নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনকে সাজাতে চাই সুন্দর বাগিচায়... তাই করি যা মনে চায়... live it love it ENJOY it!!
পরের দিন সকালে আমি আর রাসেল ভাই রওনা দিলাম বরিশালের দিকে। বাই রোডে যাওয়ার চেয়ে পানি পথে যাওয়াটাই বেশি ইন্টারেস্টিং মনে হল। তাই লনচে করেই বরিশাল গেলাম।
এই কিছুদিন ভালো রকমের ব্যাস্ত থাকতে হল। বরিশালে ফ্যাক্টরি ভিজিট করে রুটিন চেকিং করলাম। সেখানকার মেশিনারিজ আর এমপ্লয়ারদের কন্ডিশান চেক করা… আরো নানা রকম কাজ। সব করে আবার রিপোর্ট রেডি করা… আমি আর রাসেল ভাই পুরো গলতঘর্ম অবস্থায় ফিরে এলাম। জব করার ভূতটা আমার কর্পুরের মত উড়ে যেতে লাগল। কি ভালো ছিল দুপুরে ঘুম থেকে উঠতাম! আয়েশ করে কফি নিয়ে গিটারের প্র্যাকটিসে বসতাম নাহলে ভার্সিটিতে যেয়ে আড্ডা মারতাম। আর এখন! রোদে পুরে ট্যুরিং…
এত হতাশ হয়ো না এখনি! হেসে বলল রাসেল ভাই। তোমাকে পরীক্ষা করতে এখানে পাঠিয়েছেন স্যার! এমনি তোমার কাজতো পার্ট টাইম ডেস্কজব! এসব কখনো তোমার করা লাগবে না।
যাই হোক! ঠোট উল্টালাম… সবে তো শুরু! না জানি আব্বু কি করে এত প্যারা সহ্য করে!
পরের দিন। বরিশাল থেকে বাসায় ফিরে এসেছি ভোর বেলা। দিনে তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে আবার রউনা দিলাম ভার্সিটির দিকে। চোখ খুলে রাখাই দুষ্কর! ক্লাশের পেছনে বসে টানা দু ঘন্টা ঘুমিয়ে নিয়ে কিছুটা হুশ ফিরে পেলাম!
সোহেল মামার টঙ্গে বসে আছি। শোভন চিৎকার জুরালো
তুই জব পাইছিস!! দোস্ত আমাকে ঢুকিয়ে দিস তোদের কোম্পানীতে!
কোম্পানি কি আমার বাপের নাকি! টিটকারি দিলাম!
লিটারেলি তোর বাপেরই!
স্রাগ করলাম! আব্বু সেখানে জব করেন জাস্ট ইডিয়ট!
আমি তো তোর আব্বুর কথা বলছি না! তুই যখন উপরের পোস্টে চাকরি করবি তখন… আমাকে ঢুকিয়ে দিবি! দেখছিস না সিজিপিএ র কি হাল! এমনি তো কোথাও চেহারা দেখাতে পারবো না…
ব্লা ব্লা ব্লা…
তার চেয়ে আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে! তুড়ি বাজালো জনি! সাগর তুই পার্টি দে!
কিসের পার্টি? বিরক্ত চোখে তাকালাম।
বা রে! জব পেলি আর পার্টি দিবি না? উঠে দাড়ালো সে! সাথে আসে পাশের সবাই। কটমট করে তাকিয়ে আছে। অবস্থা বেগতিক!
হেসে ফেললাম আমি! আরেহ! তোরা বললে পার্টি করবো না! যখন চাবি বাসায় চলে আয়!
উহু মিস্টার! বাসায় না! পার্টি মিন্স পার্টি ।
ঠিক আছে, নিম রাজি হলাম… আব্বুকে বলে দেখি…
বহু দিন পর তানিয়াকে দেখলাম! ক্যান্টিনে একটা টেবিল নিয়ে ঘুমাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন দেখি সামনে দিয়ে চুলের বাহার হেটে যাচ্ছে। পেছন থেকে ডাকলাম, তানিয়া!
ফিরে তাকালো সে। প্রথমে আমাকে দেখে চোখগুলোতে খুশির ঝিলিক বয়ে গেল, কিন্তু সাথে সাথেই যেন বিষাদ নেমে এল সেখানে। ফিরে যাবে নাকি থাকবে দ্বিধার মাঝে পরে গেছে…
কোথায় যাচ্ছো তুমি? উঠে এসে পাশে দাড়ালাম। হালকা স্বরে বললাম কেমন ছিলে এত দিন?
মাথা ঝাকালো সে। কিছু বলল না।
জানো আমার জব হয়েছে! খুশির স্বরে বললাম। বরিশাল যেতে হয়েছিল ফ্যাক্টরি ভিজিটে।
শুনেছি…
তার নিরবতা দেখে অবাক হয়ে গেলাম। কি হয়েছে তোমার?
