নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।
(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি টাকা দিয়ে ২৫০ গ্রাম মাছ নিয়ে নিলাম।জানি যুথী ঝামেলা করবে।সে ছোট মাছ কাটতে চায় না।যেহেতু এই মাছ আব্বার পছন্দ করেন সেহেতু আব্বাকে নিয়েও দু'চারটা বাজে কথা শোনাতে ছাড়বে না।
কেন যে যুথী আব্বাকে সহ্য করতে পারে না সেটা বুঝি না। আমার আব্বার মত নিরীহ মানুষ খুব একটা দেখিনি অথচ.. আব্বা অবশ্য একপ্রকার আলাদাই থাকেন।শুধু তিনবেলা খাবারটা আমি উপরে দিয়ে আসি।যদিও রান্নাটা তিনি নিজেই করতে চেয়েছিলেন আমি নিষেধ করেছি।সারাজীবন তো আমার জন্য কত করলেন আজ শেষ বেলাতে এসেও যদি নিজের রান্নাটা নিজে করতে হয় তাহলে আর কি হলো।
অনেককেই সংসারের চাপে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয় তবে আর যাই হোক না কেন আমি আব্বাকে পুরোপুরি ত্যাগ করতে পারিনি।আব্বার কাছে পৃথিবী বলতে আমি।আমিও...
যে মানুষটা জীবনের সমস্ত শখ আহ্লাদ ত্যাগ করে শুধু মাত্র আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আর ঘরসংসার পর্যন্ত করেননি। আমাকে ভালো রাখার জন্য পুরেটা জীবন ব্যয় করেছেন। আমাকে খাইয়ে পরিয়ে মানুষ করার চেষ্টা করেছেন। আজ নিজের সুদিনে কি করে তার প্রতি অবিচার করি। তাছাড়া এই বয়সে তিনি যাবেনই বা কোথায়? আমার একটা দায়িত্ব আছে না?তাছাড়া তার তো যাবার মত অন্য কেন জায়গাও নেই। আসলে আমাদের তেমন কোন আত্নীয় স্বজন নেই। অন্তত বাবার সাথে তেমন কারো যোগাযোগ নেই ।এ প্রসঙ্গে বাবা বরাবরই নীরব থেকেছেন। আমিও আর তেমন করে ঘাটাইনি তাকে। এই তো বেশ আছি।ভালো আছি এক প্রকার।
আমাদের পাড়াতে বহুতল ভবনগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র আমাদের বাড়িটাই দোতালা। আব্বার জীবনের সবটুকু সঞ্চয় দিয়ে এই বাড়িটা করেছেন।
আব্বা দোতালায় দক্ষিণমূখী ইউনিটের দুই রুমের ছোট ফ্ল্যাটে থাকেন।অন্য পাশটা ভাড়া দেওয়া। বিয়ের আগ পর্যন্ত আমি আব্বার সাথেই থাকতাম। বিয়ের পর বিশেষ কারণে যুথীকে নিয়ে নিচতলায় চলে এলাম।এছাড়া আমাদের সাথে থাকে আমাদের একমাত্র ছেলে রাব্বি।প্রত্যেক তলা দুটে করে ইউনিট। নিচতলার অপর ইউনিটটাও ভাড়া দেওয়া হয়েছে।এই ভাড়ার টাকায় আমাদের সংসারের বাজারের খরচটা মোটামুটি ভালোই চলে যায়। ভাবছি আব্বাকে বলে নিচতলার রাস্তার দিকের ইউনিটের সন্মুখভাগ ভেঙে শাটার লাগিয়ে দোকান হিসাবে ভাড়া দিবো। এতে এককালীন কিছু থোকা টাকা আসবে ভাড়াও বেশি পাওয়া যাবে।আমাদের পাড়াটা বড় বাজারের বিপরীত দিকে হলেও এদিকটায় ইদানীং বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে।অনেকগুলো দোকান বসে গেছে ইতিমধ্যে ।
এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে পথ হাঁটছি রাস্তার মোড়ে হঠাৎ তাজুল কাকার সাথে দেখা। ভদ্রলোক বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু । বেলা হয়ে যাচ্ছে। এর বেশি দেরি হলে যূথী ঝামেলা করবে।দ্রুত সালাম পর্ব শেষে চলে আসবো ভাবছি কাকু প্রশ্ন করলেন
- কি অবস্থা তোমাদের?
