নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হতাশাগ্রস্ত মানুষের কদর্যতাই একমাত্র অস্ত্র।

ইসিয়াক

যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতি কথাঃ (তিন) আমার ভিনদেশী প্রেমিকা

২০ শে মে, ২০২৩ দুপুর ২:২২


অনেক কাট খড় পুড়িয়ে অবশেষে স্কুলের গন্ডী পেরুবার শেষ পরীক্ষাটা শেষ করে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
আহ শান্তি!
ভালোয় ভালোয় এবার পাশ করতে পারলে বাঁচি। তার আগে অবশ্য মৌজ মাস্তি করবার জন্য তিন মাস সময় হাতে আছে! সেটা কাজে লাগাতে হবে।
যেহেতু পরীক্ষা সমাপ্ত লেখাপড়ার ঝামেলা নেই তাই অখণ্ড অবসর।কি করবো কোথায় যাবো? এটা ভাবি ওটা ভাবি, কোন দিশা নাই। কথায় আছে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।নানা রকম বাঁদরামি ই এখন অবসর কাটানোর অবলম্বন ।
আমার দাদা বাড়ীর নিচে জঙ্গলের ধারে মেটে পুকুর নামে একটা দীঘি আছে। সেই মেটে পুকুরের পাড়ে বড় আম গাছের নীচে দিন রাত এক করে তাস খেলি।দুপুরের দিকে গরম ধরলে পুকুরে নেমে সমমনা সঙ্গীদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেই পানিতে ।সাঁতার খুব ভালো না জানলেও ডুব সাঁতার চিল সাঁতার কাটার অনুশীলন চালাই। সেই সাথে চলে আরও নানান কসরত।যেমন পানিতে ডুব দিয়ে মাথা নিচে রেখে পা উপরে তোলা। তবে লুঙ্গি পরা থাকলে এই কসরতটা কিন্তু বিপজ্জনক!
এছাড়া কে কতক্ষণ পানিতে ডুব মেরে থাকতে পারে। ফুটবল অথবা টেনিস বল দিয়ে অদ্ভুত কিছু খেলাও খেলি। শহুরে পোলাপান বলে পানির ভিতর এমন খেলাধূলা করা যায় সেটাই জানা ছিল না। নতুন অভিজ্ঞতা। নিঃসন্দেহে দারুণ আনন্দময়।
এগুলো বাদেও কখনও কখনও মন চাইলে ই সাইকেল চালিয়ে হুটহাট দুর দূরান্তে ঘুরতেও বেরোই। সুন্দরী মেয়ে দেখলে উদাস হই।তাহাদের কৃপা দৃষ্টির আশায় করুন চোখে তাকাই।
সুন্দরীরা না-কি ভীষণ অহংকারী হয়। তারা আমার দিকে ফিরে তাকায় না। মনে কষ্ট নিয়ে ফিরে আসি।
পরীক্ষা শেষে মুক্ত স্বাধীন জীবন। শাসন বিহীন জীবনের পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করছি তখন।অভিভাবক বলতে দাদীজান।যেহেতু দাদীজানের অতি আদরের আমি, সেহেতু তাঁর কাছে আমার সাত খুন মাফ!
