নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।
(১)
( প্রিয় পাঠক গল্পের প্রয়োজনে লেখাটিতে কিছু অযাচিত শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। আশা করি বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
রিলিফের চাল চুরির দায়ে তৈয়বের দুই বছর জেল হয়েছে। ব্যপারটা নবীসন এখনও মেনে নিতে পারছে না তার কেন জানি বিশ্বাস ই হচ্ছে না।গতকাল ও তো তারপাশে শুয়ে ছিল লোকটি। দিনান্তে আজ চার দেয়ালে বন্দী।
কোর্ট থেকে ফিরে কোলের ছেলেটাকে কোন রকমে মাটিতে বসিয়ে দিয়েই বিলাপ সহযোগে আছাড়ি পাছাড়ি দিয়ে কাঁদছে সে।
মনের দুঃখ রাষ্ট্র না করা অবধি তার মনের কষ্ট কমবার নয় এমন একটা বোধ তার মধ্যে কাজ করছে বর্তমানে ।
স্বভাব সুলভ আচরনে কৌতূহলী লোকজন জড়ো হতে দেরি হয় না।
- ও আল্লা আল্লা গো তুমি আমার একি সর্বনাশ করলে গো। এখন আমার কি হবে গো? আমি কোথায় যাবো গো। এমন করে ভাসিয়ে দিতে পারলে গো। তোমার কি এট্টু ও দয়ামায়া নাই। আল্লাহ আল্লা.....
ঘটনার কিছুটা জানা ছিল কম বেশি সবার।মেম্বার চেয়ারম্যানের আশ্বাস ছিল তেমন কিছু হবে না। আজ রায় হয়েছে, জেল হয়ে গেছে তৈয়বের এটা প্রথম জানলো বেশির ভাগ লোকজন। একটু অবাকই হল সাধারণত এসব কেচে আসামি সাক্ষী প্রমানের অভাবে খালাস হয়ে যায়। কিন্তু এখন চারদিকে হাজার প্রযুক্তি।সেই প্রযুক্তি যথেচ্ছ ব্যবহারের শিকার হয় কখনও কখনও নিরপরাধ কেউ কেউ। চুরি করে একজন সাজা পায় আরেক জন। কে যে কখন কার ফাঁদে ধরা দেয় কে জানে।সহজ সরল তৈয়বের ব্যপারখানাও ছিল তেমন কিছু ।
নবীসনের বিলাপ মিশ্রিত ক্রন্দনে কেউ কেউ উদ্বিগ্ন ও সমব্যথিত আবার কেউ কেউ কাপড়ে মুখ চাপা দিয়ে মিচমিচিয়ে হাসছে আর মজা নিচ্ছে ।
আবার অন্য দিকে নবীসনের কান্নাকাটির সুযোগে শরীর থেকে সরে যাওয়া কাপড়ের দিকে দৃষ্টি কোন কোন যুবক ও বৃদ্ধার।
নবীসন যে ডাকাবুকো সুন্দরী তাকে চোখ দিয়ে লেহন করবার এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় নি কেউ কেউ ।
যার যায় সেই জানে তার কি জ্বালা! কে বোঝাবে কাকে।নবীসন কেঁদেই চলে আর বিলাপ করে তার সন্তান দুটি অদূরে অবাক চোখে শুধু তাকিয়ে দেখে।বোঝে না কিছু শুধু রাজ্যের বিষ্ময় চোখগুলোতে।
নবীসনের কান্নায় উত্তর পাড়া হারুর মা তার দুঃখে দুঃখী হয়। দায় বেদায়ে কত দিন পেটের ক্ষুধা মেটাতে হয়েছে এই দ্বারে এসে । কি করে নবীসনের উপকার অস্বীকার করে সে। এত বড় বেইমান সে জান গেলেও হতে পারবে না।সত্যি সত্যি তার বুকের ভেতরে কিছু কষ্ট চাপ সৃষ্টি করছে।চোখ ফেটে অশ্রু বেরোচ্ছে স্বতঃস্ফূর্ততায়।
সকাতরে নবীসনের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে করুন সুরে বলল সে
-ধৈর্য ধর বউ।আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। সব ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে তৈয়ব তো দুই বছর পর ফিরে আসবে। দেখতে দেখতে দুবছর চোখের পলকে চলে যাবে গো বৌ । তুই ধৈর্য ধর চিন্তা করিস না।কোলে দুটোর কথা ভেবে মনটা একটু শক্ত কর রে বউ। বিপদ দেবার মালিক যিনি উদ্ধার করবারও মালিক তিনি।আল্লাহ ভরসা।
যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে।
কিছুটা বাদে জামিলা বুড়ি ছুটতে ছুটতে এলো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে।তার অনেক হিসাব মেটাবার আছে। গত বছর তার সাথে নবীসনের আমড়া গাছ ছাগলে গাছ খাওয়া নিয়ে তুমুল এক গন্ডোগোল হয়েছিল। সেটাকে অবশ্য গন্ডগোল না বলে চুলোচুলি বলা ভালো।সুযোগ বুঝে আজ এসেছে মনের সেই সব ক্ষেদ দুর করতে। বড় বাড় বেড়েছিল মাগীর।রুপের অহংকারে মাটিতে পা পড়ে না। সুমন্ধীর মেয়ে দেখ কেমন লাগে।দেখ দেখ...
