নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনকে সাজাতে চাই সুন্দর বাগিচায়... তাই করি যা মনে চায়... live it love it ENJOY it!!
বিজ্ঞান একাডেমির ভাইসরয় ভ্লাদিমির সিরোভ তার অবকাশ কক্ষে বসে আছেন। উজ্জ্বল সব দামী পাথর দিয়ে তার ঘরটা অত্যাধুনিক ডিজাইনে সাজানো। তার কক্ষের পাশের ব্যালকনি থেকে অলিম্পাসের বিশাল গ্লাসওইন্ডোর সারি দেখা যায়। এই ব্যালকনিতে একটা সুইভেল চেয়ারে বসে আছেন তিনি
কাউন্সিলের ট্রায়ালের ঘটনা তার চোখের সামনে ভাসছে। এত বড় একটা অন্যায় করেও কর্নেলিয়াস ঠিকই পার পেয়ে গেল। কিন্তু তিনি আজ নিরুপায়। কাউন্সিলম্যানদেরও হয়তো কিনে রেখেছিল কর্নেলিয়াস, তাই বেশিরভাগই তার পক্ষে ভোট দিল! আজকাল তার কাউন্সিলের মানুষদেরও ভরসা করতে পারেন না তিনি। সবাই স্বার্থপর, সুযোগ সন্ধানী, যেখানে সুবিধা পাবে সেদিকেই তারা ঝাপ দিবে… বিজ্ঞান একাডেমির ভবিষ্যত নিয়ে কেউ আর চিন্তা করে না।
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি, বড় অসহায় তিনি এত ক্ষমতালোভী মানুষের ভিড়ে।
তার কক্ষে প্রবেশ করলো তার বিশস্থ ভৃত্য ফ্লেন। হাতে তার উত্তেজক পানীয়ের পাত্র। আমাকে ডেকেছেন মাস্টার?
হ্যা, এখানে আসো। আমার সামনে বসো। পাশের একটা চেয়ারে ইশারা করলেন।
ইতস্তত করে সেটায় বসে পরল ফ্লেন। পাশের টেবিলে পাত্রটা তুলে রাখল। ভাইসরয়ের চোখ তখন গ্লাসউইন্ডোর বাইরে বিশাল জুপিটারের দিকে। উজ্জ্বল লালচে গ্রহটার বিষুব অঞ্চলের রেড-স্টর্মটা নিজের চারদিকে পাক খাচ্ছে, হাজার বছর ধরে রেড-আইটার ঝড় বয়েই চলছে, থামার কোন লক্ষণ নেই...
তুমি জানো আজকের কাউন্সিলে কি ঘটেছিল?
ইসস্তত করল ফ্লেন, সুপ্রিম কমান্ডারকে ট্রায়ালে আনা হয়েছিল। তিনি ট্রায়ালে জিতে গেছেন।
হ্যা, তা হয়েছে। তুমি জানো সে কি করেছিলো?
আমি যা শুনেছি মাস্টার, তা হলো তিনি কতজন অভিযাত্রীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।
হুম। চুপ করে রইলেন তিনি। আবার মহাকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। বয়স তার হঠাৎ করেই অনেক বেড়ে গেছে। তার তুষাঢ় শুভ্র সাদা চুলগুলো উষ্কোখুষ্কো হয়ে হালকা বাতাসে উড়ছে। তার চেহাড়া দেখে মায়া লাগল ফ্লেনের।
মাস্টার কি হয়েছে? আপনাকে এত বিমর্ষ লাগছে কেন?
খুব অন্যায় হয়ে গেছে, মৃদুকণ্ঠে বললেন ভাইসরয়। নিষ্পাপ কতগুলো মানুষকে মারার চেষ্টা করেছে কর্নেলিয়াস। তারা সবাই পরিস্থিতির স্বীকার ছিলো! তারা তো অপরাধ করে নি, করেছি তো আমরা! ভেঙ্গে পরলেন তিনি।
মাস্টার এভাবে বলবেন না, অসহায় দেখালো ফ্লেনকে। দয়া করুন মাস্টার!
