নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তমনা লেখক ও বিজ্ঞান কর্মী, প্রকৃতির ছাত্র !
২০০৯ সালের মাঝামাঝি সময়ের কথা। তখন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ছাত্র আমি। দ্বিতীয়বার ভর্তিপরীক্ষা দিব বলে শুয়ে বসে সময় কাটছে। তবে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ চলছে সমান তালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীর কম্পিউটার রূমে রাতদিন মহাকাশ,মঙ্গলের মাটি,নতুন নভোযানের খবর,নতুন জীব,বিভিন্ন পরিবেশে জীবের বৃদ্ধি প্রভৃতি তথ্য জানতে চেষ্টা। দেখা যেত সকাল ১০টায় বসছি একটানা পাঁচটা পর্যন্ত আছি। নিজের কম্পিউটার ছিল না, লাইব্রেরীর কম্পিউটারে ঘন্টায় ১০ টাকা দিতে হত। যাইহোক বিজ্ঞানের প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ। ভর্তি পরীক্ষার পড়াশোনা লাঠে। ২০০৭ সালে মহাশূণ্য ভ্রমণে সুযোগ পওয়ার পর থেকে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌছে গেছে। চেষ্টা করছিলাম কোন বিজ্ঞান সংগঠনের সাথে কাজ করার জন্য। এর একটি কারণ বিজ্ঞান কাজে সরাসরি যুক্ত হওয়া ও বিশেজ্ঞদের কাছ থেকে নতুন নতুন বিষয় জানা। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে আমার জ্ঞান সামান্য তাই জানার চেষ্টা করা। লেখালেখিতে তখন অনিয়মিত। একদিন সাহস করে বিজ্ঞান নিয়ে একটা ফিচার সমকালে পাঠিয়ে দিলাম। লেখাটা প্রকাশিত হল,পাশাপাশি একটি মেইল এল বিজ্ঞান বক্তৃতা সম্পর্কিত। এখানে ডিসকাশন প্রজেক্ট নামে একটি বিজ্ঞান সংগঠনের ঠিকানা। ভাবলাম একটা সংগঠনের ঠিকানা জানা গেল। দেখি যুক্ত হওয়া যায় কি না। অবশ্য মেইলে দেখলাম আসিফ নামে একজন ব্যক্তি বক্তৃতা দেবেন। এর পূর্বে অনেকের নাম জানলেও মফস্বল শহরে বড় হওয়ায় এই নামটি জানা হয় নি। যাইহোক নম্বরে কল করাতে ঐ পাশ থেকে আমার সম্পর্কে মেইল করতে বলা হল। আমি যেহেতু বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতে চাই,এই শহরে কত জ্ঞানী মানুষ রয়েছে,তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য জানতে পারবো। তাই বিপুল উৎসাহে নিজের মহাশূণ্য পরিচিতি হাইলাইট করে বিজ্ঞানে আগ্রহের বিষয়টি লিখে পাঠালাম। পরে উত্তর হিসেবে যোগাযোগের জন্য একটা নম্বর দেওয়া হল যা ছিল বিজ্ঞান বক্তা আসিফের নম্বর। খুব খুশি আমি বিজ্ঞান বক্তা আসিফের সাথে দেখা হবে। যাইহোক দিনতারিখ ঠিক হল। খুব সম্ভত দুপুরের দিকে আমাকে সোবহানবাগ মসজিদের পাশে থাকতে বলা হল। আমি যথারিতী পৌছে গেলাম। দাড়িয়ে আছি হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। ধরতে ফোনটা কেটে গেল,একজন এসে বললেন-রফিকুল? বললাম হ্যা। লোকটার কাঁধে একটা ব্যাগ,ঢিলেঢালা শার্ট, সাধারণ ঢিলেঢালা প্যান্ট ও সাধারণ জুতা। কাপড়চোপড় তেমন উজ্জ্বল নয়, অনেকটা ময়লাটে। বললেন রিক্সায় উঠুন। তারপাশে বসে আছি, ভাবছি আজ আসিফ স্যারের সাথে