নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হতাশাগ্রস্ত মানুষের কদর্যতাই একমাত্র অস্ত্র।

ইসিয়াক

যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ বহুগামী আখ্যান

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:২১



শেষ রাতের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে,
তমিজউদদীন মনে মনে একটু লজ্জা পেলো মনে হয় ।যদিও লজ্জার অনুভূতি এখন আর তার ক্ষেত্রে খুব একটা কাজ করে না,তবু কেমন যেন লজ্জা মিশ্রিত অস্বস্তি তার চেহারায়।

আজকের অনাচারের সাক্ষী পূর্ণ চাঁদের নির্লজ্জ চাহনি তার অস্বস্তির কারণ।

তমিজউদদীন প্রথম যৌবনে ভীষণ লাজুক ছিলেন তারপর সেই লজ্জা পড়শী এক ভাবির স্পর্শে সেই যে ভাঙলো তারপর থেকে....

অবশ্য লাজ লজ্জা বেশি হলে জীবন উপভোগ করা যায় না।ইচ্ছা মত আনন্দ ফূর্তি করতে না পারলে কিসের এই মানব জনম।
সমাজ নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই কারণ এই ভঙ্গুর সমাজের সেই ই অধিপতি। অন্য দিকে বাকি থাকে পাপ পূন্যের হিসাব।
ঠুকনো পাপ পূন্যের ভয়ে কামরস আস্বাদন থেকে সে দুরে থাকতে পারবে না।সে ভেবে রেখেছে শেষ বয়সে কামেল মৌলবী দেখে তওবা সেরে নেবে। ব্যাস হিসাব বরাবর।

উদোম গা'য়ে হাত বুলাতে বুলাতে শেষ শরতের রাতের সমস্ত দ্বিধা ঝেড়ে একটানে লুঙ্গিটা খুলে টুপ করে দিঘির জলে ডুব দিল সে। আহ শান্তি।

সুরাইয়া মেয়েটা সত্যি ভীষণ কাজের।ওর দেহের ভাঁজে ভাঁজে প্রেম। হাজার ডুবেও তৃষ্ণা মেটে না।

প্রতিবার ফরজ গোসলে তমিজউদদীনের যথেষ্ট সময় ব্যয় হয়। বিশেষ করে বাজারি মেয়েগুলোকে সোহাগ করে আসার পর ইদানিং তার কেন জানি গা ঘিন ঘিন করে। সুরাইয়া অবশ্য এখন আর কারো সাথে বসে না।তবুও গা ঘিন ঘিন করে। মেয়েছেলেদের দিয়ে কেন বিশ্বাস নাই।

তমিজউদদীনের অবশ্য প্রত্যেকবার অনুগমনের সময় মনে হয় অনেক হয়েছে আর না কিন্তু খাসলত যায় না ধুলে।শরীরও বড় বেয়াড়া। কি আর করা। ফূর্তি ছাড়া কি আছে জীবনে।

ভোর রাতে পানির আন্দোলন আর গোসলের হুশ হাস শব্দের মধ্যে আরও একটি শব্দ হয় ঝুপ করে। শরীর মর্দন করতে করতে এতদুর থেকে সে শব্দ কানে আসে না তমিজউদদীনের।
স্নান সেরে ফজরের নামাজ আদায় করে তমিজউদদীন ।তারপর ইমাম সাহেব বিদায় হলে তিনি বুখারি শরীফ থেকে হাজিরান মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে হাদিস পাঠ করে শোনান।এসময় নিজের প্রয়োজনে কখনও কখনও মন গড়া ব্যাখ্যাও দেন। আজ কেন জানি শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে। জয়নালের উপর দায়িত্ব দিয়ে তিনি মসজিদ থেকে বের হয় আসেন।

বড় বাজারের নাম করা ব্যপারি সে।মুন্সি বাড়ির বড় ছেলে। এলাকার নামকরা গন্যমান্য রাজনীতিবিদ হিসাবেও প্রতিষ্ঠিত।
এক কথায় বলা যায় ক্ষমতা প্রতিপত্তি সব তার হাতের মুঠোয় ।তার মুখের উপর কথা বলার লোক খুব কমই আছে এ তল্লাটে। তাকে তোয়াজ করে চলে কম বেশি সকলেই।কথায় আছে গরজ বড় বালাই।বাড়াবাড়ি করলে গিট্টু কি করে পাকাতে হয় সেটা তার ভালো করেই জানা আছে।

