নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং জগতে প্রথম ঢুকলাম...

জীবনের পথে চলা নবীন এক পথিক...

রাফীদ চৌধুরী

জীবনকে সাজাতে চাই সুন্দর বাগিচায়... তাই করি যা মনে চায়... live it love it ENJOY it!!

রাফীদ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কসমিক সিম্ফোনি... (সায়েন্স-ফিকশান) পর্ব-১

৩০ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:৫০


মহাকাশযান নরমেন্ডির মিটিং রুমে সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ তাদের সামনের ডিসপ্লে স্ক্রীনে। ছোট বড় নানা রকম ডিসপ্লে বোর্ডে নরমেন্ডির তাপমাত্রা, বায়ুর চাপ, গতিবিধি এসবের নিখুত হিসেব দেয়া আছে। প্রতি মুহূর্তে তা পরিবর্তিত হচ্ছে।

লিও এই অভিযানের দলনেতা। এটা তার দ্বিতীয় অভিযান। প্রথম অভিযানে সিন্ড্রা গ্রহের এককালে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল প্রমাণের পর বিজ্ঞান পরিষদ তাকে দ্বিতীয়বারের মত আরেকটি মিশনে পাঠিয়েছে। অথচ বয়সে সে তেমন বড় না। অন্তত দলনেতা হবার মত নয়। মাত্র পচিশটি বসন্ত পেরিয়েছে সে। এর মাঝে বেশ কিছু বছর কেটে গেছে শুধু মাত্র এক স্পেস স্টেশন থেকে আরেক স্পেস স্টেশনে কাজ কাজ করতে করতেই। পৃথিবী দেখা হয় নি বহু বছর ধরে। মনে মনে সে ভেবে রেখেছে এই মিশনের শেষে বিজ্ঞান পরিষদকে অনুরোধ করবে কয়েকটা দিনের জন্যে তাকে পৃথিবীতে ছুটি কাটাতে সুযোগ দেবার জন্যে।

লিওর সহকারী হচ্ছে জিম। সিড্রা মিশনেও সে একি সাথে ছিল। শক্ত পোক্ত শরীরের অধিকারী জিমকে দেখলেই প্রথমে ইন্টার স্পেস রেঞ্জারদের কেউ বলে ধারণা হতে পারে। খুলি কামড়ে ধরা মিলিটারি ছাটে চুল কাটা জিমকে দেখলে তা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। আসলে সে একজন এটমিক ইঞ্জিনিয়ার। নরমেন্ডির নিউক্লিয়ার রিয়্যাকটরের মেইন্টেইনেন্স করা তার কাজ।

আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো এখানে? অস্বস্থির সাথে জিজ্ঞেস করল ইরা। দশটা অরবিট দেওয়া এর মাঝে শেষ হতে চলল। লিওর দিকে ফিরে বলল ইরা, চিন্তিত ভঙ্গিতে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে সে।

এই নরমেন্ডির একমাত্র জীব বিজ্ঞানী ইরা। তার ই৫৫ ভাইরাসের জীন কোড আবিষ্কার করার মাধ্যমে বিজ্ঞান পরিষদে একজন উঠতি জীব-বিজ্ঞানী হিসেবে নামডাক বেড়ে যায় তার। নীল চোখ আর লম্বা সোনালী চুলের অধিকারী ইরাকে প্রথম দর্শনে দেখলে মোটেও বিজ্ঞানী হিসেবে মনে হয় না। লিও মাঝে মাঝে ভাবে তাকে হয়তো অভিনেত্রী হিসেবে ভালো মানাতো! সে খেয়াল করে দেখেছে ইরা মাঝে মাঝেই বিভিন্ন নাটকের লাইন আবৃত্তি করে বেড়ায়! হয়তো নাটকেই কাজ করার ইচ্ছে ছিল তার! কে জানে?

কিরু২ আঙ্গুল তুলে ডিসপ্লে বোর্ডের দিকে নির্দেশ করল। দেখো সবাই, দেখে তো মনে হয় স্পেসস্টেশনটা একই গতিতে অর্বিট করছে নিজের অক্ষের চারপাশে। কোন অদ্ভুত ব্যাপার তো নেই মনে হচ্ছে।

সবাই তার নির্দেশিত স্পেস স্টেশানটার দিকে তাকালো। পুরোনো আমলের চতুর্থ জেনারেশন এর একটা স্পেসস্টেশন। প্রায় ষাট বছর ধরে এই কন্সটেলেশনে ডেটা সংগ্রহ করে যাচ্ছে। দেখতে বিশাল একটা ব্যারেলের মত। মাঝে একটা সমান ব্যাসের গর্ত আছে যা একেবারে কেন্দ্র পর্যন্ত চলে গেছে। চারপাশে অনেক এন্টেনা বের হয়ে আছে যোগাযোগ মডিউলকে সাহায্য করার জন্য। এখনকার স্পেসস্টেশনে যেটা দেখা যায় না।