সে এসেই হামলে পড়ল হারুর মায়ের উপর। ইশ কি পিরিত!
-পিরিত পিরিত গোল মরিচের ঝাল
পিরিত তুই থাকবি কতকাল!
ওরে আমার গিয়ানের গিয়ানী রে।ওই বুড়ী ওই মুখটা একটু বন্ধ কর তো এবার।শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হলো যে। সব সময় যেন কথার খই ফোটে মুখে ।আমি বাপু সত্যি কথাই বলবো কেনে। তৈয়বেরই তো দোষ। গেল কেন আলিম মেম্বারের কাজে? কাজের অভাব? ও জানে না আলিম মেম্বার লোক সুবিধার না। কি কও বউ? সোমত্ত মাইয়া পোলা আহারে! কি হবে গো এখন বল দিকিনি ।
আলিম মেম্বারের বউ কাছেই ছিল সে টপ করে বলে উঠলো
- ওই সুমন্ধির মাগী কথাবার্তা মুখ সামলে কবি কলাম। এখন সব আমার ভাতারের দোষ না? হারামজাদি সিনাল বেবুশ্যে মাগী। কেন আমার ভাতার কি তোর ফল্লা মেরেছে। শুধু শুধু তার পিছনে লাগছিস।
- হয় হয় হয় হয় আরে আমি কি মদ্দা মানুষ নাকি রে তোর ভাতারের পিছন মারবো।খেয়ে দেয়ে আমার কাজ নেই। দুর হ দুর হ মাগি।
সকালের মনোযোগ এবার তৈয়বের বউয়ের দিক থেকে ঝগড়ার দিকে নিপতিত হলো । তৈয়বের বউ কি মনে হতে এই অবসরে ছোট ছেলেকে কাছে টেনে নিয়ে উদাস দৃষ্টিতে বুকের দুধ খাওয়াতে লাগলো। তার এখন ক্যাওয়াজে মন নেই ।তার চোখ এখনও পানিতে টলমল।শরীরের কাপড় অবিন্যস্ত। আসলে তার বুক জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। ঘুরে ঘুরে একটা চিন্তা মাথায় আসছে খাওয়া জুটবে কোথেকে? যা ছিল সব তো মামলার পিছনেই গেছে। এবার তাহলে কি হবে? তবে সে কিছুতেই আত্নসমর্পণ করবে না৷কিছুতেই না।সে জানে এ-সব ই সাজানো নাটক।
এদিকে ঝড়গা চলছে তুমুল.....কিছু বাদে নবীসন আবারও খুনখুনে গলাপ বিলাপ শুরু করে।....
(২)
পুকুর ঘাট থেকে বৈকালিক স্নান শেষে ঘরে ঢুকতেই আলিম মেম্বারের বউ প্রশ্ন করে
-তুমি কি এখন আড়তে যাবা?
মেম্বার কিছুটা বিরক্তি নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে
- কেন? কিসের দরকার?
-ছোলার ঘুঘনি করেছি। দেব খাবা?
