নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হতাশাগ্রস্ত মানুষের কদর্যতাই একমাত্র অস্ত্র।

ইসিয়াক

যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ আমার মল্লিকা বনের না ফোঁটা কলি

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:১৯



আমি বরাবরই অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ ।সোজা বাংলায় যাকে বলে ঘরকুনো।লোকজনের সাথে মিশতে পারি না খুব একটা,কথা বলতে গেলে ভাষা হারিয়ে ফেলি। চেহারায় লাজুকভাব প্রবল।
যখন আমার ষোল বছর বয়স। সেই বছরে কোন এক বর্ষণমুখর দিনে আমার মনো জগতে হঠাৎ করে কি হলো কে জানে।কিছু কথা মাথাতে ঘুরপাক খেতে লাগলো অবিরাম । কি করে কি করে কবিতার মতো কিছু একটা লিখে ফেললাম।
যদিও প্রেমে পড়া হয়নি তখনও, ভালোবাসার টান কি জিনিস তাও জানি না তেমনভাবে, তবুও লেখা শেষে সটা আট লাইনের একটা প্রেমের কবিতা হিসাবে দাঁড়িয়ে গেল ।
দুরন্ত আবেগে কবিতাটি শুধু লিখেই ক্ষান্ত হলাম না। সেটি জোরে জোরে পাঠ করলাম এবং নিজেই নিজের কবিতার প্রেমে পড়লাম।মনে মনে নিজেকে বাহবা দিলাম,
- বাহ! বেশ হয়েছে তো।
এরপর থেকে প্রবল উৎসাহে। সব কাজ ছিকেয় তুলে একের পর এক কবিতা লিখে চলেছি আর মুগ্ধ হচ্ছি নিজের স্বকীয় সৃজনশীলতায়।
আমার মা আমার পড়াশোনায় অমনোযোগীতায় ভীষণ বিরক্ত হয়ে বকাবকি শুরু করলেন।তার জেরে কি-না জানি না।একটা সময় লেখালেখির জোয়ারে ভাটার টান ধরলো।পরীক্ষাও চলে এসেছে ততদিনে।
সৌভাগ্যক্রমে আমি আবার পড়াশোনায় মনোযোগী হলাম।পরীক্ষায় মোটামুটি ভালো ফল লাভ করে যখন ভার্সিটিতে এলাম আবারও আমার কবি স্বত্বা আমার সামনে এসে দাড়ালো।
তবে এবারের তীব্রতা সহনীয় পর্যায়ে ছিল অর্থাৎ টুকটাক কবিতা লেখা শুরু করলাম।
তবে আগের মত লেখাগুলো লুকিয়ে না রেখে কাছের বন্ধু বান্ধবকে পড়তে দিলাম। ওদের ভালো লাগুক বা না লাগুক বাহবা পেলাম যথেষ্ট । সেই অনুপ্রেরণায় আমি হিজিবিজি লেখা লিখে চললাম মনের আনন্দে।
পীপিলিকার পাখা ওড়ে মরিবার তরে আমার দশা হলো তাই। দিন কাটছিলো ভালোই একসময় বন্ধুদের প্রশ্রয়ে টাকা ধার করে হুট করে একটা কবিতার বই প্রকাশ করে বসলাম কিন্তু দুঃখের বিষয় বইমেলাতে সেই কবিতার বই পাঁচ কপিও বিক্রি হলো না। আমার তো মাথায় হাত। গোডাউনে জায়গা নেই এই কারণে এক সময় বাধ্য হয়ে প্রকাশকের কাছ থেকে বই তুলে নিতে হলো। এদিকে ধার দেনা করে কবিতার বই ছাপিয়েছি।বলেছি বই বিক্রি করে টাকা শোধ দেব কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি হলো। মহা ফাঁপড়ে পড়ে গেলাম। এবার কি বই চাবিয়ে চাবিয়ে খাবো না-কি কেজি দরে বেঁচে দেবো! কিন্তু টাকা শোধ দেবো কি করে?
বন্ধুরা একটা আইডিয়া দিলো। আইডিয়া মত
আমি কবিতার বইগুলো সাইড ব্যাগে বয়ে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশে ফেরি করে বেড়াতে লাগলাম সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে।সারাদিন ঘুরে ঘুরে বই বিক্রির চেষ্টা করি। প্রথম প্রথম সাড়া না মিললেও এই প্রচেষ্টার ফল একেবারে বৃথা গেল না।স্কুল কলেজ পড়ুয়া অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা সাধারণত খুব আবেগ প্রবণ আর নিঃস্বার্থ হয়।তারা আমার কবিতার বই বিক্রিতে ভীষণভাবে সাহায্য করলো।কবির হাত থেকে সরাসরি বই কেনা আড্ডা বাজি, অটোগ্রাফ নেয়া,সেলফি তোলা ধুমসে চলল।
মাস দুয়েকে মধ্যে বিক্রিত বই থেকে বন্ধুদের টাকা পরিশোধ করে কিছু টাকা বেঁচে যাওয়াতে আমি সেই বাকি টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে বেশ তৃপ্তিও পেলাম। এদিকে বই বিক্রির সূত্রে আমার ফ্যান ফলোয়ার বেশ বৃদ্ধি পেল।এটাও একটা ভালো দিক আমার জন্য।