ঠিকই বলছি ফ্লেন। লিও কিংবা জিম, তারা জানতোও না সিন্ড্রাতে কি ঘটেছে এককালে, তারা জানেও না যে তাদের স্মৃতি মুছে দেয়া হয়েছে। অথচ তাদের মারার পক্ষে আজ আমরা ভোট দিয়ে এসেছি! চিন্তা করতে পারো? ইরার আবিষ্কার ই৫৫ ভাইরাস আমরা অনুমোদন করেছি, আমরা ঐ প্রোজেক্টের অর্থ যুগিয়েছি! অথচ তাকে আজ মরতে হবে। জেনাকে আমরা কখনোই তার প্রশ্নের জবাব আমরা দিতে পারি নি। তাকে কখনো বলতে পারি নি আসলে কি ঘটেছিল, অথচ টরেন পদক পাওয়া একজন বিজ্ঞানীকে আমরা আজ মেরে ফেলতে দিধা করি নি। আমার সব যোগ্য কাউন্সিলম্যানরা এক বাক্যে ধূর্ত শেয়ালের কথা মেনে নিয়েছে!
তবে এখনো সময় শেষ হয়ে যায় নি। ফ্লেনের দিকে তাকালেন তিনি। গোপন সূত্রে খবর পেয়েছি যে তারা মারা যায় নি। তোমাকে ডেকেছি এই কারণেই।
বিজ্ঞান একাডেমির চোখের আড়ালে থেকে তোমার এই মিশনটা সম্পন্ন করতে হবে। জোর দিয়ে বললেন তিনি। কাউকে বিশ্বাস করবে না, কেউ জানলেই বিপদ! বিজ্ঞান একাডেমি থেকে শুরু করে সারা বিশ্ব এখন তাদের বিরূদ্ধে লড়বে, তারা আপাতত বেচে গেলেও তাদের উপর থেকে বিপদ সরে যায় নি।
না মাস্টার, ধরা গলায় বলল ফ্লেন। আপনাকে ফেলে আমি কোথাও যাচ্ছি না! অলিম্পাসে হাজারো ষড়যন্ত্রকারী অপেক্ষা করছে সঠিক সময়ের জন্যে! এখন আপনাকে ছেড়ে চলে গেলে…
তোমাকে তাই করতে হবে, এটা আমার আদেশ! জিম ছেলেটাকে কসমিক এন্টিটি ধরে নিয়ে গেছে, তাকে হারানো সারা জীবন আমাকে অপরাধবোধে আক্রান্ত করবে। আমি চাই না বাকি সবারও এই অবস্থা হোক! একটা কিউকার্ড ফ্লেনের হাতে ধরিয়ে দিলেন তিনি। এখানে পর্যাপ্ত ইউনিট আছে যা দ্বারা তুমি অনায়েসে মিশনের জন্য খেয়ালখুশি খরচ করতে পারবে, সবকিছু অফ দ্য রেকর্ড করবে, যেন কেউ কিছু বুঝতে না পারে। মনে রাখবে এখানকার সবাই হচ্ছে তোমার শত্রু। হলোগ্রাফিক ডিসপ্লেতে দুটো জায়গার গ্যালাকটিক পজিশন দেখালেন তিনি। এদুটো জায়গার কো-অর্ডিনেটস মুখস্ত করে নাও। এ জায়গায় তারা বর্তমানে আছে। আর এখানে তুমি তাদের লুকিয়ে রাখবে। ভাইসরয়ের ক্ষমতাবলে আমি জানি এ জায়গাটার কথা, মানব ইতিহাসে আর কেউ জানতে পারবে না।
কয়েক মুহুর্ত হলোগ্রাফিক ডিসপ্লের দিতে তাকিয়ে রইলো ফ্লেন, এরপর বিদায় জানালো ভাইসরয়কে। চোখ ছলছল করছে তার। সামান্য নড করে বের হয়ে এলো ভাইসরয়ের কক্ষটি থেকে।
****
কর্নেলিয়াস আহটামাস এখনো অলিম্পাসের গেস্টহাউজ ব্লকের একটি রুমে বসে আছেন। অফিসিয়াল ডেস্কটার পেছনে পা তুলে সব পরিকল্পনাগুলো গুছিয়ে নিচ্ছেন। এমনসময় দরজায় দেখা গেল একজন দাঁড়িয়ে আছে।
কাউন্সিলম্যান জশোনি! আপনাকে এই সময়ে প্রত্যাশা করি নি। জোর করে মুখে হাসি ফোটালেন সুপ্রিম কমান্ডার।
এই অসময়ে আপনাকে বিরক্ত করার জন্যে ক্ষমা চাইছি, সামান্য নড করল সে কর্নেলিয়াসকে। নিরিগিস স্টেশনে চলে যাওয়ার আগে ভাবলাম একটু দেখা করে যাই! বলতে বলতে তার সামনের আসনে বসে পরল সে।
আপনাদের আজকের এই সাহায্য আমি মনে রাখব, কর্নেলিয়াস শুরু করলেন। বিশেষ করে আপনি যেভাবে কথা উঠালেন তাতেই ট্রায়ালের রায় বদলে গেছে…
এত প্রসংশার দাবীদ্বার আমি হতে পারি না, অমায়িক হাসল জশোনি। আপনি ভালো মতই জানেন ট্রায়ালে কি্ হচ্ছিলো আর আপনি কি বলছিলেন। ইঙ্গিতপূর্ণভাবে থেমে গেল সে।
তীক্ষ্ণ চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন কর্নেলিয়াস। কি চান আপনি আমার কাছে কাউন্সিলম্যান? সরু হয়ে গেছে তার চোখ।
সবাই যা চায়, সামনে ঝুকে এল জশোনি। ক্ষমতা… এবং আভিজাত্য!
