নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।
শব্দ সংখ্যা -২৬৪১
(১)
ইদানীং আমার অফিসে কাজের চাপ বেশ বেড়ে গেছে।বেড়ে গেছে বলতে অন্য লোক ছাটাই করে তাদের কাজ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।কারণ হিসাবে অবশ্য করোনাকালীন মন্দার কথা বলছে।আমি জানি এসবের মানে অনেকটা খেদাবো না উঠান চাষ করবো টাইপের গ্রাম্য প্রবাদের মত।আমি জানি আমার বস ইয়াজউদ্দিন সাহেবের মত বদমাইশ টাইপের লোক এই পৃথিবীতে আর দুটি নেই। কোন এক অদ্ভুত কারণে তিনি আমাকে একটুও পছন্দ করেন না। প্রতি কাজে খুত ধরা আর কারণে অকারণে আমাকে অযথা হয়রানি করা তার রুটিন ওয়ার্ক।
আজকাল আমি তেমন কিছু মনে করি না। কারণ আমি কিছুটা অপারগ। আসল কথা এই দুর্মূল্যের বাজারে আমার যে যোগ্যতা তাতে এই রকম চাকরি আমি জুটাতে পারবো না।
এদিকে বাসায় একটা গড়বড় হয়ে গেছে আজ বাসায় যাবার খুব তাড়া ছিল কিন্তু অফিস ছুটির মুহুর্তে পিওন আজগরকে দিয়ে আমায় ডেকে পাঠালো ইয়াজউদ্দিন সাহেব।
অফিসের সব স্টাফ চলে গেছে বেশ কিছু আগে আমি কম্পিউটার সাট ডাউন করেছি মাত্র। বিরক্তি নিয়ে বসের রুমে উপস্থিত হলাম।
-আস সালামু আলাইকুম বস।
ইয়াজউদ্দিন না তাকিয়ে বললেন
-বসুন। আজকের মত কাজ শেষ হলো?
- জ্বি।
- চা খাবেন?
- না বাড়ি যাবো।একটু ব্যস্ত।
- আরে যাবেন যাবেন বাড়ি যাবেন না তো কোথায় যাবেন। কে আপনাকে ধরে রাখবে? বাসার সব ভালো তো? আপনাকে কিছুটা অস্হির আর বিরক্ত লাগছে বলে মনে হচ্ছে ।কোন সমস্যা?
- না কোন সমস্যা না স্যার। আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি।
-সে তো আপনাকে দেখেই বোঝা যায় আপনি বিন্দাস আছেন।অফিসে আসছেন কম্পিউটার অন করছেন নানা সাইটে ঘোরাঘুরি করছেন পছন্দের লোজকনের সাথে খোশগল্প করছেন তারপর সময় হলে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কাজ কাম তো কিছুই করছেন না।
আমি কোন কথা না বলে চুপচাপ অভিযোগগুলো শুনলাম। একই অভিযোগ প্রতিদিন শুনি। এ সব আমার মুখস্থ।ইদানীং প্রতিদিন ছুটির পর আমাকে এসব কথা শুনতে হয়। এরপর ইয়াজউদ্দিন সাহেব কি করবেন তাও আমার জানা।
- কি ভাবছেন অপূর্ব?
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বললাম
- না কিছু না স্যার।
- অনেক আগেই আপনার চাকরি চলে যেত নেহাত আপনাকে আমি ভালো জানি আর....
- আর কি?
- বাদ দিন।
- না বাদ দেবেন কেন? আল্লাহ বলতে দিয়েছে বলুন।
- আপনার বিরুদ্ধে কমপ্লেন আসছে।
- কি কমপ্লেইন?
- আপনি নাকি পকেটে করে পেন ড্রাইভ আনেন।
আমি চুপ করে রইলাম। ঘটনা কিছুটা সত্য। তবে একদিন এনেছিলাম কিছু ছবি নেওয়ার জন্য।
- কথা বলছেন না কেন আপনি নাকি পেন ড্রাইভে নীল ছবি নিয়ে ঘোরেন।
কি বলবো বুঝতে পারছি না।
হঠাৎ মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল
- নীল ছবি তো সবাই দেখে। কথাটা কেন বললাম বুঝতে পারছি না মনে হলো কেউ আমাকে দিয়ে বলিয়ে নিয়েছে। ইয়াজউদ্দিন সাহেব আমার দিকে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে বলল
-আগামী পরশু অফিসের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন জানেন তো?
