নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।
[১]
জয়তুনের আজ শেষ কর্মদিবস ছিলো। শেষ কর্মদিবসে সাধারণ চাকরিজীবিদের মন খারাপ হলেও কিছু না কিছু দেনা পাওনার ব্যাপার থাকে।ভবিষ্যৎ বলতে একেবারে সব শেষ হয়ে যায় না।কিন্তু জয়তুনদের মতো গৃহকর্মীদের কোন পাওনা থাকে না বরং দেনার দায় থাকে। ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা কালো মেঘ এসে জড়ো হয় ভাবনার আকাশে।
জয়তুনের মনের আকাশেও আজ কালো মেঘের ঘনঘটা। স্বাভাবিকভাবেই জয়তুনের মনটা ভীষণ রকমের খারাপ।চিন্তায় তার মাথাটা বনবন করে ঘুরছে।বর্তমান সময়ের আগে পিছে ঘটে যাওয়া অনেক কিছুই তার চোখে পড়ছে না আজ।সে যেনো এক দিকভ্রান্ত পথিক।পথ চলছে দিশেহারা অসহায় নাবিকের মতো।
এবার কি হবে তার? কে দেখবে তাকে?কে তাকে আশ্রয় দেবে।সে জানে সে প্রথমে বাস্তুুচ্যূত হবে।তারপর হয়তো ভিক্ষাই তার শেষ পরিণতি।এগুলো তার অভিজ্ঞতা থেকেই উপলব্ধি করতে পারে।পুরোটা জীবন টিকে থাকার জন্য সামান্য দুমুঠো ভাতের জন্য লড়াই করে করে আজ সেই জীবনের কাছে তাকে অসহায় আত্নসমর্পন করতে হচ্ছে।কত জনের কত কাজে লেগেছে সে। আজ তাকে কেউ মনে রাখেনি। না সংসারে না কর্মক্ষেত্রে।
বয়সের ভারে কাজে ধীরগতির কারণে একে একে সবগুলো বাড়ির ঠিকে কাজগুলো অপেক্ষাকৃত তরুণ গৃহকর্মীদের হাতে চলে যাচ্ছিলো বছরখানিক ধরেই,সেও বুঝতে পারছিলো এবার তাকে ফিরতে হবে ,পরগাছা হয়ে বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছাই তার নেই কোনকালে।
বয়স হবার কারণে সাথে পুষ্টিকর খাবারের অভাবে এমনিতে শরীর ভাঙছিলো দ্রুত। তার কাজের গতি কমতে শুরু করার সাথে সাথে তার চাহিদাও কমে আসছিলো।এটাই দুনিয়ার নিয়ম দুনিয়া চলে আপন স্বার্থে।এছাড়া অসুখ বিসুখও ইদানীং বেশি রকম জ্বালাচ্ছে জয়তুনকে।কিছুতেই তার পিছু ছাড়ছে না যেন।
সিকদার বাড়ির কাজটা সে অনেক কষ্টে টিকিয়ে রেখেছিল।যদিও নতুন বৌমা তাকে কেন জানি একটুও পছন্দ করেনা। শাশুড়ির পুরানো লোক বলেই হয়তো অপছন্দের মূল কারণ।বৌ শ্বাশুড়ীর দ্বন্দে সে হলো বলি।গরীবের কপালই এমন।
গতকাল খবরটা জানার পর থেকে তার চোখে অশ্রু জলে বান ডেকেছে। কিছুতেই সে জল সে সামলাতে পারছে না।বুকের মধ্যে জ্বলে জ্বলে উঠছে। সে কত কাকুতি মিনতি করলো। যে ফারহান শিকদারকে সে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে নিজের ছেলের মতো মনে করেছে। আজ তার বিয়ে করা বউ এসেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার পথ দেখিয়ে দিলো কত অবলীলায়।নোংরা অপরিষ্কার ধীর আরো কত অপবাদ। অথচ কত আপন ভেবেছিলো এই পরিবারটিকে।আসলে এই দুনিয়ায় কেউ তার আপন নয়।কেউ তার কথা ভাবে না।হায়রে স্বার্থের দুনিয়ােএমন দুনিয়ায় না জন্মানোই ভালো ছিলো।
