো আমাদের মিউজিক…

এটাতো জোস হবে! হাত তালি দিয়ে উঠল নিশা। তানিয়া, আমাদের নিয়ে যাবি কিন্তু!

লম্বা শ্বাস নিল তানিয়া… আচ্ছাহ যাহ! যদি কোন দিন…

হাততালি দিয়ে ফেটে পরল মেয়েরা। আমি তানিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলাম… সেও পালটা হাসি দিল। তার হাস্যজ্জ্বোল চেহারাটা মনের মাঝে গেথে রইল…

আগের পর্ব এই

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.