মুসুল্লি সঙ্গ ত্যাগ করে বাড়ি ঢোকার মুখে মড়া কান্না শুনে ঈষৎ বিরক্ত হয় সে।এখন একটু বিশ্রাম নিতে হবে। এর মাঝে কে আবার নাটক শুরু করলো । সকাল সকাল এই ধরনের বিরক্তিকর পরিস্থিতি তার একেবারে পছন্দ নয়।বিবিদের মধ্যে মাঝেমাঝে গোল বাঁধে যা সত্যি বিরক্তিকর।ইদানীং মেজবিবি আর সেজবিবির লড়াই তুঙ্গে। কি হলো কে জানে? যত্তসব!
এমন সময় দরদালানে জসিমউদদীনকে দেখে হাক মারে সে
- কি হইছে রে সাত সকালে? কান্দে কেডা?চুপ করতে ক।আইলে কইলাম কাইট্টা ফালামু। বড় বেশি তেল জমছে।
- আব্বা মাইঝা আম্মা গলায় দড়ি দিছে!
তমিজউদদীন একটু থমকে দাড়ায়।কি যেন ভাবে।কিছুটা পরে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে তবে তা ক্ষনিকের জন্য। তৎক্ষণাৎ হাসি মিলাতে সময় লাগে না।
মনে মনে ভাবে আপদ বিদেয় হয়ে ভালো হয়েছে,বাজা মেয়েছেলে তার একদম পছন্দ না। তার উপর ভয়ানক শীতল।তমিজউদদীন জীবনে বহুত মেয়েছেলে ঘেঁটেছে। এমন নিস্প্রান একটিও মেলে নি। শুধু রূপ থাকলে হয় না।সঙ্গীকে খুশি করতেও জানতে হয়।ওর জন্য এটাই নিয়তি।সুরাইয়া মেয়েটি বড্ড অভাবি যাক ওর কপালটা খুলল এতদিনে।নিকার বন্দোবস্ত করতে হবে।
মুহুর্তে তমিজউদ্দিনের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে যায়।জসিমউদদীন কে ইশারায় ডাকে সে। এই ছেলেটি কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী তবে তার খুব বাধ্য কিন্তু কতকাল বাধ্য থাকবে তার গ্যারান্টি নাই। ছেলেটি তার ঔরসজাত নয়।ভয়টা সেখানেই।আশ্রয়হীন জীবন থেকে মুক্তির কারনে হয়তো কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ দেখায় কিন্তু মানুষের চরিত্র রাতারাতি বদলায়। কখন ফাল হয়ে দেখা দেয় বলা যায় না।
জসিমউদদীন কাছে এলে নিচু স্বরে জানতে চায় ।
-অবস্থা কি? মরছে?
-না?আব্বা। বাঁচইচ্যা আছে তয় হাসপাতালে লইতে হইবো।
- কোন কাম নাই। কিসসা এই হানে শেষ।বালিশ চাপা দিগা যা। তাড়াতাড়ি কর লোকজন আইয়া পড়বো।
-মাইরা ফালামু?
- হ
- কিন্তু ?
-কথা শুনস নাই?
-শুনছি। আব্বা একটা কথা কই?
- ক
- আমার ডর করে।
- তুই কি মাইয়া মানুষ?
-আর কত মানুষ খামু।
- যা কইছি কর গিয়া,কথা বাড়াইস না। মেজাজ চড়তাছে কইলাম।
বেলা ন'টায় পুলিশ আসে।চারদিকে লোকে লোকারণ্য।
অভিযোগঃ
জসিমউদদীন সর্দার বাড়ির মেজ বউকে গলা টিপে হত্যা করেছে তারপর ফ্যানে ঝুলিয়ে দেওয়ার পর আত্নহত্যার মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে।কতখানি সাহস। এজন্য পর মানুষকে আশ্রয় দিতে নাই। কদিন ধরে সর্দার বাড়িতে আধিপত্য নিয়ে ঝামেলা চলছিল.. কি একটা অবস্থা। মেজবিবি আর সেজবিবির দ্বন্দ্বের কারণে এ বাড়ির সবাই অস্থির ছিল এ বাড়ির সবাই।
তার ফলশ্রুতিতে এই হত্যা।
সেজ বৌ জুলেখা আছাড়িপাছাড়ি দিয়ে কাঁদছে। জসিমউদদীন তমিজউদদীনের নিজের ঔরসজাত ছেলে না হতে পারে তাই বলে তারে এত বড় অপবাদ?আহারে তার আগের ঘরের সন্তানটা এবার সত্যি সত্যি ভেসে গেল। একটি মানুষের খারাপ কর্মফল অন্য দুটি মানুষ ভোগ করবে কেন?কে জানাবে কাকে? বেলা বাড়তে থাকে। নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলে। জসীমউদ্দিন, মেজ বউ আর সেজ বউ এর চরিত্রের ব্যবচ্ছেদ হয় রসিয়ে রসিয়ে।

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: বেশ ভাল লিখেছেন।
তবে এরকম গল্প প্রচুর আছে। গল্পে নতুনত্ব কিছু নেই।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৫৭

ইসিয়াক বলেছেন:









ওকে। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
শুভেচ্ছা।

২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:০১

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: পড়লাম, ভালোই হয়েছে।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৫৯

ইসিয়াক বলেছেন:





পাঠ ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা রইলো।
শুভেচ্ছা।

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৪০

মিরোরডডল বলেছেন:




তমিজউদদীন চরিত্রটা এই সমাজেরই একটা অংশ ।
নরকের কীট !!!!
এদেরকে কি করা উচিত, কি শাস্তি হলে উপযুক্ত হবে X((



৪| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: +++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.