- এই তো কাকা চলে যাচ্ছে।
-অনেক দিন তোমাদের বাসায় যাওয়া হয় না।
- আসবেন সময় করে। সমস্যা নেই। আব্বা খুশি হবে।
- আমি তো আজই যেতাম কিন্তু
- কিন্তু কি..
- তোমাদের বাড়িতে কি কোন আত্নীয়স্বজন এসেছে ? নতুন লোকজনদের সামনে যেতে আমার বড্ড অস্বস্তি হয়।
-আত্নীয় স্বজন? কই? নাতে!
- এই তো সকালেই দেখলাম।ভুল দেখলাম কিনা জানি না।বয়স হচ্ছে তো, কি দেখতে কি দেখেছি কে জানে। প্রথমটায় আমি বিশ্বাসই করিনি।ভাবলাম হয়তো চোখের ভুল।তারপর অনেকক্ষণ মনোযোগ দিয়ে দেখলাম।
- কি দেখলেন কাকা?
-তোমাদের দোতার বারান্দায় তোমার বাবার সাথে একজন ভদ্রমহিলা বসে আছেন। পাশে তোমার বাবা।বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে.. কি বলবো.. তোমার বাবা ওনাকে আবার কি একটা খাইয়ে দিচ্ছিলেন। রুমাল দিয়ে মুখও মুছিয়া দিচ্ছিলেন। কে উনি?
- আব্বা অচেনা অজানা মহিলাকে খাইয়ে দিচ্ছেন!
আসলে আমি কি উত্তর দেব বুঝতে না পেরে বোকার মত হেসে জোর কদমে হাঁটতে লাগলাম। মনে মনে ভাবলাম কাকুর মাথাটা গেছে মনে হয়।
আমি জন্ম হওয়া অবধি থেকে আব্বাকে চিনি।আব্বার প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে আমার। তিনি মোটেও অনাচার করবার লোক নন। কিন্তু কাকু বিনা কারণে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলবেন কেন? যেখানে আব্বার সাথে তার একটা চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। তাহলে?
(২)
বাসায় ফিরতে আমাকে দেখা মাত্র যূথী যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।ভুলটা আমারই ছিল স্যান্ডেল পায়ে ঘরে ঢুকে পড়েছি,সাত সকালে ঘর ধোয়ামোছা হয়ে গেছে কে জানতো! আমি শান্তি রক্ষার্থে চুপচাপ ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। বকাবকি যতক্ষণে থেমে যাওয়ার কথা ততক্ষণে আরও বেশি বৃদ্ধি পেল। আজ কি কারণে এত ক্ষেপলো বুঝতে না পেরে একটু কান খাড়া করলাম। রাব্বির কোন সাড়া শব্দ নেই তার মানে সমস্যা রাব্বিকে নিয়ে না অন্য কিছু। কি নিয়ে ঝামেলা বুঝে ওঠার আগে ওয়াশরুমের কাজ শেষ হয়ে গেল দরজা খুলতেই গরম বাক্যবান আমার কান ঝালােপালো করে ছাড়লো