কিছু না… কিছু বলতে গিয়েও দূরে রাহাকে দেখে থমকে দাড়ালো। আমি যাই!
কোথায় যাচ্ছো? এতদিন পরে দেখা হলো…
সাগর… এই প্রথম সে আমাকে নাম ধরে ডাকল।
এমনটা হয় না… গলাটা কেপে উঠল তার। তোমার ফ্রেন্ডরা তোমার সাথে এত বছর ধরে ছিল… তারাই তোমাকে চায়… তাদের কাছে তুমি বাধ্য… আমি এমন কেউ নই…
কি বলছ তুমি! আশ্চর্য হবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছি আমি।
তোমার ফ্রেন্ডদেরটাই তোমার আগে দেখতে হবে বুঝেছ? তারা তোমার ভালো চায়, তারা যা চায় তাই করবে…
আমি তো তাই করে আসছি… গলার স্বর বেরে গেল আমার।
এমন না… তারা আমাকে চায় না… তোমার ভালোর জন্যই… চোখ ফেটে পানি বেড় হয়ে এল তানিয়ার চোখে। অনেক কষ্টে যেন নিজেকে ধরে রেখেছে সে।
রাহা এসব বাজে কথা বলেছে না? হিসহিস করে উঠলাম। তোমার ব্রেইন ওয়াশ করেছে…
সে যা বলেছে ভালোর জন্য বলেছে।
ভালোর জন্য! চেচিয়ে উঠলাম। রাগে থরথর করে কাপছি আমি। মানুষ যা বোঝে না, তাকেই ভয় করে। আর ভয়কে চাপা দিতে গিয়ে রেগে উঠে। তানিয়ার কথাগুলো শুনে মনের গভীরে তীব্র একটা ভয় ঢুকে গিয়েছিল আনমনেই… তাকে হারাবার ভয়… না পাবার ভয়। তার জন্যেই অবচেতন মনে প্রচন্ড রাগের জন্ম। কার উপরে এই রাগ বুঝতে পারলাম না।
সে আবার ভালোর কি বুঝে? সে কি জানে? যা বলেছে তাই বিশ্বাস করে বসে আছো?
সে সত্যি কথাটাই বলেছে সাগর…
সত্যি না ছাই! তুমি আমাকে…বিশ্বাস করলে না…? মনের গভীর চিড়ে একটা তীব্র ব্যাথার স্রোত নেমে গেল যেন।
সাগর! চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তানিয়া। আশেপাশের অনেকেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
দেখো… নরম গলায় বলল সে। একদিন ঠিকই বুঝতে পারবে… একদিন! আলতো করে কষ্টের একটা হাসি দিয়ে চলে গেল সামনে থেকে। দূরে গিয়ে হয়তো একবার পিছনে ফিরে তাকালো… হয়তো দেখতে পেল আমি তখনো একই যায়গাতে দাড়িয়ে কাপছি…রাগে না হতাশার ভিড়ে… হয়তো …
দু ঘন্টা ঠান্ডা পানিতে ভিজার পর মাথা কিছুটা কাজ করতে লাগল। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে থাকলাম। শেষ বেলার আলো মেঘের মাঝে নানা রঙের খেলা জুরে দিয়েছে। কোন মেঘ হলুদ, কোনটা কমলা… দিগন্তের মাঝে লম্বা লাল রেখা যেন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে গেছে। প্রকৃতির এই নতুন সাজ অনেক ভালো লাগল। কখনো তো খেয়াল করে দেখি নি। বিষন্য মনকে ভালো করে দেবার আশ্চর্য উপায় আছে প্রকৃতির মাঝে।
দ্রুত আলো পরে যেতে থাকল। হাত বাড়িয়ে গীটারটা নিলাম। মাথার মাঝে কিছু লাইন ঘুরছে অনেকক্ষণ ধরে। লাইনগুলোকে গীটারের কর্ডের মাঝে আনা দরকার! লিরিক পুরোপুরি সাজাতে সময় লাগল অনেকক্ষণ। কোন দিকে যে সময় পার হয়ে গেল টের পেলাম না! পুরো গান কম্পোজ করে শেষ করে উঠে দেখি নয়টা বেজে গেছে!
যাই হোক নতুন গানটা হঠাৎ করে মাথায় চলে আসায় উৎফুল্ল বোধ করলাম। লিরিকটা যেন আমার মনের কথাই বলে দিচ্ছে…
কি মনে হতে ফেসবুকে তানিয়ার নাম সার্চ করতে থাকলাম। দেখা যাক তার ফেসবুক আইডি আছে কি না! থাকার তো কথা!
