নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।
(১)
স্কুলের চাকরি থেকে অবসরে গ্রহণের পর স্বাভাবিকভাবেই আমার প্রত্যাহিক রুটিনে বড় ধরনের একটা পরিবর্তন এলো।
সেই সূত্রে প্রতিদিন দুপুর শেষে আমি আমার বাসার সামনে শহীদ মসীয়ূর রহমান পৌর পার্ক সংলগ্ন লেকের পাড়ের কোনার দিকে একটা বেঞ্চে বসে সময় কাটাই।গাছগাছালির ছায়ায় জায়গাটা বেশ নিরিবিলি আর আমার পছন্দেরও বটে।
এই সময়টাতে আমি সাধারণত বই পড়ি না হয় কবিতা আবৃত্তি করার চেষ্টা করি কিন্তু ইদানীং উটকো কিছু ছেলে ছোকরা এসে বেশ ঝামেলা বাধায়। তাতে বিরক্ত হলেও কিছু করার নেই।
বছরখানেক আগেও এই পার্কে তেমন একটা লোকসমাগম হতো না কিন্তু ইদানীং ভীড়টা বড্ড বেশি।কখনও কখনও সেই ভীড় অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে বিরক্তির চুড়ান্ত হয়।আসলে শহরে লোকজন খুব দ্রুত ই বাড়ছে কিন্তু সে-তুলনায় বিনোদন কেন্দ্রের যথেষ্ট ঘাটতি।
যাহোক প্রতিদিনকার মত সেদিনও আমি আমার পছন্দের জায়গায় বসতে গিয়ে দেখি সুন্দর পরিপাটি সাজে একটি মেয়ে সেখানে বসে আছে। বসবো কি বসবো না ভাবতে ভাবতে আমি আসন গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিলাম।মেয়েটি বিরক্ত ই হলো মনে হয়।আমার দিকে কোন রকম একবার তাকিয়ে তৎক্ষনাৎ মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে সে অন্য কারো সাথে ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো আর আমিও ওর কর্মকাণ্ডকে একদমই পাত্তা না দিয়ে আমার কাজে মনোযোগী হলাম।
এরপর থেকে মেয়েটি নিয়মিত ই আমার বেঞ্চটি অর্ধেক দখলে নিয়ে নিলো। প্রথম প্রথম উৎপাত মনে হলেও আস্তে আস্তে অভ্যাস্ত হতে সময় লাগলো না।
কিছু দিন বাদে খেয়াল করলাম দিন যত যেতে লাগলো মেয়েটির প্রতি সূক্ষ্ম একটা টান অনুভব হতে লাগলো।বিশেষ করে মেয়েটি আসতে বিলম্ব হলে সে সময়টাতে আমি আমার কাজে ঠিক মত মন বসাতে পারতাম না।
একদিন কি একটা কাজে আমি শহরের বাইরে গেছি যাওয়া হয় নি পার্কে। পরের দিন ও পার্কে যেতে আমার বেশ একটু দেরি হয়ে গেল।
আমি পৌঁছাতেই মেয়েটি শশব্যস্ত হয়ে উঠলো।চোখে মুখে স্পষ্ট খুশির ঝিলিক দেখে বুঝতে বাকি রইলো না সে আমাকেই আশা করছিল।বেশ আন্তরিকতার সাথে ই বলল
- ওহ আপনি এসেছেন! ভালো হলো।নিশ্চয় ভালো আছেন?
বিনিময়ে আমি মুচকি হাসি দিলাম।
মেয়েটি আবার বলল
- জানেন আমার না বেশ চিন্তা হচ্ছিল।
-তাই না-কি? আমি তার আন্তরিকতায় খুশি হলাম।
সে আরো বলল
-আমি ভাবলাম আপনার হয়তো শরীর খারাপ করেছে। তাই আসছেন না।খোঁজ নেবার দরকার ছিল কিন্তু আপনার কোন ঠিকানা তো আমার জানা নেই।
- বাইরে একটু কাজ ছিল। তাই..
- লক্ষ করেছেন কি-না জানি না প্রতি দিন এক জায়গায় বসতে বসতে আমাদের মধ্যে কেমন একটা অদৃশ্য সম্পর্ক হয়ে গেছে তাই না? সেদিন কিন্তু আপনার অস্থিরতাও আমি লক্ষ করেছিলাম।অথচ আমরা তেমন করে কেউ কাউকে চিনি না।এর আগে আমরা কেউ কারো সাথে সেভাবে কোন কথাই বলি নি।তবুও কি অদ্ভুত টান!
- হুম।
- আপনি বোধহয় খুব বই পড়তে পছন্দ করেন?
- এই৷ একটু আধটু।
- জানেন আমিও না অবসরে বই পড়ি।
- বাহ!