- আমি আগেই জানতাম।আমার কথার তো কোন দাম নেই এই সংসারে। ছি! ছি!! ছি!!! আমার মা তো মুরুব্বী মানুষ তার কথারও কোন দাম নেই।দাম সব তো উনাদের কথার। একেকটা জজ ব্যারিস্টার। এখন দেখ, দেখ কেমন লাগে।ও কাকে কি বলছি। তোদের আর কি তোদের তো লজ্জা সরম নাই। এর আগেও কবে কবে আরও কি কি করছে কে জানে।হুহ! লেকচার। সব না-কি সৎ সতী। মানুষের মধ্যে আর মুখ দেখানোর উপায় থাকলো না। ওরে এসবই যদি করবি দুরে গিয়ে মরলি না কেন?মানুষ কি বলবে মানুষ! হুহ! বুড়ো বয়সে ভীমরতি।মনে হয় ধরে একেবারে কেটে ছেড়েদি। ছেলেও কি কম। যেমন বাপ তার তেমন ছেলে। কথায় আছে না বাপ কা ব্যাটা সেপাইকা ঘোড়া। হায়া লজ্জা কিছু নেই এদের। থাকা যায় এই আঁটকুড়েদের সংসারে? আমি বলে থাকি।কিন্তু আর না।লাথি মারি এমন সংসারে। ওরে তোদের তো জীবন শেষ আমার ছেলেটার কি হবে? ও আল্লা লোকে কি বলছে। লোকে আর ওরে দাম দেবে।লেকে তো বলবে, বলবে কি বলা শুরু করেছে... ওকে যে সারাটা জীবন কথা শুনে শুনে মরতে হবে।আমার তো মনে হচ্ছে এখনি গিয়ে বড় আঁশ বটিটা দিয়ে বুড়োটার গলা ধড় থেকে নামিয়ে দিয়ে আসি। লুচ্চার ঘরের লুচ্চা! বুইড়া বয়সে এ কী কিত্তি বিত্তি ছি! ছি!! ছি!! .. !
ঠিক তখনই তাজুল কাকার কথাটা মাথায় এলো বুঝতে পারলাম ঝামেলাটা আব্বাকে নিয়ে। দুয়ে দুয়ে চার.. তার মানে কি সত্যি সত্যি বাবার বাসায় অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ এসেছে? কে?
হঠাৎ যুথীর মোবাইল ফোন বেজে উঠলো
-হ্যাঁ তাবাসসুম বল।
-তোরা ঠিক আছিস?
- মানে?
-সারাপাড়া তোদের নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গেছে। তোর শ্বশুরের ফ্ল্যাটে না-কি..
- হু আর বলিস না।আমি তো কিছুই জানতাম না।জানিসতো লোকের ঘর দুয়ারে গিয়ে উঁকি মারা স্বভাব আমার একেবারেই নেই। সকালে রতনের মা ফোন দিয়ে খবরটা জানালো।আমাদের বাসার দোতালায় নাকি রাধাকৃষ্ণ লীলাখেলা চলছে।আমি আর ভাবতে পারছিনারে । আমার এবার এ বাড়ি ছাড়ার সময় হলো মনে হচ্ছে। বাপ ছেলের কীর্তিতে আমি অতিষ্ঠ।লোকজনে আর কত কথা শুনবো বল? আজ বাপ একটাকে ধরে এনেছে কাল ছেলে আরেকটাকে ধরে আনবে। লুচ্চাদের আবার কোন মান সম্মান বোধ আছে না-কি? কপাল পুড়বার আগে নিজের পথ নিজে দেখা ভালো। রাব্বির ওঠার সময় হলো ও ঘুম থেকে উঠলে আমি আসছি।অনেক কথা আছে । আজ রান্না বান্না সব বন্ধ। এই সংসারের মুখে এই লাথি মারলাম।
যুথী ফোন কেটে দিয়ে এবার ও আমার উপর এক প্রকার ঝাপিয়ে পড়লো।
- এখন তো প্রমান হলো? হলো প্রমান?