- জানি।
-ফাইল পত্র সব রেডি হয়ে গেছে?
-কিছু কাজ বাকি আছে আগামীকাল হয়ে যাবে।
-অপূর্ব সাহেব?
- জ্বি।
- কোন কারণে আপনি ডিসটার্ব?
- এক প্রশ্ন বারবার ভালো লাগে না স্যার।
- এই জন্য করছি কারণ আপনি নিয়মিত কাজে অবহেলা করছেন। আপনার জন্য অফিস প্রতি নিয়ত সমস্যায় পড়ছে।
- অভিযোগ মিথ্যা স্যার।আমি কাজে অবহেলা করছি না।আগামীকাল যত সমস্যাই হোক আসি সব কাজ রেডি করে ফেলবো। প্রমিজ।
- না তা হবে না।কাজে গাফিলতি আমি মেনে নেব না। যত রাতই হোক আজই আপনাকে সব কাজ শেষ করতে হবে।আজগর থাকছে, কাজ শেষ হলে আমাকে কল দেবেন। আমি আসলে তারপর আপনার ছুটি। আমি এখন জরুরি একটা কাজে বাইরে বের হচ্ছি। ফিরে এসে কাজের অগ্রগতি দেখবো।ওকে।
আজ রূবাবার জন্ম দিন।চাকরি করি বলে কি আমার নিজের জীবন বলে কিছু থাকতে পারে। বেচারা রূবাবা প্রায় অভিযোগ করে আমি তাকে সময় দেই না কেয়ার করি না। সারাটা দিন তার ভীষণ ভীষণ বোরিং লাগে। আমি কাজ ছাড়া কিছু বুঝি না তাকে ভালোবাসি না। ইত্যাদি।
আমার যোগ্যতা কম না হলে অনেক আগেই এই চাকরির মুখে লাথি মারতাম।
আচ্ছা চাকরিটা ছেড়ে দিলে কেমন হয়? হঠাৎ করেই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম চাকরিটা ছেড়ে দেবো।
কিন্তু এখনই একথা বলবো কি না ভাবছি।এর মধ্যে ইয়াজউদ্দিন সাহেব বেরিয়ে গেলেন।
কিছু ভালো লাগছে না। অফিসে থাকবো না-কি বেরিয়ে যাবো বুঝতে পারছি না। আকাশ ডাকছে বৃষ্টি আসবে বলে মনে হয়।
(২)
অফিসের গেটে টুলের উপর বসে আজগর ঝিমোচ্ছে।আমি এসেছি খেয়াল করে নি। আমি ডাক দিলাম।
- আজগর!
- জ্বি স্যার।
-আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। অল্প সময়ের মধ্যে ফিরবো তুমি আছো তো!
আজগর মনে হলো কিছুটা অবাক হলো আমি একটু থেমে আবার বললাম
- নেশায় ধরছে, সিগারেট কিনবো,দুই মিনিট যাবো আর আসবো।
- আমি এনে দেই। বড় স্যার বলেছে স্যার আসার আগে আপনি যেন বাইরে বের না হন।
- কি?
- আপনাকে দেখে রাখতে বলেছে।
- আমাকে কি নজরবন্দি করা হয়েছে?