-পেঁয়াজ টমেটো ঝাল আর মুড়ি দিয়ে মাখিয়ে আনো তাহলে খেয়ে যাই ফিরতে দেরি হবে।
মুড়ি মাখা দিতে দিতে আলিমের বউ বলে,
-শুনছো নাকি কিছু?
- কি?
- আসলে মানুষের উপকার করতে নেই। এই জন্যি তোমাকে নিষেধ করি।
- ঝেড়ে কাশ দিকি বউ?অত প্যাচালো কথা আমার ভালো লাগছে না।
-ওই যে তৈয়বের তুমি উপকার করছিলে না?
- হু তো
- সবাই তো তোমারে ই দোষে।
- দোষে দুষুক অত কথায় কাজ নেই। তুমি ঘরে থাকো।দুদিন পর মানুষ সব ভুলে যাবে তখন সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।
- হ্যাঁ তোমার কি কথা তো শুনতে হয় সব আমার।মানুষের কথা শুনলে গা পিত্তি জ্বলে যায়।মরণ সব আমার। ভালো লাগে না আর।
- জুলেখা স্কুল থেকে ফিরেছে?
- হু ফিরেছে।টিভি দেখে
- পড়তে বসতে বলো ওরে। ওই সব টিভি দেখে কোন লাভ নাই। নাচা গানা রং তামাশা আমার পছন্দ না।
- অল্প বয়স বোঝ না।
- ওসব বুঝি না মেয়ে শাসন কর। টিভি আমি তোমার কথায় ঘরে রাখছি। মেয়ে যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে আমি কিন্তু তোরে ছাড়বো না।
- আমি আবার কি করলাম। সবটায় আমার দোষ দেখে
- শুরু হলো নাকে কান্না। যাই...আমার আজ ফিরতে দেরি হবে মসজিদ কমিটির মিটিং আছে বাদ এশা।
মেম্বারের বউ চোখ মোছে।এত পাষাণ হৃদয় কেমন করে হয়। বিয়ের এত বছরেও লোকটাকে বাধা গেল না সেভাবে।অথচ রূপ যৌবনে তার কোন কমতি ছিল না কোনদিন। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আলিম মেম্বারের পথের দিকে চেয়ে।
(৩)
জামাল উদ্দিন কোরানে হাফেজ। তার কন্ঠ খুব সুমধুর।যে শুনবে তার কোরান পাঠ সেই মুগ্ধ হয়ে খানিক শুনবে কোরান তেলোয়াত। দরিদ্র ছেলেটি দারুণ মেধাবী।কোথায় কোথায় যেন কুরান তেলওয়াতের জন্য পুরষ্কার ও পেয়েছে।ছেলেটি কোথেকে এসেছে কেউ জানে না।এই অনাথ ছেলেটিকে আলিম মেম্বার ভীষণ স্নেহ করে ।সেই সূত্রে আলিম মেম্বার মসজিদ কমিটির মিটিং এ জালালুদ্দিনকে সহকারী ইমাম হিসাবে নিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে । বর্তমান ইমাম সাহেব আসাদুল ইসলাম একটু নীতি বান ও বেয়াড়া টাইপের মানুষ। সে বেশির ভাগ সময় নিজের মর্জি মত চলে। তাকে নির্দেশ দিলেও নিজস্ব মাসালা দেয়। কাজের কাজ হয় না কিছু ই । তার বিকল্প হিসাবে জালালুদ্দিনের নাম প্রস্তাব করার পরিকল্পনা করে আলিম মেম্বারই।সামনে অনেক কাজ আছে একে একে শেষ করতে হবে।সবচেয়ে বড় কথা এই ছেলেটার দারিদ্রতার সুযোগ নেয়া যাবে। ভাতের অভাব থাকলে তাকে দিকে অনায়াসে অনেক কাজ করিয়ে নেওয়া যায়।