- কি আবার প্রমান হলো।সকাল সকাল কি শুরু করলে
- মা ঠিকই বলছিল।মা ঠিকই বলছিল।তোমার বাপের তাকানে ভালো না। তোমার বাপটা একটা মিচমিচে শয়তান।হাড়ে বজ্জাত।
-এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে বলছি।
- বাড়াবাড়ি? আমি বললেই তো বাড়াবাড়ি।তোমার বাপের বুড়ো বয়সে এত রস আসে কোথেকে? আমাদের কথা একটু ভাবলো না।এই না-কি ছেলের জন্য সারাজীবন ভেবেছেন।সর্বস্ব ত্যাগ করে জীবন যৌবন উৎসর্গ করেছেন । এই তার নমুনা!
-সেই থেকে বহুত উল্টোপাল্টা বকছো। মাথা মুন্ডু কিছুই তো বুঝতে পারছি না। কিসে কি হলো ঠিক করে বলো তো।সকাল সকাল এত অশান্তি ভালো লাগছে না।
- ভালো না লাগার আর কি হয়েছে। এতো কেবল শুরু।সারা পাড়া ঢিঢি করে গেছে।আধ দামড়া এক ঘাটের মড়া কচি একটা মেয়েকে নিয়ে ঘরে তুলেছে। দুদিন পরে আন্ডা বাচ্চা হবে।বছর ঘুরতে শরীক বাড়বে।এ বাড়ি নাকি তোমার একার? সম্পত্তি এবার বেহাত হলো বলে ছি! ছি!! ছি!!! সারা পাড়া.. আমি রাব্বিকে নিয়ে মায়ের ওখানে যাচ্ছি। আজই এর একটা সমাধান চাই। না হলে আমি আর ফিরছি না। হুহ্।
-সেই থেকে..
- সেই থেকে কি? বলো সেই থেকে কি?তোমার বাপধন ঘরে মেয়ে ছেলে তুলেছে। সবাই জানে,সবাই দেখেছে। এক চোখ নয় হাজার চোখ দেখেছে আর উনি না-কি কিছু জানেন না উনি কিছু দেখেননি।লোকে নানা রসের কথা বলছে কানাকানি করছে। আর আমি বললেই দোষ।
-লোকের কথায় কান দেবার কি আছে। তুমি দেখেছো?কি দেখেছে বলো?
-না দেখে আন্দাজে বকবক করছি।শুধু দেখিনি সকাল সকাল দুটোকে আচ্ছা করে ঝুড়ে দিয়ে এসেছি। যা বলেছি তাতে এতক্ষণ বাড়ি থাকলে হয়।উচিত শিক্ষা দিয়ে এসেছি।
- কি?
ঘটনা কি জানতে আমি তৎক্ষনাৎ উপরে চলে গেলাম। কিন্তু দরজা লক দেখে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হলো। কোথায় গেল আব্বা?
আব্বা হয়তো কোন কাজে বাইরে গেছে কিছুটা সময় গেলে হয়তো চলে আসবে.. এভাবে সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো আব্বা এলো না। জলজ্যান্ত লোকটা হুট করে কোথায় উধাও হলো কে জানে। দরজার গোড়ায় একটা পুরানো লেডিস চটি দেখে যুথীর চোখ জোড়া গোয়েন্দার মত চকচক করে উঠলো
- এই দেখ,এই দেখ সেই বেটির চপ্পল। এতোক্ষণ তো আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছিল না। এবার আমার কথা বিশ্বাস হলো? আমার ধারণা মেয়েছেলেটা হয়তো ঘরের মধ্যেই আছে।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বললাম
-নিচ থেকে চাবি আনো।দেখি ব্যাপারখানা কি?
(৩)
সন্ধ্যা হয়ে গেছে বেশ অনেকক্ষণ ঘরের জানালাগুলো আটকানো এবং ভারি পর্দায় ঢাকা।খালি চোখে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ঘুটঘুটে ভাব কাটাতে ঘর খুলে আলো জ্বালতেই হলো। ঘরটা আগের মতোই চমৎকার ছিমছাম করে সাজানো গোছানো রয়েছে । না আব্বা পুরো ফ্ল্যাটটাতে কোথাও নেই।বারান্দা, টয়লেট কোনখানে নেই। যুথীর কথা মত সেই চপ্পলওয়ালী আগন্তুকেরও কোন সন্ধান পেলাম না কোথাও।মোটকথা ঘর বারান্দার কোনখানেই কেউ নেই। তাহলে?