অন্যদিকে আমার জীবন সংগ্রহ চলছে।মায়ের বয়স হয়েছে ।সংসারের দায় খানিকটা এখন আমার কাধে।আমি টিউশনি করছি আর চাকরির জোর চেষ্টা চালাচ্ছি বিভিন্ন অফিসে ধর্ণা দিয়ে দিয়ে কিন্তু চাকরি সে এক সোনার হরিণ তার দেখা মেলে না আর।
তবুও ডাকপিওনেয় অপেক্ষায় থাকি। মেইল চেক করি।মেইল সেন্ড করি।একদিন মেইল চেক করতে গিয়ে দেখি একটা আনঅফিশিয়াল মেইল এসেছে আমার জিমেইল একাউন্টে ।মেইল ওপেন করে পড়ে যা বুঝলাম।মেইলদাতা আমার বইয়ের কবিতা পড়ে মুগ্ধ হয়ে মেইল করেছে ।
কেউ একজন আমার কবিতা পড়ে এই প্রথম লিখিতভাবে তার মুগ্ধতা প্রকাশ করলো।এটা সত্যিই অপ্রত্যাশিত। আমি ভীষণ রকম রোমাঞ্চিত হলাম।মেইল এসেছে অলিজা নামের একজনের কাছ থেকে ।আমার কবিতার বইয়ে আমার মেইল এ্যাডড্রেস আর ফেসবুক আই ডি দেওয়াই ছিল। সেখান থেকে সে আমাকে ফলো করে একথাও সে মেইলে উল্লেখ করতে ভুল্ল না।আরো জানালো সে আমার একনিষ্ঠ ভক্ত। নিজেকে ভাগ্যবান মনে হলো।