তবে আমি খুব সাবধানী ছিলাম। বাড়িতে নালিশ আসতে পারে এমন কোন কাজ পারতপক্ষে করতাম না।
যাহোক এরমধ্যে একদিন বন্ধুরা সবাই মিলে ঠিক করলাম বনভোজন করতে হবে।ভরা জোছনার রাত দেখে মাঠের মধ্যে আয়োজন।দিনেই রান্নার উপকরণ জোগাড় করে রাখা হয়েছে।রাতে রান্নার সময় মনিরুল মুরগী নিয়ে আসবে সেরমই ঠিক ঠাক।আড্ডা বাজী শেষে একটু রাত করে দেশি মুরগির মাংস আর সোনামুগ ডালের ভূনা খিচুড়ি রান্না শেষ হলো।তারপর দারুণ আয়েশ করে আহার পর্ব শেষ করলাম। বিশাল ভোজনে সবাই পরিতৃপ্ত। চোখ ঢুলু ঢুলু।এদিকে তখন রাত দুইটা বেজে গেছে। এবার যার যার বাসায় ফিরবার পালা ।আমি যাবো একটু বিশ্রাম শেষে ফেরবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন সময় আমার গ্রাম সম্পর্কে চাচা মুক্তি এসে বেশ বিনয়ী ভঙ্গিতে বলল
-শোন অপূর্ব একটা ছোট্ট সমস্যা হয়ে গেছে।
আমি ঘাসের উপর শুয়ে মাথাটা একটু উচু করে ধরে বললাম
- কি সমস্যা হলো আবার ?
- মনিরুল তো একটা ভুল করে ফেলেছে।
- ভুল!কি ভুল করেছে।
- মানে..
- ঢং করছিস ক্যান?ঝেড়ে কাশ।
- ও তো তোদের বাড়িতে অপারেশন চালিয়েছে।
- মানে?
- আসলে টাকা তো শর্ট?বুঝিসই তো আমরা তো সবাই বেকার।প্লান ছিল মল্লিকদের বাগান থেকে নারকেল ঝাড়বো সেই টাকায় বনভোজন হবে। কিন্তু গতকাল মল্লিকারা সব নারকেল পেড়ে ফেলেছে।
- মানেটা কি? আমার কাছ থেকে তো টাকা নিলি।
- হু কিন্তু ওতে তো শুধু.... সে জন্যই তো বলছি ভুল হয়ে গেছে।
- সেই থেকে কি ভুল ভুল করেই যাচ্ছিস। কিছু ই তো বুঝি না।আসল কথা খুলে বল।
- মনিরুল আর হারুন মিলে তোদের বাড়িতে ই অপারেশন চালিয়েছে। মানে মুরগীগুলো তোর দাদীজানের।
আমি তো থ! বলে কি!
- মুরগীগুলো সব আমাদের বাড়ির?
- হ্যাঁ, এটা আমাদের কারো না মনিরুলের বুদ্ধি। আল্লাহর কসম। ও বলল তেল লবন খরচ যখন অপু দিয়েছে। মুরগীগুলোও ও দিক।
- ওরে হারামজাদার দল!
ততক্ষণে অবশ্য সবাই পগার পার, আর আমি? আর কি করি! বুদ্ধু হয়ে বসে আছি। রাত হচ্ছে এখন বাড়ি ফিরতে হবে।সকালে তো খোঁজ পড়বেই তখন যা হয় একটা বুদ্ধি বের করতে হবে। এখন কিল খেয়ে কিল হজম করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