যেহেতু আলিম মেম্বার মসজিদ কমিটির সভাপতি তার উপর মসজিদের অন্যতম ডোনার। তার কথা অগ্রাহ্য করার সাহস তেমন কারো ই নেই। এমনকি চেয়ারম্যান সাহেবও তার কাছে ধরা।
বাদ এশা মিটিং এ সর্বসম্মতিক্রমে জালালুদ্দীনকে সহকারী ইমাম নিয়োগ দেওয়া হলো।
(৪)
মাস পেরিয়ে গেছে। জীবন থেমে থাকে না।নবীসন লড়াকু মেয়ে সে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। সে সারাদিন সংসারের কাজ শেষে বিকালে বাজারে এক কোনে এক ঝুপড়ির ভিতর পেঁয়াজু বেগুনি আলুর চপ ছোলা সিঙ্গাড়া বিক্রি করে। তার হাতে ছোলার ঘুঘনি দিয়ে সিঙ্গাড়া মাখানো এর মধ্যে নাম কিনে নিয়েছে।তার হাতের অন্যান্য রান্নাও বেশ মজার। বছর ঘুরে রোজা আসে। নবীসনের দোকানে বেচা বিক্রি জমে ওঠে। এর মধ্যে আলিম মেম্বারের বউ বুদ্ধি দেয় নগেন কামারের বিধবা বউটা অসহায় ওকে তুমি সাহায্যকারী হিসাবে নাও। তুমি লাভবান হবে মেয়েটারও একটা গতি হবে।সরল বিশ্বাসে নবীসন রাজী হয়। তার উপর বেচা বিক্রি মাশাল্লাহ ভালো একজন সাহায্যকারী হলে ভালোই হয়।আজকাল কাজের লোকের ভীষণ অভাব।
এদিকে তৈয়ব মেম্বার জালালুদ্দীনের কাছে পরামর্শ চায় রোজা রমজান মাসে হিন্দু মেয়ে ছেলের বানানো পেঁয়াজু বেগুনি আলুচপ খেলে কোন সমস্যা কি- না? ধর্মীয় দিক থেকে কোন বিধি নিষেধ আছে কি- না।
জালালুদ্দিন ততদিনে প্রধান ইমাম পদটি বাগিয়ে নিয়েছে। আসলেই সে মেধাবী।সে আলিম মেম্বারের কথায় মুচকি হাসে। সে মেম্বারের মন পড়তে পারে যেন।মিষ্টি হেসে সে বলে যা বলার জুম্মার খুতবায় বলবে। পরের জুম্মায়
জালালুদ্দিন বিধান দেয় অমুসলিমদের হাতের খাবার দিয়ে রোজা খোলা হারাম। বেদাত।এসব ব্যপারে সবাইকে সতর্ক হতে হবে।
হঠাৎ গুঞ্জন ওঠে মুসুল্লিদের মধ্যে নামাজ শেষে মিটিং বসে দ্রুত।হায় হায় এ তো মহা পাপের কাজ হয়ে গেছে। নগেন কামারের বউ ভিন্ন সম্প্রদায়ের তাকে ঘাটানো ঠিক হবে না।
কিন্তু আসলে দোষ তো নবীসনের সেই তো কাজে নিয়েছে নগেন কামারের বউকে। তার হাতের বেগুনি পেঁয়াজু......