যাহোক রিপ্লাই না দিলে খারাপ দেখা যায়।আমি ফিরতি ম্যাসেজে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। এরপর বেশ অনেকদিন আমাদের মেইল চালাচালি চলল।ফেসবুকেও ইন্টারেকশন চলল সমানতালে।অলিজা আসলেই অন্যরকম মানুষ।ওর চিন্তার ব্যপ্তি বিশাল ।
ওর সংস্পর্শে আমার নতুন লেখা কবিতাগুলো সংশোধিত হয়ে নতুন মাত্রা পেতে লাগলো।তার প্রজ্ঞা ও মেধার ছায়াতলে আমি সমৃদ্ধ হতে লাগলাম।এমতাবস্থায় একদিন অলিজা বলল এবার সে আমার সাথে সরাসরি দেখা করতে চায়।
আমি রাজি না হবার কোন কারণ খুঁজে পেলাম না। একদিন বেশ সাজুগুজু করে ওর সাথে দেখা করতে গেলাম।আগেই বলেছি অলিজা মানুষ হিসাবে অতি চমৎকার। এত সুন্দর করে কথা বলে। সামনাসামনি আরও আকর্ষনীয় মনে হলো। সত্যি বলতে কি আমি ওকে দেখে ওর প্রেমে না পড়ে আর থাকতে পারলাম না।
আলাপচারিতায় সে আমার কবিতা গুলো চমৎকার বিশ্লেষণ করলো, ভুল ক্রুটি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করলো এবং কয়েকটি চমৎকার কবিতার বই উপহার হিসাবে দিলো।এছাড়া আমার কিছু কবিতার ভালো দিক,শব্দ চয়ন,ছন্দ বাক্যবিন্যাস নিয়ে প্রশংসা করতে ভুলল না।সবচেয়ে অবাক হলাম যখন জানলাম আমি আমার কবিতাগুলো নিয়ে যেভাবে ভাবিনি কিন্তু আমার কবিতা পড়ে ওর ভাবনায় সেসব চিন্তা চমৎকার ভাবে ধরা দিয়েছে দেখে।সে সব নিয়েও আলোচনা চলতে লাগলো ঘন্টার পর ঘন্টা।কি অদ্ভুত আমার কবিতা অন্যের চিন্তাভাবনায় কি দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে ভাবতেই গর্বিত বোধ হলো আমার। মনে হলো এতদিনে আমার লেখা লিখি সার্থক।
এরপর থেকে বেশিরভাগ সময় আমরা একসাথে কাটাতে লাগলাম।বন্ধুদের অলিজার ছবি দেখালাম। আমার বন্ধুরা আমাকে রীতিমতো হিংসা করতে লাগলো।ওরাও অলিজার সাথে পরিচিত হতে চায়।ওদিকে মালয়েশিয়া থেকে অলিজার বাবা মা এসেছে। অলিজা ওর বাবা মায়ের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো।উনাদের ব্যবহারেও আমি মুগ্ধ।
আমি ঠিক করলাম অলিজাকে আমার ভালোবাসার কথা জানাবো।
সেদিন সেজেগুজে অলিজাকে প্রেমের প্রস্তাব দেবো বলে বাড়ি থেকে বের হলাম।
কিন্তু কি এক দ্বিধার কারণে বলতে পারলাম না।কাকতালীয়ভাবে সেদিন অলিজা জানালো সে আমাকে স্পেশাল কিছু বলতে চায়।
আমি তো খুশিতে ডগমগ হয়ে তার হাত ছুঁয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
কিন্তু অলিজা যা বলল তাতে আমার মনটা ভেঙে গেল। আমি একটা মারাত্নক ভুল করে বসলাম।এক বুক অভিমান নিয়ে আমি প্রথমে হোস্টেলে তারপর গ্রামে ফিরে এলাম। নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হলাম।ছি ছি সমাজ সংসারে তো আমি মুখ দেখাতে পারবো না। এমন একটা ভুল কি করে করলাম আমি। নাহ! বড্ড বোকা আমি।
সত্যি বলতে কি, ব্যাপারটা মেনে নিতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল।
কিন্তু মনের টান অন্য জিনিস। একটু থিতু হতে আবার ফিরে এলাম হোস্টেলে।আর যাহোক অলিজার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করা যাবে না। চমৎকার একজন মানুষ।সব সম্পর্ক একটা চরম পরিণতিতে নাও পৌঁছাতে পারে। তাই বলে..
কিন্তু ফিরে এসে ওদের ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম অলিজা ওর বাবা মায়ের সাথে মালয়েশিয়ায় চলে গেছে।তবে ওর কর্তব্য করতে ভোলেনি। আমার জন্য রেখে গেছে ছোট্ট একটা চিঠি।
প্রিয় নেহাল
আশা করি ভালো আছো। আমিও ভালো আছি যে টুকু থাকা যায়।প্রথমে দুঃখ প্রকাশ করছি তোমার মনটা ভেঙে দেওয়ার জন্য। আমি জানি তুমি আমায় ভীষণ ভালোবাসো। আমি সত্যি মুগ্ধ তোমার ব্যবহারে।
যাহোক তুমি মিছে কষ্ট পেও না।তোমার দিকটা আমি বুঝি।সমাজকে তুমি বোঝাবে কি দিয়ে,তাই না?এরম সম্পর্ক হয় না আসলে।ভুলটা আমারই তোমার ভুলটা প্রথমেই ভেঙে দেওয়া উচিত ছিল কিন্তু মানুষ তো আমি। কোথায় যেন লোভ কাজ করে।কারো ভালোবাসা পাওয়ার লোভ। একান্ত সান্নিধ্যে আসার লোভ। আসলে আমার জন্মগত কিছু ক্রুটি আছে যা তোমাকে বলেছি।আমাকে এসব মানায় না সেও আমি জানি।কি আর করা সবার সব আশা তো পূরণ হয় না।মেনে নিতেই হয়।। তাই ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও তোমার ভালোবাসা পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হলো না।তাই দুরে সরে যাওয়াই ভালো নয়- কি তবে আমরা ভালো বন্ধু হতেই পারি। পারি তো? দেখা হবে কোন একদিন।কথা হবে বাকি যা আছে। ভালো থেকো বন্ধু।
শুভকামনা সবসময় ।
ইতি তোমার প্রিয়
অলিজা
এরপর অলিজার সাথে আমার আর দেখা হয় নি।ও আর ফেরেনি বা যোগাযোগও করেনি। কেন জানি।সেদিন আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ও খুব আহত হয়েছে ওর তখনকার অনুভূতি দেখে বুঝেছি। আসলে আমার ওভাবে রিএ্যাক্ট করা উচিত হয়নি।কি করবো চিরন্তন বাঙালি সংস্কার আমার মনটাকে ওভাবেই গড়তে সাহায্য করেছে৷ চাইলেই অতটা উদার হতে পারিনি।
সবার সব আশা পূরণ হবার নয় তা আমি জানি তবু এখনও অপেক্ষা করি অলিজার পথ চেয়ে।মাঝে মাঝে মেইল করি। রিপ্লাই পাই না। হয়তো কোনদিন দেখা পাবো তার এ আশায় বুক বাধি।
সমাপ্ত