- জানেন আমাদের বাসায় আমার মা খুব বই পড়েন।সেই অভ্যাসের খানিকটা আমিও পেয়েছি বলতে পারেন । বাসা থেকে যেদিন আমাকে বের করে দেওয়া হলো সেদিন আর কিছু না বইগুলোর জন্য কান্না পেয়েছিল আমার।
এ-ই একটি বাক্যে আমার আগ্রহের পারদ হঠাৎ ই চড়ে গেল কিন্তু স্বাভাবিক ভদ্রতায় আমি বহু কষ্টে নিজের কৌতুহল দমন করলাম।এই প্রথম আমি ওর দিকে ভালো করে তাকালাম।মেয়েটির উগ্র সাজপোশাকের আড়ালে একটা কোমল ও একাকী মন আবিষ্কার করলাম।এরপর আমরা খুব শীঘ্রই ভালো বন্ধু হয়ে উঠলাম।
নিয়মিত আমরা যখনই বসি বই কবিতা গল্প উপন্যাস নিয়ে আলাপ করি।এর মধ্যে ওর বয়ফ্রেন্ডের ফোন এলে ও ওর মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ে আর আমি আমার কাজে মন দেই।
কয়েক সপ্তাহ পর ও হঠাৎ ই মিসিং। টানা সাত আট দিন কোন খোঁজ নেই। প্রথম দুই এক দিন গেলে আমি ভাবলাম এসে যাবে হয়তো অন্য কাজে ব্যস্ত আছে সম্ভবত ।দিন দশেক বাদে আমি পার্কে পৌঁছবার আগে দেখি সে বসে আছে নির্দিষ্ট বেঞ্চটিতে।আমি প্রায় এক ছুটে ওর কাছে পৌঁছলাম এবং জানতে চাইলাম
- আরে তিতলী কোথায় হারিয়েছিলে এ ক'দিন?
তিতলী মুখ খোলবার আগে ওর চেহার দেখে আমি চমকে গেলাম।একি চেহারা হয়েছে ওর। ভাঙাচোরা বিধস্ত। ঝড় শেষে অসহায় আশ্রয়হীন কোন পাখি যেন।আহা!
অনেক পরে তিতলী কান্না থামালো। তারপর যা বলল তাতে বুঝলাম ওর বয়ফ্রেন্ড ওকে ছেড়ে চলে গেছে। বহু চেষ্টাতেও এই সম্পর্কটা ও বাঁচাতে পারে নি।এরকম ঘটনা নাকি এই প্রথম নয় আরও বেশ কবার ই ঘটেছে। শুধু ওর ভালাবাসা নয় টাকা পয়সাও হাতিয়ে নিয়ে তারা দুরে সরে যায়।আর এভাবে ভালোবাসা হারানোর কষ্ট বারবার ওকে আঘাত করে।তবুও মরিচীকা পিছনে ছোটে অতৃপ্ত বাসনায়
মন তরল হলে ভরসা পেলে মানুষ অনেক গোপন কষ্ট সহজে ব্যক্ত করে হালকা হয় । আর সেকারণেই হয়তো তিতলী ওর জীবনের এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা আমাকে জানালো যা আমাকে প্রচন্ড ব্যথিত করলো।
(২)
অবহেলা প্রবঞ্চনা এসব তিতলীর জন্য নতুন কিছু না। খুব ছোটবেলা থেকে তিতলী পারিবারিক বৈষম্যের শিকার।ছয় সন্তানের পিতা মোখলেসউদ্দীন শহরের বড় নামকরা ব্যবসায়ী। বড় বাজারের গুলিস্তান বেকারীর নাম ডাক সারা শহর জুড়েই আছে। যেকোন রিকশাওয়ালাকে বললেই সেখানে একটানে পৌঁছে দেবে কিন্তু সেখানে তিতলীর যাবার এখতিয়ার নেই এমনকি বাড়িতেও। খুব ছোটবেলা থেকে ই পরিবার থেকে বারবার তাকে বের করে দেবার চেষ্টা হয়েছে একমাত্র মা ই তাকে বুকে আগলে রেখেছিল কিন্তু তিনিও শেষ ঠেকাতে পারেন নি।
মোখলেসউদ্দীন একবার ব্যবসার কাজে ভারতে গেলে তিতলীকেও সঙ্গে করে নেন।পাড়ার লোকজনে জানে তিতলী সেখানকার কোন এক শহরে ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে গেছে ।আসল ঘটনা হলো মোখলেসউদ্দীন তিতলীকে মাদ্রাজের এক নির্জন শহরে ছেড়ে দিয়ে আসেন যেন সে আর ফিরতে না পারে। এবং সচেতনভাবেই কিছু টাকা ধরিয়ে দেয় তিতলীকে নিজের বিবেকের দায় মেটাতে। এই ঘটনার পরবর্তী দিনগুলো তিতলীর জন্য ছিল ভয়াল ভয়ংকর।অনেক কষ্টে বছরখানেক পরে সে দেশে ফিরে এলেও বাড়িতে আর সেভাবে জায়গা হয় নি তার।
এত কিছুর পরেও কারোর প্রতি এই দুঃখী মানুষটির কোন অভিযোগ নেই। শুধু একটাই অভিযোগ তার আর একজনেরই বিরুদ্ধে। তিনি আর কেউ নন।তিনি মহান সৃষ্টি কর্তা!