জীবনের বাকি কটা দিন তার কেমন করে কাটবে এই ভাবনায় তার পৃথিবী আজ ওলোট পালোট হয়ে গেছে।অতীত যেন ফিরে ফিরে আসছে বারবার।
বড় কষ্টের জীবন তার।সাত বছর বয়সে বাবা তাদের ছেড়ে যাবার পর মায়ের কাছে মানুষ সে।মায়ের সংসারে স্বচ্ছলতা ছিলো না কোন কালেই। মা ছিলো তার মতোই গৃহকর্মী। টেনেটুনে চলতো সংসার।
তারপর নানা চরাই উৎরাই পেরিয়ে মালেকের সাথে গাঁটছাড়া বাঁধা।মালেক বড় ভালো মানুষ ছিলো।খুব খেয়াল রাখতো তার। নিজেও খুব ছিমসাম থাকা পছন্দ করতো। তারা একই বস্তিতে থাকতো।সেখান থেকে চেনাজানা পরিচয় তারপর বিয়ে।
অভাবের কারণে যদিও মালেকের লেখাপড়া তেমন এগোয়নি তবু লেখাপড়ার প্রতি তার ভালোবাসাটা ছিলো অকৃত্রিম।সে স্কুলের সেকেন্ড বয় ছিলো।পড়াশোনার প্রতি খুব আগ্রহ ছিলো সেজন্য হয়তো পড়াশোনার মূল্যটা বুঝতো।
সংসার বড় ছিলো যদিও তারপরেও চার ছেলেমেয়েকে অনেক কষ্ট হলেও ভালো স্কুলে পড়াতো তাদের।
বেবিট্যাক্সি চালাতো মালেক।দিনকাল ভালোই কাটছিলো। কপাল খারাপ হলে যা হয়। হঠাৎ করেই মৃত্যু হলো তার, বালির ট্রাকের সাথে বেবিট্যাক্সির মুখোমুখি সংঘর্ষ,হাসপাতালে নেয়ার ঘন্টা পাঁচেক পরে তার মৃত্যু।মুহুর্তেই তছনচ হয়ে গেলো সব।
চোখে সরষে ফুল দেখা যাকে বলে সেই রকম অবস্থা হলো জয়তুনের।একে একে তিন মেয়েকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিতে হলো অভাবের দায়ে।নিজে ফিরে গেলো মায়ের পেশায়। মালেকের সাথে বিয়ে হবার আগে যদিও টুকটাক করতো।মালেকের মৃত্যুর পরে তা হয়ে গেলো তার স্থায়ী পেশা। ছেলে লেখাপড়ার ভালো না হলেও মালেকের কাছে দেওয়া কথা মোতাবেক ছেলেকে কষ্টে সৃষ্টে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়ালেন।এক সাহেবকে ধরে চাকরিও হয়ে গেলো তার।
বড় মেয়ে ফুলিকে গ্রামের দিকে গৃহস্থ পরিবারে বিয়ে দিলেন। মেজো মেয়ে জুলিকেও শহরে কর্মঠ একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিলেন কিন্তু তার জীবনের ঘটনাই যেন পুনরাবৃত্তি হয়ে ফিরে এলো মেঝো মেয়ের জীবনে। অল্প বয়সে বিধবা হলো মেয়েটি,কোলে তার জমজ সন্তান।বোঝা আরো বেড়ে গেলো।কত রকম ঝামেলা কাজের লোক নেই কোন, শুধু খাওয়ার জন্য মুখ বেড়ে চলল।বোঝা টানতে হলো সব জয়তুনকেই। এখন সে অবশ্য আবার বিয়ে করেছে নিজের পছন্দে,লোকটা দুই নম্বরি।জয়তুন তাকে পছন্দ করে না একটুও।জুলির সে সংসার বড় অশান্তির সংসার।