রাব্বী একটা শেষ চক্কর দিয়ে এসে হতাশ গলায় বলল
-দাদু ভাই তো কোথাও নেই। আচ্ছা বাবাই দাদু কি ম্যাজিক জানে?
আমি খানিকরা চিন্তাগ্রস্ত।ছেলেমানুষী স্বভাব আমার আব্বার মধ্যে একেবারে নেই। কি করবো কোথায় খুঁজবো কিছু বুঝতে পারছি না। যুথীকে উদ্দেশ্য করে বললাম
- এভাবে তালা খুলে ঘরে ঢোকা আমাদের ঠিক হয়নি,বুঝলে। আব্বা জানতে পারলে অসন্তুষ্ট হবে । লোকের কথায় তুমি যে কেন এতো মাথা গরম করো,বুঝি না।
কোন কারণে যুথী চুপ মেরে গেছে। ওর ভাবনায় হয়তো অন্য কিছু ছিল ঠিক তখনই ডাইনিং টেবিলের ওপর একটা কাগজ দেখতে পেলাম। আব্বার পানি খাওয়ার বড় মগটা দিয়ে কাগজটা চাপা দেওয়া। আমি এক ছুটে গিয়ে কাগজটা হাতে নিলাম।হ্যাঁ আব্বারই হাতে লেখা।
স্নেহাস্পদেষু অপূর্ব,
আজ বিশেষ পরিস্থিতিতে তোমাকে এই চিঠি লিখতে বাধ্য হয়েছি।চিঠি পড়ে অবাক হয়ো না। এটাই আমার ভবিতব্য ছিল।
আমি আপাতত বিশেষ কারণে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। বাড়িটা দেখে শুনে রেখো।তোমার পরবর্তী করণীয় কি কি সেই নির্দেশনা, দেনা পাওনার সব হিসাব আমার ড্রেসিং টেবিলের নিচের ড্রয়ারে লাল খাতায় লেখা আছে।
আমার অবর্তমানে একেবারে মন খারাপ করবে না। বাবা মা কারোরই চিরকাল থাকে না। এটাই নিয়ম।প্রত্যেক সম্পর্কে একটা সময় বিচ্ছেদ আসে।এই বিচ্ছেদটা অপরিহার্য। কেউ রোগে শোকে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কেউ আত্নীয় পরিজন থেকে স্বেচ্ছায় বহুদূর চলে যায়।আবার কেউ নিজেকে নিজে শেষ করে দেয়। আমাদের সকলের ভালোর জন্য আমি স্বেচ্ছায় তোমাদের থেকে দুরে চলে যাচ্ছি।
বাবা,তোকে আমি নিজ হাতে মানুষ করেছি।একা হাতে সব ঝামেলা সামলেছি।আমার সাধ্য মত তোকে ভালো রাখার চেষ্টা করেছি ।আমার মতো তোকে কেউ বোঝে না। তেমনি তুই ও আমাকে...।
আমার বিশ্বাস আমাকে অন্তত তুই ভুল বুঝবি না।
মানুষ যখন একাকী জীবন কাটাতে কাটাতে হাঁপিয়ে ওঠে তখন সে একটু মুক্ত বাতাসে খোঁজে হন্যে হয়ে ছুটে বেড়ায়।অন্তত পক্ষে নিজের মত একটা জগত তৈরি করে জীবন কাটাতে চায়। জেনে সুখী হবে আমি সেই মুক্ত বাতাসের খোঁজ পেয়ে গেছি।অবশেষে আমার জীবনের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো এতদিনে।
ঘরে একটা যৌথ ছবি রেখেছি। খুব ছোটবেলা থেকে যাকে দেখতে, খুব করে কাছে পেতে চাইতে এটা তার আর আমার ছবি । আমি জানি এতটা বছর পরে তাকে তোমার আর প্রয়োজন নেই।সে অবশ্য ইচ্ছে করে তোমাকে ছেড়ে থাকেনি।অদৃষ্ট তাকে বাধ্য করেছে।যাহোক সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।
আমি চাই এতদিন পরে সে ফিরে এলেও ও শুধু তোমার স্মৃতিতেই সে থাকুক।
তোমার নিশ্চয় মনে আছে। তোমার এক জন্মদিনে ওরিয়েন্ট রেস্টুরেন্টে তোমার মায়ের সাথে তোমার দেখা হয়েছিল।তোমার সেই জন্মদাত্রী মা এখন আমার সাথে আছেন। আমি জানি আমার চারিত্রিক দৃঢ়তা সম্পর্কে তোমার চেয়ে আর কেউ ভালো জানে না।তুমি নিশ্চয় কান কথায় বিশ্বাস করোনি।