পরদিন সকালে মুরগী ছাড়বার সময় সুফিয়া খালা খবর আনলো পাঁচটা মুরগী মিসিং।তার মধ্যে একটা ছা'ড় দেওয়া বড় মোরগ, দুইটা ডিম পাড়া মুরগী আর একটা নবীন মুরগী।আমার বুদ্ধিমান দাদীজান তো রেগে অস্থির।কে করলো এই কাজ।কার এত বড় বুকের পাটা। তিনি খুব দ্রুত মুরগী চোর ধরার মিশন শুরু করলেন।শুরু হলো এলাহী কান্ড ! ঘটনা এমন প্যাঁচ লেগে যাবে আমি আগে ভাবি নি। আমি পড়লাম মহা বিপদে।মান সম্মান মনে হয় এবারই যাবে।দারুণ ইমেজ সংকটে আমি না পারছি সত্যি কথা বলতে না পারছি গিলতে।
এদিকে চোরের খোঁজে খানা তল্লাশি চলতে লাগলো।এদিক ওদিক লোক পাঠানো হলো।সর্ষের মধ্যে ই যখন ভুত চোরের খোঁজ পাওয়া কি অতই সহজ!
তবে ঘটনার মোড় ঘোরাতে সারাদিন আমাকে নানা কসরত করতে হলো ।
দাদীজান জাঁদরেল স্পাইদের বুদ্ধির সাথে পারা অবশ্য চারটেখানি কথা না। উনার স্পাইদের মুখ বন্ধ করতে আরও বেশ কিছু গাঁটের পয়সা খসে গেল সেদিন।তবে দাদীজান শেষ পর্যন্ত ঘটনা কি তা জেনে গেলেন।তিনি বকাঝকা না করলেও আমার মেলামেশার গন্ডী সীমিত হয়ে গেল।
কিন্তু বয়সটা এমন সঙ্গ ছাড়া থাকা মুশকিল।ঘর বন্দী হয়ে গল্পের বই পড়ে আর গান শুনে কতই বা সময় কাটে।
যাহোক কিছু দিন বাদে পরিস্থিতি স্বভাবিক হতে দাদীজানকে অনেক বুঝিয়ে আমার প্রিয় বন্ধু বরুন আর কামালের সাথে মেলামেশার অনুমতি পেলাম।ওরা অবশ্য দাদীজানের আস্থা ভাজন ছিল। কিছু দিন পর একদিন চৌগাছার উত্তরণ সিনেমা হলে নাইট শো দেখে ফিরছি। যেহেতু রাত বারোটার বেশি বাজে রাস্তায় যানবাহন নেই, সেকারণে হেঁটে হেঁটে বাড়ির পথ ধরেছি। বরুনদের বাসার কাছাকাছি এসেছি এমন সময় ঝড় বৃষ্টি শুরু হলো।
সেই রাতটা আমরা বরুণদের বাড়ি কাটালাম। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালার পর্দা সরাতে কপোতাক্ষের শাখা নদী মুক্তেশ্বরীতে ঝকঝকে দারুণ এক সুন্দরীর দেখা পেলাম।টকটকে লাল সূর্যের সামনে এক অপরূপ রমনীর সূর্য স্নান আহ, অতি অপূর্ব দৃশ্য ! অতি মনোরম।এ যে সাক্ষাৎ রূপে লক্ষী। বরুণের কাছে জানতে চাইলাম
- মেয়েটা কে রে?
- ইন্ডিয়া থেকে আসছে।আমার কাকার ছোটশালীর মেয়ে। নাম চন্দ্রাবতী। তাকাস না জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাবি।
এরপর থেকে আমার আর কামালের স্থায়ী আস্তানা হলো বরুণদের বাড়ি। সারাদিন ওদের পাড়ার ক্লাব ঘরে আড্ডা দেই আর মিতালী বউদির হাতের সুস্বাদু রান্না খাই।মনের তৃষ্ণা মেটাতে দুর থেকে চন্দ্রাবতীকে প্রাণ ভরে দেখি।
আহা ওর রূপের জাদু আছে।
চন্দ্রার সাথে এসেছে ওর মা। ভদ্রমহিলা দারুণ কড়কড়ে স্বভাবের ।সে জন্য চন্দ্রার ধারে কাছে ঘেষার সুযোগ খুব একটা হলো না।তবে চিঠি চালাচালি পর্ব শুরু হতে দেরি হলো না। বরুনই সব ব্যবস্থা করেছিল। ও ছিল আমাদের মধ্যস্থাকারী।
মিতালি বউদি টের পেয়ে একদিন ফিসফিসিয়ে বললেন
- এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। যা করো বুঝে শুনে করো।
চন্দ্রবতী খুব শীঘ্রই ফিরে গেল। যাবার আগে চন্দ্রা আমাকে ভারতে যাবার আমন্ত্রণ জানালো। আমার তো খুশিতে ডগমগ অবস্থা। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সামনে দূর্গা পূজায় আমরা ভারত ভ্রমণে যাবো।বরুণ অবশ্য বলল
- না দেবী চন্দ্রাবতী দর্শনে যাবো।যা হোক রথ দেখা আর কলা বেচা দুটোই হবে।
আমি যখনকার কথা লিখছি তখনকার সময় ইচ্ছে খুশী ভারতে ঢোকা আমাদের জন্য কোন ব্যপার ছিল না । শীতের রাতে বর্ডার পেরিয়ে সদলবলে গান( যাত্রা / বই) দেখতে যাওয়া নিত্য নৈমিত্তিক ব্যপার ছিল।টালিগঞ্জের নায়ক নায়িকারাও সেসব অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিয়মিত আসতেন।রাত ভোর চলতো সে সব অনুষ্ঠান। এর মধ্যে একদিন চন্দ্রবতীর খোঁজে গিয়ে তার দেখা না পেলেও "অচল পয়সা" পালা দেখে এসেছি। খুব শীঘ্রই আসবো চিঠি লিখে এসেছি।লোক ঠিক করে রেখে এসেছি সময় মত পৌঁছে যাবে সেই চিঠি ওর কাছে।