ছোট মেয়েটা এরই মধ্যে এক লাফাঙ্গা ছেলের পাল্লায় পড়ে না বলে না কয়ে ঘর ছাড়লো।তার খোঁজ খবর পাওয়া গেলো না কোনদিন।হয়তো পাচার হয়ে গেছে,সবাই তাই বলে, কে জানে।আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না সে কেমন আছে কোথায় আছে।জয়তুনের মনটা চায় যেখানেই সে থাকুক ভালো থাকুক।
তার মধ্যে এগিয়ে চলে জীবন, জীবনের নিয়মে।এভাবেই একে একে কেটে গেলো জীবনের বাষট্টিটি বছর।
এর মধ্যে ছেলে বিয়ে করলো।টুকটাক ঝামেলা হতে নিজেই সরে এলো সে।জয়তুন বরাবরই ঝামেলা এড়িয়ে চলা মানুষ।যেহেতু সে রোজগেরে সেহেতু লোকের কথা শুণনে ভাত সে মুখে তুলতে পারবেনা কিছুতেই।
ছেলে মাসে দুমাসে দেখা করে যায়। বউমা তাকে কেন জানি দুচোখ পেড়ে দেখতে পায় না।অথচ জয়তুন তাদের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে কিছু একটা করতে।ছেলেটা একটু মাটি কিনতে চায়।জয়তুন মাসের শেষে যে টাকা জমে দুই ঈদে যা যাকাত ফিতরা পায় সবটাই সে ছেলের হাতে তুলে দেয়। তারপরেও তাদের কাছে সে খুব একটা ভালো না।
জয়তুন চোখ মোছে
বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতে না আসতেই সে অটো রিক্সার ধাক্কায় ছিটকে পড়ে যায় পার্শ্ববর্তী ড্রেনে। প্রচন্ড ঝাঁঝালো রোদের, সীমাহীন গরমের দুপুরে গলির রাস্তায় লোকজন কম হওয়াতে সুযোগ বুঝে দোষী ড্রাইভার কেটে পড়ে দ্রুত আর জয়তুনের দুর্বল শরীরটা আকষ্মিক আঘাতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে অনেকটা সময় ড্রেনের পাশে।
[২]
কে যেন মিহি সুরে ডাকছে,
-জয়তুন,জয়তুনরে ও জয়তুন, ওঠ উঠে পড়।উঠোস না ক্যান? ও জয়তুন।
কে ডাকছে কে জানে? কন্ঠটা চেনা চেনা লাগছে কিন্তু ধরতে পারছে না কিছুতেই।জয়তুনের দুচোখে যেন রাজ্যের ঘুম নেমে এসেছে।আবারো সেই ডাক।
হ্যাঁ ,এবার সে চিনতে পেরেছে, এতো তার মায়ের গলার সেই চির চেনা ডাক।মা আসছে নাকি!
-মা!
কতদিন পরে মায়ের ডাক,চোখ তাকে মেলতেই হবে ঘুম তাকে তাড়াতেই হবে।সে অনেকক্ষণের প্রচেষ্টায় কোন রকমে চোখ মেলল।
কিন্তু একি! এরা কারা?এদের কে তো সে চেনে না! তার মা কোথায়? সে অবাক চোখে মাকে খুঁজতে লাগলো।
তার চারপাশে অনেকগুলো মুখ।বেশ উৎকণ্ঠিত।আস্তে আস্তে মুখগুলো তার চেনাচেনা লাগছে।কিন্তু কেন জানি চিনতে পারছে না।
হঠাৎ বুঝতে পারলো মাথার পেছনটা বড় বেশি ব্যাথা করছে।কোমরেও সেই রকম ব্যাথা। এক ফাঁকে কে একজন তাকে একটু গরম দুধ খাইয়ে দিলো।এমনিতেই জয়তুনের খুব খিদে পেয়েছিলো। দুধটুকু খেয়ে যেন শরীর সাড়া দিলো।কিন্তু তার শরীরে এতো ব্যাথা কেন? কি হয়েছে তার? কিছুই তার মনে পড়ছেনা।
তার চারপাশের এই অচেনা লোকগুলোই বা কে?সে কোন কিছু মনে করতে পারছেনা কেন? এটা কার ঘর?
-ও জয়তুন এখন কেমন লাগতাছে? আর কিছু খাবি? খিদা লাগছে?