অনেক তানিয়াকেই পাওয়া গেল। ফিল্টার করে সার্চ দিলাম, আমাদের ডিপার্টমেন্ট নির্দিষ্ট করে। অবশেষে অনেক খুজে পাওয়া গেল তাকে!
তানিয়া শারমিন!
লাল রঙের শাড়ি পড়া প্রোফাইল পিকচারটার দিকে তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষণ। বড় করে দেখতে পারলাম না তার কঠিন প্রাইভেসির জন্যে। তার প্রাইভেসি এত স্ট্রং করে রাখা যে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর অপশন পর্যন্ত নেই!
ছবিটার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। শাড়িতে তাকে এতটা মায়াবী লাগবে কল্পনা করিনি! রমনীয় ভাবটা ফুটে উঠেছে, ইচ্ছে করছে যদি ওই মোমেন্টে তাকে পেতাম! ম্যাচ করা লাল চুড়িগুলোতে সাজানো মেহেদি দেয়া হাতটা ধরে যদি বসে থাকতে পারতাম… চিরদিনের জন্যে… ইশ!!!
হঠাৎ কি মনে হল, ড্রপ বক্সে নতুন কম্পোস করা গানটা আপ করে তাকে মেসেজে পাঠালাম।
-দেখো কেমন হয়েছে… মাত্র লিখলাম এবং বানালাম… মনের কথা গানের সুরে প্রতিধ্বনিত হোক… তানিয়া…
অন্ধকার এই রাত্রি মাঝে
তোমার কথা আজ মনে ভাসে
নিঃস্ব চাদের আলো মায়া মাঝে…
নাকি আজ… আধারে
মনে পরে… আমাকে?
বুঝিনা… আমি আজ
কিছুতেই… তোমাকে…
মন বিষন্য হয়ে রইল…অনেকক্ষণ ধরে। যতক্ষণ না সে একটা রিপ্লাই পাঠালো।
-অনেক টাচি… অনেক সুন্দর হয়েছে। অনেক কষ্ট মনের ভেতরে, তাই না? খুবই সরি…।
-ভালো লেগেছে দেখে ভালো লাগল তানিয়া! এখন মনটা একটু হাল্কা লাগছে।
টাইপ করে তাকিয়ে থাকলাম… একটু পর রিপ্লাই আসল…
- হাহা… না অনেক সুন্দর হয়েছে গানটা! ভাবছি মোবাইলে রিংটোন বানাবো! তা আমার ফেসবুক আইডি খুজলে কেন হঠাৎ করে?
-ভালো লাগছিলো না তাই? হয়তো! তোমার ছবি দেখছিলাম এতক্ষণ ধরে… অনেক সুন্দর তুমি! শাড়িতে তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে জানো…?
কিছুক্ষণ নিরবতা। হয়তো বুঝতে পারছে না কি বলবে। আবার লিখা শুরু করলো…
-আমার পিক দেখছিলে এতক্ষণ? কেনো?
-এমনি… কবেকার ছবি এটা?
-গত বছরের পহেলা বৈশাখের ছবি। রবীন্দ্রসংগীতের একটা অনুষ্ঠান ছিল…সেখানে।
বলতে বলতে সে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালো। মনটা খুশিতে ভরে উঠল হঠাৎ করে।
-থ্যাংস!
-কি জন্যে!
-বন্ধু করে নেবার জন্যে!
-তুমি তো অনেক আগে থেকেই বন্ধু ছিলে! বন্ধু করে নিব না কেন? হু!!
-হ্যা শুধু তো তাই ই…
এভাবে সেদিন রাতে অনেক কথা হলো তানিয়ার সাথে। সকালের মন ভারি অবস্থাটা কোন দিকে পালালো
বুঝতেও পারলাম না! যদিও আমিও সকালের প্রসংগ তুলি নি, সেও আর তোলে নি। একটা বাজে প্রায়
তখন তার হুশ হল!
-একটা বাজে! কখন এতক সময় চলে গেল! বাবা দেখলে মেরেই ফেলবে! আমি যাই!
-হাহা… কেন বোর লাগলো অনেক, আমার সাথে কথা বলে? অনেক সময় নষ্ট করে দিয়েছি?
-নাহ! ভালো লেগেছে… সুন্দর কতগুলো স্মাইলি পাঠালো সে!
-আমি আরো কিছুক্ষণ থাকব। বললাম আমি। তোমার সব পিক ঘুরে ঘুরে দেখবো!
-হায় আল্লাহ! তাহলে তো প্রাইভেসি দিতে হয়!
-খবরদার! এই কাজ করবা না!
-হাহা! ঠিক আছে! বাই… ভালো থেকো সাগর…
আর… অন্ধকার রাতে… অবশ্যই মনে পড়বে… অফলাইন হয়ে গেল সে…
আগের পর্ব
©somewhere in net ltd.