যাহোক আমি জানি তোমার জীবনে আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আমারও তোমাকে আর প্রয়োজন নেই হয়তো ।জানি না... এতদিন বাদে তোমাকে শুধু এটুকুই বলবো আজ আমার অনন্ত অপেক্ষা শেষ হয়েছে।আজ আমার চরম খুশির দিন।দুঃখ একটাই তোমার জন্মদায়িনী মা অপরাধ না করেও দাগী আসামী সাব্যস্ত হলো। দন্ডপ্রাপ্ত আসামী হলো।অযথাই তার জীবনের এতগুলো মূল্যবান বছর নষ্ট হলো।অথচ...এমন না হলে হয়তো আমাদের জীবনাটা অন্য রকম। অবশ্য এ নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই। দিনশেষে ঘন ঘোর অন্ধকার কাটিয়ে আজ তোমার মা মুক্ত।
জেনে রেখো পৃথিবীতে সবসময় সত্যের জয় হয় না। মিথ্যা কখনও কখন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জীবন চলার পথে অভিজ্ঞতাটা তোমার জানা প্রয়োজন বলে এখানে উল্লেখ করছি।
তোমার মা আর আমার প্রেমের বিয়ে ছিল ।তোমার মা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ছিলো বলে সঙ্গত কারণে আমাদের বিয়েটা কেউ সেভাবে মেনে নেয়নি। তবু আমরা একসাথে ছিলাম।যৌথ পরিবারে ভালো থাকার মানিয়ে চলবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সামনে যে ভয়ংকর দিন অপেক্ষমান করছিল তা কে জানতো।আমার অবর্তমানে আমার মায়ের পেটের ভাই বোনেরা মিলে একটা মিথ্যা খুনের মামলায় ফাঁসিয়ে দেয় তোমার মাকে।শ্বশুর হত্যা মামলায় তোমার মায়ের যাবজ্জীবন জেল হয়।যতই স্বাক্ষ্য প্রমান থাকুক তোমার মায়ের মত মমতাময়ী মানুষ কখনও কাউকে খুন করতে পারে না এটা আমি সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করি। সে
যাহোক জগতে কিছু বিষয় নানা কারণে অমীমাংসিত থাকে।থাকুক সে হিসাব তোলা।সে এখন মুক্ত এটাই আমার কাছে শান্তির। তবে শুধু মুক্ত হলেই তো হবে না তাকে এখন ভালো রাখার দায়িত্বও আমার। আর তাই নানা জটিলতা এড়াতে চেনা লোকালয় থেকে আমাদের এই অঞ্জাতবাস।দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে তোমার মা আজ আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। তবু সে আমার পাশে আছে এটুকুই আমার অনেক বড় পাওনা। তুমি মন খারাপ করো না।রাব্বিকে যত্নে রেখো
ভালো থেকো। বিদায়।
ইতি
তৌফিক রায়হান
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৬
ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে আমি ভীষণ ভীষণ অনুপ্রাণিত হলাম। সময় নিয়ে লেখার সার্থকতা এখানেই, পাঠকের ভালোবাসা।
ভালো থাকুন সবসময়।
শুভেচ্ছা রইলো।
২| ০৪ ঠা মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০
ভুয়া মফিজ বলেছেন: অনেকদিন পরে আপনার গল্প পড়লাম। অনেকবারই বলেছি, আপনার গল্প লেখার হাত বেশ ভালো, আমি পছন্দ করি। এটাও ভালো লেগেছে কোন সন্দেহ নাই। এটা নিয়ে নাটক হবে নাকি?