জয়তুন অপরিচিত মুখখানির দিকে অবাক চোখে চেয়ে জানতে চাইলো
-তুমি কেডা?
-আমারে তুমি চিনবার পারতাছো না জয়তুন। আমি তুলির মা।
জয়তুন অবশ্য মনে করতে পারলো না।তবুও জানতে চাইলো।
-তুলির মা আমার কি হইছে।আমি এই খানে কেন?
তুলির মা অবাক হলো জয়তুন নিজের ঘর চিনতে পারছে না।মাথার চোটের কারণে এমনটি কিনা কে জানে?
জয়তুনের কোমরেও বেশ চোট পেয়েছে।ড্রেনের ধারে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলো সে। লোকজন প্রথমে তো মনে করেছিলো মরেই গেছে। মাথায়, কোমরে প্রচন্ড আঘাত লেগেছে , প্রাথমিকভাবে বস্তির এক হাতুড়ে ডাক্তার দেখে গেছে,হাসপাতালে নিতে বলেছে । কিন্তু এ দ্বায়িত্ব সে একা সামলাবে কি করে? টাকা পয়সার ব্যপার আছে,টাকা পয়সা কে দেবে?
তুলির মায়ের কপালে চিন্তার রেখা দেখা দিলো।
তুলির মা আর জয়তুন আধাআধি ভাগে এই বস্তির ঘরটাতে থাকে।অনেকদিনের সুখ দুঃখের সঙ্গী তারা,জয়তুনের জন্য তারও প্রাণ কাঁদে।
তুলির মা জয়তুনের মেয়ে জুলির কাছে ফোন দিয়েছে।জুলি জানিয়েছে সে এখন আসতে পারবেনা।তার ছেলের ধুম জ্বর।
সে আরো রাগ দেখিয়ে বলেছে ভাইরে খবর দাও। মা তো ভাইকে বেশি ভালোবাসে তারেই তো সব টাকা পয়সা দেয়।সে কেন খামাখা এখন দায়িত্ব নিয়ে তার সংসারে অশান্তি ডেকে আনবে।যার জন্য করতো সে এখন করুক গে।আমার কি দায়।
তুলির মা ছেলেকে ফোন দেয় সেই ফোন কেউ ধরে না।তার কপালে চিন্তার রেখা দেখা দিলো।জয়তুনকে নিয়ে এখন সে কি করবে।আজ তার কাজ কামাই হয়ে গেছে।
কাল কামাই হলে কাজ হারাতে হবে নিশ্চিত।জয়তুনের বড় মেয়ের ফোন নামাম্বর নেই তার কাছে। থাকলে যোগাযোগ করা যেতো। জয়তুনের ছেলে মেয়েরা এড়িয়ে যাচ্ছে কেন সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না।রাত বাড়ার সাথে সাথে সবাই যে যার ঝুপড়িতে চলে গেছে। জয়তুন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। জ্বরে তার গা পুড়ে যাচ্ছে। তুলির মা জয়তুনের মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে আর ভাবছে তার জন্যও হয়তো এমন দিন অপেক্ষা করছে……কঠিন দিন।
জবা সেই থেকে মুখ ভার করে বসে আছে। সারা মুখে তার আষাঢ়ের মেঘ।
শাহিন বারবার বলেই চলেছে,
_কি করবো বলো, মা কে তো ফেলে দিতে পারিনা।তুমি কি পারতে তোমার মা হলে তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে। মা তো এতোদিন নিজের মতোই ছিলো।এখন অসুস্থ হয়ে…
-তোমার বোনেরা তো পেরেছে।তোমার এতো কিসের দায়? মা কি তোমার একা।তারা তো গা ঢাকা দিয়েছে।
_তুমি কটা দিন একটু সহ্য করো।আমি সব সামলে নেবো।
_তোমার মা তুমি যা করার করবে আমি পারবো না,সাফ সাফ বলে দিলাম।
জয়তুন পাশের ঘর থেকে সবই শুনতে পায়।মনে ভীষণ কষ্ট পেলেও আজ তার চোখে জল নেই।আবেগকে সামলেছে অনেক কষ্টে।এসব কেঁদে কেটে ঝগড়াঝাঁটি করে কোন লাভ নেই সেটা সে অনেক আগেই বুঝে গেছে।তাছাড়া তার স্মৃতি ইদানীং মাঝে মাঝে আসা যাওয়া করে। বড্ড ভুলো মন হয়েছে তার।ঝগড়া করার পরিস্থিতিতে এখন আর সে নেই।