দেখা হবে। কতবড় বিখ্যাত মানুষ,আমাকে নিতে লোক পাঠিয়েছেন। যাইহোক ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে ধানমন্ডির এক বাসায় উঠলাম। দরজাতে সমকালের ট্যাগ,ভিতর থেকে একটা মেয়ে দরজা খুলে দিল,সরাসরি আমাকে একটি কক্ষে নিয়ে গেলেন। কোন খাট নেই,বিছানা পাতা,সামনে দুটো কম্পিউটার দুই দিকে বিশাল তাক-বই আর বই, মেঝেতে বই। আমার চোখতো ছানাবড়া,আবার চরম খুশি। এমন বইয়ের সাগরইতো চাই আমি। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছি ,এ তো স্বর্গ পেয়ে গেছি। স্বপ্নতো আমি এমনি দেখি- চারদিকে থাকবে বই আর বই, মাঝে একটা টেবিল, শুধু পড়ব পড়ব আর পড়ব। বইগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলাম । এত বইয়ের মধ্যে হাতেগোণা কয়েকটি বই আমার আছে। আমিতো অবাক এত বই মানুষ কিভাবে পড়ে! অপেক্ষায় আছি সেই বিখ্যাত মানষটিকে দেখার জন্য। রূমে কেউ নেই,কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারছি না। লোকটি একবার এসে বললেন একটু অপেক্ষা করেন, ভাবলাম তাকে জিজ্ঞেস করি আসিফ স্যার কখন আসবেন! কিন্তু ভাবলাম এত বড় বিখ্যাত মানুষ তার সঙ্গে দেখা করার জন্য তো অপেক্ষা করাই যায়। যাই হোক কিছুক্ষণ পর সেই মানুষটিই রূমে আসলেন, আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। বললেন-আপনি মহাশূণ্যে যেতে পারেন নি আমরাও অনেক দু:খ পেয়েছি,বলে সমকালের একুট পুরনো কপি দিলেন যেখানে আমাকে নিয়ে একটি ফিচার ছিলা “রফিকুলকে দেখতে শত মানুষের ভীড়” এই শিরোনামে। এরপর তিনি আমার বিজ্ঞান ভাবনা জানতে চাইলেন। আমি আমার স্বপ্নগুলো তাকে বললাম । বলছি কিন্তু শান্তি পাচ্ছি না কারণ আমিতো আসিফ স্যারকে দেখব, ওনাকে এত কথা বলে কি লাভ! এরপর লোকটি শুরু করলেন। বললেন প্রথম জীবনের কথা। শুরুটা এভাবে-আমার প্রথম বক্তৃতার কথা, কয়েকজন বন্ধুদের ডেকে কথা বলেছিলাম,বিনিময়ে টাকা (টাকার পরিমাণ আমার মনে পড়ছে না)নিয়েছিলাম। এরপর দুজন চারজন করে বাড়তে লাগল্ োনিয়মিত চলতে থাকলে আমার বক্তৃতা। এই কাজটাকে ডিসকাশন প্রজেক্ট নামে যাত্রা শুরু করলাম। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বক্তৃতা দিয়েছি। হাতে আঁকানো ছবি,পোস্টার নিয়ে,বৃষ্টির মধ্যে বক্তৃতা দিতে গেছি। আমি অবাক হয়ে দেখেছি যে দেশের মানুষ খেতে পায় না,তবুও টাকা দিয়ে আমার বক্তৃতা শুনে । আজ এতবছর ধরে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে আমি আমার টিম নিয়ে চষে বেড়িয়েছি। এমন অনেক বক্তৃতার ঘটনা, তার স্বপ্ন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা আমাকে বলছেন। আর আমিতো অবাক হচ্ছি, আর মনযোগ শ্রোতার মত শুনছি। কারণ প্রথম এর সঙ্গে আমি রিক্সায় এসেছি। আশা করেছিলাম তিনি হবেন উচ্চবিলাসী,সে গাম্ভীর্য একজন মানুষ।