- আমি জানি না স্যার আমি সামান্য পিওন। খালি খালি আপনাগো ক্যাচালে আমারে জড়াইয়েন না।
আজগরকে অবাক করে আমি গেটের বাইরে বের হয়ে এলাম। চমৎকার সন্ধ্যা।মেঘ সরে গেছে বৃষ্টির সম্ভাবনা দুর হয়েছে। আমি এ মার্কেট ও মার্কেট ঘুরে রূবাবার জন্য কি কেনা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে লাগলাম। মাথায় কিছু আসছে না। শাড়ি গয়না কেনার সামর্থ্য আমার নেই।
আচ্ছা এক বক্স চকলেট কিনলে কেমন হয়?রূবাবা চকলেট খুব ভালোবাসে যদিও মুটিয়ে যাবার ভয়ে তেমন একটা খায় না। সমস্যা নেই বুঝিয়ে বললে হয়তো অসন্তুষ্ট হবে না।
রূবাবা আমার উপর কেন জানি কখনওই রাগ করে না।সব কিছু চুপচাপ মেনে নেয় ।কেন সব কিছু মেনে নেয় জানি না।সম্ভবত আমার অক্ষমতা সে বোঝে।কখনও যদি আমার উপর বেশি রাগ ওঠে একদম চুপ করে যায়। খুব প্রয়োজন ছাড়া কোন কথা বলে না।
আজ ক'দিন ধরে অবশ্য আমার উপর রাগ করে আছে।রাগের কারণ আমি জানি না। গত তিনদিন সে আমার সাথে একটাও কথা বলে নি। এমনকি গতরাতে ইন্টারকোর্সের সময় চুপচাপ মূর্তির মত পড়ে ছিল।চরম আলিঙ্গনে কোন সাড়া নেই আবার আমার কোন কাজে বাঁধাও দেয় নি। বিরক্ত হয়ে মাঝপথে আমি বিছানা থেকে উঠে এসে সিগারেট ধরালাম।
রূবাবাকে চকলেট বক্সটা দিয়ে আবার অফিসে ফিরে আসতে হবে।ওকে বোঝাতে হবে যে ওকে আমি কেয়ার করি।এই শুক্রবার সিনেপ্লেক্সে পরান মুভিটা দুজনে দেখবো বলে ঠিক করলাম।
ইতিমধ্যে বস দুবার ফোন দিয়েছে
- অপূর্ব আপনি কোথায়?
- কেন স্যার আমি তো অফিসে স্যার।
- কি করছেন?
- ভিডিও কল দেবো স্যার? দেখবেন কি করছি।
- না থাক, আপনাকে বিশ্বাস করছি। আজগর আজকাল বড্ড মিথ্যাবাদি হয়েছে। তবে এত কোলাহল কেন আপনার ওখানে? মনে হচ্ছে অফিসে হাট বাজার বসেছে।
বস লাইন কেটে দিলো। আচ্ছা চাকরিটা ছেড়ে দিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে? সি এন জি চালালে আজকাল ভালো ইনকাম করা যায় শুনেছি।
চকলেট কিনে আমি তাড়াতাড়ি বাড়ি এলাম। বসকে চাকরি ছেড়ে দেবার কথা বলার দরকার ছিল ফোনে জানালেও হবে অবশ্য। মনটা ফুরফুরে লাগছে।
প্রিয় একটা গান ধরে ডোরবেল বাজালাম। কোন সাড়া নেই।রূবাবা ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি? এই ভর সন্ধ্যাবেলায় ঘুম? আমি ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে তালা খুলে ঘরে ঢুকলাম।সারা বাড়ি খুজে রূবাবাকে কোথাও পেলাম না। রাত বাড়ছে.... আমার কি অফিসে ফিরে যাওয়া উচিত।পেন ড্রাইভটা ভুল করে ফেলে রেখে এসেছি। আজগর ছেলেটাকেও একটা ফোন দেওয়া দরকার। কেন জানি ফোন দিতে ইচ্ছে করছে না।
কোথায় গেল রূবাবা? রূবাবাকে একটা ফোন দেওয়া দরকার। কাউকে ফোন দিতে ইচ্ছে করছে না। থাক ফোন বন্ধ থাক।
(৩)
ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম কি? মনে হয়।ডোরবেল বাজছে। এত রাতে কে এলো? রূবাবা? ওর কাছে ডুপ্লিকেট চাবি আছে তো?
ঘড়ির দিকে তাকালাম
বারোটা বাজে। মোবাইল অফ করা।মোবাইল অন করে চেক করে দেখলাম। বসের অনেকগুলো ফোনকল। যেহেতু চাকরি ছেড়ে দেবো কলব্যাক করার কোন দরকার নেই। ইগনোর! ইগনোর!! ইগনোর!!! ডোরবেল সমানতালে বাজছে।
দরজা খুলে রূবাবাকে দেখে চমকে গেলাম।
- কি করো?
-ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
পথ ছাড়তে ছাড়তে চোখ দুটো কচলে নিলাম।এত রাতে ও কি পার্লার থেকে এলো?চমৎকার দেখাচ্ছে ওকে যাহোক রূবাবার মন এখন মনে হচ্ছে বেশ প্রফুল্ল।দরজা খুলতে এত দেরি দেখেও মেজাজ হারায় নি । ও হো তাইতো ও কে উইশ করার এখনই সময়, ভুলটা এখনই সুধরে না নিলে এর জের বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে। সারাদিনে একবারও জন্মদিন বলে ওকে উইশ করা হয় নি কেন হয় নি সে এক রহস্য। ইদানীং আমার মনের উপর আমার নিয়ন্ত্রণ নেই সেটা বেশ ভালো বুঝতে পারছি । উইশ করার আগে আমি ওকে গিফটটা দিবো বলে ভাবছি এমন সময় রূবাবা আমাকে মিহি স্বরে ডাকলো
- এই শোনো,এদিকে এসো তোমার সাথে কথা আছে।
রূবাবার ডাক আমাকে বিমোহিত করেছে।
-আমারও কিছু কথা আছে জান। সাধারণত আমি এভাবে আহ্লাদে গদগদ হয়ে কথা বলি না ।
রূবাবা একটু অবাক হলো
-আসলে
- আসলে কি?
- আসলে... আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি আর তোমার সাথে থাকবো না।
-থাকবো না মানে কি?
- থাকবো না মানে থাকবো না।
- আমার সাথে না থাকলে কার সাথে থাকবে? এসব কি বলছো? মানছি আমি একটু অন্য টাইপের। পরিবার ছাড়া মানুষ বলেই হয়তো এমন। কিছুটা অসামাজিক। তাই বলে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।
-শুধু অসামাজিক না আমার ধারনা তুমি জটিল মানসিক সমস্যায় ভুগছো।তোমার চিকিৎসা প্রয়োজন। আর তোমার সাথে থাকতে থাকতে আমিও অসুস্থ হয়ে পড়ছি আর এভাবে থাকাও যায় না। আমি আর পারছি না।
-রূবাবা!আমি সব মানছি আই এম স্যরি।
- কথা বলো না,আজকাল তোমার কোন কথা আমার সহ্য হয় না। তুমি কি ভেবে দেখেছো? তোমার নিজের সম্পর্কে?
আসলে কি বলবো আমি একলা একটা মেয়ে আমার চাওয়া পাওয়া হাসি কান্না সুখ দুঃখ কোন কিছুর প্রতি তোমার কোন কেয়ার নেই। শুধু ঠিক ঠাক ইন্টারকোর্স করতে পারাই চমৎকার বিবাহিত জীবন নয়। এটা কি তুমি বোঝ? বোঝ?
(৪)
তুমুল কথা কাটাকাটির পর রূবাবা ক্লান্ত হয়ে বসে ছিল তারপর নিঃশব্দ ঘুমিয়ে গেছে।ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। ওকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। ফ্যানের বাতাসে ওর চুলগুলো তিরতির করে উড়ছে।হাত দিয়ে চুল সরিয়ে নেওয়ার লোভ অনেক কষ্টে সংবরণ করলাম। আজকে সত্যি সত্যি ওকে পরীর মত লাগছে।
আমার মনের মধ্যে বারবার ঘুরপাক খেতে লাগলো
রূবাবা চলে যাবে। কোথায় যাবে মেয়েটি।কি করেছি আমি? কি থেকে কি হলো কে জানে।মানছি এক্ষেত্রে আমার কিছু অভ্যাস দায়ী কিন্তু সব দোষ কি আমার একার?
জন্ম অবধি আমার ভাগ্যটাই এমন। সব কিছু আমাকে ছেড়ে চলে যায়। কখনও কখনও রূঢ় বাস্তব মেনে নিতে চায় না মন আর সেই কারণে সম্ভবত ভাবতে খারাপ লাগছে যে, ও এখন আর আমার নয়। অন্য কারো।
আচ্ছা ওর সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিটি কে? আমি কি চিনি? কবে কবে এসব হলো। আমি কি বোকা! একটু ও টের পেলাম না! আশ্চর্য!
স্বাভাবিক কৌতুহল থেকে আমি ওর ফোনটা হাতে নিলাম। যদিও এর আগে এই গর্হিত কাজটি কক্ষনো করি নি। কারণ আমি রূবাবাকে কখনও সন্দেহই করি নি।
ফোন চেক করতে করতে আমার চোখ ভিজে গেল। আমার প্রতি এত অভিযোগ অথচ আমি কিচ্ছুটি টের পাই নি।
দীর্ঘক্ষণ ভাবনা চিন্তা করার পর সিদ্ধান্ত নিলাম। রূবাবাকে আমি মেরে ফেলবো আর প্রেমিকটিকেও উপযুক্ত শিক্ষা দেবো। কিন্তু তার আগে আমাকে জানতে হবে প্রেমিকটি কে?