তুলির মায়ের সেবা যত্নে আর কদিনের হালকা পাতলা হাতুড়ে চিকিৎসার পরে যদিও এখন সে খানিকটা ভালো আছে।তবে মাথার ফোলাটা কমলেও কোমরের ব্যাথা কিছুতেই কমছে না। তার উপরে আজকাল অনেক কিছু তার মনে থাকে না বা মনে পড়ে না বলে মেজাজটা খুব চড়ে থাকে, কেমন যেন আউলা ঝাউলা হয়ে যায় সব কিছু। কথার পিঠে কথাও গুছিয়ে বলতে পারে না।
আজ কদিন হলো শাহিন তাকে নিয়ে এসেছে শাহিনের ভাড়া বাড়িতে।তার আগে বস্তিতেই তার চিকিৎসা চলছিলো কোন রকমে।
জবা তাকে কোনদিনও যায়নি দেখতে শাহিন নিয়ম করে দেখে আসতো,খোঁজ খবর নিতো।
কারো প্রতি জয়তুনের আর কোন অভিমান নেই।দুনিয়ার প্রতি তার কেমন যেন বিতৃষ্ণা এসে গেছে। মেঝো মেয়ে তো একবার চোখের দেখা দেখতেও এলো না।বড় মেয়ে জানে কিনা কে জানে?মেয়েদের আর দোষ কি তাদের সংসার নিয়ে তারা ব্যস্ত অথবা স্বামীরা তাদের হয়তো আসতে দেয়নি দায়িত্ব নেবার ভয়ে।
তার পরেও কিছু অভিমান তো বুকে জমেই , অন্তত একটা ফোন তো তারা করতে পারতো! যাক গে সে ঠিক করেছে সে আর কোন কিছু নিয়ে ভাববে না।
এ ক’দিন তুলির মায়ের জীবনের উপর দিয়ে গিয়েছে।
দিন কারো জন্য অপেক্ষা করে না।গড়িয়ে চলে নিজের গতিতে।শাহিনের বাড়িতে জয়তুন আসার মাস পূর্তির আগেই জবা অস্থির হয়ে উঠলো।জয়তুনকে কেন্দ্র করে শাহীন আর জবার মধ্যে তুমুল অশান্তি শুরু হলো। সমস্যা এতটাই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌছল যে সংসার টেকা দায় হয়ে পড়লো। জবার অনিহার কারণে সে বেশ বিপদে পড়লো।একে তো শাহিনের বোনেদের সাথে সম্পর্ক ভালো না।যাওয়া আসা তো দুরের কথা ফোনেও আলাপ চলে না।
তারপর একদিন জবার সাথে আপোষ হলো এই বলে যে মাকে সে সময় সুযোগ বুঝে ঢাকাগামী বাস স্ট্যান্ডে ছেড়ে আসবে।সেখান থেকে মা যেখানে পারে চলে যাক।
জয়তুন কোমরে ব্যাথায় বিছানা থেকে উঠঠে না পারলে কি হবে, তার কান এখনও সজাগ। সে সবই শুনতে পায়।সে শুধু নির্বাক চেয়ে রয়।
তারপর একদিন সুযোগ বুঝে জবা আর শাহিন মিলে জয়তুনকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বন্ধু রায়হানের সহযোগীতায় ছেড়ে আসে মনিহার বাস স্ট্যান্ডে রাতের আধারে।
সেখানে জয়তুনের জায়গা হয় ফুটপাতের বেওয়ারিশ কুকুরের পাশে।
[৩]
একটা অসহায় বৃদ্ধ মানুষ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। বেলা এখন সাড়ে বারোটা। তাকে ঘিরে বসে আছে সম্পূর্ন অজানা অচেনা আরো দু তিনটি মানুষ। অচেনা মানুষ হলেও তারা কিছুটা উৎকন্ঠিত । অচেনা অজানা মানুষটি আর কেউ নয় জয়তুন।
জয়তুনের ঘুম ভাঙে বেলা দেড়টার কিছু পরে।সে প্রথমে বেশ ঘাবড়ে গেলো। এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো বারবার। কেউ এক জন এসে প্রশ্ন করলো,
-ও বুড়ি মা তোমার বাড়ি কোথায়?