শালা চোরের বউয়ের এত সাহস সারা গ্রামের লোকের ধর্ম নাশ করে। ওর বিচার করতি হবে ।
সমস্বরে সবাই বলে হ্যাঁ হ্যাঁ বিচার হবে। বিচার হবে।
কিন্তু এখন রোজা রমজানের মাস এখন কোন ঝামেলার দরকার নেই। ইদের পরে যা করতে হয় করা হবে। সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
নবীসন দোকান হারিয়ে ঘরবন্দী হয়। তাকে এক ঘরে করা হয়।ইদ খুব কষ্টে কাটে নবীসন আর তার দুই ছেলে মেয়ের।
একদিন রাতে তৈয়ব মেম্বার আসে তার ঘরে বলে তার কথা মত চললে সব সমস্যা সমাধান হতে পারে।
নবীসন তার মুখে থুতু দেয়।
- আমি জানি সব আপনার ষড়যন্ত্র কিন্তু আমি আপনার কোন ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবো না। সে আমার যত কষ্টই হোক। মনে রাখবা মেম্বার মানির মান আল্লাহ রাখে।
হুমকি দিয়ে যায়তৈয়ব মেম্বার, বলে
- হারামজাদি মাগি তোর এত তেজ! তোর তেজ আমি ভাঙছি দাড়া।শুধু সময়ের অপেক্ষা। এমন শাস্তি দেব মুখ দেখাতে হবে না সারাজীবন মনে রাখবি।
(৫)
ইদের কয়েক দিন পর শালিস বসে।নবীসনকে ভরা মজলিসে কান ধরে উঠবোস করানো হয় । বিশ জুতার বাড়ি আর নাকে খত দিতে বাধ্য করা হয়।
তারপর মুখে কালি মাখিয়ে জুতোর মালা পরিয়ে সারা গ্রাম ঘুরিয়ে নিয়ে আসা হয়। অসহায় নবীসন কোলে ছোট ছেলে আর শাড়ির আঁচল ধরে বড় মেয়ে মরিয়ম নীরবে হেঁটে চলে সব অপমান গায়ে মেখে । নবীসনের অপমানে মুখ কালো হয়। তবু তার চোখে তখন প্রতিশোধের আগুন।
বেশ ক'দিন পর গভীর রাত।নবীসন বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে গাছি দা খানি বের করে শান দেয় তারপর ঘর থেকে বের হয় নিঃশব্দে । অন্ধকারের বুক চিরে এগিয়ে যায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। আজ তার কোন ডর ভয় নেই ।
পরিকল্পনা মত আলিম মেম্বারের আড়তে পৌঁছায় সে। আড়ত ফাঁকা।সেটাই স্বাভাবিক। মোক্ষম সুযোগ। ওয়াজ মহফিল চলছে উত্তর পাড়ায়।লোকজন সব সেদিকেই। এমন সুযোগ প্রতিদিন আসবে না।টোপ তো দেওয়াই আছে। মহা টোপ।যদিও নিজেকে টোপ ভাবতে একটুও ভালো লাগছে না নবীসনের ।
আশেপাশে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নবীসন গলা খাকারি দেয়।
চকিতে চেয়ে বিস্ফোরিত আলিম মেম্বার গদ গদ হয়ে নবীসনের হাত ধরে আচমকা।আহা! কত দিনের সাধ। মাখন নরম হাত। অবশেষে শিকার ঠিক ই ধরা দিল তাহলে। নবীসন আহ্লাদী করে পান বের করে
আলিম মেম্বারকে বলে
- পান খাবেন মিষ্টি পান।আপনার জন্য বানাইছি।
- তুমি দিলে বিষও খাব।
- সত্যি! নবীসন হাসে। তার কেন জানি আজ খুব হাসি পাচ্ছে।
- হাসো কেন? সত্যি বলছি।তিন সত্যি!!
নবীসন বুকের কাছ থেকে ছোট একটা পোটলা বের করে। আলিম মেম্বার গদগদ হয়ে ডাকে
- আয় আয় কাছে আয়। কাছে আয় আমার টুনটুনি।তোকে একটু পরান ভরে আদর করি।নবীসন আলিম মেম্বারেরর ৃুখে পান গুঁজে দেয় সহাস্যে।
আলিম মেম্বার পান চিবাতে চিবাতে চোখ বোজে আরামে হঠাৎ উত্তেজিত হয়। ওরে নবীসন পানে কি দিছিস আমার গলা বুক জ্বলে কেন?