কিছু ঘটে না থাকলে তো তৃতীয় মাত্রার সতর্ককারী বীকন নিক্ষেপ করত না তারা! আনমনে অদ্ভুত স্পেসস্টেশনটার দিকে তাকিয়ে থাকল জেনা। এই মহাকাশযানের শেষ অভিযাত্রী। কম্পিউটার প্রোগ্রামিঙ্গে তার দক্ষতার জন্যে বিজ্ঞান একাডেমী বিখ্যাত টরেন পদকে ভূষিত করেছে তাকে। জেনা খুবই কম কথা বলে। একমনে হয়তো দূরের কোন নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে থাকে আর আঙ্গুল মুখে ঢুকিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকে। কেউ যানে না কি নিয়ে সে এত চিন্তা করে। তবে লিও একবার সেন্ট্রাল ডেটাবেসে খবর নিয়ে দেখেছিল জেনার সাথে একটা ঘটনা ঘটার পর থেকে সে এমন চুপচাপ হয়ে গেছে। আগে সে অনেক চনচল ও প্রাণবন্ত মেয়ে হিসেবেই পরিচিত ছিল। কি ঘটনা ঘটেছিল তা জানতে পারে নি লিও। ব্যাপারটা নাকি অনেক গোপনীয়, বিজ্ঞান একাডেমীর কম্পিউটার তাকে অথরাইজ করে নি।

যাই হোক, কি হয়েছে এটাই তো বের করতে এসেছি আমরা নাকি? একটু হাসল লিও। আমার মনে হয়না তেমন কিছু বড় ব্যাপার ঘটেছে। আসলে আদি কালের স্পেস স্টেশান তো! তাই ভুলে কিছু সিগনাল পাঠিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু তা হলে সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে যখন বিজ্ঞান একাডেমী যোগাযোগ করতে চাইলো, তখন তারা কোন প্রকারের সাড়া দিলো না কেন? লিওর কাছে জানতে চাইলো কিরু২।

কিরু২ এর লাল চোখসুলভ সেন্সরের দিকে তাকালো লিও, ঘাড় ঝাকিয়ে স্রাগ করলো। হয়তো তাদের যোগাযোগ মডিউলের সমস্যা ছিল তাই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। যাই হোক আমাদের সর্বোচচ সতর্কতা নিতে হবে। তৃতীয় মাত্রার সতর্ক সংকেত হালকা কিছু না। মহাকাশযান বিপন্ন হবার সম্ভবনা দেখলেও তৃতীয় সংকেত পাঠানো হয় না…

তৃতীয় সংকেত এর মানে কি? সামনে এগিয়ে জিজ্ঞেস করল ইরা।
তৃতীয় সংকেত মানে হল মানবজাতি বিপন্ন হবার মুখে… গম্ভীর সরে জবাব দিল কিরু২।
সবাই তার কপোট্রনের দিকে তাকিয়ে থাকল। তার কথা বিশ্বাস না করার কারণ নেই। কিরু২ দশম প্রজন্মের সেরা রবোট, মানব মনের সকল অনুভূতি দিয়েই তৈরি করা হয়েছে তাকে। এমনকি একটা মানুষের সমান মর্যাদা তাকে দেওয়া হয়েছে। তার মেমোরির মাঝে কি চিন্তা চলছে তা খুলে দেখাও পনচম মাত্রার অপরাধ।

জিম গলা পরিষ্কার করে বলল, তাহলে আমাদের স্যুট আপ হয়ে থাকা উচিৎ। আর ডিফেন্স ম্যাকানিজম আরেকবার চেক করে দেখি…

তার দরকার হবে না। লিও তাকে বাধা দিল। আমি ট্রিনিট্রিকে বলে দিয়েছি আগেই। সে আমাদের এটমিক ব্লাস্টার আর স্পেস টু স্টেশান (এস২এস) টর্পেডো সিস্টেম অনলাইন করে রেখেছে।

শোন সবাই, টেবিলের উপর ভর দিয়ে দাড়ালো লিও। এটা কোন মিলিটারি স্পেস শিপ নয়। আর আমাদের কাজও মিলিটারি এসল্ট নয়। আমরা এখানে কি ঘটেছে তা দেখার জন্যেই এসেছি। বিজ্ঞান একাডেমীও ব্যাপারটা হালকা ভাবেই নিয়েছে। তাই আমরা এখানে কি হয়েছে দেখে রিপোর্ট করেই চলে যাব। যদি কিছু সন্দেহজনক না থাকে…