(৫)
ভোর চারটার মধ্যে আমার পরিকল্পনা মতো সমস্ত কাজ সেরে ফেললাম।রূবাবাকে মেরে ফেলতে খুব বেশি সময় লাগে নি তবে ওকে ওয়াশ রুমে টেনে নিতে আসাকে বেশ বেগ পেতে হলো।সমস্ত কাজ শেষে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে করতে সকাল হয়ে গেল।
ইয়াজউদ্দিন স্যারকে একটা ফোন দেওয়া দরকার না হলে বেচারা বেশ ঝামেলায় পড়বে। আচ্ছা স্যারকে বাসায় ইনভাইট করে চাকরি ছাড়ার ব্যপারটা জানালে কেমন হয়?একদম ইউনিক বুদ্ধি। আচ্ছা স্যার কি আসবে?
-স্যার আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়া আলাই কুম আস সালাম।
ইয়াজউদ্দিন কেমন যেন বিরক্ত কন্ঠে বললেন।
-কে বলছেন?
- আমি অপূর্ব স্যার।
-ও অপূর্ব সাহেব! এখনও কি আপনি অফিসে? কাজ কি শেষ করছেন?
- স্যার সকাল হয়ে গেছে তো।
- জানি আমি সব। কর্তব্যের অবহেলার জন্য আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে এটা কি আপনি জানেন?
- স্বাভাবিক
- স্বাভাবিক মানে?
-অকাজের লোক অফিসে রেখে কাজ কি আর আমিও.....
- আমিও কি?
- না কিছু না স্যার এমনি কথার কথা।
- অপূর্ব সাহেব আপনি কি জানেন আপনি মানসিকভাবে অসুস্থ?
- স্যার এই অধমের একটা আবদার ছিল।
- কাল কাজ ফাঁকি দিয়ে আমারে ফাসালেন।সাত সকালে এখন আবার আবদারের কি নাটক সাজায়েছেন?
- স্যার এত টেনশন নিয়েন না এখনও সময় আছে। আমি আপনার সব কাজ করে দেবো।কসম।শুধু আমার একটা কথা রাখতে হবে স্যার।
- কি কথা?
-একটু পরে আপনাকে আমার বাসায় আসতে হবে। মানা করলে হবে না।
- কেন? আপনার বাসায় আমার কি?
-আমার স্ত্রী আপনাকে ইনভাইট করেছে স্যার।গতকাল ওর জন্মদিন ছিল। সেই উপলক্ষে দাওয়াত দিতে বলেছিল স্যার। আমার মনে ছিল না।অনেক বকা খাইছি।
- আপনি আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে এখন মজা নিচ্ছেন?
- স্যার গরীবের বাড়ি একটু পদধূলি দেবেন স্যার এটুকু মিনতি। আমাকে বিশ্বাস করেন। আমি আপনার সাথে ফিরে গিয়ে আপনার সব কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আসবো। পাক্কা। তারপর আপনি যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়েন।আমার কোন সমস্যা নাই।
- না না আজ আমার ভীষণ ব্যস্ততা।আজ থাক।
- স্যার রূবাবা রাত জেগে আপনার জন্য রান্না করেছে স্যার।আপনি না করলে ও মনে ভীষণ কষ্ট পাবে।
- ও তাই না-কি? আচ্ছা ঠিক আছে আমি না হয় আসবো।ভাবির জন্য আসবো।তবে বেশি সময় থাকতে পারবো না অনেক কাজ আছে আমার।
- ওকে স্যার ওকে।
- একটা প্রশ্ন অপূর্ব সাহেব।
- বলেন স্যার।
- আপনাকে যদি আমি চাকরিতে পূনর্বহাল করি আপনি কি নিজেকে শুধরে ঠিক ঠাক কাজে মন দিয়ে কাজ করবেন? তাহলে আমি দায়িত্ব নিতে পারি।
- স্যার চাকরি আমার ভালো লাগে না। ভাবছি ব্যবসা করবো। যাহোক স্যার সকাল এগারোটার মধ্যে আসবেন কিন্তু খাওয়া দাওয়া করে আমাদের আবার বের হতে হবে তো।বেশ কিছু কাজ বাকি আছে স্যার।
ফোনটা কেটে গেল। ভালোই হলো রূবাবার মৃতদেহর ব্যবস্থা করতে হবে।ওর দেহের সবচেয়ে নরম মাংসটা দিয়ে ঝাল ঝাল কালা ভুনা রাঁধতে হবে।শাওয়ার ছাড়া আছে। বাথরুমে ছড়িয়ে থাকা মাংসগুলো এতক্ষণে রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে গেছে। সংরক্ষণের জন্য সহজ হবে। রান্না চাপিয়ে ডিপ ফ্রিজে রূবাবার খন্ডিত দেহাংশগুলো সাজিয়ে রাখলাম। সকাল হয়ে আসছে। দ্রুত হাত চালালাম।
(৬)
ইয়াজউদ্দিন ঠিক পৌনে বারোটায় এসে পৌছলেন।হাতে একটা উপহার ।বাড়িতে ঢুকে শুধু আমাকে দেখে জানতে চাইলেন আমার স্ত্রী রূবাবা কোথায়?