তাহলে আপনি ভূল জায়গাতে চলে এসেছেন কাউন্সিলম্যান, মৃদু হাসলেন কর্নেলিয়াস। আপনি যদি নিজেকে নিরিগিস স্টেশনের উপযুক্ত পদে অধিষ্ঠিত করতে চান তাহলে আমি আপনাকে হয়তো সাহায্য করতে পারবো, কিন্তু আপনি কাউন্সিলম্যান, আপনাকে দেখে আমার মনে হচ্ছে না বরফের রাজ্যে ক্ষমতা বা অভিজাত্য খুজতে যাবেন আপনি।
বলুন আমাকে সুপ্রিম কমান্ডার, কর্নেলিয়াসের খোচাটা গায়েই মাখল না জশোনি। একজন সুপ্রিম কমান্ডার বিজ্ঞান একাডেমির জন্যে এতই নিবেদিত মনে করেন যে তার সমস্ত প্রোটকল ভেঙ্গে তার উপর অর্পিত দায়ীত্ব অস্বীকার করে কয়েকজন অভিযাত্রীদের পিছনে ছোটে্ন? এমনকি বিজ্ঞান একাডেমির কাউন্সিলররা নীতিনির্ধারকদের কাজ তিনি নিজে করে দেবেন? বিজ্ঞান একাডেমির মঙ্গলের জন্যে আপনি দশম প্রজাতির রোবট সংগ্রহ করলেন, এন্টিম্যাটার ওয়ারহেড সংগ্রহ করলেন, তৃতীয় মাত্রার বীকন সৃষ্টি করলেন, পুরোনো স্পেসস্টেশন খুজে বের করলেন... এতকিছু সুধুমাত্র বিজ্ঞান একাডেমিকে তার স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা করবার জন্যে? আপনার মহানুভবতার তারিফ করা বিজ্ঞান একাডেমির কর্তব্যের মাঝে পরে।
আপনি কি চান আমার কাছে? গম্ভীর হয়ে গেল কর্নেলিয়াসের কণ্ঠ।
আমি জানি আপনার বিশদ পরিকল্পনা আছে, ফ্যাসফেসে কণ্ঠে বলে উঠল জশোনি। পরিস্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে কতজন উঠতি তরুণকে মারার জন্যে আপনি এই পরিকল্পনাটি সাজাননি। আমাদের দুজনের লক্ষ্যই বিজ্ঞান একাডেমির অন্যদের চেয়ে পুরোপুরি ভিন্ন। আমাদের দুজনের উচিৎ একে অপরকে সাহায্য করা…
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন কর্নেলিয়াস। ভাবছেন জশোনিকে কোন ধরণের প্রয়োজন হতে পারে কি না। তার মত ধূর্ত আর উচ্চাকাংখী লোক সবার জন্যেই বিপদজনক। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা দুজনই একই পথে হাটছেন এবং তার কাউন্সিলের উপর নজরদারি করার জন্যে ভেতরের কাউকে দরকার।
মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললেন তিনি। অবশ্যই আমাদের একযোগে কাজ করা উচিত। তবে নিরাপত্তার খাতিরে আমি অনেক কিছুই বলতে পারবো না, এখান থেকে আপনি যতটুকু পারেন দেখবেন।
অবশ্যই! অমায়িক হাসিটা তার একান ওকান ছুয়ে গেল। অবশ্যই বুঝিতে পারছি আপনার আস্থাভাজন হবার জন্যে আমাকে প্রমাণ করতে হবে আগে। সমস্যা নেই। কিন্তু আমার কতগুলো প্রশ্ন বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, কেন? এই পুরো কাজটা করে আপনার লাভটা কি হলো? আর এতো কিছু থাকতে তৃতীয় মাত্রার বীকন সৃষ্টি করাই যুক্তিসংগত হলো কেন?