বরুনের বড়দি পূজাদি বনগাঁর সংলগ্ন বয়রায় থাকেন।আমরা ঠিক করলাম ওখানে আস্তানা গাড়বো।ওখান থেকে চন্দ্রদের বাসাও কাছে।
এক বিকেলে তপন কবিরাজ নামে একজনের বাড়িতে সাইকেল জমা রেখে মাঠ ঝোপঝাড় পেরিয়ে বর্ডার সংলগ্ন একটা পাড়ার মধ্য দিয়ে পূজাদির উঠানে পৌঁছে গেলাম অল্প সময়ের ব্যবধানে।আমরা উপস্থিত হতেই টাকা ভাঙানোর অনেক লোভনীয় প্রস্তাব নিয়ে লোকজন ভীড় জমালে দাদাবাবু ওদের দাবড়িয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরে বারান্দায় আসন পেতে আমাদের বসবার আয়োজন করে দিলেন।
অল্প কিছু সময়ের ব্যবধানে জলখাবারের ব্যবস্থাও হয়ে গেল।পুজাদির মত দাদাবাবু খুব সজ্জন মানুষ। তিনি উত্তর প্রদেশের একটা ছোট শহরে কি একটা কাজ করেন। এখন এই পুজোর দিনগুলো পরিবারের সাথে কাটাবেন বলে বাড়িতে ফিরে এসেছেন। যদিও এটা তার আসল বাড়ি নয় তার আসল বাড়ি বাংলাদেশের ধূলিয়ানী গ্রামে। অনেক হিন্দু পরিবারের মত তিনিও কিছুটা খেয়ালে কিছুটা অভিমানে দেশান্তরি হয়েছেন।
বাংলাদেশে থেকে ভারতের অজন্তা কোম্পানির হাওয়াই চপ্পল আর কিছু বিশেষ পোষাক সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম সেই সাথে ভাষাগত কিছু উচ্চারণ সামলে আর এলাকা নেতা " এম এল এ " এর নাম মুখস্থ করে আমরা অচিরেই স্থানীয় হয়ে গেলাম। বাজারে গিয়ে বি এস এফদের সামনে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াই বীর দর্পে, নিজেদের সাহসের তারিফ নিজেরাই করি।আর যেহেতু সময়টা উৎসবের তাই মৌজ মাস্তির কোন কমতি ছিল না। সারাদিন মাইকে তখনকার জনপ্রিয় ভারতীয় বাংলা ছবি মান মর্যাদা,রক্তেলেখা,পাশের বাড়ি আর হিন্দি সিনেমা দিওয়ানার হিট গান গুলো অনবরত বেজে চলেছে।খুব শীঘ্রই চন্দ্রাবতীর দেখা পাওয়া গেল। সেও দারুণ উত্তেজিত। আমরা হাট মাঠ ঘাট বাজার ভিডিও হল ঘুরে দারুণ সময় কাটাতে লাগলাম।
চন্দ্রাবতী বয়রা বাজারের রায় বাড়ির অমলেন্দু রায়ের ছোট মেয়ে।এলাকায় ওর বাবার দারুণ নাম ডাক। তিনি আবার পঞ্চায়েত প্রধানও। যদিও ওর নাম চন্দ্রা তবে ওকে আমি কলকাতার রসগোল্লা নামানুসারে বয়রার রসগোল্লা নাম দিলাম। তখন আমি বরুণের দিদির যত্ন আত্নিতে মনে হয় আমরা বাড়িতেই আছি তার উপর সাথে আছে যখন বয়রার সেরা সুন্দরী।
চন্দ্রাবতী সত্যি দারুণ লাস্যময়ী ছিল। যেমন বাচনভঙ্গি তেমন তার হাসি। প্রতি বাক্যালাপে যেন মুক্ত ঝরে। আর চন্দ্রার ড্রেস সেন্স.... মরে যাই মরে যাই অবস্থা আমার।
ওকে একটু দেখার জন্য রায়বাড়ির সন্মুখে দাড়িয়ে থাকি নানা উছিলায়।সমস্যা বুঝলে কাছাকাছি ভিডিও হলে ঢুকে মুভি দেখি। চন্দ্রাবতীরও দূর্বলতা ছিল মুভি উপর। কোন কোন দিন দুজনে পাশাপাশি বসে মুভি দেখি।পরে জেনেছিলাম ও শাহরুখ ভক্ত যদিও শাহরুখ তখন নতুন আর এদিকে আমি ছিলাম দিব্যা ভারতীর অন্ধ ভক্ত। চন্দ্রা যখন "মিলনে কে তুম কোসিস করনা ওয়াদা কভি না করনা" গাইতো কি যে দারুণ লাগতো।মনে হতো সাক্ষাৎ দিব্যা ভারতী আমার সামনে বসে আছে ।