বললাম,
- ওয়াশরুমে ফ্রেশ হচ্ছে স্যার । অনেক ধকল গেছে তো। একটু ফ্রেশ হচ্ছে।
ইয়াজউদ্দিন হাসি মুখে সোফায় বসলেন । কথায় কথায় আধা ঘন্টা হয়ে গেল। ইয়াজউদ্দিন বারবার মোবাইল বের করে সময় দেখছে । আমি লক্ষ করে বললাম,
- স্যার আমি কি দেখে আসবো কতদুর কি হলো ? কি যে করে? এই জন্য মেয়ে মানুষের উপর আমার রাগ হয়। খাবার কিন্তু রেডি।
- হ্যাঁ দেখুন তো একটু।
আমি ওয়াশরুম গিয়ে আরেকবার নক দিলাম। তারপরেও দেরি দেখে বললাম।
- স্যার আপনি তো ব্যস্ত এক কাজ করা যাক।
- কি?
- আপনি খেয়ে নিন।
- বলছেন?
- জ্বি।
- আপনি খাবেন না?
- না স্যার আমি সার্ভ করি তাছাড়া
- তাছাড়া কি?
- স্যার আপনি আসবার কিছু আগে আমার খাওয়া শেষ হলো।দেরি দেখে খেয়ে নিলাম সকাল থেকে না খেয়ে ছিলাম তো। যদি বলেন তো বসি তবে আমার জন্য ব্যপারটা কষ্টকর হয়ে যাবে।
- ঠিক আছে ঠিক আছে। আমি খেতে শুরু করি তাহলে আপনি বরং ভাবিকে তাড়াতাড়ি আসতে বলেন ওনার অনুপস্থিতিকে খাওয়া শুরু করে দিয়েছি ব্যপারটা বেশ অস্বস্তিকর।
- না স্যার আপনি নিজের বাড়ি মনে করে খানা পিনা করেন কোন সমস্যা নেই।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব বেশ তৃপ্তি নিয়ে খেলেন। মাংসটা বারবার চেয়ে নিলেন। সাদা ভাত মাংস আর ডাল দিয়ে চর্বি।
- স্যার।
- বলুন অপূর্ব সাহেব।
- রূবাবাকে দেওয়া আপনার উপহারটা সত্যি অনন্য।
ইয়াজউদ্দিন শুনলো কি-না বোঝা গেল না।তিনি বললেন
-অপূর্ব সাহেব।
- জ্বি
- রান্না বেশ জমাটি হয়েছে আমার তো খাওয়া প্রায় শেষ । রূবাবা তো এখনও এলো না।
- স্যার আর পাঁচ মিনিট। কাপড় চেঞ্জ করছে বোঝেন তো মেয়ে মানুষ একটু সাজগোছ ।হয়ে এলো প্রায়। পান দেই স্যার মিষ্টি সুপারি দিয়ে।
- দিন পান দিন জর্দা দিয়েন না।
-স্যার একটা কথা?
- আবার কি?
- রূবাবাকে আপনি কবে থেকে চেনেন?
- মানে?
- আমি সব জানি স্যার।আপনি রূবাবা.... ঝালমুড়ি, চটপটি।
ইয়াজউদ্দিন মনে হলো একটু থমকে গেল।আমি মুচকি হেসে বললাম
- স্যার রূবাবা রেডি আপনাকে ডাকছে।
ইয়াজউদ্দিন রূবাবার বেডরুমে প্রবেশ করলো বিনা জড়তায়।যেন এই বেডরুমে সে বহুবার এসেছে । খুশিতে আমার গান গাইতে ইচ্ছে করছে। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে.... এখনই তো হবে খেলা।
(৭)
ইয়াজউদ্দিন বেডরুমে ঢুকে একটু ইতস্তত করলো কারণ রূবাবা এখানেও নেই।
- কোন অসুবিধা স্যার।
- রূবাবা কোথায়?