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৩৪

অধীতি বলেছেন: আলিজারা ফিরে আসুক সেই বৃষ্টি দিনের কবিতার মত হুটহাট করে চোখে বাদল নিয়ে।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:৫২

ইসিয়াক বলেছেন:


একটু সহমর্মিতা পেলে অলিজারা সুন্দর একটা জীবন পেতে পারে। কিন্তু সেটা বেশির ভাগ সময় হয় না। কারণ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা অলিজার মত মানুষের জন্য শুধু বিড়ম্বনা বয়ে আনে, সমাধান দিতে পারে না। আমিও খুব করে চাই অলিজারা ফিরে আসুক। মিশে যাক জন অরণ্যে।

শুভকামনা রইলো। ভালো থাকুন সব সময়।

২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৪৪

জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন!

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:৫৩

ইসিয়াক বলেছেন:







ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার। শুভেচ্ছা রইলো।

৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৯

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: চমৎকার গল্প!

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:৫৩

ইসিয়াক বলেছেন:




অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় ব্লগার।
শুভ সকাল।

৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫২

খায়রুল আহসান বলেছেন: গল্পটা খুব সুন্দর! ভালো লেগেছে।
শিরোনামটাও সুন্দর।
পৃথিবীতে আঁতুড় ঘরে মানূষের জন্ম-মৃত্যুর সংখ্যা যত, আঁতুড় ঘরে ভালবাসার জন্ম-মৃত্যুর সংখ্যাটা তার চেয়ে বেশি।
পোস্টে প্লাস। + +

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৩

ইসিয়াক বলেছেন:








চমৎকার মন্তব্যে ভালো লাগা জানবেন প্রিয় ব্লগার।
গল্প এবং শিরোনাম ভালো লেগেছে জেনে অনুপ্রাণিত হলাম।

পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা।

ভালো থাকুন সব সময়।

৫| ০৭ ই জুন, ২০২৩ রাত ১১:৩০

সুজন আহসান বলেছেন: অলিজারা ফিরে আসুক। গল্প ভালো লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.