আর যদি থাকে? ইতস্তত করে বলল ইরা।
থাকলে… তাহলে ব্যাপারটা কি তা আমাদের দেখে আসতে হবে। গলা খাখরি দিয়ে বলল লিও। কিন্তু আমার মনে হয় না এমন কিছু… বিজ্ঞান একাডেমিও…

তাহলে এখনো তারা কেন কোন উত্তর পাঠাচ্ছে না। আচমকা বলল জেনা।
মানে?
মানে আমি এতক্ষণ ধরে তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি তারা কোন জবাব পাঠাচ্ছে না। গম্ভীর হয়ে বলল জেনা।

হতে পারে, অনিশ্চিত ভঙ্গিতে কাধ ঝাকাল লিও। আসলেই তাদের যোগাযোগ মডিওলটা গেছে। শোন! গম্ভীর কণ্ঠে বলল সে। এখন আপাতত স্কেনার আর স্কাউটশীপ পাঠাচ্ছি। তাদের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পরবর্তি পদক্ষেপ কি হবে তা ঠিক করব। এখন যাও সবাই, যতটা পারো বিশ্রাম নাও। ট্রিনিটি, মিটিঙ্গের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হল।

মহাকাশযান নরম্যান্ডির সেন্ট্রাল কম্পিউটার ট্রিনিটি তার উজ্জ্বল বিপ বিপ আওয়াজ তুলে বড় স্কীনটা বন্ধ করে দিল।

( চলবে)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:৩২

Bangladeshi Moinul বলেছেন: ভালো লাগল। তবে সবাই দেখি সায়েন্স ফিকশনে সব চরিত্রের অপরিচিত নাম দেয় যেমন ইরা বা লিও। আমাদের নামের মতন করে আপনার পরবর্তী কোনো সায়েন্স ফিকশনের চরিত্রের অপেক্ষায় রইলাম। যেমন নাম হতে পারে রাফীদ, হিমেল বা অন্য এরকম। তবে এটুকু পড়ে বাকি পর্বগুলো পড়ার আর লোভ সামলাতে পারলাম না। আকর্ষণীয়।

০৭ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৩২

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: আসলে যত সায়েন্স ফিকশনই পড়ে আসছি (বাংলাদেশের ভেতরের প্লটগুলো বাদে) তার বেশিরভাগেই চরিত্রগুলোর নামকরণ অদ্ভুতভাবে করা দেখে আসছি। এর কারণ মনে হয় মহাবিশ্বের ঘটনাগুলো এখনকার সময়ের না বোঝানোর জন্যে এরকম আজব নামকরণ করা হয়! B-) বাংলাদেশের ভেতরের কোন কাহিনী লিখলে অবশ্যই চরিত্রের নামগুলো পরিচিত হবে! :)

গল্প ভালো লেগেছে দেখে ধন্যবাদ! আশা করি পরের পর্বগুলোও পড়বেন! :)

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫২

সাকিন সিকদার (জেন) বলেছেন: অনেক সুন্দর হয়েছে। ভাই!

৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:০২

কালো আগন্তুক বলেছেন: এতদিন পর বেশ আগ্রহ নিয়ে আপনার ফিকশন পড়তে বসলাম। প্রথমে যারা পড়েছিল তাদের পরবর্তি পর্বের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবে আমার করতে হবে না। নিঃসন্দেহে প্লাস পয়েন্ট

২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:২১

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: এখনো শেষ হয় নি, আরো ১৫ পর্বের মত বাকি আছে, কখন লিখবো সময় করে উঠতে পারছিনা। আর এখনকার পর্বগুলোও অনেক বড় হচ্ছে! আশা করি পুরোটা পরে জানাবেন কেমন লাগল! :)

৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৭

নিঃশব্দ গাঙচিল বলেছেন: দারুন লিখেছেন।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:২০

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ, আশা করি সবগুলো পর্বই পড়ে দেখবেন! :)

৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:৩৫

নিঃশব্দ গাঙচিল বলেছেন: প্রথম ২ পর্ব পড়েছি ৩ য় পর্ব পাচ্ছিনা

৬| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:৩৮

নিঃশব্দ গাঙচিল বলেছেন: পেয়েছি

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৯

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: আমার প্রোফাইলে গেলে সিরিয়ালি সব কয়টি পাবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.