বরাবরের মতোই গল্পে কিছু ইনকনসিস্টেন্সী আছে, সেসবের টেইক কেয়ার করা হলে গল্পটা আরো চমৎকার হতে পারতো। তবে সেসব নিয়ে আলোচনা করবো না। অনেকেই নিজের লেখাকে এতোটাই ভালোবাসে যে, এই ধরনের আলোচনা পছন্দ করে না। যেমন, অনেকদিন ধরে অনুপস্থিত ব্লগার ওমেরা!!!
১৩ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৪৯
ইসিয়াক বলেছেন: প্রথমেই অনুপ্রেরণাদায়ক মন্তব্যের জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় ব্লগার।
আমার গল্পগুলোতে অনেক সমস্যা থাকে আমিও জানি। আরও সময় নেওয়া উচিত তাও মানি।কিন্তু তাড়াহুড়োয় একবার লেখা হয়ে গেলে পোস্ট করার জন্য মনটা আনচান করে। কিছুতেই মন মানে না। কি যে করি!
# না, আপাতত কোন গল্প নাটকের জন্য দিচ্ছি না।চিত্রনাট্য তৈরি করেও বেচবার ইচ্ছে নেই। নাটক সিনেমার লাইনে অনেক বেশি ধাপ্পাবাজি চলে।এখানে গল্পকারদের কোন ক্রেডিট নেই। সব ক্রেডিট পরিচালক সাহেব আর নায়ক নায়িকাদের।
#অতি ব্যস্ততার কারণে দেরিতে প্রতিমন্তব্যে আসার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
শুভরাত্রি
৩| ০৪ ঠা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১২
লেখার খাতা বলেছেন: গল্প চমৎকার ইশিয়াক।
১৩ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৫০
ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ গোফরান ভাই।শুভেচ্ছা রইলো।
৪| ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:০২
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: চমৎকার লিখনী। মন্তমুগ্ধহয়ে পড়ছিলাম।
১৩ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৫৬
ইসিয়াক বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় ব্লগার।
৫| ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৫১
এম ডি মুসা বলেছেন: মজার! খুব সুন্দর লেখা। দাদা শুভেচ্ছা রইল
১৩ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৫৭
ইসিয়াক বলেছেন: আপনার জন্যও শুভকামনা রইলো।
ভালো থাকুন সবসময়।
৬| ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: নিখুঁত বুনন। মন ছুঁয়ে গেল।
১৩ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৫৮
ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার।শুভেচ্ছা সতত।
৭| ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫৫
খায়রুল আহসান বলেছেন: গল্পটা মন ছুঁয়ে গেল। খুব সুন্দর লিখেছেন। + +
"পৃথিবীতে সব সময় সত্যের জয় হয় না। মিথ্যে কখনও কখনও প্রতিষ্ঠা লাভ করে" - একথাটা আমি আগে বিশ্বাস করতাম না; এখন করি।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৩
মায়াস্পর্শ বলেছেন: ভাই, অসাধারণ লিখেছেন।
খুব আবেগী হয়ে পড়েছিলাম শেষে। অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর লেখার জন্য।