জয়তুনের চোখ ছল ছল করে উঠলো। বাড়ি! মনের মধ্যে কেমন যেন করে উঠলো। সে সবই বুঝতে পারলো আস্তে আস্তে। কারণ সে তো সব পরিকল্পনাই শুনেছে আগে। কিন্তু কখনো মন থেকে বিশ্বাস করেনি যে তাকে তার কোলের সন্তানেরা এমনভাবে পরিত্যাগ করতে পারবে।জয়তুন শুধু নির্বাক দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে থাকলো। এছাড়া আর সে কিই বা করবে? কি করতে পারে সে।
অনেকেই এলো কত জনে কত প্রশ্ন করলো সে কোন উত্তরই দিতে পারলো না।আসলে সে উত্তর দিতে চাইনি।নিজের সন্তানের বদনাম সে কি করে করবে? এই লজ্জা রাখবে কোথায়।
সে লজ্জায় কোন কথাই বলল না,শুধু জানালো তার কিছু মনে পড়ছে না।কিছুই মনে করতে পারছেনা সে।
শেষ
©রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
২| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৩৩
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: বাস্তবতা খুব নির্মম। অভাব এবং বাস্তবতার করুন কিন্তু সত্য ছবি তুলে ধরেছেন । এটি কোনও গল্প নয়। এটি আমাদের সামাজিক বাস্তব চিত্র ।
প্রত্যেককেই আমরা এই ধরণের দৃশ্যের এবং বাস্তবতার মুখোমুখি হতে পারি।আল্লাহ আমাদের নিরাপদে রাখুন এই রকম অবস্থার হাত থেকে।
২৬ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৪৮
ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া মনোযোগ দিয়ে পোস্টটি পড়ার জন্য।
আন্তরিক মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। সত্যি যে কেউ আমরা এমন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে পারি।
দোয়া রইলো।
৩| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: আগেও একবার বলেছি, আপনার পদ্যের চেয়ে গদ্য আমার বেশি ভালো লাগে।
আপনি অবাস্তব কিছু লিখেন না। সমাজের সত্য ঘটনা গুলোই গল্প রুপ দেন।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:১০
ইসিয়াক বলেছেন: এটা আপনার মহানুভবতা।
অনুপ্রাণিত হলাম সম্মানিত করার জন্য।
৪| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:০৯
নেওয়াজ আলি বলেছেন: জয় হোক মানবতার ।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:১১
ইসিয়াক বলেছেন: জয় হোক মানবতার।
ভাল থাকুন মহী ভাই শুভকামনা।
৫| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৩
ওমেরা বলেছেন: আপনার গল্প পড়ে মাথায় একটা প্লান এল
একটা কোম্পানী খুলেন। আপনারা বাসায় বাসায় যোগাযোগ করে কাজের লোক দিবেন । কি কি কাজ করবে সেই হিসাবে আপনারা টাকা তাদের সাথে কন্ট্রাক করবেন । কিছু লোককে নিয়োগ দিবেন তাদের আপনারা বেতন দিবেন । কিছু পার্মানেন্ট নিয়োগ দিবেন যারা সাপ্তাহিক ছুটি পাবে ও মাসিক বেতন পাবে ও ( অবশ্য সেটাও ঘন্টা হিসেবেই হবে ) চাকরী শেষে পেনশনের ব্যাবস্থা থাকবে। আর কিছু এক্সটা নিয়োগ দিবেন যার, ওদের ছুটির দিনগুলোত কাজ করবে অথবা কেউ অসুস্থ হলে তখন এরা কাজ করবে ।
আমি জানিনা দেশে এরকম কিছু আছে কিনা , না থাকলে এরকম কিছু অবশ্যই চালু করা উচিত ।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:২৩
ইসিয়াক বলেছেন: ওমেরা আপু আপনার মন্তব্যের উত্তর প্রিয় হাসান ভাই দিয়ে দিয়েছে । আমারো বক্তব্য তাই।
@ বর্তমান পৃথিবীর নিয়মই বুঝি এমন। বেশিরভাগ মানুষ নিজের লাভ ক্ষতি আগে হিসাব করে, অতীত ভুলে যায় সহজেই।যে বাবা মা আপনজন পেলে পুষে বড় করলো তাদের প্রতি শেষ বেলার নূন্যতম কর্তব্যটুকু এড়িয়ে যায় সহজে।
৬| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৫
রামিসা রোজা বলেছেন:
কষ্টের নির্মম কাহিনী শোনালেন । এই করোনাকালেও
অনেক নিউজে পড়েছিলাম মা-কে এভাবে ফেলে যায়,
এমন সন্তানদের মনে হয় দোজখেও জায়গা হবে না ।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:২৬