কাউন্সিলম্যান আপনার এখনো অনেক কিছু বোঝার বাকি রয়ে গেছে, তাচ্ছিল্যস্বরে জবাব দিলেন তিনি। এটাই আপাতত বলি যে তারা শুধুমাত্র বিজ্ঞান একাডেমির জন্যে বিপদ হয়ে দাড়াচ্ছিল না বরং আমার নিজের গোপনীয় কাজগুলোর জন্যেও বিপদজনক হিসেবে দাড়াচ্ছিল। তাই লাভের আশায় নয় বরং সঙ্কা থেকে বাচার জন্যে আমাকে কাজ করতে হয়েছে…
তৃতীয়মাত্রার বীকনের কারণ হচ্ছে, কোয়ান্টাম সার্ভারে অন্য মিশনগুলো নির্দিষ্ট ফায়ারওয়ালের নীচে নিয়ন্ত্রিত ছিল, তাই ওগুলো হ্যাক করে নতুন মিশনের সৃষ্টি করা যাচ্ছিল না। তৃতীয়মাত্রার বীকন সৃষ্টি একটা রেয়ার কেস, তাই এর পরিবর্তন করা প্রয়োজন মনে করে নি বিজ্ঞান একাডেমি… এরই সুযোগটা কাজে লাগালাম আমরা।
উঠে দাড়ালো জশোনি, সে যা ভেবেছে তা একেবারে ঠিক। এই সুপ্রিম কমান্ডার মারাত্বক সব পরিকল্পনা আটছেন আর তার কাজ হবে আপাতত তার সাথে কাজ করে যাওয়া।
আশা করি আপনার সাথে আবারো কথা হবে আমার সুপ্রিম কমান্ডার, কাউন্সিলম্যানদের ব্যবহৃত চিরায়ত লাল ঢোলা আলখাল্লাটা ঝাড়ল সে। আশা করছি আপনি আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারবেন।
****
নিজের ঘরে ফিরে এলো ফ্লেন। দামী সব কাপড়চোপড় সরিয়ে সাধারণ বনিকদের ব্যবহৃত কিছু কাপড় গোছগাছ করে নিলো সে। হাত কাপছে তার। অলিম্পাসের দেয়ালকে তার কাছে মনে হচ্ছে গুপ্তচরের চোখ! ভাইসরয়ের দেয়া কিউকার্ডটা ব্যবহার করে নিজের নতুন একটা পরিচয় তৈরি করে নিল কোয়ান্টাম সার্ভারে।
তার নাম ফিলিপ লেন, খনিজ গ্যাস সংগ্রহকারি। ভাগ্যন্বেষী এক তরুণ। বিভিন্ন আকরিক গ্রহ থেকে গ্যাস সংগ্রহ করাই তার কাজ!
লোকচক্ষু ফাকি দিয়ে অলিম্পাস থেকে রিক্স বেসস্টেশনে চলে আসলো সে। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মহাকাশযান বণিকদের নিয়ে সোলারসিস্টেমে আসে আর যায়। ডকিং স্টেশনগুলোতে বিভিন্ন গ্রহের লোকে সরাগম থাকে। আলাদাভাবে তাকে সন্দেহ করার জো নেই।
এখানে এসে একটা ট্রান্সপোর্টশীপের টিকেট কেটে নিল সে। কয়েকঘন্টার মাঝেই বারোশো যাত্রী নিয়ে ট্রান্সপোর্টশীপটা রওনা দিল দূরের কোন সোলারসিস্টেমের দিকে। আপাতত অলিম্পাসের চোখ থেকে বহু দূরে চলে আসলো ফ্লেন।
অন্তত তাই ভেবেছিল সে। সবার চোখ ফাকি দিতে পারলেও পৃথিবীর উচ্চভিলাসী ভাইস চ্যান্সেলর ওরিয়নের ভৃত্য ট্রাটোর চোখ ফাকি দিতে পারলো না সে। দশম প্রজাতির রোবট শুরু থেকেই তার সকল গতিবিধি নজরে রাখছিল। তাকে এরিস কন্সটেলেশনের ট্রান্সপোর্টশীপে উঠতে দেখেই ভাইস চ্যান্সেলরকে খবরটা জানালো সে। আপাতত আর কিছু করতে হবে না তার। এরিস কন্সটেলেশনে ট্রান্সপোর্ট শীপটা নামার আগেই তারা সেখানে অবস্থান করবে। আপাতত ফ্লেনের পালাবার কোন জায়গা নেই।
আগের পর্ব
©somewhere in net ltd.