- স্যার মাংসটা কেমন ছিল?
ইয়াজউদ্দিন অধৈর্য হয়ে বলল
- বললাম তো ভালো ছিল। কোথায় রূবাবা? তাকে দেখছি না কেন?
- মাংসটা কিসের ছিল জানতে চাইলেন নাতো স্যার?
- কি অবান্তর প্রশ্ন! রূবাবা কৈ?
- কি ধরনের মানুষ আপনি। সেই থেকে পরের স্ত্রীর নাম ধরে ডাকছেন।ভদ্রতা বৱে শব্দটা এখনও অভিধান থেকে উঠে যায় নি। কি দরকার এত তার সাথে? আর যারে খুঁজতেছেন সে তো নাই। এতক্ষণে ও বোঝেন নাই?
- নাই মানে?
- নাই মানে নাই। হাওয়া.... হাওয়া হয়ে গেছে। " তুমি বন্ধু কালা পাখি আমি যেন কি! বসন্তকালে তোমায় বলকে পারি নি।....
- গান থামান অপূর্ব সাহেব। এসব কি ধরনের ফাজলামো হচ্ছে আগে বলুন রূবাবা কোথায়?
-রূবাবা আপনার পেটে।
- ছি!
- ছি নাহ এটাই সত্যি বাস্তব। আপনি যে মাংস খেয়েছেন সেটা আপনার প্রিয়তমা প্রেমিকা রূবাবার হো হো হো।
- আপনি সাইকো না-কি?
চমক কেমন দিলাম বলেন তো। নতুন একটা ঘটনা। হা হা হা দারুণ ভাইরাল হবে তাই না! লক্ষ লক্ষ ভিউ হবে।শিরোনাম হবে" প্রেমিকার মাংস দিয়ে লাঞ্চ সারলো প্রেমিক।" ভাবতেই আমার দারুণ রোমাঞ্চ লাগছে। হো হো হো কি ইয়াজউদ্দিন সাহেব কেমন দিলাম বলেন তো! প্রতিশোধ! প্রতিশোধ!! প্রতিশোধ!!! আর করবেন পরস্ত্রীর সাথে প্রেম। করবেন প্রেম?
ইয়াজউদ্দিন হড়হড়িয়ে বমি শুরু করলো। তার শরীর মোচড়াচ্ছে এদিকে আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছে উন্মাদের মত হেসে চলেছি আমি........ আমার আর হারাবার কিছু নেই যে।
সমাপ্ত
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
২০ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:১৫
ইসিয়াক বলেছেন:
গল্পের শেষটা অন্য রকম ছিল, পরে ঠিক করলাম একটু শাস্তি হোক।
ধন্যবাদ।
২| ২১ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:৪৩
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: রূবাবাকে রান্না করে ইয়াজউদ্দিন সাহেবকে খেতে দিয়ে নায়ক মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে। আগাগোড়া সাসপেন্স রেখে সুন্দর পরিসমাপ্তি করেছেন।গল্পে ভালোলাগা রইলো। শুভেচ্ছা প্রিয় ব্লগারকে।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫০
ইসিয়াক বলেছেন: চমৎকার অনুপ্রেরণা মূলক মন্তব্যে দারুণ ভালো লাগা জানবেন প্রিয় ব্লগার।
কৃতজ্ঞতা রইলো।
শুভকামনা সতত।
৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:৪৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: গল্পটা যে কতটা সুন্দর হয়েছে, বলার মতো না। এক কথায় অনবদ্য।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫১
ইসিয়াক বলেছেন: অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় ব্লগার।
শুভকামনা সতত।
৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪০
ভুয়া মফিজ বলেছেন: কিছু কমু না, খালি লাইক দিলাম।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৪
ইসিয়াক বলেছেন: কোন এ্যাসাইনমেন্ট থাকলে কইয়েন ছিইল্যা কাইট্যা চুকনগরের কালা ভূনা বানাইয়া দিমুনে
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৯:১৭
অপু তানভীর বলেছেন: মনেই হচ্ছিলো খাইয়ে দিবে !
ভালা কাম করছে !