ইসিয়াক বলেছেন: পিতা মাতার প্রতি অবহেলা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। অবশ্যই আল্লাহ তাদের মাফ করবেন না।
শুভকামনা রইলো আপু।
ভালো থাকুন।
৭| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৪
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: মা-বাবাকে বৃদ্ধ বয়সে ফেলে আসা অথবা একটু খরচ করে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা এখন অত্যন্ত মামুলী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এর সঙ্গে যোগ পাই প্রতিবছর গঙ্গা সাগরে কপিল মুনির আশ্রমে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগত দর্শনার্থীরা শেষ জীবনে বা কিম্বা বাবাকে ফেলে চলে যায়। পরে ঘটনাগুলো সংবাদ পত্রে জায়গা পায়।
আপনার বিষণ্নতার গল্পে ভালোলাগা। চেনা জানা প্লটকে আরেকটি ছোট করতে পারতেন।
শুভেচ্ছা প্রিয় ইসিয়াক ভাইকে।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৩২
ইসিয়াক বলেছেন: গল্পটার বাস্তব ভিত্তি আছে।এতে একটুও বাড়িয়ে কিছুই বলিনি প্রিয় দাদা।এর থেকে ছোট করলে তা হয়তো খাপছাড়া হতো। গঠনমূলক আন্তরিক মন্তব্যের জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো।
শুভকামনা রইলো। মেঘবাবুকে কি আপনাদের কাছে এনেছেন?
৮| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২০
এম ডি মুসা বলেছেন: জয় হোক মানবতার জয় হোক মানুষের
২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৩৪
ইসিয়াক বলেছেন: আশায় মানুষ বাঁচে।
জয় হোক মানবতার।
শুভকামনা।
৯| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:২৮
মা.হাসান বলেছেন: গরীব না, স্বচ্ছল পরিবারেও এই ধরনের ঘটনা ঘটছে পত্রিকায় মাঝে মাঝেই দেখি। অনাত্মীয় তুলির মার কাছ থেকে জয়তুন দু দিনে যা পেলো সারা জীবনেও ছেলে-মেয়েদের কাছে তা পাবে না, এটাই যেন নিয়ম।
@ ওমেরা -গরীবের কাছ থেকে কমিশন খাবার ব্যবস্থা সব দেশেই চালু হয়েছে। আগে ইউরোপে ছিলো , এখন বাংলাদেশেও আছে। গরীব লোকদের চাকরি থার্ড পার্টির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। অফিস গুলোতে হাজার হাজার সিকিউরিটি গার্ড আর ক্লিনারের চাকরি এখন আর সরাসরি নিয়োগ হয় না। বিভিন্ন কম্পানি গড়ে উঠেছে। এরা সার্ভিস গ্রহিতার সাথে সাথে চুক্তি করে, কম্পানি গুলো মুহূর্তের নোটিশে যে কারো চাকরি ছাটাই করতে পারে। এই সব ক্লিনার-গার্ড রা মাসে ৮০০০ টাকার কাছাকাছি পায়, বস্তিতে থাকে। আর কমিশনের টাকায় কম্পানিগুলোর মালিকেরা কোটি টাকা দামের গাড়িতেই ঘোরাঘুরি করে দেখি।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৪৫
ইসিয়াক বলেছেন: মন্তব্যে ভালো লাগা প্রিয় ব্লগার। ভালো থাকুন । শুভকামনা।
১০| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ ভোর ৪:৪৪
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: এদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়ার কথা,কিন্তু সরকার দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে। দায়িত্ব পালনে বাধ্য করার জন্য সমাজেরও চাপ নেই।
২৮ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:০২
ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া । ভালো থাকুন।
শুভরাত্রি
১১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৭:৩৪
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: কোথায় গেলেন? যশোর সিটি পুলিশকে কি খবর করতে হবে? তাড়াতাড়ি চলে আসেন। নতুবা আপনার ফোন ট্যাগ করে লোকেশন চিহ্নিত করে ধরে বেঁধে ব্লগে আনা হবে। হেহেহে
২৮ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:০৪
ইসিয়াক বলেছেন: এই তো আমি। আচ্ছা লুকোচুরি খেলবো একদিন। এমন জায়গায় লুকাবো । খুঁজে বের করতে পারবেন তো আমায়?