নবীসন হাসে। হাসতে হাসতে বলে আমার ইচ্ছে ছিল তোর মত রাক্ষসকে দা দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মারি আফসোস আমার ছোট দুটো বাচ্চা আছে আমি না থাকলে ওদের দেখার কেউ নেই। তাই তোর মত জুলুমবাজকে আমি বিষ দিয়ে মারলাম। কেউ টের পাবে না কিসে তোর মরন।হি হি হি মজা না মজা হি হি হি
এরপর দ্রুত পদক্ষেপে ফিরে যায় নবীসন। বেশি সময় পাবে না সে।ধরা পড়া চলবে না কিছুতেই। এতদিনে সে আজ একটু শান্তির ঘুম ঘুমাবে। নবীসন জোর কদমে হাটে আর বলে। বুঝলে মেম্বার বিষের নাম রিপকর্ড খুব শক্তিশালি বিষ। সামান্য পেটে গেলে ভবলীলা সাঙ্গ। তোমার সময় আর বেশি নেই।
পরদিন ভোরে হারুর মা ছুটে এসে খবর দেয় নবীসনকে আলিম মেম্বার নাকি বিষ খেয়ে মারা গেছে।
কি বলবে নবীসন। কিছু বলার নেই। শুধু বলে
- মরলে মরছে কত মানুষ তো মরে। আমার আর কি।আল্লাহ ওরে বেহেশত নসীব করুন। খুব একটা খারাপ লোক ছিল না। কি কও গো হারুর মা।
হারুর মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
সমাপ্ত
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
১২ ই এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১০:১৯
ইসিয়াক বলেছেন: আমাদের পাশের গ্রামে নবীসন নামে একজন মহিলা আছেন। আমি উনার নাম অনুসারে এই নামটি ব্যবহার করেছি। এই নাম আমি অন্য কোথাও শুনি নি। অনেকে হয়তো না বুঝেই নাম রাখেন। লেখার সময় কেন জানি এই নামটি ব্যবহার করতে ইচ্ছে হলো।
চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন আপু
শুভকামনা রইলো।
২| ১২ ই এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১০:৫৪
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: অসাধারণ গল্প। গ্রামের মাতব্বর গুলা এমনই ছিল। অবশ্য এখনকার যুগে এসব নাই বললেই চলে।
১২ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:১৫
ইসিয়াক বলেছেন: আপু গ্রাম গঞ্জে এখনও এধরণের মানুষ প্রচুর আছে সত্যি কথা বলতে গেলে দিন দিন ধর্মান্ধ লোকের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেটা শহরে ও গ্রামে সমানুপাতিক হারে সব জায়গায় ।
আমাদের এলাকায় প্রচুর চাতাল আছে ( চাতাল হলো ধান সিদ্ধ শুকনো করার স্থান) এইসব চাতালে বাইরে থেকে প্রচুর পরিমাণ লোকজন আসে কাজের জন্য। তাদের সাথে বিশেষ করে যদি দেখতে মোটামুটি ভালো হয় সে সব মেয়েদের কপালে নানা রকম দূর্ভোগ ঘটে। বেশির ভাগ ই আত্নসমর্পন করে আর যে প্রতিবাদ করে বা অন্যায় সহ্য করে না তার জন্য থাকে সীমাহীন লাঞ্ছনা।
# গল্প বলে হয়তো নবীসন প্রতিশোধ নিয়েছে কিছু বাস্তবে ক' জন পারে এমন। বেশি ভাগ মেয়েরা এসব অন্যায়গুলোকে নানাবিধ কারণে মানিয়ে নেয়, মুখ বুজে সহ্য করে।
শুভকামনা রইলো।
৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৫:৩৪
মো: রিয়াদ চৌধুরি বলেছেন: গল্পটি পড়ে মজা পাইলাম।সামনে এই রকম আর গল্পআশা করছি।
১৪ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:১৬
ইসিয়াক বলেছেন:
ধন্যবাদ
৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:১৮
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো আপনার নবীসনের প্রতিশোধ। পাঁচ নম্বরের দুই লাইন আগে তৈয়ব মেম্বার হয়ে গেছে।ওটা আয়ুব মেম্বার করে দিন।
শুভেচ্ছা প্রিয় ইসিয়াক ভাইকে।
১৪ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:২০
ইসিয়াক বলেছেন:
আপনার মন্তব্য সবসময় ই আমার লেখার প্রেরণা এটা আমি সবসময় স্বীকার করি। ভুল শুধরে দেবো প্রিয় ব্লগার।
যাহোক আমি ভাবলাম গল্পটাতে হয়তো কেন সমস্যা তাই কেউ পড়ছে না। আপনার মন্তব্য পেয়ে আশ্বস্ত হলাম। অশেষ কৃতজ্ঞতা বরাবরের মত। শুভকামনা রইলো প্রিয় দাদা।
# নববর্ষের শুভেচ্ছা জানবেন।
শুভকামনা সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১০:০৫
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: নবীসন না নসীবন হবে?