খুব স্বাভাবিক আমি চন্দ্রার প্রেমে পড়েছি সেটা না বললেও চলে। এতে অবশ্য বরুণের একনিষ্ঠ প্রশ্রয় ছিল।বরুণের সহযোগিতায় বিশেষ কায়দায় আমরা দেখা করতাম। খুব বেশি কথা না বললেও আমরা হাত ধরে বসে থাকতাম।একে অন্যকে অনুভব করতাম। এক সময় আমার ভালো লাগা প্রকাশ করলাম। চন্দ্রা আমার হাত জড়িয়ে ধরে অনেক ক্ষণ বসে থাকলো। একদিন এসব কথা ই হচ্ছিল হঠাৎ চন্দ্রা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
-কিন্তু অপূর্ব তুমি ভিনদেশী, আবার ভিন্ন জাতের।আমাদের মিলন কি সম্ভব? তাছাড়া আমার বিয়ে এই অগ্রহায়ণে। পাকা দেখা আশীর্বাদ সব হয়ে গেছে।এখন?
আমি কিছু শুনছিলাম কিনা জানি না। চন্দ্রার কথায় সম্বিৎ ফিরে পেলাম। সেই তো এলে তবে এত দেরিতে কেন?
- তুমি কি আমায় ভালেবাসো না?
- ভালোবাসি কিনা জানি না তবে তোমাকে দেখলে আমার মনের মধ্যে কেমন কেমন করে। সেই প্রথম দিন থেকে।
- প্রথম দিন থেকে?
- ওই যে সূর্য স্নানের দিনে
হঠাৎ কি হলো কে জানে পেছন থেকে কে যেন আমার পিঠে কষে এক বাড়ি মারলো। প্রচন্ড ব্যথায় আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত। তার মধ্যে শুনতে পেলাম কে একজন হিসহিসিয়ে বলছে
- সোজা ফিরে যা। না হলে কিন্তু মাল খিঁচে সোজা লোপাট করে দেবো।
এরপর আর কখনও চন্দ্রার দেখা পাই নি। পরে শুনেছি চন্দ্রাকে মেদিনীপুরে ওর দিদির বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর ভারতে আমার আর মন টিকছিলো না। একদিন সকালে মাটির বারান্দায় চাটাইয়ে শুয়ে আছি।বাইরে অঝোর ধারা হঠাৎ মনে হলো ফেরা দরকার। দেশের প্রতি, নিজের বাড়ি বিছানার প্রতি দারুণ এক টান অনুভব করলাম। বরুণকে বললাম বাড়ি যাবো কিন্তু বরুণ জানালো মাশিলা বর্ডারে অবস্থা খারাপ। বি এস এফ আজ দুজনকে গুলি করে মেরেছে।কাবিলপুর বর্ডারেও একই অবস্থা তবুও আর এক দন্ড সেখানে থাকতে রাজী হলাম না। তখনই রওনা দিলাম। সামনে আশ্বিনের উত্তাল কপোতাক্ষ নদী। নদীর ওপারে বাংলাদেশ। সাঁতার ভালো জানি না। এদিকে ঘাট কান্দায় বি এস এফ দেখলে সন্দেহ করতে পারে। ইদানীং চোরাচালানকারীদের দৌরাত্ম্যের কারণে নানা রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।কিছু বা ভেবে নদী সাঁতরে পার হবো ভেবে নদীতে ঝাপ দিলাম। মাঝ নদীতে এসে মনে হলো যেন এখনই ডুবে যাবে তবু প্রাণপণে সাঁতার কাটছি হঠাৎ মনে হলো আমার পা ধরে কেউ টানছে। আমি ডুবে যাচ্ছি ঠিক তখন সর্ব শক্তি দিয়ে পানির উপরে ভেসে উঠবার চেষ্টা করলাম।সৌভাগ্যক্রমে দেখি প্রায় এ পাড়ে পৌঁছে গেছি।নদীতে নাইতে নামা লোকজনের সাথে অনতিবিলম্বে মিশে গেলাম।
আহ বাংলাদেশ! নিজের দেশ!
চন্দ্রার সাথে আমার প্রেম পর্ব এখানেই শেষ হলো।এরপর অবশ্য চন্দ্রার সাথে আরও একবার দেখা হয়েছিল।আজ এটুকুই থাক সে গল্প না হয় অন্য আরেকদিন করবো।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৪