১২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৪৬
করুণাধারা বলেছেন: পৃথিবীতে মা-বাবা ছাড়া আর কেউ কারো জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে কিছু করে না।
আমি একবার একটা বৃদ্ধাবাসে গিয়েছিলাম যেখানে এরকম অসহায় বৃদ্ধ বৃদ্ধা দের আশ্রয় দেয়া হয়। এতটাই করুন এদের অবস্থা যে সহ্য করা মুশকিল।
সমস্যাকে গল্পে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। +++
০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৫
ইসিয়াক বলেছেন: আসলেই আপু পৃথিবীতে বাবা মা ছাড়া কেউ নিঃস্বার্থভাবে কিছু করে না। অনেক সময় বাবারা বিগড়ে যায় তবে মায়ের কোন বিকল্প নেই্ । মন্তব্যে ভালো লাগা।
ভালো থাকুন।
১৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:০৫
ভুয়া মফিজ বলেছেন: দুনিয়ায় কেউ কারো আপন না। এটাই বাস্তব রুঢ় সত্য.......যতোই আমরা আত্মীয় পরিজন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চিন্তা করি না কেন। আজ বিপদে পড়বেন.........এক দুই মাস, আত্মীয়ভেদে বড়জোর বছর খানেক আপনাকে সহ্য করবে। তারপরে সব ফুট্টুস।
এই পুরো ব্যাপারটাই লেখাতে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। গল্পের নামকরনও যথার্থ হয়েছে।
বাস্তব গল্পটা পড়ে মন খারাপ হলো। আমি ঠিক করেছি, মারা যাওয়ার আগে আমার যা আছে সব কোন একটা ওল্ডহোমে দান করে দিবো। ডিসিশান ফাইন্যাল।
০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫১
ইসিয়াক বলেছেন: হা হা হা এইবার আপনার পালা। মন্তব্যের উত্তর দিতে অনেক দেরী হয়ে গেলো। আসলে পোস্ট দিতে যত ভালো লাগে মন্তব্যের উত্তর দিতে তত আলসেমি জাগে। কি করবো বলেন? বিষয়ডারে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে হয় না
আসছি একা যাবো একা আসলে দুনিয়াতে কেউ কারো না শুধু মা ছাড়া।গল্প ভালো লেগেছে জেনে অনুপ্রাণিত হলাম।
যত যাই হোক এতো কড়া সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না।
শুভকামনা।
১৪| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:০৯
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: হ্যাঁ ওকে 23 তারিখে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। আপাতত টুকটাক বাড়িতে ছুটির হোমওয়ার্ক নিয়ে ব্যস্ত আছে।
শুভকামনা প্রিয় ইসিয়াক ভাইকে।
০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৩
ইসিয়াক বলেছেন: মেঘবাবুর জন্য অজস্র শুভকামনা রইলো।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৪৯
ইসিয়াক বলেছেন: কিছু বানান ভুল আছে পরে সময় করে ঠিক করে দেওয়া হবে নিশ্চয়। আশা করি বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