তাঁর দরবারে শুধু একটাই অভিযোগ তিতলীর কোন অপরাধে এবং কি কারণে তাকে এই অভিশপ্ত জীবন দিলো সে।কেন সে তাকে অসম্পূর্ণ মানুষ রূপে তৈরি করে এই অপমানের জীবন দিলো। কি তার অপরাধ?সে তো কোন কালে কারো মুখাপেক্ষী হতে চায় নি শুধু একটা সুন্দর পরিবারিক পরিবেশ চেয়েছে। চেয়েছে একটু নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
এরপর তিতলী উঠে চলে গিয়েছিল।ফেরে নি আর কোন কখনও।তবু কোথায় একটু আশা ছিল হয়তো ফিরবে।ও সম্ভবত ওর ফোন নম্বর টাও বদলে ছিল। আসলে তিতলী ভীষণ অভিমানী ছিল।
পরিশিষ্টঃ
অনেক দিন পরে অন্য একটা শহরে গেছি ডাক্তার দেখাতে। হঠাৎ বাসে হুলুস্থুল কান্ড। সেখানে দেখি এক চেনা মুখ।তবে আজ সে রূপ বদলে ছেলে সেজেছে। তিতলীও আমায় দেখেছে এবং চিনতে পেরেছে তা ওর চোখ দেখে বেশ বুঝতে পারলাম। চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে ছিলাম কতক্ষণ জানি না কিছু বলবো কি- না ভাবছি। এমন সময় ওদের দলের একজন মেয়ে বেশ হেড়ে গলায় চেঁচিয়ে উঠলো আরে মধুমিতা এমন ঠাই দাড়িয়ে থাকলে চলবে? কাম কাজে মন লাগা।বড়মা জানলে কিন্তু রাগ করবে।আজ অনেক টাকা কালেকশন করতে হবে মনে নেই না-কি। এক সময় তিতলীর দলটি নেমে গেল বাস থেকে। বাস ও চলতে শুরু করলো।এ পৃথিবী কখনও থেমে থাকে না। তিতলী অথবা মধুমিতার সাথে ওই দিনই আমার শেষ দেখা। এরপর তিতলী চিরদিনের মতো হারিয়ে গেছে।মিশে গেছে জনঅরণ্যে।ও যেখানে থাকুক ভালো থাকুক এটাই প্রত্যাশা করি। এর বেশি কি'বা করার আছে আমার।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:১০
প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল
৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বেল ভালো লাগলো মাদ্রাজে বর্তমানে চেন্নাইতে ছেড়ে আসা মোখলেসউদ্দিনের তিতলির পরিণতি। +
বহুদিন পর আজকে চেষ্টা করে কোনো ব্রাউজার দিয়ে নয় ফেসবুক লিংক ধরে ফুল ভার্সনে ঢুকতে পারলাম। জানিনা এই সুযোগটা কতদিন পাবো।
আশাকরি ভালো আছেন।
শুভেচ্ছা প্রিয় ইসিয়াক ভাইকে।
৪| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:২৩
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: দুঃখের জীবন
৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৩
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: এই কমেন্টটি ডিলিট করবেন।
এক- এবং দিয়ে কখন বাক্য শুরু হবে না। সম্ভব হলে এর আগে দাঁড়ি তুলে দিয়ে যৌগিক বাক্যে রাখতে পারেন।
দুই -বিভক্তিকে কখনও পৃথক বসাবেন না।
আর 'বিরক্ত' যেহেতু অব্যয় কাজেই এর সঙ্গে কোনো বিভক্তি বসবে না। পোস্টে যেমন লিখেছেন ( বিরক্ত ই) অন্যস্থানে (হঠাৎ ই)
তিন- একটা স্থানে টাইপো চোখে পড়লো।'ওর চেহার' আছে।
দয়াকরে কমেন্টটি ডিলিট করবেন।
যদিও ছোটখাটো বিষয়। শুধু আপনি বলেই উল্লেখ করলাম।
৬| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:১২
বিজন রয় বলেছেন: কবিতা বাদ দিয়ে গল্প লিখে ও টাইপ করে এত কষ্ট করার কি দরকার।
৭| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:২১
রাজীব নুর বলেছেন: লিখেছেন কষ্ট করে তাই পড়লাম।
গল্প ভালো হয়নি। দুর্বল গল্প।
৮| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: তিতলী মানে প্রজাপতি। প্রজাপতিরা হারিয়ে যায়।
৯| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৩:০৪
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ভালো লিখেছেন, ভালো লেগেছে।
১০| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪
মোগল সম্রাট বলেছেন:
ভালো লিখেছেন।
তিতলীরা বিশ্বাস করে করে ঠকে । অনেকে ঘুরে দাড়ায় অনেকে ঝড়ে পরে
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:৫২
নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন দাদা...