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: আহা চন্দ্রাকে হারানোর দুঃখ সামলানো সোজা কথা নয়।

২৪ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৯

ইসিয়াক বলেছেন: কোন কোন ব্যথা চিরকাল বুকে বেজে চলে।
ভালো থাকুন। প্রিয় ব্লগার। শুভেচ্ছা রইলো।

২| ২০ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৩

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: পড়তে পড়তে চোখটা কখন যে ভিজে এল টের পাইনি।

২৪ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩০

ইসিয়াক বলেছেন: অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় ব্লগার।
ভালো থাকুন। সবসময়।
শুভকামনা।

৩| ২০ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৫:১৪

নস্টালজিয়া ইশক বলেছেন: আমার ভিনদেশি তারা
একা রাতেরই আকাশে
তুমি বাজালে একতারা
আমার চিলেকোঠার পাশে

২৪ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩২

ইসিয়াক বলেছেন:
"নস্টালজিয়া ইশক" আপনাকে আমার ব্লগে স্বাগতম।

পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন।
শুভেচ্ছা।

৪| ২৩ শে মে, ২০২৩ রাত ১২:৩১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: চন্দ্রার সঙ্গে পরে আবার দেখা হওয়ার স্মৃতিটা ঝটপট লিখে ফেলুন। লেখাটা চ্যালেঞ্জিং এবং সুখপাঠ্য হয়েছে।

২৪ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৫

ইসিয়াক বলেছেন: আমার জীবন বিচিত্র অভিজ্ঞতার সমাহার। কত কত স্মৃতি জমে আছে। অনেক স্মৃতি লেখা যাবে কি-না সেসব নিয়েও দ্বিধা আছি। চন্দ্রার কথা আবার লিখবো হয়তো।
পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় ব্লগার।
শুভেচ্ছা সতত।

৫| ১০ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ১১:৩২

খায়রুল আহসান বলেছেন: ঝরঝরে লেখায় মিষ্টি প্রেমের (লভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট) গল্পটা বেশ উপভোগ্য হয়েছে।
চন্দ্রা যে তবু দেখা করে তার অপারগতার কথা জানিয়ে গেছে, এটাই কিছুটা স্বস্তির কথা।
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেনঃ "চন্দ্রার সঙ্গে পরে আবার দেখা হওয়ার স্মৃতিটা ঝটপট লিখে ফেলুন" - আমিও তাই বলছি।
পোস্টে দশম প্লাস। + +

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.