এত সাধারণ, আন্তরিক, সহজ, সরল সাধারণ জীবনযাপনকারী মানুষটি বিজ্ঞান বক্তা আসিফ আমার যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না। যাহোক অনেক আলোচনা শেষে আমি তার সাথে যুক্ত হওয়ার মত পোষণ করলাম। তিনি আশাও দিলেন না, হতাশও করলেন না। একমাস পর্যবেক্ষণে রাখবেন বলে জানালেন। যাইহোক সেইতো পথ চলা। তারপর আজ ২০১৫ অর্থাৎ ছয় বছর আসিফ ভাইয়ের সাথে আছি। বিজ্ঞান নিয়ে তার সংস্পর্শে থাকা, তার উদ্যোমি পরিশ্রমী কিছু বিজ্ঞান কর্মীর সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। বিশেষ করে জাহাঙ্গীর সুরের কথা ভুলবার নয়। অদম্য প্রতিভাধর এই ব্যক্তির হাত ধরে আমার বিজ্ঞান নিয়ে জাতীয় পত্রিকায় লেখার হাতেখড়ি। সেই থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় লিখে আসছি। এমন অনেক বিজ্ঞান কর্মীকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন বিজ্ঞান বক্তা আসিফ। শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন, তাদের কাছে বিজ্ঞানকে প্রমাণ করেছেন সহজবোধ্য ও আগ্রহের বিষয়। পাশাপাশি রচনা করেছেন বিজ্ঞান বিষয়ক অসংখ্য বই। বাংলাদেশের বিজ্ঞান গবেষণায় জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, আব্দুল জব্বার, প্রফেসর জামাল নজরূল ইসলাম হিরন্ময় নাম। আর নতুন প্রজন্মের মাঝে বিজ্ঞান প্রসারের মাধ্যমে বিজ্ঞান মনস্ক সমাজ গড়ার অগ্রপথিকদের মধ্যে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র বিজ্ঞান বক্তা আসিফ। বিজ্ঞান প্রসারে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি পরিচালিত হালিমা শরফুদ্দীন বিজ্ঞান পুরস্কার পাচ্ছেন সাংবাদিক ও বিজ্ঞান বক্তা আসিফ। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞান লেখক, বিজ্ঞান কর্মী আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীনের মা হালিমা শরফুদ্দীনের নামে বাংলা একাডেমি প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে থাকে। আগামী ২৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞান বক্তা আসিফের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। বাংলা একাডেমি এই পুরস্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞান প্রসারের এক অ অগ্রপথিককে সম্মানিত করার পাশাপাশি সারাদেশে বিজ্ঞান প্রসারের কাজে নিয়োজিত সকলকে উৎসাহিত করছে। বাংলাদেশের সকল বিজ্ঞান কর্মীর পক্ষ থেকে বিজ্ঞান বক্তা আসিফকে অভিনন্দন। পরিশেষে আপনি আমাদের মাঝে থাকুন দীর্ঘ বছর, বাংলার প্রান্তে প্রান্তে আপনার অনুপ্রেরণায় ছড়িয়ে পড়ুক নতুন প্রজন্ম। বিজ্ঞান আন্দোলনের গতি ত্বরান্বিত হোক, গড়ে উঠুক একটি বিজ্ঞান মনস্ক ও বুদ্ধিদীপ্ত সমাজ ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই জুন, ২০২০ ভোর ৬:৩৩
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আপনার মতো আমারও একটা বিএসসি এজি ডিগ্রি আছে।
কিন্তু আমার সমস্যা হচ্ছে, আমি এটাকে কোন কাজেই লাগাতে পারিনি।
আফসোস!